কবীরা গোনাহ বা বড় গোনাহের তালিকা
১। শিরক করা।
২। মা-বাপের নাফরমানী করা অর্থাৎ তাদের হক আদায় না করা।
৩। “কাতয়ে রেহমী” করা অর্থাৎ যে সব আত্মীয়দের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের সাথে অসদ্ব্যবহার করা ও তাদের হক নষ্ট করা।
৪। যিনা করা অর্থাৎ নারীর সতীত্ব নষ্ট করা এবং পুরুষের চরিত্র নষ্ট করা।
৫। বালকদের সাথে কুকর্ম করা।
৬। হস্ত মৈথুন করা।
৭। প্রাণীর সাথে কুকর্ম করা।
৮। আমানতের খেয়ানত করা।
৯। মানুষ খুন করা।
১০। মিথ্যা তোহমত বা অপবাদ লাগানো, বিশেষভাবে যিনার অপবাদ লাগানো।
১১। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
১২। সাক্ষ্য গোপন করা, যখন অন্য কেউ সাক্ষ্য দেয়ার না থাকে।
১৩। যাদু দ্বারা কারও ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা।
১৪। যাদু শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেয়া।
১৫। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, ওয়াদা খেলাফ করা, কথা দিয়ে তা ঠিক না রাখা।
১৬। গীবত করা।
১৭। স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মনীবের বিরুদ্ধে চাকরকে, উস্তাদের বিরুদ্ধে শাগরেদকে, রাজার বিরুদ্ধে প্রজাকে, কর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীকে ক্ষেপিয়ে তোলা।
১৮। নেশা করা।
১৯। জুয়া খেলা।
২০। সুদ অনেক প্রকারের আছে- সরল সূদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ ইত্যাদি সর্বপ্রকারের সূদই মহাপাপ। সূদ দাতা, সূদ গ্রহীতা, সূদের লেন-দেনে সাক্ষ্যদাতা ও সূদ বিষয়ক লেন-দেনের দলীল লেখক সকলের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন। সকলেরই কবীরা গোনাহ হয়।
২১। ঘুষ বা রিশওয়াত প্রদান ও গ্রহণের কারণে আল্লাহর অভিশাপ অবর্তীণ হয়, এটা মহাপাপ। তবে জালেমের জুলুমের কারণে নিজের হক আদায় করার জন্য ঠেকায় পড়ে ঘুষ দিলে তা পাপ নয়। কিন্তু ঘুষ দিয়ে কার্য উদ্ধার করার মনোবৃত্তি ভাল নয়। যাদের বেতন ধার্য আছে তারা কর্তব্য কাজ করে দিয়ে অতিরিক্ত যা কিছু নিবে সবই ঘুষ, চাই একটা সিগারেট হোক বা এক কাপ চা বা একটা পানই হোক।
২২। অন্যায়ভাবে কারও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হরণ বা ভোগ দখল করা।
২৩। অনাথ, এতীম, নিরাশ্রম বা বিধবার মাল গ্রাস করা।
২৪। খোদার ঘর যিয়ারতকারী তথা হজ্জযাত্রীদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা।
২৫। মিথ্যা কসম করা।
২৬। গালি দেয়া।
২৭। অশ্লীল কথা বলা।
২৮। জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
২৯। ধোকা দেয়া।
৩০। অহংকার করা।
৩১। চুরি করা।
৩২। ডাকাতি ও লুটতরাজ করা। এমনিভাবে পকেট মারা, ছিনতাই করা।
৩৩। নাচ, গান-বাদ্য সিনেমা ইত্যাদি।
৩৪। স্বামীর নাফরমানী করা, অর্থ্যাৎ স্বামীর হক আদায় না করা।
৩৫। জায়গা জমির আইল (সীমানা) নষ্ট করা।
৩৬। শ্রমিক থেকে কাজ পূর্ণ নিয়ে তার পূর্ণ মজুরী না দেয়া বা পূর্ণ মজুরী দিতে টাল-বাহানা করা।
৩৭। মাপে কম দেয়া।
৩৮। মালে মিশাল দেয়া।
৩৯। খরীদ্দারকে ধোকা দেয়া।
৪০। দাই্য়্যূছিয়াত অর্থাৎ নিজের বিবিকে বা অধীনস্থ্ কোন নারীকে পর পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেয়া, পর পুরুষের বিছানায় যেতে দেয়া, এসবের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
৪১। চোগলখুরী করা।
৪২। গণকের কাছে যাওয়া।
৪৩। মানুষ বা অন্য কোন জীবের ফটো আদর করে ঘরে রাখা।
৪৪। পরুষের জন্য সোনার আংটি পরিধান করা।
৪৫। পুরুষের জন্য রেশমী পোষাক পরিধান করা।
৪৬। শরীরের রূপ ঝলকে, মেয়েলোকের জন্য এমন পাতলা পোশাক পরিধান করা।
৪৭। মহিলাদের জন্য পুরুষের এবং পুরুষের জন্য মহিলার পোশাক পরিধান করা।
৪৮। গর্বভরে লুঙ্গি, পায়জামা, জামা ও প্যান্ট পায়ের নীচে ঝুলিয়ে চলা।
৪৯। বংশ বদলানো অর্থাৎ পিতৃ পরিচয় বদলে দেয়া।
৫০। মিথ্যা মোকাদ্দমা করা, মিথ্যা মোকাদ্দমার পরামর্শ প্রদান, তদবীর ও পায়রবী করাও কবীরা গোনাহ।
৫১। মৃত ব্যক্তির শরীয়ত সম্মত ওসিয়ত পালন না করা।
৫২। কোন মুলসমানকে ধোকা দেয়া।
৫৩। গুপ্তচর বৃত্তি করা অর্থাৎ মুসলমান সমাজের এবং মুসলমান রাষ্ট্রের গুপ্ত ভেদ ও দুর্বল পয়েন্টের কথা অন্য সমাজের লোকের কাছে, অন্য রাষ্ট্রের কাছে প্রকাশ করা।
৫৪। কাউকে মেপে দিতে কম দেয়া এবং মাপে নিতে বেশী নেয়া।
৫৫। টাকা বা নোট জাল করা।
৫৬। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত প্রহরায় ত্রুটি করা।
৫৭। দেশের জরুরী রসদ, খাদ্য বা হাতিয়ার চোরাচালান বা পাচার করা।
৫৮। রাস্তা-ঘাটে, ছায়াদার কিম্বা ফলদার বৃক্ষের নীচে মল-মূত্র ত্যাগ করা।
৫৯। বাড়ি-ঘর, আনাচ-কানাচ, থালা-বাসন, কাপড়-চোপড় নোংরা ও গন্ধ করে রাখা।
৬০। হায়েয বা নেফাস অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা।
৬১। মলদ্বারে স্ত্রী সহবাস করা।
৬২। যাকাত না দেয়া।
৬৩। ইচ্ছা পূর্বক ওয়াক্তিয়া নামায কাযা করা।
৬৪। জুমুআর নামায না পড়া।
৬৫। বিনা ওযরে রোযা ভাঙ্গা।
৬৬। রিয়া তথা লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করা।
৬৭। জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দাম বাড়ানোর জন্য জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য, জিনিসপত্র গোলাজাত করে রাখা।
৬৮। মানুষের কষ্ট হয় এমন খাদ্য-দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি দেখে খুশী হওয়া।
৬৯। ষাঁড় বা পাঠার দ্বারা গাভী বা ছাগী পাল দিতে না দেয়া। পাল দেয়ার জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়।
৭০। প্রতিবেশীকে (ভিন্ন জাতির হলেও) কষ্ট দেয়া।
৭১। পাড়া প্রতিবেশীর ঝী-বৌকে কু-নযরে দেখা।
৭২। মাল থাকা বা মাল উপার্জনের শক্তি থাকা সত্ত্বেও লোভের বশবর্তী হয়ে সওয়াল করা (চাওয়া)।
৭৩। জনগণ চায় না তা সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্ব দেয়া।
৭৪। কারণ ছাড়াই স্ত্রীর স্বামী সহবাসে অসম্মত হওয়া।
৭৫। পরের দোষ দেখে বেড়ানো।
৭৬। কারও জান, মাল বা ইজ্জতের হানি করা।
৭৭। নিজের প্রশংসা করা।
৭৮। বিনা দলীলে কারও প্রতি বদগোমানী করা।
৭৯। ইলমে দ্বীনকে তুচ্ছ মনে করে ইলমে দ্বীন হাছিল না করা বা হাছিল করে আমল না করা।
৮০। এমন কথা যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেননি বা এমন কোন কাজ যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেননি- সে সম্পর্কে এরূপ বলা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন।
৮১। হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও হজ্জ করা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করা। তবে মৃত্যুর সময় হজ্জের ওসিয়ত বা ব্যবস্থা সম্পন্ন করে গেলে পাপমুক্ত হতে পারবে ইংশাআল্লাহ।
৮২। কোন সাহাবীকে মন্দ বলা, সাহাবীদের সমালোচনা করা।
৮৩। হযরত আলী (রাঃ) কে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে শ্রেষ্ঠ বলা।
৮৪। কোন নারীকে তার স্বামীর কাছে গমন ও স্বামীর হক আদায়ে বাধা দেয়া।
৮৫। কোন অন্ধকে ভুল পথ দেখিয়ে দেয়া।
৮৬। পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করা ও অশান্তি ছড়ানো, ফ্যাসাদ করা।
৮৭। কাউকে কোন পাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করা ও পাপ কাজে সহযোগিতা করা।
৮৮। কোন গোনাহে সগীরার উপর হটকারিতা করা (অটল থাকা)।
৮৯। পেশাবের ছিটা থেকে সাবধান সতর্ক না থাকা।
৯০। কোন দান-সদকা করে বা হাদিয়া-উপঢৌকন দিয়ে খোঁটা দেয়া।
৯১। অনুগ্রহকারীর না-শুকরী করা।
৯২। কোন মুসলমান ভাইকে ছুরি, চাকু, তলোয়ার ইত্যাদি লৌহ অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ভয় দেখানো।
৯৩। দাবা ও ছক্কা পাঞ্জা খেলা। আরও কতিপয় খেলা রয়েছে যা হারাম ও কবীরা গোনাহ।
৯৪। বিনা জরুরতে লোকের সামনে সতর খোলা।
৯৫। মেহমানের খাতির ও আদর যত্ন না করা।
৯৬। হাসি-ঠাট্টা করে কাউকে অপনানিত করা।
৯৭। স্বজন প্রীতি করা।
৯৮। অন্যায় বিচার করা।
৯৯। নিজের ইচ্ছা করে, দাবী করে পদপ্রার্থী হওয়া বা পদ গ্রহণ করা। তবে কোন ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে, তিনিই একমাত্র উক্ত পদের যোগ্য, তিনি উক্ত পদ গ্রহণ না করলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির স্বার্থ নষ্ট হবে, তাহলে সেক্ষেত্রে পদ চাওয়া হলে তা ভিন্ন কথা।
১০০। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।
১০১। নিজের বিবি-বাচ্চার খবর-বার্তা না নিয়ে তাদেরকে নষ্ট হয়ে যেতে দেয়া।
১০২। খতনা না করা মহাপাপ।
১০৩। অসৎ ও অন্যায় কাজ দেখে পারতপক্ষে তাতে বাধা না দেয়া।
১০৪। জালেমের প্রশংসা বা তোষামোদ করা।
১০৫। অন্যায়ের সমর্থন করা।
১০৬। আত্মহত্যা করা।
১০৭। স্বেচ্ছায় নিজের কোন অঙ্গ নষ্ট করা।
১০৮। স্ত্রী সহবাস করে গোসল না করা।
১০৯। প্রিয়জন বিয়োগে সিনা পিটিয়ে বা চিৎকার করে কাঁদা।
১১০। স্ত্রী পুরুষের নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম বর্ধিত করে রাখা।
১১১। উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, হাফেজ ও আলেমের অমর্যাদা করা, তাদের সাথে বেয়াদবী করা।
১১২। প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা ব্যবহার করা।
১১৩। শুকরের গোস্ত খাওয়া।
১১৪। কোন হারাম দ্রব্য ভক্ষণ করা।
১১৫। ষাঢ়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদির লড়াই দেয়া।
১১৬। কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া। (কোন রোগের কারণে হলে তা ভিন্ন কথা) কেউ কেউ বলেছেন ভুলে যাওয়ার অর্থ এমন হয়ে যাওয়া যে, দেখেও আর পড়তে পারে না।
১১৭। কোন জীবকে আগুন দিয়ে জালিয়ে হত্যা করা কবীরা গোনাহ।
১১৮। আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।
১১৯। আল্লাহর আযাব থেকে নির্ভীক হওয়া।
১২০। মৃত প্রাণী খাওয়া।
১২১। হালাল জীবকে আল্লাহর নামে জবাই না করে অন্য কারও নামে জবাই করে বা অন্য কোন উপায়ে মেরে খাওয়া।
১২২। অপব্যয় করা।
১২৩। বখীলী বা কৃপণতা করা।
১২৪। রাজকীয় ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন সমর্থন না করে অনৈসলামিক আইন সমর্থন করা।
১২৫। ইসলামী আইন হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহীতা করা।
১২৬। ছোট জাত, ছোট পেশাদার বলে বা জোলা, তেলি, কুমার, কামার, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি বর্ণের কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা খোঁটা দেয়া।
১২৭। বিনা অনুমতিতে কারও বাড়ির ভেতরে বা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করা কিংবা তাকানো।
১২৮। লুকিয়ে কারও কথা শোনা।
১২৯। ছুরত শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিট্কারি বা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা।
১৩০। কোন মুসলমানকে কাফের বলা।
১৩১। কোন মুসলমানের সাথে উপহাস করা।
১৩২। একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।
১৩৩। কোন খাদ্যকে মন্দ বলা। (তবে রান্নার ত্রুটি বর্ণনা করা হলে তা খাদ্যকে মন্দ বলার অন্তর্ভুক্ত নয়।)
১৩৪। দুনিয়ার মহব্বত। অর্থাৎ দ্বীনের মোকাবেলায় দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া।
১৩৫। দাড়ি বিহীন বালকের প্রতি খাহেশাতের নজরে তাকানো।
১৩৬। গায়েরে মাহরাম স্ত্রী লোকের নিকট একা একা বসা।
১৩৭। কাফেরদের রীতিনীতি পছন্দ করা।
(আহকামে জিন্দেগী থেকে সংগৃহীত)