প্রশ্ন : বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংক সুদভিত্তিকভাবে পরিচালিত,এসব ব্যাংকে হিসাব খুলে টাকা রাখা মানেতো অবৈধ কাজে সাহায্য করা,অবৈধ কাজে সাহায্য করাতো নিষেধ,এখন করনীয় কি?
উত্তর : যদি সূদী কারাবারে সহযোগিতার নিয়ত না থাকে বরং শুধুমাত্র টাকা হেফাজত উদ্দেশ্য হয় এবং একাউন্ট খোলা অত্যন্ত প্রয়োজন হয় তবে কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়েয। তবে যদি কারো ব্যাংকে একাউন্ট খোলা প্রয়োজন না হয় আর তার সূদী কারাবারে সহযোগীতার নিয়ত না থাকে তবে তার জন্য কারেন্ট একাউন্ট খোলা মাকরুহে তানযীহী।(সূরা মায়েদা,আয়াত ২; রদ্দুল মুহতার ৫/২৭২,নাইলুল আউতার ৫/১৫৪, মুফতী শফী (রহঃ) আহকামুল কুরআন ৩/৭৪; জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৫৩,ফিকহী মাকালাত ৩/৩৯)।
এখানে একটি আপত্তি আসে যে,উক্ত ব্যক্তি তো জানে যে,ব্যাংক তার টাকার সহযোগীতায় সূদী কারাবার করবে। তাহলে জেনে শুনে ব্যাংককে সূদী কারাবারে সহযোগিতা কিভাবে জায়েয হতে পারে?
আল্লামা তাক্কী উছমানী সাহেব দামাত বারাকাতুহুম উক্ত আপত্তির কয়েকটি জবাব খুব সুন্দরভাবে দিয়েছেন-
১. ব্যাংক কারেন্ট একাউন্টে ডিপোজিতকৃত সকল টাকা ব্যবহারে আনে না। বরং তাতে সঞ্চিত অর্থের একটা বড় অংশ আলাদা করে রেখে দেয়। যাতে করে কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডারদের সার্বক্ষণিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। কাজেই কোন একাউন্ট হোল্ডার একথা সুনিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, তার টাকাই সূদী কারাবারে ব্যবহৃত হচ্ছে। বরং উভয়টির সম্ভাবনা রয়েছে।
২. ব্যাংকের ইনভেস্টের (অর্থায়ন) অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। যার সবগুলো হারাম নয়। বরং অনেক জায়েয ক্ষেত্রও রয়েছে। কাজেই কোন হিসাবধারী একথা নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, তার জমাকৃত অর্থ কোন নাজায়েয কারাবারে খাটানো হয়েছে।
৩।সুদবীহিন ঋন বা করজ একটি শরীআতসম্মত লেনদেন। আর মুদ্রার হুকুম হল তা সহীহ আকদসমূহে নির্দিষ্ট করার দ্বারা নির্দিষ্ট হয় না।
তাছাড়া গ্রাহক যখন ব্যাংককে ঋন দেয় তখন উক্ত টাকা ঐ বাক্তির মালিকানা থেকে বের হয়ে ব্যাংকের মালিকানায় প্রবেশ করে। অতঃপর ব্যাংক ঐ টাকার দ্বারা যে কারবার করে তা উক্ত ব্যক্তির কারবার হিসেবে ধর্তব্য হবে না। বরং ব্যাংকের নিজস্ব কারবার হিসেবে পরিগণিত হবে। কাজেই ব্যাংকের কারবারকে উক্ত ব্যক্তির দিকে সম্পৃক্ত করা ঠিক হবে না।
৪. গোনাহের সাহায্য করা বা কারন হওয়া যদিও হারাম তবে ওলামায়ে কেরাম এর কিছু মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। যদি সর্বপ্রকার কারন নিষিদ্ধ করা হয় তবে মানুষের জিবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। যেমন কেউ চাউল কিনতে এলে দোকানদার একথা চিন্তা করল সে এই চাউল খেয়ে চুরি করতে পারে। এমনটি হলে তো তার পক্ষে চাউল বিক্রি বিক্রি করা সম্ভবই হবে না। বরং দুনিয়ার কোন কাজই জায়েয থাকবে না। কাজেই গোনাহের কারনকে নিকটবর্তী ও দূরবর্তীতে বিভক্ত করতে হবে। আর সূদী কারবারের সহযোগী নিয়ত ব্যতীত কারেন্ট একাউন্ট টাকা রাখা সরাসরি সূদী কারবারে সহযোগিতার মত নয়। বিশেষ করে যখন উপরে উল্লেখিত সম্ভাবনাগুলো রয়েছে।
_ ফিকহী মাকালাত ৩/৩২-৩৮
সারকথা, সূদী কারবারের নিয়ত ব্যতীত প্রয়োজনবশত কারেন্ট একাউন্ট খোলা ও তাতে টাকা রাখা জায়েয। প্রয়োজন না হলে মাকরুহে তানযীহী। আর সূদী কারবারের সহযোগিতার নিয়ত থাকলে কারেন্ট একাউন্টেও টাকা রাখা হারাম।