প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। হযরতে কাছে আমি জানতে আগ্রহী যে, কি কি মতবাদের কারণে বা কি কি ভুলের কারণে সাদ সাহেবকে না হক বলা হচ্ছে? আমি যেহেতু তাবলীগ করি এবং ওলামাদের পক্ষে জুবায়ের সাহেবের অনুসরণ করছি তাই বিভিন্ন জন সাদ সাহেবের ভুল গুলো কি তা জানতে চাইলে তেমন কোন সঠিক উত্তর দিতে পারি না। এতে বেশ কয়েকবার বিব্রতিকর পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি। তাই সহীহ ও সঠিক উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন বলে আশা রাখি। জাযাকাল্লাহু খাইরন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
এ বিষয়ে উপমহাদেশের অন্যতম বরং পুরো বিশ্বের অন্যতম আলেম মাউলানা আব্দুল মালেক সাহেব (দাঃবাঃ) এর একটি লেখা মাসিক আলকাওসারে প্রকাশ পেয়েছে। খুব সুন্দর দলীলভিত্তিক আলোচনা। লেখাটি হুবহু তুলে দিলাম-
ভূমিকা : তাবলীগ জামাতের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সবার জন্যই বড় পেরেশানী ও কষ্টের কারণ। বাস্তবেই এটি এক বড় মুসীবত, যা মূলত আমাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ করুন, আমরা এই পরীক্ষায় যেন উত্তীর্ণ হতে পারি এবং এখান থেকে উপযুক্ত নসীহতও হাসিল করতে পারি। কিন্তু সেজন্য শর্ত হল, যথাযথভাবে এই পরিস্থিতির হাকীকত ও বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারা এবং এক্ষেত্রে হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারা। পাশাপাশি এ অবস্থায় কার কী দায়িত্ব তাও জেনে নেওয়া।
আল্লাহ তাআলার শোকর যে, উলামায়ে কেরাম একান্তভাবে এবং সম্মিলিত মজলিসে লোকজনকে এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এর ধারাবাহিকতায় দেশে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজাহাতী জোড়ও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলহামদু লিল্লাহ, এইসব জোড়ের কিছু ফায়েদাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর ফায়েদা আরো বেশি হত যদি তাতে আলোচকবৃন্দের সকলে সতর্কতার সাথে কথা বলতেন এবং আলোচনার মধ্যে ইকরাম ও শারাফাতের পূর্ণ খেয়াল রাখতেন। কিন্তু যতটুকু দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো আলোচকের আলোচনায় এই দুই শর্তের যথাযথ গুরুত্ব প্রকাশ পাচ্ছে না।
মাসিক আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবও বর্তমান পরিস্থিতির নাযুকতা অনুভব করে মুরব্বিদের হুকুমে বিভিন্ন ওয়াজাহাতী মজলিসে শরিক হয়েছেন। যদিও অধিকাংশ মজলিসে তার আলোচনা হয়েছে খুবই সংক্ষিপ্ত, তবে কয়েকটি মজলিসের আলোচনা বেশ দীর্ঘ ও বিস্তারিত হয়েছে এবং মাশাআল্লাহ খুবই সহজ ও হৃদয়স্পর্শী হয়েছে। সবচে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে গত ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ঈসায়ী তারিখে মুন্সিগঞ্জের নয়াগাঁও বড় মসজিদে।
মাসিক আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের ফায়েদার কথা চিন্তা করে আলোচনাটি এখানে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ও মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম মুসাজ্জিলা থেকে পত্রস্থ করেছে। এরপর আলোচক নিজেই আলোচনাটির নযরে সানী ও জরুরি সম্পাদনা করে দিয়েছেন। কোথাও কোথাও আরো কিছু জরুরি কথাও যুক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা এই মেহনতকে কবুল করুন। এ থেকে আমাদের সবাইকে ফায়েদা দান করুন– আমীন।
আলোচনাটি পাঠ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, এটি কোনো মাকালা বা প্রবন্ধ নয়; বরং এটি একটি বয়ান। এতে বয়ানের উপস্থাপন অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। এজন্য পড়ার সময় বিষয়টি যেহেনে রাখলে পড়তে সুবিধা হবে। –সম্পাদক
আলহামদু লিল্লাহ! আমি বড় সৌভাগ্যবান যে, এই মসজিদে আসতে পেরেছি। এই এলাকায় আসতে পেরেছি। এই এলাকায় যদিও আগে একবার আসা হয়েছে, তবে এই মহল্লায় আসা হয়নি। এই মহল্লায় প্রথম আসা হল। আমি আমাদের মুরুব্বী হযরত প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহেব হুযূরের কাছ থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে এই মহল্লার এবং এই মহল্লার পূর্বপুরুষদের গল্প শুনেছি। অনেক আগ্রহ ছিল এখানে আসার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেই আশা আজ পূরণ করেছেন। সেজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর আদায় করি, আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ তাআলা হযরতকে আফিয়াত-সালামতের সাথে, সিহহত-কুওয়তের সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন– আমীন।
আমাদের উপর পরীক্ষা এসেছে
আজকের এই মজলিস যে বিষয়ে আলোচনার জন্য, সেই বিষয়টি অনেক বেদনাদায়ক, অনেক কষ্টদায়ক। প্রথম যে বিষয়টা আমাদের জানা থাকা দরকার তা হল, মানুষের উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হালাত আসে। বিভিন্ন মুসীবত আসে। পরীক্ষা আসে। দ্বীনের যে কাজগুলো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করেছেন সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল, দাওয়াত ও তাবলীগ। দাওয়াত ও তাবলীগের অনেক পদ্ধতি ছিল, আছে। ঐ পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন সেটি তিনি মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে, তাঁর উস্তাযদের সাথে পরামর্শ করে, তাঁদের দুআ নিয়ে এবং অনেক ইস্তিখারা করে নির্বাচন করেছেন। অন্য পদ্ধতিগুলোকে তিনি গলত বলেননি। অর্থাৎ অন্য অনেক পদ্ধতি ছিল এবং আছে। পাশাপাশি এটাও মেহনতের একটা তরীকা। তো এই তরীকাটি আল্লাহর মেহেরবানীতে অনেক উপকারী সাব্যস্ত হয়েছে। অনেক ফায়দা এর দ্বারা হয়েছে, হচ্ছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে। তো দাওয়াত ও তাবলীগের এই তরীকার উপর বড় একটা পরীক্ষা এসেছে। মানুষের ব্যক্তিজীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং এধরনের ইজতিমায়ী কাজ যেগুলো আছে, সেগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হালাত আসে। হালাত যখন আসে তখন একজন মুমিনের দায়িত্ব হল, এই হালাতে তার করণীয় কী– তা জানা এবং এই হালাত কেন আসল, এই পরীক্ষা কেন আসল, এখান থেকে আমার কী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে– সেটাও চিন্তা করা। হালাত তো আল্লাহ তাআলা দেন গাফলত ও উদাসীনতা দূর করার জন্য। হালাত আসলে যদি গাফলত বেড়ে যায় তাহলে আল্লাহ তাআলা নারাজ হন। সেজন্য আমাদের খুব খেয়াল রাখা দরকার যে, এই পরীক্ষা থেকে আমাদেরকে কী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে কী সবক নিতে হবে? সেটা আমাদেরকে আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে। আমাদের করণীয় কী– সেটা আলেমদের থেকে বুঝে নিতে হবে। তো এই বিষয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের খুব ত্রুটি হচ্ছে। আমরা জানারই চেষ্টা করছি না যে, এই হালতে আমাদের করণীয় কী? সবার কথা বলছি না। তবে আমরা অনেকেই আমাদের করণীয় এবং এখান থেকে আমাদের কী সবক হাসিল করতে হবে সেটা জানারই চেষ্টা করছি না।
যাইহোক, শুধু আজকের এই এক মজলিসে তো আর সব বিষয় আলোচনা করা যাবে না। তাই সংক্ষিপ্ত কিছু কথা আরজ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কী হালত এসেছে?
হালাত যেটা এসেছে সেটা হল, যে মিম্বর থেকে আমরা হেদায়েতের কথা শুনতাম, যে কাজের যিম্মাদারদের থেকে হেদায়েতের কথা শুনতাম, দ্বীনী রাহনুমায়ী পেতাম, ঐ কাজের যিম্মাদারদের বিশেষ এক ব্যক্তি থেকে এখন এমন কথা শোনা যাচ্ছে, যেগুলো হেদায়েতের কথা নয়; গোমরাহীর কথা। যে মিম্বর থেকে হেদায়েতের কথা আসত সেই মিম্বরে যখন বিশেষ এক ব্যক্তি বসেন তখন এমন লাগামহীন কথা আসে, যেগুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী। দলীলবিহীন, দলীল পরিপন্থী। যে কাজের যিম্মাদারদের দায়িত্ব হল দলীলবিহীন বা দলীল পরিপন্থী কোনো কথা না বলা, অনুমান করে কোনো কথা না বলা, সেখান থেকে এখন অনুমানভিত্তিক কথা, গায়বী কথা বলে দিচ্ছে, যার কোনো দলীল নেই। এমন চলছে বেশ কয়েক বছর থেকে। ভিতরে ভিতরে চেষ্টা করা হয়েছে। জনতার সামনে প্রকাশ করা হয়নি। একাকী, ঘরে বসে, লিখিত কিছু পেশ করে, মুরুব্বীরা গিয়ে, সহকর্মীরা গিয়ে, এরা সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন যে, ভিতরে ভিতরেই এর সমাধান হয়ে যাক। ইসলাহ হয়ে যাক। কিন্তু ইসলাহ হয়নি। বিশেষভাবে ছয়-সাত বছর থেকে তো বেশ জোরালোভাবেই এই চেষ্টা, এই ফিকির চলছে। সেই চেষ্টাটা সফল হয়নি। যখন সফল হয়নি তখনই কথা বাইরে এসে গেছে। কথা কিন্তু প্রথমেই বাইরে আসেনি। ঐ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণে কথা বাইরে এসেছে।
তো এই অবস্থায় আমাদের প্রতি শরীয়তের কী মাসআলা? এটা তো জানতে হবে। অবহেলা করলে তো হবে না। এমনি ছেড়ে দিলে হবে না।
এমনি তো ছেড়ে দিবেন নিজের জমি, যেটা আপনার পাওনা। যখন আপনার কোনো পড়শি সেই জমি দাবি করছে তখন আপনি বললেন, এটা নিয়ে ঝগড়া করব? মামলা মোকাদ্দমা করব? ও যখন মানে না, থাক। এটা ওরই থাকুক। ছেলেদেরকে বললেন, যা তোরা আর এই জমি দাবি করবি না। ছেড়ে দে। এটা আপনি করতে পারেন। আপনার সম্পত্তি আপনি ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু দ্বীনের মাসআলার ব্যাপারে কি এটা চলবে? যখন গলত কথা, গোমরাহীর কথা বলা হচ্ছে। সতর্ক করার পরেও ওটার উপরে অটল অনড়, ওটার পক্ষে আরো জরাহ, অন্যায় পক্ষপাত। এই সুরতে কোনো দ্বীনী কাজের যিম্মাদার, যার বয়ান মানুষ হেদায়েতের কথা মনে করে, যার কিছু বলাকে মানুষ দ্বীনী রাহবরী মনে করে; এমন ব্যক্তিকে কি অনুসরণীয় হিসাবে গ্রহণ করা যায়? কখনো এবং কিছুতেই গ্রহণ করা যায় না।
একটা হল, একজনকে আপনি কোনো ব্যবস্থাপনাগত কাজের দায়িত্ব দিলেন। যেমন মসজিদের কাজ হয়, সেখানে দেখা যায় এমন লোকও কাজ করে, যে নামাযও পড়ে না। যদিও এটা ঠিক না। মসজিদের কাজ করব আমি, কিন্তু ফরয নামায পড়ব না, এটা কেমন কথা? মিস্ত্রিরা নামাযী হয়ে যাওয়া দরকার। অনেক সময় ইমাম সাহেব, মুআযযিন সাহেব তাদের পিছনে মেহনত করেন। তখন কেউ কেউ নামায ধরে, কেউ কেউ ধরে না। হয় না?
ঠিক আছে। কিন্তু আপনি বলবেন, সে তো ইট এনে দিচ্ছে, সিমেন্ট এনে দিচ্ছে। সে তো মিম্বারে বসে কথা বলে না। জুমার দিন বয়ান করে না। সেজন্য যদি আপনি তাকে এই কাজের সুযোগ দেন তাহলে জায়েয হবে কি না? হবে। যদিও তার উচিত ছিল নামাযী হয়ে যাওয়া। আপনিও মেহনত করবেন, দাওয়াত দিবেন, ঠিক আছে। কিন্তু সে দাওয়াত গ্রহণ করল না। এজন্য কি আপনি তাকে তাড়িয়ে দিতে হবে?
কিন্তু সে যদি এসে মিম্বারে বসে, মেহরাবে দাঁড়ায়। ইমামতি করার জন্য মেহরাবে দাঁড়িয়ে যায়। মিম্বারে বসে বয়ান শুরু করে, তাহলে কেমন হয়?
খবরদার তুলনা করছি না কিন্তু। দুটি বিষয় যে ভিন্ন ভিন্ন তা বলতে চাচ্ছি; একটি ইনতেযামী দায়িত্ব, আরেকটি দ্বীনী দায়িত্ব।
আমার কাছে হাসির একটা গল্প আছে। দারুল উলূম করাচীর দারুল ইফতায় একবার রাজমিস্ত্রির কাজের দরকার হয়েছে। সেজন্য দারুল ইফতার যে নির্ধারিত সময় সেসময়ের বাইরে দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। রমযান মাস ছিল। মিস্ত্রিরা কাজ করছে। দারুল ইফতায় ফোন আসে। যারা ফোন করে মাসআলার জন্যই ফোন করে। শুধু মুফতী সাহেবরাই সেই ফোন ধরেন। অন্য কেউ সেই ফোন ধরে না। আমি দারুল ইফতার বরাবর উপরে কুতুবখানায় বসা। হঠাৎ দেখলাম একজন মিস্ত্রি ফোন ধরছে। আমি তো অবাক। কী কা- ঘটায় কে জানে! দ্রুত নেমে এলাম। অতক্ষণে সে মাসআলা বলে ফেলেছে। আশ্চর্য! মিস্ত্রি মাসআলা বলছে! আমি তার হাত থেকে ফোন নিয়ে সালাম দিয়ে ফোনদাতা ব্যক্তিকে বললাম, ভাই! দারুল ইফতার হুযূররা এখনো আসেননি। এতটার সময় হুযূররা আসবেন। আপনি ঐ সময় ফোন করে মাসআলা জেনে নিয়েন। যে আপনার সঙ্গে কথা বলেছে সে দায়িত্বশীল কেউ নয়। আমি এখানের ছাত্র। মাসআলা আমিও বলব না। মাসআলা বলবেন উস্তাদজীরা। এতটার সময়ে তাঁরা এলে আপনি ফোন করেন। একথা বলে আমি ফোন রেখে দিলাম।
তো বলতে চাচ্ছিলাম, যিম্মাদারীর ভাগ আছে। যদি কাউকে শুধু ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ের যিম্মাদার বানান, যেমন মেহমানখানার যিম্মাদার বানালেন, তাশকীলের কামরার যিম্মাদার, বিদেশী মেহমানদের খিত্তার যিম্মাদার, এগুলো হল ব্যবস্থাপনাগত কাজের যিম্মাদার। এসব কাজের যিম্মাদারী এমন যে, তা এমন যে কোনো ব্যক্তিকেই দেওয়া যায়; যে বড়দের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
এটা এক ধরনের যিম্মাদারী। আরেকটা হলো দ্বীনী কাজের দ্বীনী যিম্মাদারী। দ্বীনী কাজের দ্বীনী বিষয়ের যিম্মাদার। মিম্বর যার যিম্মায়। তালীম যার যিম্মায়। হায়াতুস সাহাবার তালীম যার যিম্মায়। ওয়াপসীর হেদায়েতী কথা যার যিম্মায়। রওয়ানেগীর হেদায়েতী কথা যার যিম্মায়। এমন যিম্মাদার কে হতে হবে? যে হেদায়েতের কথা বলে সে-ই তো, নাকি? এখন হেদায়েতের কথার সাথে যদি গোমরাহীর কথা যুক্ত হতে থাকে! এক দিন, দুই দিন, তিন দিন! এক কথা, দুই কথা, তিন কথা! দশ কথা, বিশ কথা! হয়েই যাচ্ছে। তবুও সবাইকে খামোশ থাকতে হবে নাকি?!
তো দ্বীনী কাজের দ্বীনী কথাবার্তা, দ্বীনী রাহবরীর যিম্মাদারী যার উপর আসবে, সে যে-ই হোক, যারাই এই যিম্মাদারী পাবে তাদেরকে কি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পুরো সহীহ আকীদাওয়ালা হতে হবে না? নিজেদের কথাবার্তা, চিন্তা-চেতনা, আকীদা-বিশ্বাস, রুচি-প্রকৃতি সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসারী হতে হবে না? যদি বিদআতী হয়! বিদআতী হওয়ার দুই অর্থ। একটা হল, বিদআতী কাজ করা। আরেকটা হল, বিদআত আবিষ্কার করা। কোন্টা বেশি ভয়াবহ? যদি হেদায়েতের কথার মধ্যে বিদআতের আবিষ্কার হতে থাকে! ভয়াবহ কি না? এখানেও এই সমস্যা।
আমি এটাকে পরীক্ষা কেন বললাম? পরীক্ষা এজন্য বলেছি– এই কাজ এমন এক ব্যক্তি করছেন, যিনি আমাদের আস্থাভাজন ছিলেন, আমাদের মহব্বতের লোক; যার থেকে আমরা রাহবরী পেয়েছি, যার বয়ান শুনে শুনে কত মানুষ নামাযী হয়েছে। যার বয়ান শুনে শুনে কত মানুষের মধ্যে দ্বীনের তলব পয়দা হয়েছে। তার প্রতি আমাদের দিলে মহব্বত আছে কি নাই? আছে। কিন্তু তিনি এখন এই কাজ শুরু করেছেন। এত বছর যার বয়ান শুনে শুনে দ্বীন শিখলাম, নামাযের দিকে আসলাম। এখন এসব কী বলেন হুযূররা– তিনি নাকি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিরোধী কথা বলেন। তিনি নাকি গলত তাফসীর করেন। মনগড়া কথা বলেন। তিনি নাকি গলত ফতোয়া দেন। কী বলেন এসব! বিশ্বাস হয়? প্রশ্ন আসে কি না? আসে। আসতে পারে। আসা স্বাভাবিক। বরং আমি বলব, প্রথমবার শ্রবণের পর প্রশ্ন আসাই উচিত। যখন আপনি এক-দুইজনের কাছে শুনবেন, এক-দুই হুযূরের কাছে শুনবেন, প্রশ্ন আসবে। যেমন আপনি আপনার মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে শুনলেন, তখন ভাবতে পারেন– ইমাম সাহেবও হুযূর, মাওলানা সা‘দ সাহেবও হুযূর। ইমাম সাহেব মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভুলের কথা বলেন। হয়ত আমাদের ইমাম সাহেবেরই ভুল হয়েছে। নাহ, আমরা তার প্রতি আস্থা হারাব না। এতদিনের আস্থা হারাব না। এমন হতে পারে কি পারে না? পারে। কিন্তু একদিন বললেন এই ইমাম সাহেব। আরেকদিন বললেন আরেক ইমাম সাহেব। এভাবে এই আলেম সেই আলেম। দেশের যিম্মাদার সকল আলেম। বিদেশের বড় বড় আলেম। সবাই বলছেন। কারো সাথে তো মাওলানা সা‘দ সাহেবের কোনো শত্রুতা নেই। তাহলে সবাই কেন এমন কথা বলছেন? নাহ, আমাদেরকে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।
মহব্বত তো হবে শুধু আল্লাহর জন্য
আমরা মাওলানা সা‘দ সাহেবকেও মহব্বত করি, হককেও মহব্বত করি। মাওলানা সা‘দ সাহেবকে মহব্বত করতাম আল্লাহর জন্য। নাকি তার নাম সা‘দ এইজন্য? নাকি তার বাড়ি কান্ধলা এইজন্য? নাকি তিনি নেযামুদ্দীন মসজিদের ইমাম এইজন্য? নাকি তিনি হযরত মাওলানা ইউসুফ সাহেব রাহ.-এর নাতি এইজন্য? কার জন্য মহব্বত করতাম? আল্লাহর জন্য। তিনি আল্লাহর দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছেন, হেদায়েতের কথা বলছেন, দ্বীনের রাহবরী করছেন– সেজন্য মহব্বত করতাম। এখন যখন সব আলেম বলছেন যে, এই মিম্বর থেকে অনেক গোমরাহীর কথা বলা শুরু হয়েছে। লাখো লাখো মানুষের ইজতিমার মধ্যে অনেক গোমরাহীর কথা এসে গেছে, তাকে বলার পরও, হাতে পায়ে ধরার পরও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইসলাহ করছেন না।
তার ভিন্ন একটা মেযাজ পয়দা হয়ে গেছে। মন-মানস, রুচি-প্রকৃতি, চিন্তা-চেতনা ভিন্ন ধরনের হয়ে গেছে। এখন তিনি তার মতো করেই সবকিছু বলতে থাকেন। তার মতো করেই ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। সালাফের তরীকাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সব আলেমরাই এমন কথা বলছেন। তো আমরা যেহেতু তাকে মহব্বত করতাম আল্লাহর জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য, দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিচ্ছেন সেইজন্য, হেদায়েতের কথা বলছেন সেইজন্য, এখন হেদায়েতের জায়গায় গোমরাহীর কথা তিনি বলা শুরু করেছেন এবং এগুলো ধরিয়ে দেওয়ার পর ইসলাহও করছেন না। তাহলে আপাতত তার মহব্বত মওকুফ। মহব্বত মওকুফ মানে– এমন মহব্বত করব না যে, তার গলত কথাও শুনতে হবে। এই কথা বলব না যে, তিনি এগুলো শোধরানোর আগেও তার ইতাআত করতে হবে। এই কথা বলা কি জায়েয হবে?
এখন তার মহব্বত থাকবে অন্তরে, দুআ করার জন্য যে, আল্লাহ! আপনি তাকে সহীহ রাস্তায় আসার তাওফীক দান করেন। আমরা দুআ করি সবাই– হে আল্লাহ! হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবকে সহীহ রাস্তায় আসার তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে আপনি হেদায়েতের উপর ইসতিকামাত নসীব করুন। হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবকে হেদায়েত দান করুন। সহীহ সমঝ নসীব করুন। দ্বীনের তাফাক্কুহ দান করুন। ইলমের পরিপক্কতা দান করুন এবং আল্লাহওয়ালাদের সোহবত হাসিল করার তাওফীক নসীব করুন। ইলম এবং দ্বীনের সমঝ যেভাবে হাসিল করা উচিত সেভাবে হাসিল করার তাওফীক নসীব করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে কবুল করুন। দাওয়াত ও তাবলীগের মধ্যে যেই পেরেশানী ও সংকট চলছে সেই পেরেশানী ও সংকট আপনি দূর করে দিন। আমাদের এতাআতী ভাইদেরকে সহীহ সমঝ নসীব করুন। যারা উলামায়ে কেরামের নেগরানীতে দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত জারি রাখতে চাচ্ছেন তাদেরকে আপনি হেদায়েতের উপর অটল রাখুন। তাদের ভুল-ত্রুটিগুলোও আপনি ক্ষমা করুন। যেই ক্ষেত্রে তাদের থেকে ভুল হয়ে যাচ্ছে সেগুলোর ইসলাহ করে দিন। তারা হকের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে, এই দাওয়াত যেন সহীহ পদ্ধতিতে দিতে পারে আপনি তাওফীক দান করুন। কোনো ধরনের কোনো বাড়াবাড়িমূলক কথা, কোনো মুরুব্বীর ব্যাপারে অন্যায় কোনো কথা যেন আমাদের মুখ দিয়ে না বের হয়– সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন– আল্লাহুম্মা আমীন।
মহব্বত করব, তার জন্য দুআ করব। এমন নয় যে, এই সব গলত ও গোমরাহীর কথাসহ তার এতাআত করতে হবে। কারণ এমন কথা যদি বলি, তাহলে আল্লাহ নারাজ হবেন। এই হল কথা।
এই হালতে করণীয় কী ছিল?
তো দরকার ছিল, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ যেইভাবে মুরুব্বীরা শিখিয়ে দিয়ে গেছেন,… হযরত মাওলানা যুবায়ের ছাহেব, মাওলানা রবীউল হক ছাহেবসহ উলামায়ে কেরাম যারা আছেন কাকরাইলে, তারা কি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের পরে লেগেছেন না আগে? আগে। অনেক আগে। তাদের দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতটা কি মাঠে-ময়দানে মেহনত থেকে, চিল্লা-সাল থেকে শুরু হয়েছে নাকি কুরসীতে বসে বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে? চিল্লা, সাল অর্থাৎ ময়দানে মেহনতের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। কুরসীর বয়ান থেকে শুরু হয়নি। তারা কাজ শিখেছেন মাওলানা সা‘দ সাহেবের আব্বাজানের মুরুব্বী যারা, তাদের কাছ থেকে, না আজকালের কারো কাছ থেকে? মাওলানা সা‘দ সাহেবের আব্বাজানের মুরুব্বী যারা তাদের কাছ থেকে তারা কাজ শিখেছেন।
তো উলামায়ে কেরাম বলছেন যে, ভাই কাজ উদ্দেশ্য, নাকি নাম উদ্দেশ্য? কাজ উদ্দেশ্য। নাকি বলবেন, কোনো বিশেষ ব্যক্তির নাম উদ্দেশ্য? কাজ উদ্দেশ্য। কাজ যেহেতু উদ্দেশ্য তাই মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিভিন্ন আপত্তিকর কথা, কঠিন কঠিন ভুল, এগুলোর ইসলাহ না করা সত্ত্বেও তাকে দাওয়াত দিয়ে এখানে আনব, এটা তো হয় না। তিনি আগে এসেছেন, এসেছেন। এখন জিনিসগুলোর ইসলাহ করে নিন। এক-দুই বছর তিনি না আসুন। কাজ চলুক। কাজের তো দরকার। কাজ আমরা স্থানীয় মুরুব্বীদের তত্ত্বাবধানে করতে থাকি আর তিনি এর মধ্যে ইসলাহ হয়ে যান। যে মুরুব্বীরা সা‘দ সাহেবের এইসমস্ত গলত কথার ইসলাহ হয় না দেখে শেষ পর্যন্ত নিযামুদ্দীন থেকে চলে গেছেন। চিঠি দিয়ে গেছেন যে, ইসলাহ হলে আমরা আবার আসব। নিযামুদ্দীন আমাদের ঘর। ইসলাহ হওয়ার আগে আমরা এখানে থাকতে পারছি না। যেহেতু ইসলাহের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ইসলাহ হচ্ছে না।
তো তাদেরকেও মাওলানা সা‘দ সাহেব নিয়ে আসুন যে, আপনারা যেই ভুল ধরেছেন যেসব সংশোধনী দিয়েছেন আল্লাহর রহমতে আমি এগুলো মানতে রাজি এবং কাজ ইনশাআল্লাহ মশোয়ারার মাধ্যমে চলবে। আপনারা আসেন। এইভাবে মাওলানা সা‘দ সাহেব এবং ঐসকল মুরুব্বীদের মাঝে সমঝোতা হয়ে যাক, সা‘দ সাহেব নিজের ভুলগুলোর ইসলাহ করে নেন। আগে যেমন অন্যান্য মুরুব্বীদের সাথে তিনি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মুরুব্বী ছিলেন সামনেও তিনি আমাদের মুরুব্বী। তবে এই জিনিসগুলোর ইসলাহ হয়ে যাক। ইসলাহ হয়ে গেলে তাঁদের মাঝে সমঝোতাও হয়ে যাবে। এর আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের এখানে যেসমস্ত মুরুব্বীরা আছেন, তাদের নেগরানীতে, তত্ত্বাবধানে কাজ করতে থাকি।
সুন্দর পরামর্শটি শুনলেন না তারা
উলামায়ে কেরাম এই পরামর্শ দিয়েছেন। এটা খারাপ পরামর্শ না ভালো পরামর্শ? ভালো পরামর্শ। কিন্তু তারা এই পরামর্শ মানতে পারেননি। এই সুন্দর পরামর্শটা মানতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যর্থ হয়ে খামোশ যদি থাকতেন তাও একটা কথা ছিল। কিন্তু খামোশ থাকেননি। বিভক্তি শুরু করেছেন। বিভক্তি করতে করতে নামই দিয়ে দিয়েছেন এতাআতী জামাত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
এমন গুরুত্বপূর্ণ মেহনতের মধ্যে এই বিভক্তি করে দেওয়া হল! দরকার ছিল এক থাকার। হকের ভিত্তিতে এক থাকার দরকার ছিল। এক রাহো, নেক রাহো। হকের ভিত্তিতে এক থাকার দরকার ছিল। কিন্তু হল না। এটা এক অপরাধ। বিভক্ত হয়ে যাওয়া ছোট অপরাধ না বড় অপরাধ? বড় অপরাধ। এরপর উলামায়ে কেরাম বোঝানোর মেহনত করে যাচ্ছেন। চেষ্টার পর চেষ্টা চলছে। দরকার ছিল আবার এক হয়ে যাওয়ার। আমার এত কষ্ট লাগে যখন শুনি, অমুক মারকায দুই দিন এদের হাতে, দুই দিন ওদের হাতে। দুই দিন এদের হাতে, চার দিন ওদের হাতে। এদের শবগুযারী এই তারিখে, ওদের শবগুযারী ঐ তারিখে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অনেক লজ্জা পাই, যখন এমন কথা শুনি।
এইসব ভাগাভাগি তো হয় ঐ জায়গায়, যেখানে ধন-সম্পদের দ্বন্দ্ব। যেখানে পদ এবং পদবি নিয়ে দ্বন্দ্ব। যেখানে হক এবং নাহকের দ্বন্দ্ব সেখানে এমন ভাগাভাগি হয়? সেখানে তো হকের ভিত্তিতে এক থাকতে হয়। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। বিভক্তি না হওয়া দরকার ছিল, কিন্তু বিভক্ত করে দেওয়া হল। একটা অপরাধ। বিভক্তির পর এক হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। সেটা হচ্ছে না, এটা দ্বিতীয় অপরাধ। আমি অনুরোধ করি, এই দ্বিতীয় অপরাধ থেকে বের হয়ে এসে হকের ভিত্তিতে এক হয়ে যান।
এত বছর আমরা ঈমান শিখেছি। ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা– হক মানার যোগ্যতা পয়দা করা। হক যদি আমার বাপের বিরুদ্ধে যায়, আমার মহল্লার আমীরের বিরুদ্ধে যায়, যে আমাকে তাবলীগে নিয়ে এসেছে তার বিরুদ্ধে যায়। তাহলে তাকে তো আমি মহব্বত করব, তার ইহসানের শোকর আদায় করব। তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকব। সে ইনতিকাল করে গেলে তার জন্য ঈসালে সওয়াব করতে থাকব। সব ঠিক আছে। কিন্তু গলত কথার মধ্যে তার পিছনে হাঁটব? না। আমাকে সে তাবলীগে নিয়ে এসেছে, আমার উপকার করেছে। ঠিক আছে। কিন্তু এখন আমি তার পিছে পিছে হাঁটতে থাকলে তো আমি গোমরাহ হব। এতে কি তার ফায়দা হবে? আমি যদি হকের উপর থাকি তাহলে না তার ফায়দা হবে। তার কারণে আমি গোমরাহ হলে তো তার গোনাহ বাড়তে থাকবে। এর চেয়ে বরং আমি চেষ্টা করব– হাতে পায়ে ধরে কীভাবে তাকে হকের দিকে আনতে পারি।
তৃতীয় অপরাধটি না করি
আমার অনুরোধ হল, এখনো সময় আছে, হকের ভিত্তিতে আমরা এক হয়ে যাই। যদি না হই তাহলে তৃতীয় অপরাধ কমপক্ষে আমরা কেউ না করি। তার আগে বলেন, দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার পরও উভয় দলই তো তাবলীগ, নাকি ভিন্ন কিছু? তাবলীগ। তো তাবলীগের একটা মূলনীতি তো ইকরামুল মুসলিমীন। এই মূলনীতিটা আমরা রক্ষা করি। বি. বাড়িয়ায় যা ঘটল এটা কি ইকরামুল মুসলিমীন? কাকরাইলে যা ঘটছে, সেটা কি ইকরামুল মুসলিমীন? এই মূলনীতিটা ধরে রাখি। এই মূলনীতি লঙ্ঘনের অপরাধ না করি। তাবলীগের ঐতিহ্য ধরে রাখি। তাবলীগের ঐতিহ্য কী? ফাযায়েলের ইলম তালীমের হালকায় শিখব। মাসায়েলের ইলম আলেমদের কাছ থেকে শিখব। এই ঐতিহ্য ধরে রাখি। কমপক্ষে আপনারা নিজেদেরকে যে এতাআতী নাম দিয়েছেন সেটা কার এতাআত? সা‘দ সাহেবেরই তো। নিযামুদ্দীনের এতাআতই তো। তো মাওলানা সা‘দ সাহেবের শুধু গলত কথাগুলোরই এতাআত করবেন? তার দুয়েকটি সহীহ কথারও এতাআত করুন! তিনি নিযামুদ্দীনে বলেছেন। কাকরাইলে বলেছেন। চিঠিপত্রে লিখেছেন। আমি একেবারে তার ভাষায় তার কথাগুলো আপনাদেরকে শোনাচ্ছি–
ডিসেম্বরের দুই তারিখ ২০১৭। এই তারিখে নিযামুদ্দীন মারকাযে এশার পরে হায়াতুস সাহাবার তালীমে হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেছেন–
محترم بزرگو عزیزو! علم عمل کی کسوٹی ہے، علم وعمل کو علماء پر پیش کرو، علماء قائد ہیں، علماء مقتدیٰ ہیں، اور امت مقتدی ہے، علماء اس لئے مقتدیٰ ہیں کہ اصل علم امام ہے، ہم قدم قدم پر اقوال وافعال واعمال میں علماء کے تابع ہیں، علماء کی رہبری اور ان کی طرف سے ملنے والی ہدایات یہ بنیادی بات ہے، اس لئے کہ علم سے ہٹ کر جہل اور ضلالت ہے، اس لئے ہمیں چاہئے کہ ہر بیان اور ہر قول وعمل میں یہ دیکھیں کہ علمائے حق کیا فرماتے ہیں، صحابۂ کرام اور خلفائے راشدین اس بارے میں سب سے زیادہ ڈرنے والے تھے، میرا قول وعمل علم کے مطابق ہے یا خلاف؟
‘বন্ধুরা আমার! ইলম হল আমলের কষ্টিপাথর। (মানে, আমল সহীহ না গলত এটা নির্ণয় হবে কী দিয়ে? ইলম দিয়ে।) যা শিখেছ এবং যা আমল করছ এটা আলেমদের সামনে পেশ কর। আলেমগণ হলেন আমাদের দ্বীনী রাহবার। তাঁরা আমাদের অনুসরণীয়। উম্মত হল মুকতাদী। আলেমগণ মুকতাদা বা অনুসরণীয়; এইজন্য যে, ইলম হল সবকিছুর ইমাম। সকল ক্ষেত্রে প্রতি কদমে আমরা উলামায়ে কেরামের অধীন। আলেমগণ যে রাহবরী করবেন, দ্বীনী বিষয়ে তাঁরা যে রাস্তা দেখাবেন, তাদের কাছ থেকে আমরা যে হেদায়েতগুলো পাব এটা হল আসল জিনিস। ইলম থেকে সরে গেলেই মূর্খতা এবং গোমরাহী। এজন্য আমাদের উচিত, আমরা যে বয়ান করছি, যা বলছি, যে আমল করছি, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমাদেরকে দেখতে হবে, ওলামায়ে হক কী বলেন। সাহাবায়ে কেরাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন এ ব্যাপারে সবচে বেশি ভয় করতেন যে, আমার কথা ও কাজ ইলম অনুযায়ী হচ্ছে, না তার খেলাফ?’
এই পুরো বক্তব্য হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের। আপনারা যে কেউ নেটে সার্চ দিয়ে শুনতে পারেন। যারা নেট ব্যবহার করেন তাদেরকে বলছি। যারা নেট ব্যবহার করেন না, আমি কখনো তাদেরকে পরামর্শ দিব না যে, আপনারা নেটে ঢুকুন! কখনো দিব না। আমরা এটা পছন্দ করি না। কিন্তু যারা অভ্যস্ত, তারা নেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন ডিসেম্বরের ২ তারিখ ২০১৭ নিজামুদ্দিনে হায়াতুস সাহাবার তা‘লীম।
তার এই বক্তব্য স্পষ্ট এবং সহীহ। যারা মাওলানা সা‘দ সাহেব-এর এতাআতের কথা বলে, এ কথাগুলো তারা মানে না কেন? এতাআতী ভাইদের এ কথাগুলো মানা উচিত কি না? উচিত।
তারপরেই কাকরাইলে যখন আসলেন, ২০১৮-এর ইজতেমা উপলক্ষে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের ২ তারিখ ২০১৭ নিযামুদ্দিনে আলোচনা করার পর ২০১৮-এর জানুয়ারিতে যখন ঢাকায় আসলেন, ইজতেমার মাঠে যাওয়া হল না। কাকরাইল মসজিদে অবস্থান করেছিলেন। সেখানেও তিনি আলোচনা করেছেন, আলোচনার শুরুতে তিনি বলেছেন–
علماء کے اعتراض کو اپنی اصلاح کا ذریعہ اور انکے ٹوکنے کو انکا اپنے اوپر احسان یقین کریں.
অর্থাৎ আলেমরা যদি কোনো আপত্তি করেন যে, ভাই! তোমার এ কথা সহীহ হচ্ছে না। তোমার এ কাজটা ঠিক হচ্ছে না। তাহলে এটাকে নিজের ইসলাহের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ কর। আর তারা যখন রোক-টোক করেন, এটাকে ইহসান এবং অনুগ্রহ হিসেবে ধর যে, তারা তো আমাদের উপর ইহসান করছেন।
اس لئے کہ علماء جو بات فرمائیںگے اس میں عمل کی قبولیت اور اس میں ہی عمل کا صحیح ہونا ہے.
আলেমরা যেটা বলবেন, যে দ্বীনী হেদায়েত দিবেন, সেটা মানলেই তোমার আমলটা কবুল হবে এবং সহীহ হবে।
اس طرح ہم علماء سے علمی استفادہ بھی کریں اور اگر علماء کسی بات پر اعتراض کریں یا کسی بات کو ٹوکیں تو اس کو قبول بھی کریں.
তাই আমরা আলেমদের থেকে ইলম হাসিল করব। আর আমাদের কোনো কথার ওপর যদি তারা আপত্তি করেন, কোনো বিষয়ে যদি তারা রোক-টোক করেন, তাও আমরা গ্রহণ করব।
ইহসান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেছেন। তার এ কথা সহীহ না গলত? সহীহ। তো আমরা তার সহীহ কথার কেন এতাআত করছি না? একথা আমাদের সবার জন্য। এতাআতী ভাইরা যখন তার এতাআতের নাম নিচ্ছেন, তাদের জন্য তো অবশ্যই।
তৃতীয় অপরাধের দিকগুলো
তো আমি বলছি, তৃতীয় অপরাধ না করি। তৃতীয় অপরাধের সবচেয়ে কঠিন দিকটি হল, সা‘দ সাহেবের এতাআতের নাম নিচ্ছি, কিন্তু তার সহীহ কথাগুলোর এতাআত করছি না। আল্লাহ তাআলা এটা থেকে আমাদেরকে বাঁচার তাওফীক দান করুন।
দ্বিতীয় কথা, ভাই! খুব খেয়াল করে শুনি। খুব খেয়াল করে শুনি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেটা হল, কিছু বিষয় আছে কাঁচা কবীরা গুনাহ। যেমন গীবত কবিরা গুনাহ নয় কি? আচ্ছা, গীবতের প্রসঙ্গ যখন এসেছে, একটা কথা আগে বলে রাখি। আমি হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভুলগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এটা গীবত নয়। এটা হল দ্বীনী দায়িত্ব পালন। হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি না। ব্যক্তি মাওলানা সা‘দ তার ঘরোয়া বিষয় বা তার ব্যক্তিগত বিষয়ে মানুষ হিসেবে তার ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। এই ধরনের কোনো কথা আমি বলিনি এবং কখনো বলব না– ইনশাআল্লাহ। কারণ সেটা গীবত।
এখন যা বলছি এটা খায়েরখাহী। এটাকে বলে ‘আন-নসীহা’। একটা হল গীবত। আরেকটা হল নসীহা। নসীহা মানে কল্যাণকামিতা। গীবত মানে, অন্যের দোষ চর্চা। আরেকজন দ্বীনের বিষয়ে ভুল বলছে, সে ভুল ধরিয়ে দেওয়া গীবত নয়; বরং কল্যাণকামিতা। যে ভুল করেছে তার জন্যও কল্যাণকামিতা। যাদের সামনে ভুল বলা হচ্ছে তাদের জন্যও কল্যাণকামিতা। যারা এ ভুলের এতাআত করবে তাদের জন্যও কল্যাণকামিতা। এটাকে আরবীতে বলে আন-নসীহা, কল্যাণকামিতা– খায়েরখাহী। এটাকে গীবত বলে না। গীবত হল দোষচর্চা, পরনিন্দা। গীবত হারাম।
এখন দেখা যাচ্ছে আমরা ভুলগুলোর ইসলাহ না করে লড়াই ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে গেছি। এটাই তো ছিল বড় গোনাহ। এরপর আবার একে অপরের গীবত করে যাচ্ছি। এখন একজন আরেকজনের গীবত করে কি করে না? করে। সেটা হারাম কি না? হারাম। এজন্য সেটা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু দুঃখের কথা হল, এ গীবত থেকে তো বাঁচে না, উল্টো আলেমরা যে দ্বীনী দায়িত্ব পালন করেন, সেটাকেই গীবত বলছে। তাদের কেউ কেউ ওয়াজাহাতী জোড়গুলোর নাম দিচ্ছে গীবতের মজলিস। আমি মাওলানা সা‘দ সাহেবের কী গীবত করেছি? ব্যক্তি মাওলানা সা‘দের কোনো সমালোচনা কি আমি করেছি? তার বক্তব্য যে গোমরাহির বক্তব্য সেটা নিয়ে আমি কথা বলছি, আল্লাহ আমাদের সবাইকে গীবত থেকে রক্ষা করুন– আমীন।
প্রথমত, গীবতের গুনাহ থেকে আমরা সবাই বাঁচার চেষ্টা করি। দুই, মিথ্যা বলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। কারো সাথে যখন আমার দ্বন্দ্ব হয়ে গেছে এখন কি তার ব্যাপারে মিথ্যা বলা জায়েয হয়ে যাবে? না। কেউ মিথ্যাচার করেনি, কিন্তু আপনি বললেন যে, মিথ্যাচার করেছে– এটা কি অপবাদ হবে না? কারো ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ লাগানো জায়েয আছে? না। এমনকি হকের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার জন্যও কি মিথ্যা বলা জায়েয হবে? তাহলে কেউ যদি গলত রাস্তায় থাকে এবং সে গলত রাস্তার দিকেই দাওয়াত দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলে, জায়েয হবে? কিছুতেই জায়েয হবে না। আফসোস! অন্যকে ধোঁকা দিচ্ছে, মিথ্যা বলছে, পরনিন্দা করছে, অপবাদ দিচ্ছে, গালমন্দ করছে, নাম বিগড়াচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এইসবের সয়লাব। তথ্যসন্ত্রাস এবং বাস্তবতাবিকৃতির কোনো শেষ নেই। এখন তো এমনকি হাতও ব্যবহার করছে, লাঠি ব্যবহার করছে। এ কাজগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আছে? এগুলো কি তাবলীগের ঐতিহ্যের সাথে মিলে? না। হকের দাওয়াত যারা সহীহ পদ্ধতিতে দেয় এবং হকের ওপরে আছে তাদের জন্যও কি এ কাজগুলো জায়েয হবে? কখনো হবে না। আর যারা গলত রাস্তায় আছে, গলতের দিকে দাওয়াত দেওয়ার সময় তাদের জন্য এ কাজগুলোর কোনোটা করা জায়েয হবে? হবে না। এগুলো কাঁচা কবীরা গুনাহ। আপনারা যারা উলামায়ে কেরামের সঙ্গে থেকে হকের রাস্তায় আছেন, হক তরীকায় দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করবেন, তাদের জন্যও এ কাজগুলো হারাম। খবরদার! কেউ এ ধরনের কোনো কাজ করবেন না। আর যারা এতাআতের নাম নিয়ে গলত রাস্তায় আছে, বিপথগামী হয়ে আছে, তারা তো এমনিতেই গলত রাস্তায় আছে। আবার সাথে যদি এসমস্ত গুনাহের কাজ করে, এসমস্ত কবীরা গুনাহের কোনোটা করে, তাহলে নিজের ওপর আরো বেশি জুলুম করল। এজন্য আমি তাদেরকেও হাতে পায়ে ধরে বলব, প্রথম অপরাধ থেকেই তো এখনো বের হয়ে আসতে পারেননি। মেহেরবানী করে তৃতীয় অপরাধ আট-দশটা মারাত্মক কবীরা গুনাহের সমষ্টি– এ তৃতীয় অপরাধটা করবেন না। আল্লাহর ওয়াস্তে ভাবুন! যদি আপনার ধারণা অনুযায়ী আপনারটাও তাবলীগের কাজ হয়– তাহলে তাবলীগের ঐতিহ্য ঠিক রাখুন! যারা হকের ওপরে আছে তাদের জন্য তো তাবলীগের ঐতিহ্য ঠিক রাখা আরো বেশি জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক নসীব করুন– আমীন।
আপনারা মনে করেছেন এটা আমার আলোচনার ভূমিকা। এটা আমার আলোচনার ভূমিকা নয়; বরং এটা আমার আলোচনার প্রথম কথা। এটা ভূমিকা নয় যে, আমি আসলে অন্য কথা বলার জন্য এটা ভূমিকা স্বরূপ বলছি; না, বরং আমি এ কথাগুলোও মাকসাদ হিসেবে বলতে চাচ্ছি এবং এ কথাগুলো আমার নিকট বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে আমি আগে বলেছি। আমার আলোচনার এটা প্রথম পর্ব। আমি সবার হাতে পায়ে ধরে বলছি, মেহেরবানী করে এ কাঁচা কবীরা গুনাহগুলো আমরা কেউ না করি।
আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব
অনেক ভাই-ই এটা বুঝতে চান। আর বুঝতে যেহেতু চান এজন্য কিছু কথা বলার জরুরত হয়ে যায়। তারা বুঝতে চান যে, আসলেই হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেব এমন কী ভুল করে বসেছেন, যার কারণে এখন হুযূররা বলছেন যে, ইসলাহ হওয়ার আগে তিনি ইজতেমায় যেন না আসেন। এবং এ দেশে তার এতাআতের নামে কোনো কাজ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ইসলাহ হয়ে যায়; বরং কাজ হবে তার পূর্ব-পুরুষগণ, যারা আমাদের আকাবির ছিলেন, তাদের হাতেগড়া যে মুরুব্বীগণ আমাদের এ দেশে আছেন তাদের তত্ত্বাবধানে।
এদেশে ছিলেন হযরত মাওলানা আবদুল আযীয রাহ., হযরত মাওলানা আলী আকবর রাহ.। এই যে মাওলানা যোবায়ের সাহেব, মাওলানা রবিউল হক সাহেব, ওনাদের হাতে গড়া নয়? আমি যাদের নাম নিলাম নতুন প্রজন্ম তো তাদের নামও শোনবে না। এরকম আরো উলামায়ে কেরাম ছিলেন। আহহা! নিজেদের ইতিহাস ভুলে যাওয়া কত বড় অন্যায়। কত বড় অপরাধ! এদেশে তাবলীগের কাজ মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে শুরু হয়েছে, নাকি অনেক আগে শুরু হয়েছে? অনেক আগে। এদেশে ওয়াসিফুল ইসলাম ভাই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করেছেন? নাসিম ভাই শুরু করেছেন? না। কারা শুরু করেছেন? উলামায়ে কেরাম! খুলনার হযরত মাওলানা আবদুল আযীয রাহ., মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রাহ., হযরত মাওলানা আলী আকবর ছাহেব রাহ.। আচ্ছা, তাঁরা কি কাজ শিখেছেন মাওলানা সা‘দ সাহেবের কাছে? না। মাওলানা সা‘দের আব্বার কাছে? না। তারা বরং তাবলীগের প্রথম সারির আকাবিরের সোহবত পেয়েছেন। সুতরাং এ লোকদের হাতে গড়া মানুষের তত্ত্বাবধানে কাজ চলতে থাক। আর তার ইসলাহ হলে তিনি আসবেন।
মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভুলগুলো কী?
তো মানুষ বুঝতে চায়– এমন কী মারাত্মক ভুল করে ফেলেছেন, যেটার ইসলাহের কথা আপনারা বলছেন? ভুল কার না হয়? তবে একটা হল ব্যক্তিগত আমলের ভুল, আরেকটা হল এমন ভুল যে, শরীয়তের বিধানে আঘাত পড়ে। আকীদাতে আঘাত পড়ে। দুটোর মাঝে পার্থক্য আছে কি না? আছে। বাংলা ভাষায় আমাদের যে সাধারণ ভাষা, আমরা ভুল শব্দটিকে পাইকারিভাবে অনেক প্রকারের জন্য ব্যবহার করি। বাংলা ভাষায়ও প্রত্যেকটার জন্য বিভিন্ন শব্দ থাকবে। সেটা যারা বাংলা ভালো জানেন তারা বলবেন। তো ভুলের অনেক প্রকার আছে। যেমন আপনি রোযা রেখেছেন– তারপর আজকে যে রোযা রেখেছেন, তা ভুলেই গেছেন। পিপাসা লেগেছে। সামনে পানি পেয়েছেন অন্য দিনের মত আজকেও এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলেছেন। পানি খাওয়া শেষ! এখন মনে পড়েছে হায়! আমি তো আজকে রোযা! মনেই নেই। পানি তো খেয়ে ফেললাম। এরকম হয় কি না? হয়। এটাও তো ভুল, তাই না? এ ভুল মাফ কি না? মাফ! রোযাটা কাযা করতে হবে না।
আচ্ছা, আপনার স্পষ্ট মনে আছে যে আপনি রোযা। বিলকুল ভুলেননি। অজু করতে গিয়ে কুলি করার সময় বে-খেয়ালিতে একটু পানি গলায় ঢুকে গেছে! অসতর্কতার কারণে বে-খেয়ালিতে পানি ঢুকে গেছে। কিন্তু আপনার মনে আছে আপনি রোযা। পানি যখন ঢুকে তখন বললেন হায়! আমি তো রোযা। পানি ঢুকে গেছে! এটাও তো ভুল, তাই না? আরবীতে এ ভুলকে বলে ‘খতা’। আগে যে ভুলের কথা বলেছি সেটা হল, ‘নিসয়ান’। অর্থাৎ রোযার কথা ভুলে পানি পান করে ফেলেছে বা কিছু খেয়ে ফেলেছে। আগেরটা নিসয়ান, আর এটা খতা, এখানেও গুনাহ হবে না। কিন্তু রোযার কাযা লাগবে। ভুলে ভুলে পার্থক্য হল কি না?
তিন নাম্বার, ছেলের বয়স ১৭ বছর। রমযানে পরীক্ষা দিয়ে রেখেছে সরকার। সরকারের তো আর এগুলোর হিসাব-কিতাব নেই। সেক্যুলার সরকারের আবার এগুলোর হিসাব-কিতাব থাকে নাকি? কিছু ব্যতিক্রম তো আছেই। কিন্তু সাধারণ নিয়ম হল দ্বীনের বিষয়গুলোকে খেয়াল করে না। না হয় পরীক্ষাটা তোমার রমযানে দেওয়ার দরকার কী? আচ্ছা, তো ছেলে সেহরী করে রোযার নিয়ত করেছে। কিন্তু মা বলেছে যে আরে, তুই রোযা ভেঙ্গে ফেল! না হয় তোর পরীক্ষা ভালো হবে না। নাম্বার কম পাবি, রোযাটা ভেঙ্গে ফেল! ছেলে ভাঙ্গতে না চাইলেও মা তাশকিল করে ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। তো ছেলের জন্য মায়ের কথা ধরে রোযাটা ভাঙ্গা জায়েয হয়েছে? এটা ছেলের জন্য ভুল হয়েছে কি না? হয়েছে। এ ভুল যে করল, এটা কোন্ পর্যায়ের ভুল? এক রোযার জন্য কয় রোযা কাফফারা? এটাও তো ভুল। কিন্তু এ ভুলের গুনাহ হবে কি না? হবে। কাফফারা দিতে হবে কি না? দিতে হবে। তাহলে আপনারা সব ভুলকে কেন এক মনে করেন?
ভুল কার না হয়, ভুল সবারই হয়, তা ঠিক আছে, কিন্তু সব ভুলের বিধান কি এক? সব ভুলের বিধান এক নয়। ভুলে ভুলে পার্থক্য আছে। ঠিক এরকম ব্যক্তি পর্যায়ের ভুল, ঘরোয়া ভুল, আমলের ভুল, আর আকীদার ভুল এক মাপের না। এক কথা না। ভুল কথা ঘরে বসে বললাম। দুজনে শুনল এবং তারাও বোঝে যে, এটা ভুল বলেছে, আমরা তা মানব না এবং কেউ মানেনি। তার ভুল তার মুখেই থেকে গেল। আরেকটা হল ভুল বললাম, লাখ লাখ মানুষের সামনে। সবাই ভাবছেন যে, তিনি হেদায়েতের কথা বলছেন, তিনি তাবলীগের কাজের যিম্মাদার। তিনি আমাদের দ্বীনী রাহবার। তিনি যা বলেন, কুরআন-হাদীস থেকে বলেন। এভাবে গ্রহণ করে নিচ্ছে, অথচ বলা হচ্ছে গলত কথা; এটা আর ঘরে বসে একজন ভুল কথা বলছে, দুটো কি এক সমান? ওটাতে চুপ থাকা যায়। কিন্তু এটাতে চুপ থাকা যাবে?
তো, আলেমরা বোঝেন যে, ভুলে ভুলে পার্থক্য আছে। বুঝে-শুনেই তো আলেমরা বলছেন এ কথা যে, ভাই এত মারাত্মক ভুল করা হচ্ছে, যার কারণে এখন আর এতাআত করা যাবে না; যতক্ষণ না তিনি ইসলাহ হন। এতাআতী ভাইয়েরা তো বলে যে, ভাই! ভুল কার না হয়? আহহা! তুমি যে কথা বোঝ, সে কথা কি আলেমরা বোঝেন না? ভুল তো হয়, সবারই হয়। কিন্তু ভুলে ভুলে পার্থক্য আছে।
গতকালও আমি তার বয়ান শুনেছি। হায়াতুস সাহাবা থেকে একটা আরবী ইবারত পড়ছেন। সেখানে مِقْسَم-এর জায়গায় مُقْسَمপড়লেন। শুদ্ধ হল م-এর নিচে যের। এখন কি আমি বাহিরে এলান দিব যে, তিনি مِقْسَم কে مُقْسَم পড়েছেন? কোনো দরকার আছে? এটা হয়ত বে-খেয়ালিতে হয়ে গেছে। বা এ শব্দে م -এর নিচে যের এটা তার জানা নেই। হতে পারে। এটাও এক ধরনের ভুল। আরেকটা হল বয়ানের মধ্যে একেবারে শরীয়তের বিধানের অপব্যাখ্যা হচ্ছে । এমন কথা বলা হচ্ছে, যাতে শরীয়তের বিধানে হাত পড়ছে। আকীদায় হাত পড়ছে। সেটা আরেক জিনিস। আমি ওই ভুলে চুপ করে থাকতে পারি, যেখানে مِقْسَم কে مُقْسَم পড়েছে। কিন্তু এ ভুলে চুপ করে থাকতে পারি না। এখন বুঝতে হবে যে, কেন উলামায়ে কেরাম নারাজ?
সবচে মারাত্মক ভুল
তার যে ভুলগুলোর কারণে সবাই পেরেশান। সেগুলোর একটা বলছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন হেদায়েতের জন্য। তাঁদের সীরাত এবং জীবনকে আল্লাহ তাআলা উম্মতের জন্য হেদায়েতে বানিয়েছেন। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ উত্তম আদর্শ। নির্ভুল আদর্শ।
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ .
নবী-রাসূলের সীরাত আমরা পড়ব এবং আলোচনা করব– সেখান থেকে হেদায়েত গ্রহণ করার জন্য। নাকি এমনভাবে আলোচনা করব যে, মনে হয় যেন ভুল ধরা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। নবী-রাসূলদের সীরাত এভাবে আলোচনা করা জায়েয আছে? নবী-রাসূলের সীরাত-জীবনী বা তাঁদের কোনো ঘটনা এমনভাবে যদি কেউ আলোচনা করে যে, মনে হয় যেন নবীর ভুল ধরছে তাহলে সেটা কি জায়েয হবে? এ নাজায়েয কাজটা কি ছোট নাজায়েয না বড় নাজায়েয? এ রকম ভুল যদি কেউ করে এটা ছোট ভুল না বড় ভুল?
মাওলানা সা‘দ সাহেবের মারাত্মক এক সমস্যা হল, তিনি কখনো কখনো নবী-রাসূলদের সীরাত-জীবনী থেকে বিভিন্ন ঘটনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন, যেটা একেবারে অসতর্ক উপস্থাপন। যেন নবীর ভুল ধরে দিচ্ছেন। যেন বলছেন যে, এখানে নবীর ভুল হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নবীর অনুসরণ করা যাবে না। এ ভুল তিনি করেছেন, তোমরা খবরদার! এ ভুল করবে না। এমন ঢং এবং এমন ভঙ্গিতে তিনি বিভিন্ন সময় নবী-রাসূলদের সীরাত আলোচনা করেছেন। এ কাজটা নারাজ হওয়ার মত কি না? নারাজ হওয়ার মত। যদি এ ভুলের কেউ ইসলাহ গ্রহণ না করে বা একবার বলে যে, আমি রুজু করলাম, তারপর আবার সে ভুলই করে, একটা থেকে রুজু করে কিন্তু ঠিক এ ধরনের আরেক ভুল করে। তাহলে তার প্রতি কি আর আস্থা থাকে?
এ কাজ তিনি মূসা আ.-এর ব্যাপারে করেছেন। ইউসুফ আ.-এর ব্যাপারে করেছেন।
আপনারা অনেকে হয়ত জানেন যে, মূসা আ.-এর ব্যাপারে তিনি যেটা বলেছেন, পরে রুজু করেছেন। সেটা আমি পরে বলছি। আগে বিষয়টা শুনুন। কত বড় কঠিন আপত্তিকর কথা তিনি মূসা আ.-এর ব্যাপারে বলেছেন। আমি চাচ্ছি হুবহু তার উর্দূ বক্তব্যটা বলতে। আপনারা বিরক্ত হচ্ছেন না তো? বাংলায় অনুবাদ করলেও চলে, কিন্তু চাচ্ছি হুবহু বলি। তিনি যে ভাষায় বলেছেন, সে ভাষাটা সামনে আসুক, তারপর প্রয়োজনে অনুবাদও করব।
দেখুন! যে কথাটা তিনি বলেছেন, সেটা অনেক জায়গায় বলেছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে বলেছেন। যখন দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে তার সমস্ত আপত্তিকর কথার ওপরে একটা ফতোয়া আসল, ফতোয়া লেখা হয়েছে এখনো প্রকাশিত হয়নি, তিনি লোক পাঠিয়েছেন যে, আমি আমার ভুল থেকে রুজু করছি। ‘রুজু করা’ মানে ফেরত আসা। মানে ভুল স্বীকার করে ভুল থেকে আমি ফেরত আসতে প্রস্তুত। যেটা বলেছি সেটা ভুল ছিল, সহীহ কথা এই। আমি ভুল থেকে সহীহ কথার দিকে ফিরে আসতে প্রস্তুত। এ বলে লোক পাঠিয়েছেন। তখন যে লোকেরা দারুল উলূম দেওবন্দে এসেছে, তাদের হাতে সা‘দ সাহেবের যে যে কথাগুলো আপত্তিকর এবং গলত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী, নবীদের শানে এসমস্ত কথার কারণে বে-আদবী হয়, সেগুলোর একটা কপি দেওয়া হয়েছে। যেন তিনি দেখতে পারেন যে তার ভুলগুলো কী কী? দেখে তারপর যদি ফিরে আসে। আলহামদু লিল্লাহ দেখার পর তিনি একটা চিঠি পাঠিয়েছেন, যেটা তার প্রথম রুজুনামা। ‘নামা’ মানে পত্র। রুজুর পত্র। অর্থাৎ তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে সহীহ কথার দিকে চলে আসছি– এ মর্মে যে লেখা দিয়েছেন, সে লেখার নাম হল রুজু নামা। সবগুলো আমার কাছে আছে। কাগজগুলো সব আছে।
প্রথম রুজু নামার মধ্যে তিনি পত্রের শুরুতে ভুল স্বীকার করেছেন– যে আপনারা আমার বক্তব্যের যেগুলোকে আপত্তিকর ধরেছেন, আমি আমার ভুল স্বীকার করলাম এবং সবকিছু থেকে রুজু করলাম। তিনি লিখেছেন–
… اس سلسلہ میں جن سابقہ قدیم بیانات کا حوالہ تحریر گرامی میں دیا گیا ہے، احقر اسکو اپنا ایک دینی فریضہ سمجھتے ہوۓ اپنی جانب سے واضح الفاظ میں رجوع کرتا ہے، اور اللہ تعالی سے عفو ومغفرت کا طالب ہے…
কিন্তু একই পত্রের শেষে তিনি যা লিখেছেন, তার মর্ম এমন দাঁড়ায় যে, আপনারা আমার বিষয়ে যা যা লিখেছেন তা আমার ব্যাপারে বদগুমানি করে লিখেছেন। আমি এটাকে বদগুমানি মনে করি এবং আমি যা বলেছি, তার পক্ষে আমার কাছে যত হাওয়ালা-উদ্ধৃতি এবং রেফারেন্স আছে, সেগুলো আমি পাঠাব। তার উর্দূ বক্তব্যের অংশবিশেষ এই –
…آپ جیسے عالمی علمی دینی مرکز کے اہم ذمہ دار حضرات کو احقر و اسکے ساتھیوں کے افکار و خیالات، موقف و مسلک میں کسی قسم کی جو بدگمانی ہوئی ہے احقر اس کو نہایت افسوس ناک اور دعوت و تبلیغ والے مبارک عمل اور اس کے مرکز کے ساتھ عدم تعاون سمجھتا ہے …
نیز احقر کے بیانات پر جو اعتراض ہیں ان کے متعلق احقر کی کم علمی کے با وجود جو معلومات اور ان کے علمی مراجع وغیرہ ہیں آئندہ ارسال کرنے کی کوشش کی جائیگی۔
তাহলে বলুন, রুজু হল? আপনার কাছে যদি আপনার বক্তব্যের রেফারেন্স থাকে এবং আপনার নিকট আপনার কথা সহীহ বলে জানাচ্ছেন, তাহলে রুজু করবেন কেন?
এ লেখার ভিত্তিতে দারুল উলূম দেওবন্দ কি তার ফতোয়া ফেরত নিতে পারে? এজন্য দারুল উলূম দেওবন্দ চিঠি লিখেছে যে, আপনার লেখার শুরু থেকে রুজু বুঝা গেলেও শেষের বক্তব্য থেকে ভিন্ন কিছুই বুঝা যায়। কাজেই দারুল উলূম দেওবন্দ আপনার এসমস্ত বক্তব্যের কারণে যে ফতোয়া লিখেছে, আপনার বিষয়ে যে মাওকিফ এবং অবস্থান গ্রহণ করেছে সেটা এখন খাস লোকদের হাতে আমরা দিয়ে দিচ্ছি; মানে উলামায়ে কেরাম এবং তাবলীগেরই খাস লোক, যাদের এটা জানা দরকার এবং এ বিষয়ে যারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
কেউ কেউ কপি সংগ্রহ করে নিজেদের থেকে নেটে দিয়ে দিয়েছে। পরে দারুল উলূম দেওবন্দ তার ওয়েব সাইটে ফতোয়ার কপি দিয়ে দিয়েছে। ফতোয়া এসে গেল। আসার কিছুদিন পর আবার তিনি আরেকটা রুজুনামা পাঠিয়েছেন। সেটা কিন্তু নতুন কিছু না; বরং প্রথম রুজুনামার শেষে যে লিখেছিলেন– আপনারা আমার ব্যাপারে বদগুমানি (কুধারণা) করেছেন। আমি এটাকে বদগুমানি মনে করি এবং আমি যা বলেছি, সেগুলোর পক্ষে আমার কাছে যত হাওয়ালা-উদ্ধৃতি এবং তথ্য আছে, সেগুলো সব আমি পাঠাব–
এ কথাগুলো মুছে দিয়েছেন, এগুলো বাদ দিয়ে শুরুর কথাগুলো রেখে দস্তখত করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্যস! এটাই হল দ্বিতীয় রুজু নামা। এটা পাঠানোর তারিখ হল, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হিজরী। আর দস্তখত করেছেন ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হিজরি। তারিখটা মনে রাখবেন। ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হিজরী।
দারুল উলূম দেওবন্দ এটা পাওয়ার পর বলল যে, ঠিক আছে। এখন যা বক্তব্য, তার ওপর তো আর আপত্তি নেই। এজন্য এটা দারুল উলূম গ্রহণ করেছে এবং একটা পরচা পাঠিয়েছে যে, আপনার এটা আমরা পেয়েছি। এটা রুজুনামা হিসেবে দারুল উলূম দেওবন্দের আলেমগণ এবং মুফতীগণ গ্রহণ করছেন। আমরা বিস্তারিত লেখা পরে পাঠাব।
দুদিন পর অর্থাৎ ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হিজরীতে বিস্তারিত লিখে পাঠানো হয়েছিল নিজামুদ্দীনে। পাঠানোর পরে এখনো বার্তাবাহক নিযামুদ্দীনে পৌঁছায়নি এমনসময় তাঁদের কাছে তথ্য এসে গেছে যে, আজকে সকালে ফজরের পর অর্থাৎ ১৩ রবিউল আউয়াল আবার তিনি হযরত মূসা আ.-এর ব্যাপারে সে কথাগুলোই বলেছেন। অতিরিক্ত আরো হযরত ইউসুফ আ.-এর ব্যাপারে নতুন করে আরো কথা। সেটাও কিন্তু নতুন নয়। কারণ আগেও আরো বলেছেন।
হায়! এটা কী হল!? মাত্র দুদিন আগে উনি রুজু করেছেন। দুদিন পরেই আবার ফজরের পরে বয়ানের মধ্যে ঘুরেফিরে সেই কথাগুলোই বলছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতী আবুল কাসেম নোমানী ছাহেব যাদেরকে পাঠিয়েছেন, তাদেরকে ফোন করে ফেরত আসতে বললেন।
দুদিন আগে রুজু করলেন, কিন্তু আবার ঘুরেফিরে সে কথাই বলছেন, তাহলে এটা কি রুজু হল? দৃশ্যত দুটি রুজু হল। রুজুনামা এক, রুজুনামা দুই। কিন্তু আসলে রুজু হল না। রুজুর মতো রুজু হলে এক রুজুতেই কাজ হয়ে যায়। আর নামের রুজু হলে দশবার রুজুর পরও কাজ হয় না।
যাইহোক, রুজুর মাত্র দুদিন পর অর্থাৎ ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হি. ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে নিজামুদ্দীনে বসে তিনি যেটা বলেছেন–
دعوت کا چھوٹ جانا یہ امت کی گمراہی کا یقینی سبب ہے، دعوت کا چھوٹ جانا یہ امت کی گمراہی کا یقینی سبب ہے، دعوت کا چھوٹ جانا یہ امت کی گمراہی کا یقینی سبب ہے، علماء نے لکھا ہے کہ دعوت الی اللہ کا چھوٹ جانا گمراہی کا سبب ہے بلکہ یہاں تک لکھا ہے مفسرین نے کہ موسی علیہ السلام نےاپنی قوم کو پیچھے چھوڑ کر اللہ کی رضا اور اس کو خوش کرنے کے لئے تنہا عبادت میں مشغول ہوگئے اور قوم پیچھے رہ گئیی، اللہ نے پوچھا کہ { وَمَا أَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَامُوسَى} [طه: ৮৩] اے موسی علیہ السلام تمہیں جلدی میں کس نے ڈال دیا؟ موسی علیہ السلام نےعرض کیا کہ وہ لوگ پیچھے رہ گئے۔ میں آپ کو راضی کرنے کےلئے آگے بڑھ گيا۔
دھيان سے سننا بات کو، اللہ نے فرمايا کہ اے موسی علیہ السلام! ہم نے تمہارے پیچھےتمہاری قوم کو فتنہ اور آزمائش ميں ڈال ديا، علماء نے لکھا ہے کہ وجہ يہ ہوئی کہ موسی علیہ السلام بجاۓ قوم کو ساتھ لےکر آنے کے قوم کو چھوڑ کرآگئے، ৪০ رات موسی علیہ السلام نے عبادت ميں گزاری، اللہ کی شان کہ چھ لاکھ بنی اسرائیل جو سب کے سب ہدایت پرتھے، ان ميںسے৫ لاکھ ৮৮ ہزار ৪০ رات کی چھوٹی سی مدت ميں گمراہ ہوگئے ۔ صرف ৪০ رات موسی علیہ السلام نے دعوت الی اللہ کا کام نہيں کيا، ميں یہ سمجھ کر کہرہاہوں کہ صرف ৪০ رات موسی علیہ السلام نے دعوت کا عمل نہيں کيا، ৪০رات موسی علیہ السلام عبادت ميں مشغول رہے ،اور اس ৪০ رات کے عرصہ ميں ৫ لاکھ ৮৮ ہزار بنی اسرائیل سب کے سب بچھڑے کی عبادت پر جمع ہوگئے۔
যারা উর্দূ বুঝেন তারা তো বুঝেই গেছেন যে, কী মারাত্মক কথা। কিভাবে মহান এই নবীর উপর আক্রমণ করা হল, তিনি নাকি নিজ ইচ্ছায় (নির্জনে মাওলার ইবাদাতের শওক পূরা করার জন্য) দাওয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। এবং কিভাবে নবীর উপর বনী ইসরাঈলের শিরকে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে চাপিয়ে দিলেন!! প্রেক্ষাপট হল, হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা তূর পাহাড়ে আসতে বলেছেন। তাঁর উম্মত অর্থাৎ বনী ইসরাইলের কিছু লোককেও সাথে নিয়ে আসতে বলেছেন। হুকুম হল, তূর পাহাড়ে চল্লিশ রাত থাকতে হবে।
হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক কিছু লোককে নিয়ে তূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। রওয়ানা হওয়ার সময় হযরত হারূন আলাইহিস সালামকে বললেন–
اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ.
আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সবকিছু ঠিকঠাক রাখবে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। –সূরা আরাফ (৭) : ১৪২
নির্বাচিত কিছু লোককে নিয়ে যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন, কাছাকাছি পৌঁছার পর মহব্বত ও আগ্রহের আতিশয্যে তিনি সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে চলে গেলেন। এভাবে মীকাত বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। আল্লাহ তাআলা তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন–
وَمَا أَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ يَامُوسَى، قَالَ هُمْ أُولَاءِ عَلَى أَثَرِي وَعَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَى.
এবং (মূসা যখন সঙ্গের লোকজনের আগেই তূর পাহাড়ে চলে আসলেন, তখন আল্লাহ তাকে বললেন,) হে মূসা! তুমি তাড়াহুড়া করে তোমার সম্প্রদায়ের আগে আগে কেন আসলে? তিনি বললেন, ওই যে তারা আমার পেছনেই আসছে। হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার কাছে তাড়াতাড়ি এসেছি এজন্য, যাতে আপনি খুশি হন। –সূরা ত্বহা (২০) : ৮৩-৮৪
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন–
كَانَ اللهُ عَالِمًا وَلَكِنْ قَالَ: وَما أَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ ، رَحْمَةً لِمُوسَى، وَإِكْرَامًا لَهُ بِهَذَا الْقَوْلِ، وَتَسْكِينًا لِقَلْبِهِ، وَرِقّةً عَلَيْهِ، فَقَالَ مُجِيبًا لِرَبِّهِ: هُمْ أُولاءِ عَلى أَثَرِي.
(তাফসীরে কুরতুবী খ- : ১১ পৃষ্ঠা : ২৩৩, তাফসীরুল বাসীত, ইমাম ওয়াহিদী, খ- : ১৪ পৃষ্ঠা : ৪৮৭)
এই বক্তব্যের সারকথা হল, আল্লাহ তাআলার তো জানাই ছিল– কেন মূসা আলাইহিস সালাম সামনে এগিয়ে গেছেন, তারপরও ইকরাম ও মহব্বত প্রকাশ করে একথা জিজ্ঞেস করেছেন। তখন উত্তরে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে আমার রব! তারা তো আমার পেছনে আসছেই। আমি একটু আগে এসে গেছি আপনার সন্তুষ্টি লাভের আশায়।
এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁকে বনী ইসরাঈলের হালাত শুনালেন, যাদেরকে তিনি হযরত হারূন আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে রেখে এসেছেন। শুনালেন যে, তারা এক পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে এবং তাতে অকৃতকার্য হয়েছে। তারা হযরত হারূন আলাইহিস সালামের নসীহত শুনেনি; বরং সামিরীর চক্রান্তে তারা গোমরাহ হয়ে গেছে।
এই হল ঘটনার প্রেক্ষাপট। সূরা বাকারা, সূরা আরাফ ও সূরা ত¦হার মধ্যে এই ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। সূরা বাকারার ৫১ নম্বর আয়াত, সূরা ত্বহার ৮০ ও ৮৬ নম্বর আয়াত এবং সূরা আরাফের ১৪২ নম্বর আয়াত থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের তূর পাহাড়ে যাওয়াটা ছিল আল্লাহর আদেশে। সূরা আরাফের ১৪৮-১৫৪ আয়াত থেকে একথাও স্পষ্ট হয় যে, তূর পাহাড়ের এই সফরেই তিনি ‘তাওরাত’ লাভ করেন।
সূরা আরাফের ১৪২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে–
وَقَالَ مُوسَى لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ .
মূসা তাঁর ভাই হারূনকে বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সবকিছু ঠিকঠাক রাখবে এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না। –সূরা আরাফ (৭) : ১৪২
হযরত হারূন আলাইহিস সালামও নবী ছিলেন। এরপর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাঁকে নিজের স্থলাভিষিক্তও বানিয়েছেন এবং বলেছেন–
أَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ .
তুমি তাদেরকে ইসলাহ করতে থাক। অনিষ্টকারীদের অনুসরণ করো না।
সূরা ত্বহার ৯১-৯৪ আয়াতে পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখিত হয়েছে যে, হযরত হারূন আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের নসীহত অনুযায়ী আমলও করেছিলেন। কিন্তু বনী ইসরাঈলের জাহালাত যে, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এই পরীক্ষায় কামিয়াব হয়নি। সামিরীর ধোঁকায় পড়ে বাছুরের পূজা করতে শুরু করেছে।
এই হল ঘটনার প্রেক্ষাপট। এই হল কুরআন-উল্লেখিত বিবরণ। কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব হাফিযাহুল্লাহু তাআলা বলেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কওমকে সঙ্গে নিয়ে আসার পরিবর্তে তাদেরকে রেখে চলে এসেছেন। এরপর এখানে তিনি ৪০ রাত ইবাদাতে কাটিয়েছেন…। শুধু চল্লিশ রাত হযরত মূসা আলাইহিস সালাম দাওয়াতের আমল করেননি, ইবাদাতে মগ্ন ছিলেন। আর এই চল্লিশ রাতের মধ্যেই পাঁচ লক্ষ ছিয়াশি হাজার বনী ইসরাঈলের সবাই বাছুরের পূজা করতে শুরু করেছে।
নাউযুবিল্লাহ। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তো চিন্তা করে দেখুন, এটা কি শুধু মূসা আ.-এর ওপর আপত্তি হবে, না আল্লাহর হুকুমের ওপরেও আপত্তি হবে? আল্লাহর হুকুমের ওপর আপত্তি হবে। বলুন এটা কি মামুলী ভুল? নবীর শানে এটা বেয়াদবি কি না? তার বে-খেয়ালিতে হোক আর যেভাবেই হোক আল্লাহর হুকুমের ওপর হাত পড়ে কি পড়ে না? পড়ে। বলেছেন, বনী ইসরাঈল গোমরাহ হয়ে গেছে এ কারণে যে, মূসা আ. চল্লিশ রাত দাওয়াত ছেড়ে ইবাদতে লেগে গেছেন। পাঁচ লক্ষ ৮৮ হাজার বনী ইসরাঈল গোমরা হয়ে গেছে শুধু মূসা আ. দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দেওয়ার কারণে। বলুন– নাউযুবিল্লাহ।
আপনি কি নামাযের সময় দাওয়াতের কাজ করেন? না। ফরয নামায বাদ দিয়ে দাওয়াতের কাজ করা কি জায়েয আছে? না। তো, মূসা আ.-এর প্রতি আল্লাহর হুকুম ছিলো ৪০ রাতের জন্য তূর পাহাড়ে যাওয়া; উনি আল্লাহর হুকুমে গিয়েছেন, আর এখন আপনি বলছেন যে, দাওয়াত ছেড়ে দিয়েছেন। আপনি যখন যোহরের চার রাকাত ফরয নামায পড়েন, তখন কি দাওয়াতের কাজ করেন? গাশতের আমল করেন? আসরের ফরযের সময় গাশত করেন, না আসরের পরে করেন? পরে। তো মূসা আ. তো ৪০ রাত আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর কাছে গিয়েছেন। যেন সা‘দ সাহেবের আশা হল, ওই ফরয হুকুম না মেনে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। মানে যোহরের নামায বাদ দিয়ে দাওয়াতের কাজ করতে হবে। ধরুন, দশ-বারো মিনিট সময় লাগবে চার রাকাত পড়তে। এতক্ষণ সময়ও আপনি দাওয়াতের কাজ বাদ দিবেন কেন? এ পাঁচ-দশ মিনিট আপনার দাওয়াতে একজন মানুষ নামাযী হয়ে গেলে তো ভালোই। বিষয়টা খেয়াল করেছেন কি না?
এগুলো কথা? মূসা আ. নাকি দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন! আরে মূসা আ. আল্লাহর হুকুম পালন করছেন, আর আপনি বলছেন যে, দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। আর বনী ইসরাঈল নাকি গোমরা হয়েছে– মূসা আ.-এর কারণে! নাউযুবিল্লাহ! নবীর ওপরে দোষ দিয়ে দিচ্ছে! অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বনী ইসরাঈলের জন্য পরীক্ষা। আর বাহ্যিক কারণ ছিল, সামেরী নামের লোকটি– وَ اَضَلَّهُمُ السَّامِرِیُّ আল্লাহ বলেছেন, সামেরী তাদেরকে গোমরাহ করেছে। আর মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেন, মূসা আ. দাওয়াত ছেড়ে দেওয়ার কারণে তারা গোমরা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
তার কথার ভাবে বোঝা যাচ্ছে উনি
وَ مَاۤ اَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ یٰمُوْسٰی.
এখানে যে قَوْمِ (কওম) সে কওম আর পরের আয়াত–
قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِنْۢ بَعْدِكَ وَ اَضَلَّهُمُ السَّامِرِیُّ-এর قَوْم (কওম)কে এক মনে করছেন। উনার কথার দ্বারা এমনটা মনে হচ্ছে। অথচ সহীহ কওল হল, দুটো দুই জিনিস। وَ مَاۤ اَعْجَلَكَ عَنْ قَوْمِكَ-এর মধ্যে কওম হল যাদেরকে মূসা আ. সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। তাদের কেউ গোমরাহ হয়েছে এমন কথা কোনো সহীহ রেওয়ায়েতে আছে? তারা তো মূসা আ.-এর সঙ্গেই আছেন। তারা একটু পিছে ছিলেন, মূসা আ. একটু এগিয়ে গেছেন। আল্লাহ খুশি হবেন এজন্য আগে আগে গেছেন। যে কওম বা যাদেরকে সামেরী গোমরা করেছে তারা হল যারা হারুন আ. এর তত্ত্বাবধানে ছিল। একই সূরার মধ্যে দু আয়াত পাশাপাশি। প্রথম আয়াতের কওম আর দ্বিতীয় আয়াতের কওম এক না। যারা গোমরা হয়েছে তারা হল ঐ বনী ইসরাঈলগণ, যারা হারূন আ.-এর তত্ত্বাবধানে ছিল। কিন্তু তাঁর কথা শোনেনি। হারূন আ. তাদেরকে হাজারো বুঝিয়েছেন, কিন্তু তারা তার বুঝ মানেনি। বরং সামেরীর কথা শুনেছে এবং গোমরা হয়ে গিয়েছে।
দেখুন এখানে একসাথে কতগুলো ভুল?
এক. মূসা আ.-এর ওপর আপত্তি উত্থাপন করা যে, তিনি দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।
দুই. মূসা আলাইহিস সালামের উপর আপত্তি উত্থাপন করা যে, তাঁর দোষেই কওম গোমরাহ হয়েছে। নাউযু বিল্লাহ!
তিন. মূসা আলাইহিস সালাম তূর পাহাড়ে গিয়েছেন আল্লাহর হুকুমে। আর সা‘দ সাহেবের কথার দ¦ারা বোঝা যাচ্ছে, মূসা আলাইহিস সালাম নিজে নিজে গিয়েছেন একান্তে ইবাদতের জন্য। নাউযু বিল্লাহ!
আল্লাহ তাআলা বলছেন, সামেরীর কারণে কওম গোমরাহ হয়েছে। আর উনি দোষারোপ করছেন মূসা আলাইহিস সালামকে। আরো বলেছেন, আমি কিন্তু বুঝে-শুনে বলেছি! এগুলো কি ছোট ভুল?
এখন আপনি বলবেন, তিনি রুজু করেছেন। রুজুর হালাত তো আমি শুনিয়েছি। প্রথম রুজুর মধ্যে বলা হল, আমি আমার রেফারেন্স পাঠাব। এটার নাম কি রুজু? গোমরাহীর কথাগুলোর নাকি রেফারেন্স পাঠাবেন। যদি এ গোমরাহীর কথাগুলোর রেফারেন্স থাকেও সে রেফারেন্সকেও ভুল বলতে হবে? এসব তো গোমরাহীর কথা। এ গোমরাহীর কথা যদি কোথাও লেখাও থাকে, আর উনি সেখান থেকে উদ্ধৃতি দেন, সে উদ্ধৃতি কি গ্রহণযোগ্য?
হয়ত কিতাবটাই গ্রহণযোগ্য নয়। অথবা এ কিতাবের এ আলোচনাটা নির্ভরযোগ্য নয়। এগুলো আলেমরা বুঝবেন। রেফারেন্স দিচ্ছেন আপনি! গোমরাহীর কথার আবার রেফারেন্স হয় নাকি? রেফারেন্স দিলে সেটা ভুল রেফারেন্স। গোমরাহী কথার কি সহীহ রেফারেন্স সম্ভব?
দ্বিতীয় রুজুতে রেফারেন্স পাঠানোর কথা বলেননি। সরাসরি রুজু। কিন্তু রুজুর দু’দিন পরেই এক্কেবারে নিযামুদ্দীনের মিম্বারে বসে আবার এ কথাগুলো বলা হল। তাহলে রুজুর ওপরে কী আঘাতটাই না উনি করলেন! এটা কি রুজু?
এ দ্বিতীয় রুজুর পর এ কথাগুলোর আগে যখন দেওবন্দ বলল, আপনার রুজুর ওপর আমাদের আস্থা হয়েছে যে, আপনি রুজু করেছেন। আল্লাহর শোকর, আলহামদু লিল্লাহ! বড়রা এমনই করেন। ভুল হয়ে গেলে তারা রুজু করেন। এসব বলে তার প্রশংসা করল এবং নতুন মাওকিফ লিখে পাঠিয়ে দিল, কিন্তু সেদিন ফজরের পরে এসমস্ত কথা বলার কারণে দারুল উলূম দেওবন্দ সে লেখা ফেরত নিয়ে এসেছে।
মাওলানা সাদ সাহেব চাচ্ছেন, দারুল উলূম দেওবন্দ তাঁর ব্যাপারে তাদের মাওকিফ পরিবর্তন করুক। কিন্তু এজন্য তো এই মারাত্মক ভুলগুলোর ইসলাহ জরুরি। উনি চাচ্ছেন যে, ইসলাহ ছাড়াই তারা তাদের মাওকিফ পরিবর্তন করে নিক। এটা কি সম্ভব? সম্ভব না।
এখন করলেন কী? এক মাস পর আবার একটা রুজু নামা পাঠালেন। এটা হল তিন নাম্বার রুজু নামা। সেটার মধ্যে তিনি অন্যান্য কিছু বিষয়ে নিঃশর্ত রুজুর কথা বলেছেন, কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে লিখেছেন, আমি যা বলেছি, সেটা তো অমুকের কথা থেকে বুঝে আসে। অমুক জায়গা থেকে বুঝে আসে।
হায়রে! অথচ উনার ব্যাপারে যেসমস্ত আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচে ভয়াবহ এবং সবচে জঘন্য আপত্তি এটা, অথচ এটার মধ্যেই তিনি সিনাজুুরি করছেন। নাউযু বিল্লাহ! এটার মধ্যেই যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন। সবার আগে এখানে নিঃশর্ত রুজু করার দরকার ছিল। কিন্তু এখানে এসে তিনি নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান।
তিনি বলেন, আমার কথারও যুক্তি আছে, রেফারেন্স আছে, আমার কথাটা বাতিল না; বরং মারজুহ! তুলনামূলক দুর্বল কথা হিসাবে ধরা যেতে পারে, বাতিল না। আমার কথা বাতিল না হলেও আমি এটা থেকে ফেরত আসলাম। তবে আমার কথারও যুক্তি আছে। ওটার পক্ষেও রেফারেন্স আছে। এটাকে বাতিল বলা যায় না। সর্বোচ্চ মারজুহ বলতে পারেন। মানে তুলনামূলক দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা। নাউযু বিল্লাহ!
তাহলে বলুন এটা কি রুজু হল? কিছু জিনিসের তো নিঃশর্ত রুজু করেছেন আর কিছুর পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তখন দারুল উলূম দেওবন্দ এ যুক্তিগুলোর খ-ন করেছে এবং লিখে পাঠিয়েছে যে, আপনার এসব যুক্তি অহেতুক। আপনার কথাগুলো মারজূহ নয়; বরং বাতিল। এবং এ বাতিল কথাগুলোর পক্ষে আপনি যে রেফারেন্স দাঁড় করিয়েছেন রেফারেন্সগুলো থেকে আপনার কথা সাব্যস্ত হয় না। এসব দ্বারা আপনার বাতিল কথা প্রমাণ হয় না। কাজেই আপনি মূসা আ.-এর ব্যাপারে যা বলেছেন তা থেকে নিঃশর্ত রুজু করুন! এবং ঘরে বসে নয়, কাগজে রুজু নয়, বরং বলেছেন যেহেতু লাখো মানুষের সামনে, ওভাবেই জনতার সামনে আপনি আপনার ভুল থেকে নিঃশর্ত রুজু করুন! এ বলে দারুল উলূম চিঠি পাঠিয়েছে।
এরপর তার চতুর্থ রুজু নামা এসেছে। চতুর্থ রুজু নামার মধ্যে তিনি বলেছেন যে, আচ্ছা, ঠিক আছে, মূসা আ.-এর এ ঘটনার ব্যাপারেও আমি নিঃশর্ত রুজু করলাম। চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন। দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম সাহেব এ চিঠি গ্রহণ করেননি। বলেছেন যে, আমাদের কাছে কাগুজে রুজু করলে কী হবে? এ রুজু নামা আমাদের দরকার নেই। বলেছেন উনি লাখ মানুষের সামনে, উনি সেভাবেই রুজু করুন। দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম সাহেব কাজটা ঠিক করেছেন না বে-ঠিক করেছেন? ঠিক করেছেন। এখন আশা করি বুঝতে পেরেছেন। সা‘দ সাহেবের রুজুর হাকীকত।
হযরত মূসা আ.-এর ব্যাপারে মাওলানা সা‘দ সাহেব যা বলেছেন এবিষয়ে একথাও জানা থাকা ভালো যে, উনি যখন এধরনের আপত্তিকর মন্তব্য আরো কঠিন ভাষায় হাতুরাবান্ডার ইজতিমায় ১৪৩৪ হিজরীতে বলেছিলেন তখনই হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ যায়েদ মাযাহেরী দামাত বারাকাতুহুম বিস্তারিত এক চিঠির মাধ্যমে সতর্ক করেন। আফসোস! তিনি ঐ দলীলসমৃদ্ধ নসীহতমূলক চিঠির কোনো গুরুত্ব দেননি। এতে আন্দায করা যায় এই বিষয়ে সা‘দ সাহেবের বাড়াবাড়ি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে!
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে সা‘দ সাহেবের মন্তব্য
১৩ রবীউল আওয়ালের সে তারিখেই ইউসুফ আ.-এর ব্যাপারেও বলেছেন–
یوسف علیہ السلام بڑ ے سخت حالات میں تھے، تہمت لگی تھی عزیز مصر کے گھر سے، اور بہت سخت حالات تھے، لیکن دو چيزيں اللہ دیکھنا چاہتے ہيں داعی سے، ایک تو یہ دیکھنا چاہہتے ہیں کہ حالات سے متاثر ہو کر دعوت الی اللہ چھوڑ تو نہيں ديتا، ایک یہ دیکھتے ہيں اللہ انبیاء علیہم السلام کو کہ یہ حالات سے پریشان ہوکر ہمارے غیرسےمدد تو نہیں چاہتے؟ دوسرے یہ دیکھنا چاہتے ہیں کہ حالات سے متاثرہو کر دعوت الی اللہ کاعمل چھوڑتو نہیں دیتے۔
دوسری بات یہ ہے کہ پھر یوسف علیہ السلام نے ان کو ان کے خواب کی تعبیر بھی بتلادی اور یہ خیال ہوا کہ ان میں سے ایک آدمی جیل سے رہا ہوکر اور باعزت بری ہوکر بادشاہ کے پاس جاۓگا، لہذا بادشاہ کے پاس یہ پیغام پہونچا دوں۔ سنو دھیان سے کہ یوسف علیہ السلام نے اتنے عرصہ سے جیل میں ہے کچھ اس کے مقدمہ پر غور کرلیاجاۓ اور اس کو جیل سے رہا کر دیا جاۓ، اللہ کی شان یوسف علیہ السلام کو شیطان نے اللہ کی یاد بھلادی، یوسف علیہ السلام کو شیطان نے اللہ کی یاد بھلادی، یوسف علیہ السلام کو شیطان نے اللہ کی یاد بھلادی کہ یوسف علیہ السلام نے جیل سے نکلنے کے لئے ہم سے کیوں نہیں کہا؟
داعی کےلئے یہ دو چیزیں انتہائی ضروری ہیں، انتہائی ضروری کہ جب اس کے راستہ میں کوئی حال آۓ تو وہ اپنےحال کو اس سے کہے جس کی طرف سے پیغام لے کر بھیجا ہواہے، دنیا میں آپ کسی ادنی سے ادنی ملازم کو کسی ادنی سے ادنی کام کے لئے بھیجیں اگر اس کے کام میں کوئی رکاوٹ پیش آۓ گی یا اسے کوئی دقت پیش آۓگی تو وہ رجوع کرےگا اور رابطہ کرےگا بھیجنے والے سے، جس نے کام کے لئے بھیجا ہے اس سے ہی رابطہ کرےگا کہ آپ بتائیے کہ میں کیا کروں؟ میرے کام میں رکاوٹ پیش آگئیی میں کیا کروں؟ یوسف علیہ السلام نےرہا ہو نے والے سے فرمایا: اذْكُرْنِي عِنْدَ رَبِّكَ کہ میرا تذکرہ کردینابادشاہ کے سامنے ، فَأَنْسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ، شیطان نے یوسف علیہ السلام کو یوسف علیہ السلام کے رب کی یاد بھلادی، اس کے بعد یوسف علیہ السلام عرصہ جیل میں رہے.۔
দেখুন কীভাবে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে মাওলানা সাদ সাহেব বললেন, তিনি আল্লাহর দিকে রুজু না করে গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চেয়েছেন! নাউযুবিল্লাহ! আরো বলেছেন, শয়তান হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে!
আপনারা জানেন, ইউসুফ আলাইহিস সালাম জেলখানায় ছিলেন অনেক বছর। তাঁকে অন্যায়ভাবে এবং যুলুম করে জেলে দেওয়া হয়েছে। কুরআনে সূরা ইউসুফের মধ্যে কিছু ঘটনা এসেছে। একটা ঘটনা হল, যারা সূরা ইউসুফের অনুবাদ-তাফসীর পড়েছেন, তারা জানেন, তাঁকে দু’জন স্বপ্নের তাবীর জিজ্ঞেস করেছিল। তিনি তাবীর বলে দিয়েছেন; একজনের ব্যাপারে বলেছেন, সে মুক্তি পাবে। আরেকজনের ব্যাপারে বলেছেন, মুক্তি পাবে না। আল্লাহর হুকুমে ঘটনা ওরকমই ঘটেছে। যার ব্যাপারে বলেছেন যে, মুক্তি পাবে না, সে মুক্তি পায়নি। আর যার ব্যাপারে বলেছেন যে, মুক্তি পাবে, সে মুক্তি পেয়ে গেছে। যে মুক্তি পেয়েছিল, তাকে ইউসুফ আ. বলেছেন যে, তুমি তোমার বাদশার কাছে আমার বিষয়ে আলোচনা করবে। আমার বিষয়ে কী আলোচনা করবে, তা কিন্তু কুরআনে বলা হয়নি। উনি তো জেলখানায়ও তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। তাহলে হতে পারে এ তাওহীদের আলোচনা করার কথা বলেছেন। আর এটাও হতে পারে যে, একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে যুলুম করে জেলে রেখে দেওয়া হয়েছে, আপনি একটু বিষয়টা দেখুন! এটা বলতে বলেছেন। কুরআনে কিন্তু বিশ্লেষণ নেই যে, কী বলতে বলেছেন? শুধু বলা হয়েছে, তুমি তোমার বাদশার কাছে আমার কথা বলবে। এরপর কুরআনে আছে–
فَاَنْسٰىهُ الشَّیْطٰنُ ذِكْرَ رَبِّهٖ
লোকটা মুক্তি পাওয়ার পর বাদশার কাছে সেকথা বলতে ভুলে গেছে। ইউসুফ আ.-এর কথা আলোচনা করেনি। করা হয়নি। ইউসুফ আ. জেলে আছেন তো আছেনই। بِضْعَ سِنِیْنَ আরো সাত কিংবা এর চেয়েও বেশি সময় জেলে ছিলেন।
এই যে কুরআনের শব্দ–
فَاَنْسٰىهُ الشَّیْطٰنُ ذِكْرَ رَبِّهٖ
এর অর্থ যা পূর্বাপর থেকেও নির্ধারিত এবং শানে রিসালাতেরও যা দাবি তা হল, যে লোকটা জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছে, তার বাদশা, তার অভিভাবকের কাছে গিয়ে ইউসুফ আ.-এর কথা স্মরণ করতে শয়তান তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে। এ হল আয়াতের সহীহ অর্থ।
কিন্তুু মাওলানা সা‘দ সাহেব এ আয়াতের অর্থ কী করেছেন? শয়তান ইউসুফ আ.-কে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে! বলুন– নাউযুবিল্লাহ! শয়তান নাকি ইউসুফ আ.-কে আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। ইউসুফ আ.-এর আল্লাহকে স্মরণ করতে মনে নেই। ওই যে গাইরুল্লাহর কাছে কেন মদদ চাইল, এ কারণে আরো কয়েক বছর জেলে থাকতে হয়েছে।
তা‘বীর বলার পূর্বে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াতও দিয়েছেন। শিরক থেকে বেঁচে থাকার দাওয়াত দিয়েছেন। এটা কি আল্লাহর স্মরণ নয়?
ইউসুফ আ. কি আসলে গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চেয়েছেন? তিনি কি গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চাওয়ার মত মানুষ? কেউ যদি কাউকে বলে যে, ভাই! তুমি তোমার বাদশার কাছে গিয়ে বলে দাও যে, একজনকে জেলখানায় যুলুম করে রেখে দেওয়া হয়েছে। এটা কি গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চাওয়া হল? এটাকে কি গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চাওয়া বলে? এটা তো হল জায়েয উপকরণের জায়েয ব্যবহার। এটা কেউ করলে কাজটা কি জায়েয হবে, নাকি নাজায়েয হবে? নবীদের কাছ থেকে তো আমাদের শরীয়তই শিখতে হবে। নাকি? কোনটা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয তা নবীরাই তো দেখাবেন! একজন জেলে পড়ে আছে, কাউকে দেখে বলল যে, তুমি গিয়ে বল, এ লোককে যুলুম করে রাখা হয়েছে। অন্যায়ভাবে রাখা হয়েছে। আপনারা বিষয়টি যাচাই করুন! এভাবে কেউ যদি কাউকে বলতে বলে, জায়েয হবে কি না? অবশ্যই জায়েয হবে। কোনো দায়ীর জন্য এটা জায়েয কি না? জায়েয। কোনো মুবাল্লিগের জন্য এটা জায়েয কি না? জায়েয! কোনো আলেমের জন্য জায়েয কি না? জায়েয। কোনো নবীর জন্য এ কাজটা জায়েয কি না? জায়েয!
এটা যে জায়েয, সেটাও তো আমরা নবীদের কাছ থেকে পেয়েছি। নবীদের সীরাত থেকে শিখতে হবে যে, কোনটা জায়েয আর কোনটা নাজায়েয। কিন্তু উনি করেন উল্টো। উল্টো নবীদের ওপর আপত্তি করেন। নবী নাকি গাইরুল্লাহর কাছে মদদ চেয়েছেন, এজন্যই জেলে আরো দীর্ঘ সময় থাকতে হল, নাউযু বিল্লাহ!
এখন তার লোকেরা যদি বলে, আমাদের কাছে রেফারেন্স আছে। তাহলে বিষয়টা কেমন হবে বলুন, একথার যদি রেফারেন্স থাকেও, সেটা কি গ্রহণ করা যাবে? এটা গোমরাহীর কথা না? গোমরাহীর কথা কোথাও থাকলে বলতে হবে যে, এটা গোমরাহী! খবরদার! এ কথা নিয়ো না।
গোমরাহীর কথার রেফারেন্স দিলে তোমরা কোত্থেকে দিবে সেটা আলেমরা ভালোভাবেই বুঝেন। হয়তো কোনো মুনকার রেওয়ায়েতের দারস্থ হবে বা পূর্বের কোনো আলেমের পদস্খলনমূলক কোনো কথা নিয়ে আসবে। না হয় কারো বক্তব্যের পূর্বাপর বাদ দিয়ে বুঝে না বুঝে তার মর্ম বিকৃত করে উপস্থাপন করবে। কোনো ভ্রান্তির পক্ষপাতের এই তো রাস্তা!
তাহলে আপনারা কি মনে করেন যে, ভুলগুলো হালকা? এমনে বয়ান করছেন ভালো। বয়ান করছেন দাওয়াতের গুরুত্বের উপরে। বলতে বলতে একপর্যায়ে গিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করে দেন। বাড়াবাড়ি যখন শুরু করেন, তো বাড়াবাড়িমূলক কথাগুলোর জন্য তো আর সঠিক কোনো রেফারেন্স পাওয়া যায় না; সেজন্য এই বাড়াবাড়িমূলক কথাগুলোর জন্য-ই তিনি নবীদের সীরাত থেকে ঘটনার বিকৃতি, নবীদের দোষ ধরার মত জঘন্যতম বিষয় নিয়ে চলে আসেন। কথা বুঝতে পেরেছেন তো?
সামনে চলার আগে এখানে একথাও জেনে রাখা ভালো যে, মাওলানা সা‘দ সাহেব হাফিযাহুল্লাহ হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বিষয়ে যা বলেছেন তা থেকে রুজু করেছেন। যে ধরনের রুজুই হোক না কেন, কিন্তু হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে যা বলেছেন তা থেকে আমাদের জানামতে রুজু করেননি।
এ হল একটা দিক। এতক্ষণে আমি মাত্র তার একটা ভুল নিয়ে কথা বললাম। সময় তো নেই। আপনারা যেহেতু বলেছেন, এজন্য আটটা পর্যন্ত আলোচনা চলুক। তারপরেও আমার অনুরোধ থাকবে যে, কারো যদি কোনো কষ্ট হয়, সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলবেন যে, হুজুর! আজকে থাকুক! আজকে আর দরকার নেই। এশার নামায হয়ে যাক। ইনশাআল্লাহ, আমি সঙ্গে সঙ্গে কথা শেষ করে দিব। কারো অসুবিধা হলে বলবেন যে, আজ আর কথা লম্বা না হলে ভালো হয়। না হয় আমার জামাতে নামায পড়ার সুযোগ হবে না। যে কেউ বলবেন বা একটা কাগজে লিখে পাঠাবেন আমি ইনশাআল্লাহ কথা বন্ধ করে দিব।
স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে মন্তব্য
আওরঙ্গবাদের ইজতেমায় তিনি ওলিমার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতের একটি ঘটনা নিয়ে কথা বলতে গিয়েও আপত্তিকর উপস্থাপন করেছেন। অনেক অন্যায় উপস্থাপন হয়েছে। মৌলিকভাবে তার কথার প্রেক্ষাপট এবং প্রসঙ্গটা খারাপ ছিল না। কিন্তু কথার মধ্যে বাড়াবাড়ি ছিল। একটা কথা মনে রাখবেন, ‘বাড়াবাড়ি’ আর ‘ছাড়াছাড়ি’ এ দুটোর কোনোটারই ইসলামে কোনো স্থান নেই। তো বলছিলাম, প্রেক্ষাপট যদিও ভালো ছিল, কিন্তু একপর্যায়ে বাড়াবাড়িতে চলে গেছেন। আর এ বাড়াবাড়ি করতে গিয়েই আবার পদস্খলন হয়েছে। উনি বলেছেন যে, বিয়ের মধ্যে অপচয় করতে নেই।
কথা কি ঠিক, না বেঠিক? ঠিক! খুব ভালো কথা যে, অপচয় করবেন না। অপচয়েরও তো বিভিন্ন স্তর আছে। আবার সব খরচকেই কিন্তু অপচয় নাম দেওয়া যায় না।
তো ওলিমার প্রসঙ্গে তিনি বললেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ওলিমাতে শুধু পনির খাওয়াতেন। কখনো শুধু খেজুর বা খোরমা। তার দাবি অনুযায়ী। গোস্ত-রুটির ওলিমা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো করেননি; বরং তাঁর মা‘মুলই ছিল, খেজুর-পনির জাতীয় জিনিস দ্বারা ওলিমা করা। একবার শুধু ব্যতিক্রম হয়েছিল। একবার শুধু গোশত রুটির ওলিমা করেছেন। মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেছেন–
شادیوں میں اسراف سے بچو، جتنا اسراف زیادہ ہوگا اتنی اذیت زیادہ ہوگی۔ حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم نے تمام شادیوں میں کہیں پنیر کھلایا، کہیں کھجوریں تقسیم کردیں،کہیں چھوارے بکھیر ديئے۔ فرمایا کھاؤ تمہاری ماں کا ولیمہ ہے۔ آج اگر کوئی چھوارے کھلادے ولیمہ ميں توکوئی ولیمہ نہ مانےگا، کوئی اس کو ولیمہ نہیں ما نےگا، حالا نکہ یہ عین سنت ہے، آپ کی ایک شادی نہیں ساری شاد یاں ایسی ہی ہوئی ہیں، سوائے حضرت زینب رض کے کہ اس میں آپ نے گوشت روٹی کا انتظام کیا، حضرت زینب رض اس پر فخر کر تی تھی کہ میر ے نکاح میں گوشت روٹی کا انتظام ہواہے، اللہ کی شان کہ آپ کی جوشادی آپ کے معمول سے ہٹی اسی شادی میں آپ کوا ذیت ہوئی، عجیب بات ہے جو شادی آپ کی آپ کے معمول سے ہٹی اسی میں آپ کوا ذیت ہوئی، سو چنےکی بات ہے ہم غور کر یں کہ اگر محمد صلی اللہ علیہ وسلم کو گو شت روٹی کے انتظام کی وجہ سے آکر بیٹھنے والوں کے انتظار سے اذیت ہوئی، اس سے اندازہ کرلو کہ ہم آپ کی گوشت روٹی کی سنت سے کتنے آگے بڑھ گئے ہیں۔ اب اذیتوں کی قرضوں کی پریشانیوں کی سود کی اور قرضوں میں دب جانے کی کتنی قسم کی اذیتیں آگئیں ۔ اگر محمد صلی اللہ علیہ وسلم کو گوشت روٹی کی وجہ سے اذیت ہو سکتی ہے، تو ہم آپ کے اس طریقۂ سنت سے کتنے دور گئے؟!
মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেন, শুধু যয়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়েতে গোস্ত-রুটির আয়োজন হয়েছে। উনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মা‘মুল থেকে দূরে সরে গেছেন। বলেন যে, শুধু এক বিয়ের মধ্যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মা‘মুল থেকে সরে গেছেন। মা‘মুল অর্থ এতদিন যেভাবে আমল করে আসছেন সেটাকে বলে মা‘মুল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে যে আমল করেন সেটাকেই সুন্নত বলে। তাহলে এর অর্থ দাঁড়াল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এক বিয়েতে গোস্ত-রুটি দিয়ে ওলিমা করে নিজের সুন্নত থেকে দূরে সরলেন। নাউযু বিল্লাহ। আর ওই বিয়েতেই তিনি কষ্ট পেয়েছেন।
اللہ کی شان کہ آپ کے جو شادی آپ کے معمول سے ہٹی اسی شادی میں آپ کو اذیت ہوئی.
মামুল থেকে সরে যাওয়ার কারণে কষ্ট পেয়েছেন। নিজের সুন্নতের বিপরীত করার কারণে কষ্ট পেয়েছেন– এ কথাটা আপত্তিকর কি না? এ উপস্থাপনটা আপত্তিকর কি না?
দেখুন, তার এ বক্তব্যের মধ্যে অনেক কথাই ভুল।
একটা হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক ওলিমাতেও গোশতের আয়োজন করেছেন। [উমদাতুল কারী শরহুল বুখারী, খ- ২০, পৃ ১৫৫; ফতহুল বারী ৯/১৪৬, ৫১৭১ নম্বর হাদীসের অধীনে] অথচ তিনি বলছেন যে, শুধু যয়নাব রা.-এর বিয়েতেই গোস্ত-রুটির ওলিমা হয়েছে। অন্য কোনো বিয়েতে হয়নি। এটা আপত্তিকর।
দ্বিতীয় কথা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিয়েতে শুধু পনির দিয়ে ওলিমা করেছেন। এটার প্রমাণ চাই। তৃতীয় কথা হল, হাদীসে কি أَوْلِمْ، وَلَوْ بِشَاةٍ -এর কথা নেই? ‘কমপক্ষে একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমা কর’।
মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেছেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মা‘মুলের পরিপন্থী কাজ করার কারণে যদি কষ্টে পড়ে থাকেন তাহলে আমরা এখন গোস্ত-রুটির সুন্নত ছেড়ে আরো কত দূরে চলে গেছি! আমরা কত অপচয় করছি, তাহলে আমাদের কী দশা হবে? কথার আবেদনটা ভালো যে, আমরা যে এত অপচয় করি সেটা থেকে ফিরে আসার জন্য আমাদের বলেছেন। তা ঠিক, কিন্তু বলতে গিয়ে রাসূলুল্লাহর শানে যে ভঙ্গিতে বলেছেন এ ভঙ্গিটা কি ঠিক হয়েছে? এ থেকে রাসূলুল্লাহর ওপর আপত্তি আসে কি না যে, রাসূলুল্লাহ নিজের সুন্নতের খেলাফ করলেন?
একটু পরে গিয়ে আবার নিজেই বলছেন যে, গোস্ত-রুটিটাও সুন্নত। সামনের কথার মধ্যে আছে, গোস্ত-রুটির সুন্নত থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। আহা, গোস্ত-রুটি যদি সুন্নত হয় তাহলে আগেরটাও রাসূলুল্লাহর সুন্নত, পরেরটাও সুন্নত। তাহলে রাসূলুল্লাহ কি সুন্নত পরিপন্থী কিছু করেছেন? না। আর তিনি যয়নাব রা.-এর বিয়েতে গোস্ত-রুটির ওলিমা করে যে কাজ করলেন, সেটাও যদি সুন্নত হয়ে থাকে এবং বাস্তবেও তা সুন্নত। তাহলে এ কারণে কি তাঁর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকলীফ আসতে পারে? সুন্নত অনুযায়ী আমল আবার তাকলীফের কারণ হবে কেন?
একটু ভেবে দেখুন, আমরা যাঁর সুন্নত অনুসরণে আদিষ্ট তার ব্যাপারে মন্তব্য করা হচ্ছে, তিনি তাঁর মা‘মুল থেকে সরার কারণে তাকলীফের শিকার হয়েছেন। তাকলীফ তো আসে আল্লাহর হুকুমে। তার কত কারণই হতে পারে। কোথায় কী কারণ তা তো আল্লাহই ভালো জানেন। এ কেমন উম্মতী, যে নবীর উপর আসা তাকলীফের এমন ব্যাখ্যা দেয় যে, নবী যেন কোনো ভুল করেছেন তাই তাকলীফ এসেছে!!
মাওলানা সা‘দ সাহেব কোন দলীলে একথা বললেন যে, এই তাকলীফটা গোশত রুটির ওলিমার কারণে হয়েছে?! সাফিয়া রা.-এর বিয়ের সময়ে তো গোশত রুটির ওলিমা হয়নি। অথচ সেখানে আরো বেশি তাকলীফ হয়েছিল।
মোটকথা, এখানেও তার এই মেযাজটাই কাজ করছে যে, নবীদের সীরাত আলোচনার সময়ও নিজের ‘বুঝ’ অনুযায়ী তাতে মন্তব্য করা যায়। এই মেযাজ সংশোধনযোগ্য। সীরাত আলোচনা করতে হবে হেদায়েত নেওয়ার জন্য। আদর্শ গ্রহণ করার জন্য। ত্রুটি চিহ্নিত করার জন্য নয়। কোনোকিছু বুঝে না আসলে ফুকাহায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
এখানে এ বিষয়টিও লক্ষ্য করার মত যে, যদি গোশতের ওলিমা তাকলীফ আসারই কারণ হয়ে থাকে তাহলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীকে কেন বললেন, أَوْلِمْ، وَلَوْ بِشَاةٍ কমপক্ষে একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমা কর!!
এজন্য বললাম, নবীদের জীবনী, সীরাত আলোচনা করতে গিয়ে যে পন্থা উনি অবলম্বন করেছেন, এটা কি ভালো পন্থা? তিনি তো চাইলে এভাবেও বলতে পারতেন, ভাই! রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যেহেতু খেজুর দিয়ে অলিমা করতেন তাই তোমরা খেজুর দিয়ে ওলিমা করাটাকে গ্রহণ কর।
হাঁ, ওটা ভিন্ন কথা যে, খেজুর ছিটানোটাই ওলিমা, নাকি শুধু আকদের মজলিসে খেজুর ছিটানো আর ওলিমা ভিন্ন। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ এবং সেটার তাহকীক দরকার। সেটা আলেমদের কাছ থেকে তাহকীক করে নিয়েন।
এখন তো আর আমি সবকিছু বিস্তারিত বলছি না। কিন্তু তার কথা যদি মেনেও নেওয়া হয় যে, শুধু এক বিয়েতেই গোস্ত-রুটির ওলিমা হয়েছে, তাহলে তিনি বিষয়টাকে এভাবেও তো বলতে পারতেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু খেজুর বা পনির দিয়ে বেশির ভাগ সময় ওলিমা করেছেন এজন্য তোমরা সেটা দিয়েই ওলিমা কর। সবাই শুধু গোস্ত-রুটির আয়োজন কেন কর? গোস্ত-রুটি তো তিনি শুধু এক বিয়েতে করেছেন? (তার ধারণা অনুযায়ী) তাহলে গোস্ত-রুটি না হলে ওলিমা হবে না, তোমরা এমন মনে কর কেন?
উনি কথাটাকে এভাবে বলতে পারতেন না? কিন্তু বলেছেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মা‘মুল থেকে সরে যাওয়ার কারণে কষ্টের মধ্যে পড়েছেন! এভাবে বলা কি উচিত হয়েছে? তার একথা শুনলে কারো অন্তরে আসতে পারে কি না যে, ওহ! সুন্নতের পরিপন্থী কাজ করার কারণে খোদ রাসূলুল্লাহর উপরও তাকলীফ এসেছে?! নাউযুবিল্লাহ! তার এ গলত এবং অন্যায় উপস্থাপনের কারণে কারো অন্তরে এটা আসতে পারে কি না? তাহলে এসব বিষয়ে যদি উলামায়ে কেরাম ধরেন যে, না, আপনার এ বিষয়গুলো ইসলাহ হওয়ার দরকার। সংশোধন হওয়া উচিত। উলামায়ে কেরাম হকের ওপর আছেন কি না? মনে রাখবেন, আওরাঙ্গাবাদের এই বয়ান কিন্তু তার ছয় নম্বর রুজুর পরের। আচ্ছা বলেন তো, রুজু তো হয় একবার। রুজুর মতো রুজু হলে কি এতবার রুজু করতে হয়? পঞ্চম রুজুর কিছুদিনের মধ্যে কত মুনকার ও বাতিল কথা বলেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা মুফতী খাযির মাহমুদ কাসেমীর কিতাবে দেখতে পারেন। একেবারে দিন তারিখসহ উল্লেখ করেছেন। আর ষষ্ঠ রুজুর পর তো এখনো পর্যন্ত এই ধারা চলছে।
এমনকি তিনি নতুন বিদআতী উসূল আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেছেন!! সে বিষয়ে এখন আর আলোচনা করছি না।
এটা হল এক দিক মাত্র যে, দ্বীনের অনেক কিছুর ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে যবানকে নিয়ন্ত্রণ না করা। সতর্কতা অবলম্বন না করা। এটা শুধু সাহাবীদের ব্যাপারে, ওলীগণের ব্যাপারে, আলেমদের ব্যাপারে হয়নি; বরং নবীদের ব্যাপারেও হয়েছে এবং বহুত হয়েছে। আলেমদেরকে তো পাইকারিভাবে বলে দিয়েছেন– ‘ওলামায়ে সু’। যারা সহীহ মাসআলা বলে তারা ‘ওলামায়ে সু’ আর উনি নিজে নতুন এক গলত মাসআলা আবিষ্কার করেছেন, যেটা থেকে পরে ফিরে এসেছেন। এ গলত মাসআলা বলার সময় বলেছেন যে, যারা এরকম ফতোয়া দেয়, তারা ‘ওলামায়ে সু’। অথচ নিজেই বলছেন গলত মাসআলা। আর যারা সঠিক মাসআলা বলেন তাদের বলছেন, ‘ওলামায়ে সু’!
আপনারা ‘ওলামায়ে সু’-এর অর্থ বোঝেন তো? মন্দ আলেম। অসৎ আলেম। এখন আপনারা বলুন, সঠিক মাসআলা বলনেওয়ালা আলেমদেরকে অসৎ আলেম বলাটা ভালো কাজ না খারাপ কাজ? এটা কি ছোট ভুল না বড় ভুল? একদিকে নিজেই বলছেন, আলেমদেরকে মুহসিন মনে করতে হবে। আলেমদেরকে মুকতাদা মনে করতে হবে। আর এখন নিজেই যারা সহীহ ফতোয়া দেয়, তাদেরকে বলছেন, ওলামায়ে সু! অথচ নিজে দিচ্ছেন গলত ফতোয়া। যদি আপনি সহীহ মাসআলা বলতেন আর বলতেন যে, যারা সহীহ মাসআলার খেলাফ বলে, তারা ওলামায়ে সু, তাও তো একটা কথা ছিল। নিজে বলছেন গলত, আর যারা সহীহ বলেন, তাদেরকে বলছেন– ওলামায়ে সু।
তো, শুধু আলেমদের ব্যাপারে যবান নিয়ন্ত্রণহীন বা ওলীদের ব্যাপারে যবান নিয়ন্ত্রণহীন তা নয়; সাহাবীদের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে যবান নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। শুধু এগুলোর মধ্যেও সীমাবদ্ধ থাকছে না; চলে গেছে নবী পর্যন্ত। নবীদের সীরাত আলোচনা করতে গিয়েও যবান নিয়ন্ত্রিত নয়। ভাষা মার্জিত নয়। উপস্থাপন সুন্নত মুতাবেক নয়। উপস্থাপন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নয়; তাহলে এটা কি ছোট ভুল না বড় ভুল? বড় ভুল। শাখাগত ভুল না মৌলিক ভুল? মৌলিক ভুল।
এটা শুধু আমি এক প্রকারের ভুল দেখিয়েছি। একটা ভুল বলিনি কিন্তু। বলেছি এক প্রকারের ভুল। এবং এই প্রকারের ভুলের আপাতত তিনটা দৃষ্টান্ত দিলাম মাত্র। তাও শুধু নবীদের আলোচনা থেকে। আলেমদের ব্যাপারে তো…। এটা হল উনার এক প্রকারের মৌলিক ভুল।
তাঁর আরেক প্রকারের মৌলিক ভুল হল- (সময় নেই, শুধু শিরোনাম বলব,)
১. দলীলবিহীন গায়বী কথা বলা।
২. বিদআত আবিষ্কার করা।
আপনারা জানেন, দ্বীনের বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলতে হলে দলীলভিত্তিক বলতে হয়। আন্দাযে কথা বলা, ধারণাভিত্তিক কথা বলা, অনুমান করে কথা বলা জায়েয নেই। গায়বী কথা, যেটা জানার সূত্র হল একমাত্র অহী। আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে অহীর মাধ্যমে অনেক গায়বী কথা জানিয়েছেন। এখন তো অহী বাকি নেই। তাহলে এখন যদি গায়বী কথা বলে, সেটা অনুমান ভিত্তিক হবে না?
মাওলানা সা‘দ সাহেবের বড় এক মসীবত হল গায়বী কথা বলা, গায়বী কথা মানেই তো দলীলবিহীন কথা। গায়বী কথা মানেই তো যার কোনো দলীল নেই। যে গায়বী বিষয়গুলোর আলোচনা কুরআন-হাদীসে এসে গেছে সেগুলো তো কুরআন-হাদীসে আছেই এবং সেগুলো অহীর মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু এর বাইরে তিনি অনেক গায়বী এবং আন্দাযে কথা বলেন। এটা ছোট ভুল না বড় ভুল? বড় ভুল। এটা কি সগীরা গোনাহ না কবীরা গোনাহ? কবীরা গোনাহ। মাওলানা সা‘দ সাহেবের বড় মসীবত এবং একটি বড় ভুল হল এই গায়বী কথা বলা।
২. মাওলানা সা‘দ সাহেবের আরেকটি বড় ভুল হল, তিনি দলীল পরিপন্থী এমন অনেক গলত মাসআলা এবং গলত মতবাদ আবিষ্কার করতে থাকেন, কোনো সাহাবী, কোনো তাবিয়ী এবং কোনো মুজতাহিদ এমন কথা বলেননি; বরং তা সম্পূর্ণ তার নিজের আবিষ্কার। এ বিষয়গুলোকে বিদআত বলে। এক তো হল অন্য কেউ বিদআত আবিষ্কার করেছে আর কিছু লোক না বুঝে সে বিদআতে লিপ্ত হচ্ছে। এটাও গোনাহ। কিন্তু বিদআত আবিষ্কার আরো বড় গোনাহ। অনেক বড় গোনাহ। মাওলানা সা‘দ সাহেব এ কাজটাও করেছেন। কোনো ধরনের দলীল ছাড়া বরং শরীয়তের দলীলের বিপরীতে কেবল নিজের বোধ এবং অনুমান থেকে নতুন নতুন কথা এবং নতুন নতুন মতবাদ আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। এই দুই প্রকারের দৃষ্টান্ত পেশ করার এখন আর সময় নেই। তাছাড়া ভুলের প্রকারও কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। প্রকার আরো আছে। এখন যে দুই প্রকার বললাম এই দুই প্রকারের বিশ্লেষণ ছাড়া সংক্ষেপে দু-একটি কথা বলছি। আপনারা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
গায়বী কথার কিছু নমুনা
তার একটি গায়বী কথা হল নিযামুদ্দীন মারকায সম্পর্কে। তার আশা, তিনি যতই গলত কথা বলেন না কেন সবাইকে তার সাথে নিযামুদ্দীনে থাকতে হবে। এই আশা পূরণের জন্য তো দরকার তার আকীদা ও চিন্তা-চেতনা সব দুরস্ত থাকা। কিন্তু সেই ফিকির না করে তিনি উল্টা মারকায নিযামুদ্দীনের ব্যাপারে গায়বী ঘোষণা শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন,
یہ دو چیزیں الگ الگ نہیں ہیں، کہ عالمی مشورہ الگ ہے اور مرکز الگ ہے، یہ ممکن نہیں ہے، یہ ممکن نہیں ، قیامت تک ممکن نہیں ، ایک عالمی مشورہ ہو اور ایک عالمی مرکز ہو یہ نہیں ہوگا، کیونکہ “یہ مرکز ہے اور تاقیامت مرکز ہے “۔
এ দুটি বিষয় ভিন্ন ভিন্ন নয় যে, আলমী মাশওয়ারা ভিন্ন হবে এবং মারকায ভিন্ন হবে। এটা সম্ভব নয়, সম্ভব নয়, কিয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়- একটা হবে আলমী মশওয়ারা আর একটা হবে আলমী মারকায। এটা হতে পারে না। কারণ, এটিই (নিজামুদ্দিন) মারকায এবং কিয়ামত পর্যন্ত এটিই মারকায।
তিনি আরো বলেন,
شیطان نے ان لوگوں کو بڑی شکوک میں ڈالا ہوا ہے بڑی شکوک میں ڈالا ہوا ہے “سارے عالم کا یہ مرکز ہے اور سارےعالم کو یہاں سے رجوع کرنا ہے یہ اللہ کی طرف سے طئے شدہ بات ہے”۔
শয়তান এই লোকগুলোকে বড় সন্দেহে নিপতিত করেছে, বড় সন্দেহে নিপতিত করেছে; এটিই সারা বিশে^র মারকায এবং সারা বিশ্বকে এখানেই রুজু করতে হবে- এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত কথা!!
‘কিয়ামত পর্যন্ত নিযামুদ্দীনই মারকায’ আপনি দুআ করতে পারেন, আল্লাহ! আমাদের এই মসজিদকে কিয়ামত পর্যন্ত বাকি রাখো। আল্লাহ! এই মসজিদের মিম্বর থেকে যেন কিয়ামত পর্যন্ত হেদায়েতের কথা আসে। কিয়ামত পর্যন্ত যেন এখান থেকে কোনো গোমরাহীর কথা না আসে। এই দুআ করা যায়। কিন্তু আপনি এমন ঘোষণা কি দিতে পারেন যে, এটা কিয়ামত পর্যন্ত হেদায়েতের মারকায? এটা সবসময় বাকি থাকবে! এখানে কোনো বিদআতী হুজুর আসবে না। বলেন এটা গায়বী কথা কি না? আপনি মারকাযের জন্য দুআ করতে পারেন, হে আল্লাহ! আপনি এই মারকাযকে গলতী থেকে রক্ষা করুন। ছোট-বড় সব ধরনের গোমরাহী থেকে হেফাযত করুন। বেশির চেয়ে বেশি আশা পোষণ করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ, এটি কিয়ামত পর্যন্ত মারকায থাকবে আশা করি। কিন্তু তা না করে আপনি ঘোষণা দিচ্ছেন, এটা কিয়ামত পর্যন্ত মারকায থাকবে।
শুধু তাই নয়, আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন-
یہ اللہ کی طرف سے طئے شدہ بات ہے
এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত কথা!!
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কীভাবে বলে মানুষ এমন গায়েবী কথা!!
এটা গায়বের কথা কি না?
আচ্ছা, আপনারা জানেন হাদীস শরীফে শুধু তিন মসজিদের ব্যাপারে বিশেষ ফযিলতের কথা বলা হয়েছে। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং বাইতুল মাকদিস। এক হাদীসে এই তিন মসজিদের কথা, আর ভিন্ন হাদীসে কুবা মসজিদের ফযিলতের কথাও আছে। এছাড়া আপনি জোর জবরদস্তি করে কোনো মসজিদের ব্যাপারে কি বলতে পারবেন যে, এটার বিশেষ ফযিলত আছে? বা আরো এক ধাপ এগিয়ে কি বলতে পারেন যে, এটার ইতাআত করতেই হবে? এটার মিম্বার থেকে যা যা বলা হবে সবই মানতে হবে? এভাবে বলা কি জায়েয আছে? কারণ মিম্বারে কখন কে আসে, তার কি নিশ্চয়তা আছে? বাইতুল মুকাররমের মিম্বারে খতীব উবাইদুল হক ছাহেব হুজুর ছিলেন। তার আগে মুফতী আবদুল মুঈজ ছাহেব রাহ. ছিলেন। উনারা সহীহ বলতেন। পরে বাইতুল মুকাররমের মিম্বারে এমন এক লোকও তো এসেছে, যার আকিদা সহীহ ছিল না। আটরশির মুরীদের মত ছিল। অনেকদিন খতীব ছিল কি না? যাদের জানা আছে, এ লোক আটরশির মুরীদ, তারা কি তখন তার পিছনে নামায পড়ত? নাকি বলবে যে, বাইতুল মুকাররম তো আমাদের জাতীয় মসজিদ। কাজেই এ মসজিদে যে-ই খতীব হয়ে আসুক, এর মিম্বার থেকে যা-ই বলা হোক, আমরা এখানে নামায পড়তেই থাকব। এ মিম্বার থেকে যা-ই বলা হবে, সব সঠিক কথা হবে। হেদায়েতের কথা হবে। এরকম যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে তাহলে কি জায়েয হবে? বিলকুল নাজায়েয। তো এ নিযামুদ্দীনও তো একটা মসজিদ। এখানে অনেক বছর যাবৎ হেদায়েতের কথা হয়েছিল। এ যমীনে আল্লাহর নেক বান্দারা সিজদা করেছেন। খুব ভালো! সেটাও আমরা অস্বীকার করি না। যেখানে দ্বীনের নুসরত ও মেহনত যত বেশি হয় সেখানে তার নূর ও বরকতও পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাই বলে আপনি কি এ গায়েবী কথা বলতে পারেন যে,
ساری دنیا کا حال يہ ہے کہ مکہ مدینہ کے بعد اگر کوئی جگہ قابل احترام اور قابل اقتداء اور قابل اطاعت اور قابل عظمت ہیں تو وہ مسجد نظام الدین ہے اور یہ آپ سب حضرات کے لئے نئے پرانے، …. ، ہمیشہ کے لئے، ساری دنیا کے لئے ، سارے امور کا مرجع اور سارے امور کا مرکز وہ نظام الدین ہے۔
সারা দুনিয়ার অবস্থা হল, ‘মক্কা-মদীনার পরে যদি কোনো ইহতেরাম ও আজমতের জায়গা থাকে, যদি কোনো অনুসরণ ও এতাআতের জায়গা থাকে, সেটা হল- মসজিদ নিযামুদ্দীন। পুরো দুনিয়ার জন্য, সব সময়ের জন্য; সকল বিষয়ে এটাই মারকায, সকল বিষয়ে এটাই কেন্দ্রস্থল।’
নাউযু বিল্লাহ! এ গায়েবী কথা বলার কারো অধিকার আছে? বিলকুল নেই! দলীলছাড়া কীভাবে এমন কথা বলে মানুষ!! আচ্ছা তাহলে কি বাইতুল মুকাদ্দাস থেকেও নিযামুদ্দীনের ফযিলত বেশি?! ইন্না লিল্লাহ!
এগুলো কিন্তু নিছক গায়বী কথা না; বরং এগুলো যেকোনো বেদআতী ফেরকার জন্য রাস্তা খুলে দেওয়ার মতো নতুন বিদআতী উসূল। ব্যস আল্লাহই রক্ষা করার মালিক।
কথা শেষ হয়নি। এরকম গায়বী কথা আরো বলেছেন। এটা এক প্রকার।
বিদআত আবিষ্কার
আরেক প্রকার হল, শরীয়তের বিষয়ে। দ্বীনের বিষয়ে কোনো দলীল ছাড়াই কথা বলে ফেলেন? আরে, দ্বীনের বিষয়ে তো কথা হবে দ্বীন এবং শরীয়তের দলীলের ভিত্তিতে। কিন্তু তিনি দলীলের বিপরীত কথা শরীয়তের মাসআলা হিসেবে বলে যাচ্ছেন। শরীয়তের মাসআলা নয়- এমন কিছুকে কেউ যদি মাসআলা হিসেবে আবিষ্কার করে এবং মাসআলা হওয়ার দাবি করে, সে যদি এটার ওপর আবার দলীল দিতে যায়, তাহলে নিশ্চয়ই সে বিকৃতি করছে। হয়ত মওযু হাদীস দিয়ে দলীল দিচ্ছে, না হয় সহীহ হাদীসের গলত ব্যাখ্যা করছে। না হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একটা হাদীস নিয়েছে, আরেকটা নেয়নি। সব হাদীসকে সামনে না রেখে এক-দু’টো থেকে ভুল বুঝে ভুল মাসআলা বলছে। আর এ ভুলকে দ্বীন এবং শরীয়ত বানাচ্ছে। ইতাআতী ভাইদের মুখে একটা কথা শুনেননি যে, তিনি কাজকে সীরাতের ওপর আনতে চান? এই হল ওটার হাকীকত। অর্থাৎ সীরাতের অসম্পূর্ণ অধ্যয়ন এবং সীরাতের ত্রুটিযুক্ত পড়াশুনার ভিত্তিতে নতুন নতুন উসূল আবিষ্কার করেন আর বলেন, কাজকে সীরাতের উপর উঠাচ্ছেন!!
তো এই ধরনের দলীলবিহীন ও দলীল পরিপন্থী আবিষ্কৃত কথাও অনেক, সেটা আজকে আর একটাও বলব না। কারণ সময় শেষ।
তাহলে কত প্রকারের ভুল, সব প্রকারের শিরোনামও বলতে পারিনি। তিন প্রকার বলেছি। এক প্রকারের তিনটা মেছাল দিয়েছি। আরেক প্রকারের দুটো দিয়েছি। আরেক প্রকারের শুধু শিরোনাম বলেছি, কোনো দৃষ্টান্ত পেশ করিনি। কিন্তু যদ্দুর আলোচনা হয়েছে, তাতেও বিষয়টি কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমরা দুআ করি, আল্লাহ পাক তাঁকে হেদায়েত দান করুন- আমীন। ইসলাহ করে দিন। যেন আগের মত, আমাদের অন্য দশ মুরুব্বীর মত তিনিও আমাদের মুরুব্বী হয়ে থাকতে পারেন সে তাওফীক আল্লাহ তাঁকে দান করুন- আমীন। ইসলাহ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে দাওয়াত দেওয়া এবং তার ইতাআত করার নাম নেওয়া কি উচিত? বিলকুল নয়; বরং তাবলীগী কাজের আগের মুরুব্বী যারা, তারা যে আলেমদেরকে তৈরি করে দিয়ে গেছেন, সে আলেমদের তত্ত্বাবধানে আমরা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভরপুর তাওফীক নসীব করুন- আমীন।
সবশেষে আমরা হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের ব্যাপারে দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বশেষ বক্তব্য পেশ করছি, যা ‘জরুরি ওয়াজাহাত’ শিরোনামে দারুল উলূম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে রয়েছে।
নিযামুদ্দিন ও কাকরাইলে যখন মাওলানা সা‘দ সাহেব হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা বিষয়ক ভুল থেকে মৌখিক রুজু করলেন তখন দারুল উলূম এই ‘জরুরি ওয়াজাহাত’ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, মাওলানা সা‘দ সাহেবের ‘ফিকরি বে-রাহরাবী’ সম্পর্কে।
দারুল উলূম দেওবন্দের এই জরুরী ওয়াযাহাত খুব খেয়াল করার মতো। একটু বিস্তারিতভাবে বলি : ২ ডিসেম্বর ২০১৭ ঈসায়ী তারিখে নিযামুদ্দীনে হায়াতুস সাহাবার তালীমের মজলিসে এবং জানুয়ারী ২০১৮ ঈসায়ীতে কাকরাইল মসজিদে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘দ সাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর রুজুর ভাষা যদিও তাঁর শান মুতাবেক ছিল না, কারণ উভয় জায়গায় তাঁর রুজুর যে ভাষা ছিল তাতে একথার উল্লেখই ছিল না যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে তিনি কোন্ ভুল কথাটা বলেছিলেন যে কথা থেকে এখন তিনি রুজু করছেন, এমনকি উভয় রুজুর মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় ভুলের স্বীকারোক্তিও ছিল না, তারপরও যেহেতু উভয় মসজিদে তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা প্রসঙ্গে বারবার রুজুর কথা উল্লেখ করেছেন, এতে কমপক্ষে একথা তো স্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আপত্তিকর যে কথা বলেছেন সেকথা থেকে এখন তিনি রুজু করছেন। যদিও তিনি এই ভুল কথাগুলো বিভিন্ন জায়গায় এবং বড় বড় ইজতিমায় বলেছিলেন। আর রুজু করেছেন মসজিদের ছোট্ট পরিসরের মজলিশে। তবুও এটা প্রাইভেট ধরনের লিখিত রুজুর চেয়ে ভালো। এজন্য দারুল উলূম দেওবন্দ লিখেছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনার ব্যাপারে তার রুজু ইতমিনানযোগ্য ধরা যেতে পারে। কারণ উভয় দেশের কেন্দ্রীয় দুই মসজিদে মজমার সামনে প্রকাশ্যে রুজু করেছেন। তাই আশা করা যায় যে, উনি হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে এইসব গলত কথা আর কোনো মজলিশে পুনরাবৃত্তি করবেন না।
কিন্তু আপত্তি কেবল তার এই একটি গলত কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার ভয়ংকর ভুলগুলোর তালিকা অনেক দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তিনি যা কিছু বলেছেন সেটা উল্লেখ করা যেতে পারে। কিন্তু তা থেকে মৌখিক বা লিখিত রুজু তিনি কোথায় করেছেন?
২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে নিযামুদ্দীন মসজিদে কৃত রুজু হল তাঁর পঞ্চম রুজু। এই রুজুর পরও তিনি তাঁর বিভিন্ন বয়ানে পূর্বের অনেক ভয়ংকর ভুলসমূহের পুনরাবৃত্তি করেছেন। এছাড়াও তিনি আরো নতুন নতুন ভুল আবিষ্কার করেছেন। যার কিছু নমুনা নির্দিষ্টভাবে তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে দারুল উলূম দেওবন্দের ফাযেল, দাওয়াত ও তাবলীগের বিশেষ সাথী মুফতী খাযির মাহমূদ কাসেমী সাহেব দামাত বারাকাতুহুমের রিসালা ‘রুজু কে বাদ মাওলানা মুহাম্মাদ সাদ সাহেব কে চান্দ বায়ানাত কা ইলমী জায়েযা’-এ দেখা যেতে পারে।
এইসব হালাত দারুল উলূম দেওবন্দের সামনে আছে। এজন্য দারুল উলূম এই ‘জরুরী ওয়াযাহাত’-এ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন যা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। দারুল উলূম দেওবন্দ লিখেছে-
لیکن دار العلوم کے موقف میں اصلا مولانا کی جس فکری بے راہ روی پر تشویش کا اظہار کیا گیا تھا، اس سے صرف نظر نہیں کیا جاسکتا؛ اس لئے کہ کئی بار رجوع کے بعد بھی وقتا فوقتا مولانا کے ایسے نئے بیانات موصول ہو رہے ہیں، جن میں وہی مجتہدانہ انداز، غلط استدلالات اور دعوت سے متعلق اپنی ایک مخصوص فکر پر نصوص شرعیہ کا غلط انطباق نمایاں ہے، جس کی وجہ سے خدام دار العلوم ہی نہیں؛ بلکہ دیگر علمائے حق کو بھی مولانا کی مجموعی فکر سے سخت قسم کی بے اطمینانی ہے۔
তরজমা : …কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দের মাওকিফে মূলত মাওলানার চিন্তাগত যে বিপথগামিতার ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ কয়েকবার রুজু করার পরও বিভিন্ন সময় মাওলানার এমন সব নতুন নতুন বয়ান পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে তার সেই মুজতাহিদসুলভ উপস্থাপন, দলীল-প্রমাণের ভুল প্রয়োগ এবং দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণের জন্য শরয়ী নুসূসের অপপ্রয়োগের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। যার কারণে শুধু দারুল উলূমের যিম্মাদারগণই নন, অন্যান্য হক্কানী উলামায়ে কেরামেরও মাওলানার সামগ্রিক ফিকিরের ব্যাপারে কঠিন ধরনের অনাস্থা রয়েছে।
দারুল উলূমের এই বক্তব্যে উল্লেখিত ‘ফিকরী বে-রাহরাবী’ (চিন্তাগত বিপথগামিতা) শব্দটি খুবই অর্থবহ। উদ্দেশ্য হল, কেবল দুয়েকটি ভুলের মধ্যে তার কথাবার্তা সীমাবদ্ধ নয় যে, সেগুলো থেকে উনি রুজু করে ফেললেন, আর বিষয়টা সমাধান হয়ে গেল। এখানে বিষয় হল তার মেযাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির। তার মেযাজই পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার দৃষ্টিভঙ্গিই ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। এজন্য কেবল খণ্ডিত কোনো রুজুর বিশেষ কোনো ফায়েদা নেই। প্রয়োজন হল, সালাফে সালিহীনের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে নিজের মেযাজকে মিলিয়ে নেওয়া। এটা যদি হয়ে যায় তাহলে একবারের রুজুই নির্ভরযোগ্য এবং আস্থাযোগ্য সাব্যস্ত হবে। আর যদি এটা না হয় তাহলে বারবার রুজু করলেও আস্থা অর্জন হবে না। তাছাড়া স্পষ্ট কথা যে, বারবার রুজু করার প্রয়োজন দেখা দেওয়া মূলত রুজুর প্রাণকেই খতম করে দেয়।
যাইহোক, দারুল উলূমের বে-ইতমিনানীর বাস্তবতা ও সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। দারুল উলূম দেওবন্দের এই ‘জরুরি ওয়াযাহাত’ ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ঈসায়ী তারিখে স্বাক্ষরিত। এই তারিখের পর থেকে আজ পর্যন্ত হযরত মাওলানা সা‘দ সাহেবের হিন্দুস্তান ও হিন্দুস্তানের বাইরের বয়ানগুলোতে স্পষ্ট যেসব ভয়ংকর ভুল প্রকাশ পেয়েছে সচেতন উলামায়ে কেরাম যদি সেগুলো শোনেন হয়রান হয়ে যাবেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে সঠিক চিন্তা ও ভারসাম্যপূর্ণ মেযাজ দান করুন। তাঁকে সালাফে সালিহীন এবং তার পূর্ববর্তী সালিহ ও মুসলিহ মনীষীদের মত ও পথের উপর কায়েম ও দায়েম থাকার তাওফীক নসীব করুন- আমীন।
[আলহামদু লিল্লাহ, বয়ান সমাপ্ত হল। মাওলানা সা‘দ সাহেব হাফিযাহুল্লাহ-এর সব ভ্রান্তির আলোচনা এ বয়ানে আসেনি। প্রশ্নোত্তরের পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর প্রয়োজন হলে সেগুলো নিয়ে ভিন্ন কোনো লেখা হতে পারে।
প্রশ্নোত্তরের প্রথম পর্ব এই সংখ্যায় ‘একটি মুযাকারা মজলিস : কিছু জিজ্ঞাসা ও জবাব’ শিরোনামে পেশ করা হল। -সহ সম্পাদক]
একটি মুযাকারা মজলিস : কিছু জিজ্ঞাসা ও জবাব
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، أما بعد!
তাবলীগ জামাতের বন্ধুরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন ও নানা জিজ্ঞাসা নিয়ে লাগাতার আসছেন। এই অধম সামর্থ্য অনুযায়ী আলোচনা-মুযাকারার চেষ্টা করি। গত ১ ডিসেম্বর শনিবার টঙ্গির ময়দানে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে অন্ততপক্ষে বাংলাদেশে বিষয়টি একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। তদুপরি এখনও জিজ্ঞাসার ধারা অব্যাহত আছে।
গত শনিবার (৮-১২-২০১৮) তাবলীগের কিছু সাথী তাদের হালকার এতাআতী ভাইদের কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলেন। কিছু প্রশ্ন তাদের নিজেদেরও ছিল। প্রশ্নের ব্যাপারটা তো এমন যে, যার কাছে যে বিষয়টি বেশি মুশকিল বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সে সেই প্রশ্নই পেশ করে। তাদের মত আরো অনেকেরও এধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই প্রশ্নগুলোর জওয়াব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেহেতু এই সাথীরা তাদের এতাআতী ভাইদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসার জবাব শোনাবে, তাই মুনাসিব মনে হল, আলোচনার সারসংক্ষেপ লিখে ফেলাই ভালো। এক্ষেত্রে জবাবি কথাগুলোতে আমি ‘নযরে ছানী’ করারও সুযোগ পাব। এর প্রেক্ষিতে এক-দুইজন সাথী আলোচনার সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করেন। আমার নযরে ছানীর পর তা এখানে পেশ করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের উপকৃত করুন। আমাদের মাঝে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি করুন। উম্মতকে সকল অনিষ্ট এবং সব ধরনের বিভেদ-বিসংবাদ থেকে হেফাযত করুন- আমিন।
বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
০৩-০৪-১৪৪০ হি.
২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪০ হিজরী মোতাবেক ৮-১২-২০১৮ ঈসায়ী শনিবারের এই মজলিস খুতবায়ে মাসনূনার মাধ্যমে শুরু হয়। খুতবার পর সাথীরা বলেন :
* আমাদের এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের ইউনিভার্সিটিতে মেহনতের সাথী প্রায় সবাই উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা অনুযায়ী মেহনত করছি। কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন বড় ভাই আমাদেরকে ভিন্নরকম বোঝাতে শুরু করেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা ৪০ জন ময়দানে আমলে ছিলাম। আমাদের মধ্যে অনেকে আহত হয়েছে। ওখানে পরে যে এতাআতী ভাইরা গিয়েছিল -সবাই জানে বিষয়টা- সেখানে আমাদের বড় ভাইদের একজন ছিলেন। যার ব্যাপারে আমরা এমনটা আশাও করিনি। আমরা যখন ‘জোড়’ করেছি তখন তিনি আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি ঐদিকে চলে গেছেন। তো তিনিসহ আরো দুই একজনকে এখানে নিয়ে আসার কথা ছিল। তারা আমাদের সঙ্গে আসবেন বলেছিলেন, কিন্তু গতকাল রাতে তারা কতগুলো শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
ক. মজলিসের স্থান হবে নিরপেক্ষ। কোনো মাদরাসায় হবে না। আমাদের এখানেও হবে না, তাদের ওখানেও হবে না। নিরপেক্ষ একটি স্থানে বসতে হবে।
খ. মজলিসে আমাদের পক্ষ থেকে দশ জন থাকবে। তাদের পক্ষ থেকে দশ জন থাকবে।
গ. আমাদের নির্ধারিত আলেম থাকবেন। তাদেরও নির্ধারিত আলেম থাকবেন।
ঘ. পুরো মজলিস ভিডিও হবে।
ঙ. তারা যদি আমাদের (এতাআতীদের) প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে তাদেরকে তওবা করে আমাদের দিকে ফিরে আসতে হবে।
হঠাৎ করে নতুন এসব শর্ত জুড়ে দেওয়ার কারণে আমরা তাদেরকে নিয়ে আসতে পারিনি। তাছাড়া আমাদের একজন স্যার আছেন, যিনি খুব জোরালোভাবে ওদের পক্ষে মেহনত করছেন। তিনি আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করেছেন। যেগুলোর উত্তর আমাদের জানা নেই। আমরা ওগুলোর সঠিক উত্তর জানতে চাই। এই উদ্দেশ্যেই আজ আমাদের এখানে আসা। আর তারা দশ জন দশ জন করে বসার বিষয়ে যা বলেছেন সেই বিষয়ে যদি কোনো রাহবরি থাকে…
** দশ জন দশ জন করে বসার কথা কে বলেছে?
* যিনি হঠাৎ করে ওদের পক্ষে চলে গেছেন।
** তিনি কি ময়দানে মারপিটের সময় উপস্থিত ছিলেন?
* জী।
** তো মারপিটের আগে কি তার বসা দরকার হয়নি? এটা কি তার বোঝা প্রয়োজন ছিল না? ওখান থেকে এসে এখন তিনি দশ জন দশ জন করে বসবেন! সুবহানাল্লাহ!! কয় চিল্লার সাথী তিনি?
* তিন চিল্লার সাথী।
** তিন চিল্লার সাথী, কিন্তু এতটুকু দ্বীনের বুঝ আসেনি যে, আমি আমার আরেক মুসলিম ভাই, মুবাল্লিগ ভাইয়ের গায়ে হাত উঠাব বা যারা হাত উঠাচ্ছে তাদের সঙ্গ দেব- এটা বৈধ হবে কি না? এটা তার জানার দরকার হয়নি! আগে তো তিনি বুঝবেন বিষয়টা, বুঝতে চাইবেন। তার যদি বুঝার ইচ্ছা থাকে তাহলে বুঝার পদ্ধতি তো এটা না যে, দশ জন দশ জন করে বসবেন। এটা কি বোঝার পদ্ধতি? আপনার যদি বোঝার প্রয়োজন হয়, তাহলে এটা তো বোঝার পদ্ধতি নয়। আর যদি বলেন, আমার বোঝার কোনো প্রয়োজন নেই, আমার বোঝাপড়া হয়ে গেছে; আমি বরং বোঝাতে চাচ্ছি, তাহলেও আসুন। তবে বোঝানোর জন্য আসতে চাইলেও তো দশ জন দশ জন করে আসার শর্ত দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা তো কারো কাছে কোনো কিছু বুঝতে চাইলে এই শর্ত লাগাব না যে, দশ জন দশ জন করে বসতে হবে। কারণ এটা তো বোঝার পদ্ধতি না।
আচ্ছা যাক, সে প্রসঙ্গ পরে। এখন বলুন আপনাদের কী প্রশ্ন?
(প্রশ্নোত্তর পর্ব)
প্রশ্ন : মাওলানা সা‘দ সাহেব কি কাফের বা গোমরাহ? এই বিষয়ে দেওবন্দ কী বলে? দেওবন্দ থেকে সারাসরি বলেনি যে, নিযামুদ্দিন বা সা‘দ সাহেবের এতাআত নিষিদ্ধ। তাহলে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম এত কঠোর হচ্ছেন কেন? মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআত বৈধ নয় কেন?
উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেব কাফের কি না এই প্রশ্ন কেন আসল? নাউযুবিল্লাহ, কেউ কাফের বলেছে? না উনাদের সন্দেহ হচ্ছে এ বিষয়ে? (নাউযুবিল্লাহ)। একজন সাধারণ মুসলমানের ব্যাপারেও তো এ প্রশ্ন মানুষ উঠাতে পারে না যে, উনি কি কাফের? সা‘দ সাহেবের ব্যাপারে এ প্রশ্ন কেন?
(*হুযুর এই বিষয়টা আসছে এজন্য যে, ঐ যে এতাআত করা নিষেধ, কেন নিষেধ, উনি কি কাফের যে, এতাআত নিষিদ্ধ?)
তাহলে তো প্রথমে এই প্রশ্ন করবেন যে, শরীয়তে কার এতাআত বৈধ? কোনো ব্যক্তি কাফের না হলেই কি তার এতাআত বৈধ হবে? এরকম কোনো মাসআলা কি আছে যে, কাফের না হলেই তার এতাআত বৈধ? একজন লোক মুসলিম কিন্তু বেদআতী, তার এতাআত বৈধ নয়। মুসলিম, কিন্তু গোমরাহ, তার এতাআত বৈধ নয়। মুসলিম, তাকে সরাসরি গোমরাহ বলা হয়নি, কিন্তু তার অনেক কথায় গোমরাহী, এই লোকেরও এতাআত করা জায়েয নয়। তো এটা তো কোনো কথা না যে, তিনি কি কাফের? এই প্রশ্ন উঠবে কেন ভাই?
প্রশ্ন : তাহলে কি মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআত এজন্য অবৈধ যে, তিনি গোমরাহ? আমাদের দেশের আলেমরা কেউ তো উনাকে সরাসরি গোমরাহ বলেন, আবার কেউ স্পষ্টভাবে এটা বলেন না; বরং শুধু এতটুকু বলেন যে, উনার বক্তব্যের মধ্যে অনেক গোমরাহীর কথা আছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী কথা আছে। বিষয়টা তাহলে কী?
উত্তর : ফলাফলের বিচারে এই দুই বক্তব্যে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ যার বক্তব্যে অনেক গোমরাহী থাকে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী বিষয় থাকে সে তো গোমরাহ (বিপথগামী) বটেই। এমন ব্যক্তিকে সরাসরি গোমরাহ নাম দেওয়া না হলেও তার এতাআত করা বৈধ হবে না। এমন ব্যক্তি কোনো দ্বীনী জামাতের দ্বীনী যিম্মাদারও হতে পারে না।
মাওলানা সা‘দ সাহেব সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া বা মুত্তাফিকাহ মাওকিফে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তিনি জুমহুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-এর রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছেন- যা নিঃসন্দেহে গোমরাহীর রাস্তা। তাই তার ঐসব বক্তব্যের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করা যায় না। ফতোয়ার উর্দূ পাঠের সংশ্লিষ্ট অংশ এই-
جماعت تبلیغ ایک خالص دینی جماعت ہے، جو عملا ومسلکا جمہور امت اور اکابر رحمہم اللہ کے طریق سے ہٹ کر محفوظ نہیں رہ پائے گی، انبیاء کی شان میں بے ادبی، فکری انحرافات، تفسیر بالرائے، احادیث وآثار کی من مانی تشریحات سے علمائے حق کبھی متفق نہیں ہو سکتے اور اس پر سکوت اختیار نہیں کیا جا سکتا ؛ اس لئے کہ اسی قسم کے نظریات بعد میں پوری جماعت کو راہ حق سے منحرف کردیتے ہیں، جیسا کہ پہلے بھی بعض اصلاحی اور دینی جماعتوں کے ساتھ یہ حادثہ پیش آچکا ہے۔
اس لئے ہم ان معروضات کی روشنی میں امت مسلمہ بالخصوص عام تبلیغی احباب کو اس بات سے آگاہ کرنا اپنا دینی فریضہ سمجھتے ہیں کہ مولوی محمد سعد صاحب کم علمی کی بنا پر اپنے افکار ونظریات اور قرآن وحدیث کی تشریحا ت میں جمہور اہل السنۃ والجماعۃ کے راستے سے ہٹتے جارہے ہيں، جو بلا شبہ گمراہی کا راستہ ہے، اس لئے ان باتوں پر سکوت اختیار نہيں کیا جا سکتا، اس لئے کہ یہ نظریات اگر چہ ایک فرد کے ہیں؛ لیکن یہ چیزیں اب عوام الناس میں تیزی سے پھیلتی جارہی ہیں۔
جماعت کے حلقے میں اثر ورسوخ رکھنے والے معتدل مزاج اور سنجیدہ اہم ذمہ داران کو بھی ہم متوجہ کرنا چاہتے ہیں کہ اکابر کی قائم کردہ اس جماعت کو جمہور امت اور سابقہ اکابر ذمہ داران کے مسلک ومشرب پر قائم رکھنے کی سعی کریں اور مولوی محمد سعد صاحب کے جو غلط افکار ونظریات عوام الناس میں پھیل چکے ہیں، ان کی اصلاح کی بھر پور کوشش کریں، اگر ان پر فوری قدغن نہ لگائی گئی، تو خطرہ ہے کہ آگے چل کر جماعت تبلیغ سے وابستہ امت کا ایک بڑا طبقہ گمراہی کا شکار ہو প فرقہ ضالہ کی شکل اختیار کرلے۔
তরজমা : তাবলীগ জামাত একটি খালেস দ্বীনী জামাত, যা কাজে-কর্মে ও মতাদর্শে জুমহূর উম্মত ও আকাবিরের মত ও পথ থেকে দূরে সরে নিরাপদ থাকতে পারবে না। আম্বিয়ায়ে কেরামের শানে বেআদবী, চিন্তাগত বিচ্যুতি, তাফসীর বির-রায়, হাদীস-আছারের মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সঙ্গে হক্কানী উলামায়ে কেরাম কখনো একমত হতে পারেন না। এসব বিষয়ে চুপ থাকা যায় না। কারণ, এ ধরনের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিই পরবর্তীতে পুরো জামাতকে হক পথ থেকে সরিয়ে দেয়। যেমন অতীতে কিছু ইসলাহী ও দ্বীনী জামাতের ক্ষেত্রে এটা ঘটেছে।
তাই উপরিউক্ত বিষয়াবলির আলোকে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিশেষত সাধারণ তাবলীগী ভাইদের এ বিষয়ে অবগত করা আমরা আমাদের দ্বীনী দায়িত্ব মনে করছি :
মওলবী মুহাম্মাদ সা‘দ সাহেব ইলমের স্বল্পতার দরুন নিজের চিন্তাধারা ও মতাদর্শ এবং কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে জুমহূর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পথ থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছেন; যা নিঃসন্দেহে গোমরাহীর পথ। তাই এ বিষয়ে নিরব থাকা যায় না। কারণ, এ চিন্তাধারাগুলো যদিও এক ব্যক্তিবিশেষের, কিন্তু বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
তাবলীগী হালকায় প্রভাবশালী, ভারসাম্যপূর্ণ মেযাজের অধিকারী, বিচক্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ যিম্মাদারগণেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, আকাবিরের প্রতিষ্ঠিত এই জামাতকে জুমহূর উম্মত এবং অতীত আকাবির যিম্মাদারগণের মত ও পথের উপর রাখার চেষ্টা করুন। এবং মওলবী মুহাম্মাদ সা‘দ সাহেবের যে ভুল চিন্তা- চেতনা ও মতাদর্শ সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তা সংশোধনের যথাসম্ভব চেষ্টা করুন। যদি এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে প্রবল আশংকা আছে যে, আগামীতে তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত মুসলিম উম্মাহর একটি বড় অংশ গোমরাহীর শিকার হয়ে একটি ‘গোমরাহ ফেরকা’র রূপ নিবে।
মনে রাখবেন, দারুল উলূম দেওবন্দের সেই ফতোয়া এখনও বহাল আছে। কারণ এই বিষয়ে দারুল উলূমের সর্বশেষ লেখার ফলাফলও তাই যা এখানে উদ্ধৃত হল।
প্রশ্ন : এখন দেওবন্দ তাঁর ব্যাপারে কী বলে?
উত্তর : দেওবন্দ তো বলেছে তার মধ্যে চিন্তাগত বিপথগামিতা রয়েছে। এ কথা দেওবন্দের শেষ লেখার মধ্যে আছে। فکری بے راہ روی ফিকরী বে-রাহ রবী। তিনি রুজু করেছেন, যে বিষয়ে রুজু করেছেন, ধরলাম এ রুজু যদি গ্রহণ করার মতও হয় কিন্তু উনার মূল সমস্যা ফিকরী বে-রাহ রবী। বে-রাহ মানে রাস্তার বাইরে, রাস্তা নয় এমন। ‘রবী’ মানে চলা, ফিকরী মানে চিন্তাগত। চিন্তাগত বিপথগামিতা। যেটা আমরা আগে বলেছি সেটা এখনও বহাল।
কারণ তার বয়ানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে মুজতাহিদসূলভ আলোচনা। তিনি তো মুজতাহিদ না। মুজতাহিদ নয় এমন ব্যক্তি যদি ইজতিহাদ শুরু করে তাহলে কি দশা হয়! ডাক্তার নয় এমন ব্যক্তি যদি অপারেশন শুরু করে দেয় তাহলে! আচ্ছা আপনাদেরকে পুরো লেখাটাই শুনাই। দারুল উলুম দেওবন্দের সর্বশেষ লেখাটি ৩১/০১/২০১৮ ঈসায়ী তারিখের লেখা :
…
(তরজমা)
মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘দ সাহেবের রুজু সম্পর্কে
(দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে)
জরুরি ওয়াজাহাত
তারিখ : ৩১/০১/২০১৮
কিছুদিন আগে জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘দ সাহেব কর্তৃক হযরত মূসা আলাইহিস সালাম (সম্পর্কে প্রদত্ত আপত্তিকর বক্তব্য) থেকে রুজুর ঘোষণা দেওয়ার পর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি এ সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দের অবস্থান জানার জন্য প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।
এমতাবস্থায় পরিষ্কার হওয়া আবশ্যক যে, তার রুজুকে এই এক ঘটনার ক্ষেত্রে ইতমিনানযোগ্য বলা গেলেও দারুল উলূম দেওবন্দের মাওকিফে মূলত মাওলানার চিন্তাগত যে বিপথগামিতার ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ কয়েকবার রুজু করার পরও বিভিন্ন সময় মাওলানার এমন সব নতুন নতুন বয়ান পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে তার সেই মুজতাহিদসুলভ উপস্থাপন, দলীল-প্রমাণের ভুল প্রয়োগ এবং দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণের জন্য শরয়ী নুসূসের অপপ্রয়োগের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। যার কারণে শুধু দারুল উলূমের যিম্মাদারগণই নন, অন্যান্য হক্কানী উলামায়ে কেরামেরও মাওলানার সামগ্রিক ফিকিরের ব্যাপারে কঠিন ধরনের অনাস্থা রয়েছে।
আমাদের মানতে হবে যে, আকাবিরের চিন্তা-চেতনা ও মতাদর্শ হতে সামান্য বিচ্যুতিও কঠিন ক্ষতির কারণ হয়। তাই বয়ান-বক্তব্যের ক্ষেত্রে মাওলানার সতর্কতাপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করা উচিত। সেইসাথে আকাবির ও আসলাফের পথ ও পন্থার উপর অটল-অবিচল থেকে শরঈ নুসূস তথা কুরআন-হাদীস হতে ব্যক্তিগত ইজতিহাদের ধারা বন্ধ করা উচিত। কেননা, মাওলানার এজাতীয় অবান্তর ‘ইজতিহাদ’ থেকে এমন মনে হয় যে, আল্লাহ না করুন তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতাদর্শ, বিশেষত স্বীয় আকাবিরের মাসলাক ও আদর্শ থেকে ভিন্ন কোনো নতুন জামাতের রূপ দিতে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আকাবির ও আসলাফের নীতি ও আদর্শের উপর দৃঢ়পদ রাখুন- আমীন।
যারা দারুল উলূম দেওবন্দের শরণাপন্ন হচ্ছেন তাদের প্রতি আবারো নিবেদন, তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরীন ইখতিলাফ ও মতানৈক্যের সাথে দারুল উলূমের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম দিন থেকেই এই ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে ভুল চিন্তাধারা ও ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে উম্মত যখনই দারুল উলূমের শরণাপন্ন হয়েছে, দারুল উলূম উম্মতের সঠিক রাহবরী করার চেষ্টা করেছে। দারুল উলূম একে তার দ্বীনী ও শরঈ দায়িত্ব বলে মনে করে।
(এতে যারা স্বাক্ষর করেছেন 🙂
১. (মাওলানা) আবুল কাসেম নোমানী গুফিরা লাহু (দামাত বারাকাতুহুম) [মুহতামিম, দারুল উলূম দেওবন্দ]
১৩ জুমাদাল উলা, ১৪৩৯ হি.
২. (মাওলানা) আরশাদ মাদানী (দামাত বারাকাতুহুম) [মুহাদ্দিস, দারুল উলূম দেওবন্দ]
৩. (মাওলানা মুফতী) সাঈদ আহমদ আফাল্লাহু আনহু (পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুম) [শাইখুল হাদীস ও সদরুল মুদাররিসীন, দারুল উলূম দেওবন্দ]
তিনি মূসা আ.-এর ব্যাপারে অন্যায় কথা বলেছেন না? কঠিন কঠিন কথা। সেই কথা শুধু মূসা আ.-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আল্লাহ তাআলার হুকুমের উপরও হাত পড়ে। কিন্তু তিনি রুজু করেছেন, ৪ বার লিখিত রুজু, তারপর পঞ্চমবার নিযামুদ্দিনের রুজু এবং ষষ্ঠবার কাকরাইলে রুজু করেছেন। রুজু কয়বার করা লাগে, বলেন আপনারা? আমি অমুক কথা ভুল বলেছিলাম, ঐটা প্রত্যাহার করে নিলাম, এটা ভুল, সহীহ কথা এই…। এটাকে বলে রুজু। রুজু কয়বার করতে হয়। রুজুর মত রুজু হলে তো একবারই যথেষ্ট। উনি ৬ বার রুজু করছেন কেন? প্রশ্ন হয় কি হয় না? রুজুর বিবরণ এবং এর প্রকৃতি সম্পর্কে মুন্সিগঞ্জের বয়ানে বিস্তারিত বলেছি। মাসিক আলকাউসারেও এসেছে। ওটা দেখে নিয়েন। (আলকাউসার, রবিউস সানী ১৪৪০ হি.; ডিসেম্বর ২০১৮ ঈ.)
তো এখন মূসা আ.-এর ব্যাপারে রুজু, দেওবন্দ বলেছে যে, এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, এটা ইতমিনানযোগ্য (قابل اطمینان قرار دیا جاسکتا ہے)। এর মানে আসলে পুরো ইতমিনানযোগ্য নয়। কিন্তু তারপরও যেহেতু উনি বারবার বলেছেন আমি রুজু করেছি, রুজু করেছি, ঠিক আছে ধরে নেওয়া হল। কিন্তু এটা তো একটা ঘটনা। এটার ব্যাপারে আপনি রুজু করেছেন। কিন্তু বিষয় তো এই না যে, তিনি একটা-দুইটা ভুল করেছেন, তা থেকে রুজু করে নিলেন। বিষয় তো হল উনার ফিকির এবং মেযাজের মধ্যে পরিবর্তন এসে গেছে। দেওবন্দ এটাই বলছে, সাদ সাহেবের যে ‘ফিকরি বে- রাহরাবি’ চিন্তাগত বিপথগামিতা সেটা দূর হয়নি। ওটা এখনো বহাল আছে। কোনটা? ‘ফিকরি বে-রাহরাবি’- চিন্তাগত বিপথগামিতা।
একজন দাঈ বিশেষ করে যিনি একটা কেন্দ্রীয় জায়গায় যিম্মাদারি পালন করছেন; তার চিন্তাচেতনা তো ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ চিন্তাচেতনার মত হতে হবে। কিন্তু উনার চিন্তার রাস্তা ভিন্ন। চিন্তার জগতে উনি ভিন্ন রাস্তায় চলছেন। এই চিন্তা দুনিয়াবি চিন্তা না, দ্বীনি বিষয়গুলোর চিন্তার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-এর রাস্তায় চলার পরিবর্তে তিনি ভিন্ন রাস্তায় চলা শুরু করেছেন। এই চলা এখনও অব্যাহত আছে। এক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে এমন কোনো বিষয় আসেনি, যা দেখে আশ্বস্ত হওয়া যায় যে, তিনি সঠিক রাস্তায় চলে এসেছেন।
একটা হল রাস্তায় আছি, কিন্তু ভুল হচ্ছে। এটা এক জিনিস। আরেকটা হল ভিন্ন রাস্তায় হাঁটা শুরু করেছি। দু’টি কি এক কথা? রাস্তায় আছি, কিন্তু হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই, কাত হয়ে পড়ে যাই, কখনো বসে যাই- এটা এক ধরনের ভুল। আরেক ভুল হল আমি রাস্তার বাইরে হাঁটা শুরু করেছি, অন্য রাস্তায় চলা শুরু করেছি। দুইটা কি এক কথা?
এ কথাই বলছে দারুল উলূম দেওবন্দ, ফিকরি বে-রাহরবী। কেন দেওবন্দের এ ব্যাপারে ইতমিনান হচ্ছে না? অনেকবার রুজু করার পরও কিছুদিন পরপর এমন নতুন নতুন বয়ান আসছে, যে বয়ানগুলোর মধ্যে সেই মুজতাহিদানা আন্দায, মুজতাহিদসুলভ মতামত প্রকাশ।
কোনো ‘মুজতাহাদ ফীহ’ বিষয়ে দলীলের আলোকে নিজস্ব মতামত হতে পারে। কিন্তু কার? মুজতাহিদের। আপনি তো মুজতাহিদ না। আপনি তো কোনো কথা বলার আগে চিন্তা করবেন আরো দশ আলেম কী বলে। আমি যেটা বুঝলাম আমার বুঝ ঠিক কিনা মশওয়ারা করে দেখি। মুজতাহিদরাও তো মশওয়ারা করে ফিকির করে বলতেন। কিন্তু তিনি যেন নিজেকে এত বড় মুজতাহিদ মনে করেন (দিলের হালাত আল্লাহই ভালো জানেন) যে, ব্যস, মাথায় একটা আসল আর বলে দিলেন। পূর্বের কোনো নির্ভরযোগ্য হাওয়ালার প্রয়োজন নেই। কোনো মশওয়ারার দরকার নেই। কারণ তিনি তো নীতি আবিষ্কার করেছেন যে মশওয়ারা শুধু ইনতিজামী বিষয়ে হয়। শরয়ী বিষয়ে হয় না! খেয়াল করেছেন? এটাকে বলে মুজতাহিদানা আন্দায।
দ্বিতীয় বিষয়, গলত ইস্তিদলালাত (দলীল প্রমাণের ভুল প্রয়োগ)। আয়াত-হাদীস-সীরাতের ঘটনা, এগুলো দিয়ে দলীল পেশ করতে হয় সঠিক পদ্ধতিতে। তিনি দলীল পেশ করেন গলত পদ্ধতিতে। অর্থাৎ আয়াত দ্বারা যেটা প্রমাণিত হয় না সেটা প্রমাণ করতে চান। হাদীস দ্বারা যেটা প্রমাণিত হয় না সেটা প্রমাণ করতে চান। সীরাতের এ ঘটনা দিয়ে যেটা প্রমাণিত হয় না সেটা প্রমাণ করতে চান। এটাকে বলে গলত ইস্তিদলাল।
তৃতীয় হল, দাওয়াতের বিষয়ে উনি নিজস্ব সীমিত গণ্ডির একটা নকশা ঠিক করেছেন। শরীয়ত দাওয়াতের রাস্তাকে রেখেছে প্রশস্ত। দাওয়াতের অনেক পদ্ধতি রয়েছে, ছিল, আছে, দাওয়াতের সকল মুবাহ পদ্ধতির ইবাহাত তথা বৈধতার হুকুম বলবৎ থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। তিনি নিজের মতো করে একটা নকশা দাঁড় করিয়েছেন। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর নকশাও ঠিক রাখেননি। ওটার মধ্যে সংযোজন-বিয়োজন করে নিজস্ব একটা নকশা দাঁড় করিয়েছেন। এখন শরীয়তের নুসূস অর্থাৎ কুরআন এবং হাদীসকে এই বিশেষ নকশার উপর غلط انطباق তথা ভুল প্রয়োগ করেন। যেমন, কুরআন যে দাওয়াতের কথা বলেছে সেটা এটা, শুধু এটা। হাদীস ও সীরাত যে দাওয়াতের কথা বলছে, সেটা কেবল এটা। দাওয়াত ও তাবলীগের ব্যাপারে যে আয়াত ও হাদীস আছে তার উদ্দেশ্য কী? শুধু এটা। এটা হচ্ছে দাওয়াতের বিশেষ পদ্ধতির উপর আয়াত-হাদীসের ভুল প্রয়োগ।
এখানে একটি কথা বুঝতে হবে। শরীয়তে যেখানে এক পদ্ধতি নির্ধারিত সেখানে পদ্ধতি একটাই। সেটিতে ভিন্নতা করা যাবে না। যেমন, সালাতের কথা কুরআনে বলা হয়েছে। মসজিদে যে সালাত পড়ছে মানুষ, শুধু এটাই সালাত। ভা-রীরা আরেক সালাত আবিষ্কার করেছে। তারা বা তাদের কেউ কেউ বলে, দিলের নামায বড় নামায! সেই সালাত কিন্তু সালাত নয়। যেহেতু সালাতের নির্ধারিত কাঠামো কুরআন হাদীস নির্ধারণ করে দিয়েছে কাজেই সেটিই নির্ধারিত। এখন যদি কেউ প্রতি রাকাতে দুই রুকু করে, চার সিজদা করে তো আপনি কী বলবেন? আরে কুরআন-হাদীসে যে সালাতের কথা বলা আছে সেটা এক রুকু, দুই সিজদাওয়ালা। তুমি যে নতুন আবিষ্কার করছ এটা সালাত নয়।
কিন্তু শরীয়ত যেখানে একাধিক পদ্ধতি রেখেছে, সেখানে আপনি এক পদ্ধতি নির্বাচন করলেন আর বললেন যে, কুরআন-হাদীসে দাওয়াতের ব্যাপারে যা বলেছে তা কিন্তু এটা। এর বাইরে গেলে দাওয়াত হবে না। এটা বিকৃতি কি বিকৃতি না? তো দেওবন্দ শেষ রুজুনামায় বলেছে তার রুজুর পরও নতুন নতুন বয়ানে তিনটা জিনিস দেখা যায়।
১. ইজতিহাদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মুজতাহিদের মত মতামত প্রকাশ।
২. আয়াত-হাদীস দিয়ে দলীল-প্রমাণ দিতে গিয়ে তার ভুল প্রয়োগ।
৩. দাওয়াতের বিশেষ পদ্ধতির উপর নুসূসে শরীয়ত তথা আয়াত-হাদীস ও সীরাতের ঘটনাসমূহের ভুল প্রয়োগ।
এই তিন ধরনের সমস্যা তার নতুন নতুন বয়ানগুলোর মধ্যে বারবার দেখা যাচ্ছে। তাহলে বুঝা গেল তার চিন্তাগত যে সমস্যা সেটা এখনো বহাল আছে। এজন্য ইতমিনান হচ্ছে না। শুধু আমাদের ইতমিনান হচ্ছে না তা না, বরং অন্যান্য উলামায়ে হকেরও তার ব্যাপারে বে-ইতমিনানি রয়েছে।
এরপর দেওবন্দ নসীহত করেছে যে, আমরা যদি আকাবিরের তরীকা ও চিন্তা-চেতনা থেকে একটুও দূরে সরে যাই তাহলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানের মধ্যে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। সালাফের তরীকার উপরে তার মজবুতির সাথে থাকা দরকার। সালাফের রাস্তায় চলতে হবে তাকে। এজন্য আমরা চাই তিনি নুসূসে শরীআহ অর্থাৎ কুরআনের আয়াত ও হাদীস এবং সীরাতের ঘটনা থেকে ‘ব্যক্তিগত ইজতিহাদের ধারা’ বন্ধ করুন।
এ কথা দেওবন্দ কেন বলছে? কারণ, উনি মুজতাহিদ না। ব্যক্তিগত ইজতিহাদ করতে গিয়েই তিনি গোমরাহির নতুন নতুন কথা আবিষ্কার করছেন। দারুল উলূম দেওবন্দ আরো সতর্ক করেছে যে, মাওলানার এরকম অনর্থক ইজতিহাদের কারণে আশংকা হয়, আল্লাহ না করুন, তিনি এমন একটা নতুন জামাত বানাতে যাচ্ছেন যেটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত থেকে ভিন্ন। আকাবিরের তরীকা থেকে ভিন্ন।
এই বিষয়টা কাউকে সরাসরি গোমরাহ বলার চাইতে কম নয়। এখন আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, দেওবন্দ শেষ লেখায় শুধু এ কথা বলেনি যে, মূসা আ.-এর বিষয়ে তার রুজু ইতমিনানযোগ্য; বরং দেওবন্দ আরো দুটি বিষয়ে সতর্ক করেছে।
১. ‘ফিকরী বে-রাহরাবী’ যার দলীল তার পরবর্তী বয়ানগুলোতে উপস্থিত:-
ক. ইজতিহাদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও মুজতাহিদের মত মতামত প্রকাশ।
খ. গলদ ইসতিদলাল।
গ. শরীয়তের নুসূসের অপপ্রয়োগ ।
২. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত ও আকাবিরের তরীকা থেকে আলাদা নতুন একটি জামাত বানানোর আশংকা।
আর এটা তো জানা কথা যে, তিনি রুজুর পর আগের বিভিন্ন গলত কথা আবারো বলে যাচ্ছেন। আর নতুন নতুন গলত কথা তো আবিষ্কার করছেনই।
হাঁ, কিছু জিনিস আছে, যা রুজুর পর আবার বলেছেন বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। যেমন পকেটে মোবাইল ফোন রাখলে নামায হবে না। এ থেকে তিনি রুজু করেছেন। রুজু করার পরে এই ব্যাপারে আমার জানা মতে আর বলেননি যে, নামায হবে না। অবশ্য এ সংক্রান্ত নতুন কিছু ভুল কথা বলেছেন। কিন্তু ‘নামায হবে না’ এই কথা আমার জানা মতে আর বলেননি। রুজু করার পর যদি আর না বলেন, তাহলে আমরা ধরে নিব যে, ঐ বিষয়ে রুজু ঠিক আছে।
এখন কথা হল, তার রুজুর ব্যাপারে যেহেতু যৌক্তিক কারণে ইতমিনান হচ্ছে না, তাই দেখা যায় অনেকে রুজুর আগের ঐ কথাগুলোকেও বয়ানে উল্লেখ করেন, যেগুলো রুজুর পর পুনরায় তিনি বলেননি। কিন্তু আমি বলি, এই ধরনের কথাগুলো উল্লেখ করার দরকার নেই। যেটা হতে তিনি রুজু করেছেন এবং দ্বিতীয়বার বলেননি সেটাকে তার গোমরাহির তালিকায় আনার দরকার নেই। আমরা তার ভ্রান্ত দিকগুলোর মধ্যে ঐ জিনিসগুলোই আনব, যা রুজুর পরও বলেছেন বা আগে বলেননি এখন নতুন করে বলছেন। এছাড়া বাকিগুলো আনার দরকার নেই।
আচ্ছা একজন দুইটা ভুল করেছেন, দুইটা ভুল থেকে রুজু করেছেন, তো এই দুই ভুল থেকে রুজুর কারণে কি তার তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ভুলও শুদ্ধ হয়ে যাবে? না। এক ভুল থেকে রুজুর কারণে অন্য ভুল শুদ্ধ হয়ে যাবে না; বরং বুঝতে হবে যে, আসলে তার নীতিই এরকম।
প্রশ্ন : দেওবন্দ আশংকা করেছে যে, এরা মনে হয় বাতিল একটা ফেরকা তৈরি করতে যাচ্ছে। এটা জানা সত্ত্বেও যদি কেউ তার এতাআত করে, এক্ষেত্রে তার জন্য আমরা কী করব?
উত্তর : আমরা তার জন্য দুআ করব। বুঝানোর চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : জনৈক মাওলানা সাহেব বলেন, তার ভুলের ব্যাপারে আমি একমত। তিনি তো সেগুলো থেকে রুজু করেছেন। আর আশংকার ব্যাপার যেটা, সেটা তো যে কারো ব্যাপারে করা যেতে পারে। কিন্তু ঐ তিনটা জিনিস গোপন রাখছেন। এ ব্যাপারে আপনি কী বলেন?
উত্তর : আমরা তাদের জন্য দুআ করব। তারা বলেন যে, দেওবন্দ যতটুকু বলেছে এর থেকে বেশি আমরা না বলি। তো এর চেয়ে কম বলবেন কেন? বেশি বলবেন না, কমও তো বলবেন না, তাই না! কিন্তু আপনি তো কম বললেন। ঐ তিনটা মারাত্মক জিনিস আপনি উহ্য রাখলেন। তাছাড়া এ কথাও ঠিক নয়, যে কারো ব্যাপারে আশংকা করা যায়। আপনি নিজের মুহাসাবা যত ইচ্ছা করুন, কিন্তু কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া কারো ব্যাপারে এমন আশংকা করা জায়েয নয়। আর যৌক্তিক কারণ, শক্তিশালী আলামত ও লক্ষণের কারণে আশংকা করা হলে সেই আশংকাকে উপেক্ষা করা যায় না কোনোভাবেই।
احتمال ناشئ عن دلیل এবং احتمال ناشئ عن غیر دلیل-এর পার্থক্য আলেমরা বুঝেন। আর রুজুর হাকীকত বুঝার জন্য মাসিক আলকাউসারের (ডিসেম্বর ২০১৮) সংখ্যা দেখুন। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন কারো বিভ্রান্তিমূলক কথায় প্রতারিত না হই। আল্লাহ তাআলা রক্ষা করার মালিক।
প্রশ্ন : দেওবন্দকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম দাওয়াত তাবলীগের মত এত বড় একটা মেহনতের ব্যাপারে কোনো ধরনের ফতোয়া দেওয়ার স্বাধীনতা রাখে কি না?
উত্তর : দেওবন্দকে উপেক্ষা করার অর্থ বুঝলাম না আমি। এর অর্থ কি দেওবন্দের হুকুম অমান্য করা? এমন কিছু তো এখানে ঘটেনি। এখানের আলেমরা তো দেওবন্দের ফতোয়ারই ব্যাখ্যা করেছেন এবং ঐ ফতোয়ার প্রয়োগের দিকে দৃষ্টি আকষর্ণ করছেন। থাকল কোনো বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া। তো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে যে শর্তগুলো রয়েছে বা ফতোয়া দেওয়ার যোগ্য কে- এক্ষেত্রে শরীয়তের যে নীতিমালা রয়েছে, ঐ নীতিমালা অনুসারে যার মধ্যে ঐ যোগ্যতা আছে সে-ই ফতোয়া দিতে পারে। দারুল উলূম দেওবন্দ কখনো এই ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। করার কথাও না।
জানি না আপনারা জানেন কি না। মাওলানা সা‘দ সাহেব হাফিযাহুল্লাহ-এর মারাত্মক ভুলগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর এখানকার উলামায়ে কেরাম কাকরাইলের শুরার নিকট দরখাস্ত নিয়ে গিয়েছিলেন যে, সা‘দ সাহেবকে আপাতত ইজতিমায় দাওয়াত না দেওয়া হোক। এটা কিন্তু দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া আসার আগে উলামায়ে কেরাম করেছেন। এতে দারুল উলূমের জিম্মাদারগণ কিন্তু নারাজ হননি; বরং যারা জানতে পেরেছেন তারা নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন করাতে খুশি হয়েছেন।
প্রশ্ন : মাওলানা সা‘দ সাহেব অন্যান্য মেহনতকে খাটো করেন এবং বলেন যে, এই মেহনতের সাথেই আল্লাহ তাআলার ওয়াদা এবং দাওয়াতের ব্যাপারে যে সমস্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীস আছে সেগুলোকে এ মেহনতের সাথে খাছ বলেন, এটা কি শরীয়তের বিকৃতি হবে?
উত্তর : হাঁ, বিকৃতি তো বটেই। দেখুন, তালীম বা দ্বীনের শিক্ষাদান ছিল সাহাবাদের আমল। কিন্তু এমন লম্বা একটা ঘর হতে হবে, ঘণ্টাভিত্তিক ও ক্লাসভিত্তিক পড়াশোনা হতে হবে এটা তো ছিল না। দশ বছরের কারিকুলাম হতে হবে, এটাও তো ছিল না। কিন্তু তালীম ছিল। এগুলো স্পষ্ট কথা। দাওয়াতও এ রকম। মূল দাওয়াতের কাজ, আর তার বিশেষ পদ্ধতি এক কথা নয়। আল্লাহ তাআলা দাওয়াতকে ফরয নামাজের মতো করে দেননি যে, একটা নির্ধারিত বিশেষ পদ্ধতিতে করতে হবে। কারণ এটা হলে সংকীর্ণ হয়ে যাবে। মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা ইবাদতের পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেমন হজ¦, বিশেষ জায়গায় বিশেষ দিনে পালন করতে হয়। কিন্তু তালীম, দাওয়াত ও তাবলীগ, নুসরতে দ্বীন ও ইশাআতে দ্বীন- এসব কাজ এবং এগুলোর মতো অনেক কাজ আছে, যার জন্য আল্লাহ তাআলা মূলনীতি দিয়ে দিয়েছেন, এই মূলনীতিগুলো অবলম্বন করে দ্বীনের এসব কাজ করো। এখন যদি কেউ বিশেষ একটি মুবাহ পদ্ধতিকেই কুরআন-হাদীস ও সীরাতের নির্ধারণকৃত অবধারিত পদ্ধতি মনে করে তাহলে সেটা তাহরীফ তথা বিকৃতি কেন হবে না?
সারকথা হল, দ্বীনের যে কাজগুলোর পদ্ধতি আল্লাহ তাআলা প্রশস্ত রেখেছেন, সেই কাজের মধ্যে আপনি একটা পদ্ধতিকে নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন না। আপনি যে কোনো বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করুন, কিন্তু বলতে পারেন না, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এটাই হুকুম। তাহলে কি আগের ওয়ালারা ভুল করেছেন? নাউযুবিল্লাহ। আর সামনে? সামনেও তো একাধিক পদ্ধতি হতে পারে। এখনও একাধিক পদ্ধতি চলতে পারে। চলছেও। দুনিয়ার সবাই কি নিযামুদ্দিনের তরীকায় দাওয়াত দেয়? ওদের দাওয়াত যদি শরীয়তের নীতিমালা অনুযায়ী হয়, তাহলে কি আপনি নাজায়েয বলবেন? কেবলই এই জন্য যে, এটা নিযামুদ্দিনের সাথে যুক্ত নয়। এ কথা বলা কি জায়েয আছে? যদি কেউ বলে তাহলে বিকৃতি হবে কি হবে না?
হয়ত আপনারা জানেন, দাওয়াতকে বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার এই মারাত্মক ভুল থেকে কিন্তু তিনি রুজু করেছেন; কিন্তু রুজু করার পরও তা একাধারে বলে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন : মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআতে যারা আছেন, অনেক সময় তারা বিভ্রান্তিকর কথা বলেন, ইখতিলাফী বিষয়ে তর্ক জুড়ে দেন বা কাউকে গলত বুঝাতে থাকেন, তাদেরকে আমলে জোড়ানোর ব্যাপারে কী বলেন?
উত্তর : কেউ আমলে বসতে চাইলে নিষেধ করা তো আমি মুনাসিব মনে করি না। যে ব্যক্তি এরকম করে, বিভ্রান্তি ছড়ায় তাকে হাতে-পায়ে ধরে বলে দেওয়া যে, ভাই মেহেরবানি করে এমন না করলে ভালো হয়। কিন্তু একজন কেবলই এতাআতী বলে তাকে আপনাদের সাথে কাজে জুড়তে দেবেন না, এটা ঠিক না। কেউ সমস্যা সৃষ্টি করলে তার ব্যাপারে তো মাসআলা আছে। মসজিদ তো সবার জন্যই উন্মুক্ত। কিন্তু একজন মসজিদে এসে ফেতনা করে, তো তাকে বলা, ভাই! মসজিদ তো নামাযের জায়গা। ইবাদতের জায়গা। ফেতনার জায়গা না। এমনই যদি করেন তাহলে দয়া করে আপনি এখানে না আসলে ভালো হয়। এতটুকু বলার অবকাশ আছে। কিন্তু প্রথমেই তাকে এ কথা বলে দিতে পারেন না।
প্রশ্ন : সা‘দ সাহেব মাদরাসার শিক্ষকদের বেতনের ব্যাপারে যে মাসআলা দিয়েছেন এবং মাদরাসা (এর উপযুক্ত খাতে) যাকাত না দেওয়ার যে কথা বলেছেন এটা মাদরাসা শিক্ষাকে বন্ধ করার কোনো চক্রান্ত কি না?
উত্তর : এটার একটা আশঙ্কা আছে। কিন্তু তার বিষয়ে এই দাবি করতে হলে স্পষ্ট দলীল দরকার। তিনি অন্য দিকে এটাও বলেছেন যে, সাধারণ অর্থে বা নিজের অর্থ দিয়ে মাদরাসা পরিচালনা করো। যাকাতের টাকা দিয়ে নয়। বেতন-ভাতার বর্ণনার বিষয়ে এরা বারবার উমর রা.-এর উদ্ধৃতি দেয়। এ বিষয়ে আপনারা আলকাউসারে হয়তো পড়েছেন যে, বর্ণনাটা ঠিক নয়। এবং বর্ণনার যে পাঠ, সে পাঠের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আবার বর্ণনাটির যে মর্ম তার সাথে তাদের কথিত মাসআলার কোনো মিল নেই। (বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আলকাউসার যিলহজ্ব ১৪৩৯ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০১৮ ঈসায়ী সংখ্যা দেখুন।)
তো এ ব্যাপারে উমর রা.-এর দিকে সম্বন্ধ করে যে বর্ণনা উল্লেখ করা হয় তা উমর রা. থেকে প্রমাণিত নয়। কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব নিজেই অন্য এক জায়গায় এ বিষয়ে সঠিক কথা বলেছেন। সেখানে বলেছেন
যে, মাদরাসাওয়ালারা যে সম্মানী নেয়, তা হাবসে আওকাতের বিনিময়ে, তা‘লীমের বিনিময়ে নয়। মানে তারা যে নিজেদের পুরো সময়টা এ কাজে দিয়ে দিচ্ছেন, এ কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকছেন, নিজেদের কামাই রোজগারের জন্য সময় পাচ্ছেন না, তাই এ সময় প্রদানের বিনিময়ে সম্মানী ভাতা নিচ্ছেন। যেহেতু এ বিষয়ে মাওলানা সা‘দ সাহেবের এ ধরনের বক্তব্যও রয়েছে সেজন্য আমরা তার নিয়তের উপর হামলা করতে পারি না। গায়েবের মালিক আল্লাহ। বাকী তার এতাআতীরা বা তাদের অনেকে যে মাদরাসা দেখতেই পারে না তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রশ্ন : যারা এতাআত করছে তারা তো চাচ্ছে ভাগাভাগী। এটা কেমন?
উত্তর : তারা যদি এ কথা বলেন যে, ভাই তোমরা আমাদের ইসলাহের আশা করো না। আমাদের সা‘দ সাহেবেরও ইসলাহের আশা করো না। যেমন, একজন বলে দিয়েছে যে, মাইজভাণ্ডারীরা এদেশে আছে, তো আমরাও আছি। আরেকজন বলেছে, সা‘দ সাহেব জাহান্নামে গেলে আমরাও জাহান্নামে যাব। নাউযুবিল্লাহ। যদি ওরা বলে যে, আমাদেরকে ভিন্ন ফেরকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। তাহলে তাদেরকে প্রথমে বলতে হবে যে, ইলিয়াস রাহ. যে তাবলীগ করেছেন, তারা সেই তাবলীগের ওপর নাই। তারা যদি বলে, আমাদেরকে ভিন্ন ফেরকা হিসেবে থাকতে দাও, তাহলে এটা তাদের বিষয়। আমার তো এটা ভাবতেই কষ্ট লাগে। আমরা চাই সবাই হকের ভিত্তিতে এক হয়ে যাক। কিন্তু এ কথা বলা যে, আমরাও তাবলীগ ওরাও তাবলীগ, ওদের একদিন আমাদের একদিন- এ কথা বলা চলবে না। এটা হয় না। কারণ, তুমি যখন ইলিয়াস রাহ.-এর তাবলীগের কথা বলছ তাহলে তোমাকে সেই আদর্শের ওপর চলতে হবে। তুমি যখন দ্বীনের তাবলীগের কথা বলছ, তাহলে তোমাকে প্রথমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা, মানহাজ এবং তরীকা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এটা থেকে সরে তাবলীগের নাম নিলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। আরে ভাই! ভাগাভাগি তো হয় ধন-সম্পদের মধ্যে। হক আর বাতিলে ভাগাভাগি হয় নাকি?
প্রশ্ন : টঙ্গির ময়দানে যে হাঙ্গামা ওরা করল, এরপরে তাদেরকে কি বাতিল ফেরকা বলা যাবে?
উত্তর : তারা তো নিজেদেরকে নতুন ফেরকার রূপ দিয়ে দিয়েছেই মনে হচ্ছে। এটা তো তাদের কাজ। আমরা না বলি। আমরা চাই না- ফেরকা থাকুক। ফেরকা থাকা যে কত বড় মুসিবত! ফেরকা থাকলে তো যতদিন ঐ ফেরকা থাকবে ততদিন তাতে না-বুঝে না-শুনে লোক যুক্ত হতেই থাকবে। আমরা চাই ফেরকা না হোক, হাতে-পায়ে ধরে আমাদের চেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব যাতে ওরা হক পথে চলে আসে।
প্রশ্ন : যদি কারো বাবা-মা এতাআতে থাকেন তাহলে তাদের প্রতি ছেলের আচরণ কেমন হতে পারে?
উত্তর : মা-বাবার সাথে আদব রক্ষা করা এবং হকের ওপর মজবুত থাকা। আদব ও ইকরামের সাথে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা।
প্রশ্ন : আমাদের হলের মধ্যে দেখা যায় যে, আমরা বেশির ভাগ সাথি আলেমদের সাথে আছি। কিছু কিছু সাথি আছে, যারা এতাআতী। যদি এমন হয় যে, একই রুমে আমরা তিন-চারজন আলেমদের সাথে আর দুয়েকজন থাকে এতাআতী, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমাদের ফিকির কী হবে?
উত্তর : কথা তো একটাই, আশা ছাড়বেন না। দুআ করতে থাকবেন, বোঝাতে থাকবেন।
প্রশ্ন : যদি এমন হয় যে, আমাদের তাবলীগের রুমগুলো আলাদা। একই রুমে সব তাবলীগের ভাইয়েরাই থাকে, যেহেতু ওরা ফেতনা ছড়াচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তাদেরকে আমাদের রুমে রাখা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? উত্তর : রাখলে তো ভাল। তাহলে তারা আপনাদের সোহবতে হয়তো এদিকে আসতে পারে। যদি তারা খুব বেশি সমস্যা না করে, তাহলে তাদেরকে সাথে রাখাই ভালো।
প্রশ্ন : মুনতাখাব হাদীস তালীম করা হয় না কেন?
উত্তর : মাশওয়ারা ছাড়া সা‘দ সাহেব এটা শুরু করেছেন। মাশওয়ারা করতে হবে না? একটি কিতাব তালীমে যুক্ত করা হবে- মাশওয়ারা হতে হবে তো? তো মাশওয়ারায় সিদ্ধান্ত না করে এটার তালীম শুরু করে দিয়েছেন। যেহেতু এটা একক ফায়সালায় শুরু করেছেন এবং এটা জোর-জবরদস্তি করে চালিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার কারণে, তার একক সিদ্ধান্তে যেগুলো চালু হয়েছে, সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে মুন্তাখাব হাদীসের তালীম করছে না অনেকে। কিন্তু কাকরাইল থেকে এর তালীমের প্রতি কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, মনে হয় বিষয়টি এমন নয়। আমার খেয়াল হল, যাই হবে মাশওয়ারার মাধ্যমে হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : যে দু-চার জন আলেম ইতাআতের সঙ্গে আছেন তারা বলেন যে, বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের আরো প্রশস্ত মানসিকতা রাখা দরকার। তারা সংকীর্ণ মানসিকতা রাখেন। প্রশস্ত মানসিকতা দেখানো দরকার।
উত্তর : প্রশস্ত মানসিকতার সীমারেখা কী? ‘প্রশস্ত’ মানসিকতার একটি রূপ হল, আপনি বলবেন যে, এ ভুলগুলো ভুল না। আরেকটা হল এ ভুলগুলো থাকা সত্ত্বেও তার এতাআত করতে হবে। তার সাথে ভুলগুলোর পূর্বে যে আচরণ করা হয়েছে সে আচরণই করা হবে। তো এমন প্রশস্ততা তো শরীয়তে অনুমোদিত নয়।
আমরা বুঝতে চাই- প্রশস্ততা মানে কী? এটাও তো প্রশস্ততা যে, তার এতসব সমস্যা সত্ত্বেও শুধু এতটুকু বলা হল যে, তিনি আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের রাস্তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, যা গোমরাহীর রাস্তা। তার অনেক বক্তব্য আহলুস্সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইজমা পরিপন্থী। তিনি ফিকরী বে-রাহরবীর শিকার। এরচে কঠিন বা কড়া কোনো মন্তব্য করা হল না- এটাও এক ধরনের প্রশস্ততা।
আপনি যদি চান যে, এ ভুলগুলোকে সাধারণ ভুল হিসেবে ধরা হোক- এটাতো হবে না। এমন প্রশস্ততা যদি আশা করা হয় যে, কঠিন ভুলকে আপনি বলবেন হালকা ভুল- এটা তো হবে না। এটা তো অন্যায়। উনারা এ ধরনের প্রশস্ততা চাচ্ছেন।
সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততার শরঈ যে সীমারেখা তার মধ্যেই আমাদের থাকতে হবে। নিজেদের থেকে প্রশস্ততা আবিষ্কার করা যাবে না।
প্রশ্ন : টঙ্গির ঘটনার প্রেক্ষিতে এক ভাই আমাকে বলল যে, মুসলমান মুসলমান যদি মারামারি করে তখন যে মারা যায় সে কি শহীদ?
উত্তর : আমি যতদূর জানি টঙ্গিতে মারামারি হয়নি; বরং একতরফা হামলা হয়েছে। যাই হোক যেটা আপনার জানার বিষয়, মযলুম হয়ে যে মারা যাবে সে শহীদ। অর্থাৎ শহীদের ছওয়াব পাবে। যারা জিহাদের ময়দানে কাফেরদের হাতে শহীদ হয় শরীয়তের পরিভাষায় মূল শহীদ তারা। আরেকটি হল শহীদের ছওয়াব পাওয়া। এই অর্থে যে, যে মুসলমান মযলুম হয়ে নিহত হয়েছে, সে শহীদের ছওয়াব পাবে। তাই একথা বলা ঠিক না যে, যারা মযলুম হয়ে মারা গেছে তারা শহীদের ছওয়াব পাবে না।
প্রশ্ন : তারা বলেন হযরত আলী রা. ও হযরত মুআবিয়া রা.-এর বিরোধের সময় আবু হুরাইরা রা. নিরপেক্ষ ছিলেন। একথাটি ঠিক কি না?
উত্তর : তাদের কী বিরোধ ছিল? বিরোধের দুটি স্তর। একটি তো হল যখন এক পক্ষ আরেক পক্ষের মুখোমুখি হয়ে গেছে-তখনকার বিরোধ। আরেকটি হল- খেলাফতের মাসআলা নিয়ে বিরোধ। কোন বিরোধের সময় হযরত আবু হুরাইরা রা. নিরপেক্ষ ছিলেন? বিরোধ বলতে হযরত আলী রা. ও হযরত মুআবিয়া রা. যখন মুখোমুখি হয়েছেন; সে বিরোধে হযরত আবু হুরাইরা রা. নিরপেক্ষ ছিলেন। উভয় দল যখন মুখোমুখি হয়েছে, তখন কিছু কিছু সাহাবী অংশ নেননি। অনেকে ধারণা করেছেন যে, এখানে অংশগ্রহণ করা ঠিক হবে না। সেই হিসেবে তারা অংশগ্রহণ করেননি।
বর্তমান দ্বন্দ্বকে হযরত আলী রা. ও হযরত মুআবিয়া রা.-এর ঘটনার সাথে মিলানো একেবারে অন্যায়। এ চিন্তাটাই ঠিক না। আজকের এতাআতী ভাইয়েরা নিজেদেরকে হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর জামাতের সঙ্গে তুলনা করারও অধিকার রাখে না। এমন করলে অনেক বড় বে-আদবী হয়। কোথায় ‘খাতায়ে ইজতিহাদী’ আর কোথায় বাতিলের অন্যায় পক্ষপাতিত্ব। কিন্তু মৌলিক যে বিষয়টি বোঝা দরকার সেটা হল- আমরা যদি এখানে কোনো সাহাবীর ঘটনা উদ্ধৃত করতে চাই তাহলে দেখাতে হবে- এক ব্যক্তি গলত রাস্তায় চলে গেছে আর অন্য সাহাবী বলেছেন যে, সে গলত রাস্তায় চলে গেলেও তার খান্দান যেহেতু ভালো, সেজন্য তার গলতকে গলত বলা যাবে না। তার এতাআত করতে হবে। এরকম কথা কোনো সাহাবী বলেছেন? কখনো বলেননি।
***
*তারা যে দশ জন দশ জন বসতে চাচ্ছেন এ বিষয়ে আপনার কী মশওয়ারা?
** যদি শুধু বসার জন্য বসা হয়, বিশেষ কোনো নিয়ত না থাকে তাহলে সময় নষ্ট করব কেন? আর যদি আসলেই বোঝা যায় যে, তারা হার-জিতের বসা বসবে না; বরং উদ্দেশ্য হবে সহীহ রাস্তা কী তা বোঝার জন্য একে অপরের সঙ্গে মুযাকারা করা এবং সহীহ রাস্তায় পৌঁছার চেষ্টা করা। যদি এই উদ্দেশ্য হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ বসার চেষ্টা করব। তবে অন্যায় কোনো শর্ত গ্রহণ করব না।
আর মূল বসার আগে আরেকটা বসা আছে। কোথায় বসা হবে এবং আলোচনা কীভাবে হবে- এগুলো ঠিক করতে হবে তো। তাদের দশ জন কারা হবেন আমাদের দশ জন কারা হবেন, কোথায় বসা হবে, কোন তারিখে বসা হবে, আলোচনার আদব ও নিয়মকানুন কী হবে- এইসব নির্ধারণ করে তারপর বসতে হবে। তাই বলেছি মূল বসার আগে আরেকটা বসা আছে।
* আসলে দশ জন দশ জনের শর্তারোপের উদ্দেশ্য হল, এই পক্ষে যে কয়জন থাকবে ঐ পক্ষে ঠিক ঐ সংখ্যক লোক থাকবে। আর মজলিসের মধ্যে কোনো মাদরাসার ছাত্র থাকতে পারবে না। কারণ তাদের আশঙ্কা, মাদরাসার ছাত্ররা থাকলে কখন কী করে, আক্রমণ করে বসে কি না!
** আক্রমণ ছাত্ররা করে না। আক্রমণ তো তারা করেছেন!
* এটা তাদের চিন্তাগত বিষয়। যাইহোক তাদের দাবি হল, মাদরাসার কোনো ছাত্র থাকতে পারবে না। আর যে ভাই আসবেন তার সঙ্গে একজন প্রফেসর তিন জন এতাআতী আলেম আসবেন। তারা যে কয়জন থাকবেন আমাদের পক্ষ থেকে সেই কয়জন থাকতে হবে এবং নিউট্রাল কোনো ভ্যানু অর্থাৎ না আপনার এখানে না তাদের ওখানে, নিউট্রাল কোনো একটা স্থানে তারা মিলিত হতে চায়।
** সেই জায়গাটা ঠিক করবে কে? সেটার জন্যও তো মশওয়ারা দরকার। এজন্য মূল বসার আগে একবার বসতে হবে।
* তাদের আরো কিছু দাবি আছে। ক. পুরো মজলিস তারা ভিডিও রেকর্ড করতে চায়। খ. এই পক্ষ ভুল প্রমাণিত হলে তাওবা করে ঐ পক্ষে ফিরে যাবে।
** আর ঐ পক্ষ ভুল প্রমাণিত হলে কী হবে সেটা বলেনি?! আচ্ছা ভুল প্রমাণিত হলে তাওবা করবে না কেন! কিন্তু ভুল প্রমাণিত হল কি হল না এর ফায়সালা কীভাবে হবে? তারা তিন জন এরা তিন জন। তারাও বলে যাচ্ছে, এরাও বলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কেউ বলে ওঠবে, এই যে আপনাদের কথা ভুল প্রমাণিত হল; তাই আপনারা তাওবা করেন। কেউ এমন বলে বসলেই হবে? সুতরাং ভুল প্রমাণিত হল কি হল না তা নির্ধারণের শরয়ী নীতি আলোচনা করে নিতে হবে। ঐ নীতির প্রয়োগ কীভাবে হবে সেটাও আলোচনা করে নিতে হবে। এজন্য আমি বলছি, মূল বসার আগে একবার বসতে হবে।
তবে মনে রাখবেন, গোমরাহীর বিষয়গুলোতে তো তাদের ভুলই প্রমাণিত হবে, যারা গোমরাহীকে গোমরাহী বলছে না। এখানে মূল আলোচ্য তো ইজতিহাদী কোনো মতামত নয় যে, এতে যে কোনো পক্ষেরই ভুল প্রমাণিত হওয়া বাস্তবেই সম্ভব। তারপরও সঠিক পদ্ধতিতে হলে বসতে কোনো সমস্যা নেই। আরেকজনকে ভুল প্রমাণ করতে এসে যদি নিজের কাছে নিজের ভুলটাই স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলে তো ভালোই হবে ইনশাআল্লাহ।
سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك.
(সূত্রঃ মাসিক আলকাওসার ডিসেম্বর ২০১৮; জানুয়ারী ২০১৯)