প্রশ্ন : আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া সম্পর্কিত যে হাদিসগুলি বলতে শোনা যায় তার সত্যতা জানতে চাই।১. কেউ যদি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে একবার সুবহানাল্লহ পড়ে তাহলে তার আমলনামায় ৪৯ কোটি বার সুবহানাল্লহ পড়ার সওয়াব লেখা হয়।২. আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তির প্রতি কদমে ৭০০ নেকী লেখা হয়, ৭০০ গুনাহ মাফ করা হয়, জান্নাতে ৭০০ গুন মর্তবা বাড়ানো হয়।৩. আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে নিজ প্রয়োজনে ১ টাকা খরচ করলে তার আমলনামায় ৭ লক্ষ টাকা দান করার সওয়াব লেখা হয়। মেহমানদারির নিয়তে ১ টাকা খরচ করলে ৪৯ কোটি টাকা দান করার সওয়াব লেখা হয়।আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া সম্পর্কিত যে হাদিসগুলি আমরা মুন্তাখাব হাদিস / ফাজায়েলে আমাল এ পাই সেগুলি কি তাবলীগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? নাকি শুধু হজ্জের সফর বা জিহাদের জন্যই প্রযোজ্য?
উত্তর :১। প্রশ্নে বর্নিত ফযীলাত হাদীস দ্বারা প্রমানীত।
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أرسل بنفقة في سبيل الله وأقام في بيته فله بكل درهم سبعمائة درهم . ومن غزا في سبيل الله وأنفق في وجه ذلك فله بكل درهم سبعمائة ألف درهم
অর্থ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেদ করেন ,যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে অবস্থান করে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল সে প্রত্যেক দিরহামের বিনিময় সাত শত দিরহাম খরচ করার ছাওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে নিজের জন্য উক্ত দিরহাম খরচ করবে, সে এক দিরহামে সাত লক্ষ দিরহাম ছদকাহ করার ছাওয়াব পাবে। – সুনানে ইবনে মাজাহ ,হাদীস নং ২৭৬১।
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল ,আল্লহার রাস্তায় বের হয়ে নিজের জন্য খরচ করলে সাত লক্ষগুন ছাওয়াব বৃদ্ধি পায়। অন্য একটি হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
إِنَّ الصَّلاَةَ وَالصِّيَامَ وَالذِّكْرَ تُضَاعَفُ عَلَى النَّفَقَةِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ بِسَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ
অর্থঃ আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আদায়কৃত নামায,রোযা ও জিকিরের ছাওয়াব আল্লাহর রাস্তায় মাল ব্যয় করার চেয়ে সাতশত গুন বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।-মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ১৫৬৪৭,সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৫০০।
এখন উপরোক্ত হাদীস দুটি একত্রিত করলে দেখা যায় ,যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নামায,রোযা,জিকির ইত্যাদি আমল করবে তার ছাওয়াব (৭০০০০০*৭০০ = ৪৯০০০০০০০)উনপঞ্চাশ কোটি গুন ছাওয়াব বৃদ্ধি পাবে।
২। একটি দুর্বল মুরসাল রেওয়ায়েতে হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে উক্ত ফযীলত বর্নিত আছে। তবে ফযীলতের ক্ষেত্রে এতটুকু দুর্বলতা সহনীয় হতে পরে। হাদীসটি নিম্নরূপ-
فإن للغازي بكل خطوة يخطوها سبعمائة حسنة تكتب له وسبعمائة درجة ترفع له وتمحى عنه سبعمائة خطيئة
অর্থঃ আল্লাহর রস্তায় জিহাদ কারীর জন্য প্রতিটি কদমের বিনিময়ে সাত শত নেকী লেখা হয়,সাত শত মর্তবা বুলন্দ করা হয় এবং সাত শত গোনাহ মিটিয়ে (মাফ করে ) দেওয়া হয়। -তারীখে ত্বাবারী ,হাদীস নং-৯৬৩ খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬২ ; তারীখে দিমাস্ক ,হাদীস নং- ৯২১,খন্ড ২ , পৃষ্টা ৫০,কানজুল উম্মাল,হাদীস নং- ৩০২৬৮,জামেউল আহাদীস লিস সুয়ুতী ,হাদীস নং- ২৭৬৬৩।
৩। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে মেহমানদারীর নিয়তে ১ টাকা খরচ করলে ৪৯ কোটি টাকা ছদকাহ করার সাওয়াব পাওয়া যায়,এ সংক্রান্ত কোন হাদীস খুজে পাইনি। কেউ খুজে পেলে অধমকে অবহিত করার অনুরোধ রইল।
জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদের হত্যা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে তারা দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা দেওয়ার কারনে। আর দাওয়াত ও তাবলীগও আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মেহনত করে যাচ্ছে। কাজেই জিহাদ ও দাওয়াত উভয়ের উদ্দেশ্য একই। তাই হক্বানী উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত পোষন করেছেন যে,দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে এবং এ ধরনের অন্যান্য দ্বীনী দাওয়াত ও তালীমের ক্ষেত্রেও জিহাদের ফযীলত পূর্ন হাদীসগুলো প্রযোজ্য হবে। এতে কোন প্রকার আপত্তি নেই।
খোদ ইমাম বুখারী (রহঃ) জুমুআর দিনে মসজিদে গমনকে সাবীলিল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তা সাব্যস্ত করেছেন। এবং তিনি জিহাদের হাদীস দ্বারা জুমুআর জন্য মসজিদে গমনের ফযীলাত প্রমান করেছেন।
عن عَبَايَة بْنُ رِفَاعَةَ قَالَ أَدْرَكَنِي أَبُو عَبْسٍ وَأَنَا أَذْهَبُ إِلَى الْجُمُعَةِ فَقَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ اغْبَرَّتْ قَدَمَاهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ
হযরত আবায়া বিন রিফাআহ (রহঃ) বলেন, আবূ আবস (রাঃ) আমাকে জুমুআর নামাজে যেতে দেখে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলতে শুনেছি, যার দুই পা আল্লাহর রাস্তায় ধুলি-ধূসরিত হয় আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম করে দিয়েছেন।-সহীহ বুখারী ,হাদীস নং ৯০৭।
অতএব বোঝা গেল জুমুআর জন্য মসজিদে গমনও আল্লাহর রাস্তা হিসেবে গণ্য। আর উক্ত হাদীসে সরাসরি জিহাদের হাদীসের দ্বারা জুমুআর জন্য মসজিদে গমনের ফযীলাত সাব্যস্ত করা হয়েছে।কাজেই দাওয়াত ও তাবলীগের জন্যও জিহাদের হাদীস প্রযোজ্য হবে উভয়ের উদ্দেশ্য অভিন্ন হওয়ার কারনে।- ফাতহুল বারী ৬/২৯,খাইরুল ফাতাওয়া ১/৩৭১-৩৭২।