প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, হুজুর আপনার এই লিঙ্কে (http://muftihusain.com/ask-me-details/?poId=2315) দেওয়া প্রশ্নোত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্ন হল, আমি অনেক আগে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ঘটনা শুনেছিলাম। ঘটনাটি কম-বেশি এরকম যে, সেই যুগে কিছু আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন যারা দোয়া করলেই সাথে সাথে দোয়া কবূল হতো। তো জালেম বাদশাহ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ তাদের কথা জানতে পারলেন যে, তার পূর্বের বাদশারাও তাদের বদদুআর কারনে ধ্বংস হয়েছিল। তাই হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সেই আল্লাহওয়ালা লোকদের বদদুআর কথা ভেবে তাদেরকে দাওয়াত দিলেন এবং তারা মুসলমান বাদশাহ ভেবে সরল মনে “মুসলমানের প্রতি সু-ধারনা পোষন” করে দাওয়াত কবূল করেন। তারপর জালেম বাদশাহ চালাকি করে তাদেরকে হারাম খাবার ভক্ষন করায় ফলে তাদের দোয়া-বদদুআ আর কবূল হয় না। এখন আমরাও যদি কে দাওয়াত দিচ্ছে বা না দিচ্ছে কিছুই তাহকীক না করে পাইকারী দরে অন্যের দাওয়াত কবূল করে হারাম খানা খাই তাহলে তো আর হারাম-হালাল বাছা হলো না। মুসলমানদের প্রতি সু ধারনা রাখতে হবে কিন্তু তাই বলে তো আর হারাম খাবার খাওয়া যাবে না!

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
প্রথমে পাঠকদের সুবিধার্থে ঐ প্রশ্নোত্তরটি উল্লেখ করলাম যার পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তিটি তৈরি হয়েছে-
(প্রশ্নঃ আমাদের সমাজে দেখা যায় ইমাম সাহেবের খাবার সমাজের মানুষের বাড়ি থেকে আনা হয় সেক্ষেত্রে দেখা যায় কে ঘুষ খায় কে সূদ খায় তা বিবেচনা করা হয় না বা যায় না। এমন অবস্থায় ঐ ইমামের পিছনে নামায হবে কি? কেননা আমি জানি হারাম খেলে ৪০ দিন পর্যন্ত কোন ইবাদত কবূল হয় না?
উত্তরঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম
এ সমস্যা শুধুমাত্র ইমাম সাহেবের হবে কেন? এটা তো সবার ক্ষেত্রেই হবে। যেমন আপনি দোকানদার হলে যার নিকট পণ্য বিক্রি করবেন তিনি আপনাকে হালাল থেকে মূল্য দিবেন নাকি হারাম থেকে এটা আপনি জানেন না। কাউকে বাড়ি ভাড়া দিলে তিনি তা হারাম থেকে দিবেন কিনা জানেন না। আর্থিক লেনদেনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই মাসআলা আসবে। আর সব ক্ষেত্রে তা খুঁটে খুঁটে বের করলে জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। কাজেই শরীয়তের মূলনীতি হল, যার ব্যাপারে কিছু জানা যায় না তার সাথে লেনদেন করতে বা তার বাড়ি খানা খেতে কোন অসুবিধা নেই। তার সাথে লেনদেনের পূর্বে তার হালাত বিস্তারিত জানার বা জিজ্ঞসা করার প্রয়োজন নেই। হাদীস শরীফে মুমিনদের সাথে ভালো ধারনা পোষণ করতে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে যদি কারো ব্যাপারে জানা যায় তার অধিকাংশ ইনকাম হালাল তবে তার সাথেও লেনদেন করতে সমস্যা নেই। হ্যাঁ, কারো অর্ধেক বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম হলে তার হাদিয়া গ্রহন করা বা তার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করা জায়েয নয়। তবে সে দেওয়ার সময় যদি বলে এটা হালাল থেকে দিচ্ছি সেক্ষেত্রে জায়েয।
কাজেই কারো অর্ধেক বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম হলে তার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করা ইমাম সাহেবের জন্য জায়েয নয়। আর এ দায়িত্ব তো মুসল্লীদের যে, তারা তাদের ইমামের হালাল খাবারের ব্যবস্থা করবে। তারা এতে ব্যর্থ হলে তার পিছনে ইক্তেদা করা ব্যতীত উপায় কি? যে মুসল্লীরা তাদের ইমামের জন্য হালাল রুজির ব্যবস্থা করতে পারে না তারা হারামখোর ইমামের পিছনে নামায পড়বে এটাই স্বাভাবিক।)

মূল উত্তরঃ আমি পূর্বোক্ত প্রশ্নোত্তরে বলেছিলাম যার ব্যাপারে কোন কিছু জানা যায় না তার সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন করতে কোন অসুবিধা নেই। যদি তার সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন করার পূর্বে তার তাহকীক করা জরুরি সাব্যস্ত করা হয় তবে সেক্ষেত্রে জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। কেননা আপনি যখন বাসে উঠবেন তখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে বাসটি চুরিকৃত কিনা? বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে জিজ্ঞাসা করতে হবে বাড়িটি হারাম মাল দ্বারা তৈরিকৃত কিনা? কোন কিছু কিনতে গেলে জানতে হবে তা হালাল মাল থেকে এসেছে কিনা?
এবার আপনিই বলুন জীবনে কি কখনো কোন পণ্য ক্রয় করতে ক্রেতার নিকট হালাল হারাম জিজ্ঞাসা করেছেন? নাকি হালাল হারামের তাহকীক কেবল দাওয়াত গ্রহনের সময়ই সীমাবদ্ধ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জীবনে অনেক দাওয়াতে অংশগ্রহণ করেছেন। অমুসলিমদের বাড়িতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত খেয়েছেন এমন অসংখ্য হাদীস রয়েছে। কিন্তু কখনো দাওয়াত খাওয়ার পূর্বে জিজ্ঞাসা করেছেন “তোমাদের খাবার হালাল কিনা” এই মর্মে কি কোন হাদীস রয়েছে? এমনটি হলে মানুষের জীবন তো সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। জিবনযাপন করাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
অর্থঃ তিনি তোমাদের দ্বীনের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা রাখেননি।
এজন্যই উলামায়ে কেরাম কুরআন ও হাদীস থেকে এই মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন যার ব্যাপারে কিছু জানা যায় না তার সাথে লেনদেন করতে বা তার বাড়ি খানা খেতে কোন অসুবিধা নেই। তার সাথে লেনদেনের পূর্বে তার হালাত বিস্তারিত জানার বা জিজ্ঞসা করার প্রয়োজন নেই। সকল ফিকহী কিতাবে মাসআলাটিকে এভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
হ্যাঁ, যদি কারো ব্যাপারে তার কথা-বার্তা, চাল-চলনে বা লেনদেনে কোন সন্দেহ হয় সেক্ষেত্রে তাহকীক করবে।
তাছাড়া এটাও একটা স্পষ্ট বিষয় যে, সাধারণত হুটহাট করে অপরিচিত কেউ দাওয়াত দেয় না। বরং পরিচিত বা যার সাথে একটা ন্যূনতম সম্পর্ক রয়েছে তারাই সাধারণত দাওয়াত দিয়ে থাকে। কাজেই পরিচিতদের অবস্থা সহজেই জানা যায় বা জানাই থাকে। তবে কখনো অপরিচিত কেউ দাওয়াত দিলে সেক্ষেত্রেই আমাদের উক্ত মাসআলা প্রযোজ্য। তখন খুটে খুটে তার নিকট জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু জেনে ফেললে সে অনুযায়ীই আমল করবে।
আর আপনার উল্লেখিত ঘটনাটি একতো কুরআন বা হাদীস নয়, যা থেকে কোন মাসআলা বা মূলনীতি বের করা হবে। দ্বিতীয়ত ঘটনাটি সনদের বিচারে কেমন তা আমার তাহকীক নেই। তা সঠিক হলেও আমাদের দেওয়া মাসআলার সাথে তার কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা হাজ্জাজের কর্মধারা সবার সামনেই ছিল। সবাই তার ব্যাপারে অবগত ছিল। এক্ষেত্রে হয়তোবা হাজ্জাজের মত ব্যক্তির দাওয়াত উক্ত আলেমদের তাহকীক ব্যতীত গ্রহন করা উচিত হয়নি। আর তারা তাহকীক করলে তো কোন আপত্তিই নেই। অথবা তারা জানা সত্ত্বেও হয়তোবা দাওয়াত গ্রহনে বাধ্য ছিলেন। সেক্ষেত্রে তারা মাযূর। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

Loading