প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম বর্তমানে যত ধরনের কুরআন ও বিভিন্ন দোয়ার খতম দেখা যায়, সেগুলো কি বিদআত নয়? অনেক আলেম বলে থাকেন যে, দুনিয়াবী ব্যাপারে কুরআন ও বিভিন্ন দোয়ার খতম পড়া বিদআত নয়! এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জামায়াত বেঁধে খতম পড়ার নিয়ম তো সুন্নাহ থেকে প্রমাণীত নয়। যদি এ থেকে এমন আমল করা যায় তাহলে তো মিলাদ, কিয়াম, জশনে জুলুশ সব বিদআত হবে না। কারন, সবাইতো বিভিন্ন দোয়া দরুদ পড়েই এসব বিদআতে লিপ্ত হয়। সুতরাং সে দিক দিয়ে বিবেচনা করলেইতো সব কিছুই জায়েয বলে বুঝা যায়। সূরা আহযাব এর ২৩ নং আয়াতের আর কি মূল্যায়ন হবে? এ বিষয়ে বিস্তারিত দলীল সহকারে বিদআত কি না, জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
প্রিয় দ্বীনী ভাই, সঙ্গত কারণে আপনার উত্তর দিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
হাদীস শরীফে আছে, কুরআন খতম করে দুআ করলে দুআ কবূল হয়। হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من صلى صلاة فريضة فله دعوة مستجابة ومن ختم القرآن فله دعوة مستجابة
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কেউ ফরজ নামায আদায় করলে তার দুআ কবূল হয় এবং কেউ কুরআন খতম করলে তার দুআ কবূল হয়।–তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং ৬৪৭
অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে কুরআন খতমের পর বরকতের জন্য পরিবার পরিজনকে ডেকে একত্রে দুআ করার বিষয়টিও আসার থেকে প্রমাণিত।
أن أنس بن مالك كان إذا ختم القرآن جمع أهله وولده فدعا لهم
অর্থঃ হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) যখন কুরআন খতম করতেন, তার পরিবার-পরিজন ও সন্তানাদি ডাকতেন এবং তাদের জন্য দুআ করতেন।–তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং ৬৭৪
হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেন-
كانوا يجتمعون عند ختم القرآن يقولون : تنزلُ الرحمةُ
অর্থঃ তারা কুরআন খতমের সময় একত্রিত হতেন এবং বলতেন (কুরআন খতমের সময়) রহমত অবতীর্ণ হয়।–ইমাম নববী, আল আযকার ১/২৫৬
তাই যেহেতু কুরআন খতমের পর দুআ কবূল হয় এবং সাহাবায়ে কেরাম কুরআন খতমের পর দুআর জন্য পরিবারকে একত্রিত করতেন তাই বর্তমানে প্রচলিত কুরআন খতমে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন অসুবিধা নেই। রইল বিনিময় নেওয়ার প্রসঙ্গ, যদি মৃত ব্যক্তির ঈছালে ছাওয়াবের জন্য কুরআন পড়া হয় তবে তার বিনিময় নেওয়া ও দেওয়া উভয়টি সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যে পড়া হলে তার বিনিময় নেওয়া জায়েয। নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে আপনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত দলীলভিত্তিক আলোচনা পেয়ে যাবেন-
http://muftihusain.com/ask-me-details/?poId=2071
আর আপনি এই কুরআন খতমের সাথে যেগুলো (মিলাদ, কিয়াম, জশনে জুলুশ) তুলনা করেছেন সেগুলো আর কুরআন খতমের মাঝে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। ঐগুলো নাজায়েয হওয়ার কারন একত্রিত হওয়া নয়। যেমন প্রচলিত মীলাদে বিভিন্ন বানোয়াট দুরূদ পড়া হয়, আবার তা সম্মিলিতভাবে পড়া হয়, দিনক্ষণ নির্ধারণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাজির নাযির জেনে কিয়াম করা হয় ইত্যাদি। এগুলোর সবই শরীয়তে নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ। অনুরূপভাবে জশনে জুলুসও শরীয়তে নিষিদ্ধ।