প্রশ্ন : ১। উযূর সঠিক নিয়ত টা একটু বললে ভালো হয়। এক এক জায়গায় একেকটা দেখি। ২। ছোটো বেলায় শিখেছিলাম গোসল করার সময় পুরা শরীর ধুয়ে বিসমিল্লাহ বলে তিন ডুব দিলে গোসল হয়ে যায়। কিন্তু এখন একজন বলল উযূ করে মাথায় তিনবার বিসমিল্লাহ বলে পানি ঢাললে গোসল হয়ে যায় কোনটা সঠিক বললে ভালো হয়। ৩। জানাযা আর কবর যিয়ারত এর সঠিক নিয়মটা বলবেন দয়া করে।
উত্তর :১। আসলে কুরআন বা হাদীসে নিয়তের শব্দ বা বাক্য সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু কোথাও বলা নেই। নিয়ত করতে হবে এতটুকু রয়েছে। তাও আবার মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়। বরং অন্তর দ্বারা করাই যথেষ্ট। কেননা নিয়ত হল কলব বা অন্তরের আমল। তাই একেক জায়গায় একেক রকম থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনি মুখে করতে চাইলে এভাবে করতে পারেন “আমি নামাযের জন্য উযূ করছি”।
২। নিম্নে গোসলের ফরজ ও সুন্নাত দিয়ে দেওয়া হল। এ থেকে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন ইংশাআল্লাহ।
গোসলের ফরজ তিনটি
১। উত্তমরুপে একবার কুলি করা। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬)
২। নাকের নরম স্থান পর্যন্ত একবার পানি পৌঁছান। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬)
৩। সমস্ত শরীরে ভালভাবে একবার পানি পৌঁছান। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫১)
বিঃ দ্রঃ শরীরের কোথাও সামান্য পরিমান (যদিও তা এক চুল পরিমান হয়) শুকনো থাকলে গোসল সহীহ হবে না। মহিলাদের চুল খোলা থাকলে সমস্ত চুল পানি দ্বারা ভেজাতে হবে । আর যদি চুল বেনী বা খোপা আকারে বাঁধা থাকে তবে উপরে পানি ঢেলে দিবে এবং গোড়ায় পানি পৌঁছিয়ে দিবে। পূরো চুল ধৌত করা ফরজ নয়। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১০৫)
গোসলের সুন্নাত সমূহ
১। ফরজ গোসলের পূর্বে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১০২০)
২। গোসলখানা নোংরা বা তার মধ্যে পায়খানা থাকলে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪)
৩। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া (যদি ভিতরে পায়খানা না থাকে)। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৭৮)
৪। উভয় হাত কব্জিসহ তিনবার ধৌত করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৬)
৫। শরীরে বা কাপড়ের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে গোসলের পূর্বে তা তিনবার ধুয়ে নেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৪৯)
৬। নাপাকী না লেগে থাকলেও পেশাব পায়খানার স্থান বাম হাত দিয়ে ধৌত করে তা ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া । (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮)
৭। নামাযের উযূর ন্যায় (পরিপূর্ন) উযূ করা। যদি গোসলের স্থানে পানি জমে থাকে তাহলে গোসল শেষে অন্যত্র সরে গিয়ে পা ধুয়ে নিবে। উযূর মাঝে ও শেষে যে দুআ গুলো পড়া সুন্নাত এখানেও সেগুলো পড়বে। তবে গোসলখানা নোংরা হলে বা সাথে টয়লেট থাকলে গোসল শেষে বাইরে বের হয়ে পড়বে। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৪৮, ২৪৯)
৮। প্রথমে হাতে পানি নিয়ে মাথার চুলের গোড়ায় ডলাডলি করে পানি পৌঁছাবে। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৪৮, ২৫৬)
৯। অতঃপর ডান কাঁধে পানি ঢালা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৬৭)
১০। এরপর বাম কাঁধে পানি ঢালা।(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৫৫৪৫)
১১। অতপর অবশিষ্ট শরীর ভিজানো। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৭৪)
১২। সমস্ত শরীরে উত্তমরূপে তিনবার পানি পৌঁছান যাতে একটি পশমের গোড়াও শুষ্ক না থাকে। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৫৯৯)
বিঃ দ্রঃ নদী-পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষন ডুব দিয়ে থাকলেই পূরো শরীরে তিনবার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২৪৯)
১৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে ডলে ডলে ধৌত করা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৭৯৪)
৩। কবর যিয়ারতের পদ্ধতি হল প্রথমে কবরের কাছে গিয়ে কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে এবং কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়াবে অতঃপর এভাবে সালাম দিবে-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
এরপর চাইলে কুরআনের আয়াত, সূরা (বিশেষভাবে সূরা ফাতিহা, ইখলাছ, ইয়াসিন, মুলক, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব) পড়বে। ইচ্ছা করলে যে কোন সময় কয়েকবার দূরূদ শরীফও পড়া যায়। অতঃপর এগুলোর ছাওয়াব কবরবাসীদের নামে বখশে দিবে। ছাওয়াব পৌঁছানোর জন্য হাত তোলার কোন প্রয়োজন নেই। তবে একান্ত তুলতে হলে কিবলার দিকে মুখ করে কবরের দিকে পিঠ করে নিবে।–রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০
আর জানাযার মাসনূন পদ্ধতি হল, প্রথম তাকবীর বলে হাত উঠিয়ে হাত বাঁধবে। অতঃপর ছানা পড়বে। এরপর হাত না উঠিয়ে দ্বিতীয় তাকবীর বলে দুরূদ পড়বে। অতঃপর তৃতীয় তাকবীর বলে জানাযার দুআ পাঠ করবে। এরপর চতুর্থ তাকবীর বলে প্রথমে ডানে অতঃপর বামে সালাম ফিরাবে। জানাযার দুআ এই-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا ، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلاَمِ ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ