মহিলাদের উযর সংক্রান্ত হজের বিশেষ কয়েকটি মাসআলা
হজের সফরে মহিলাদের উযর (তথা মাসিক বা নেফাস) শুরু হলে তারা বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। নিম্নে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা তুলে ধরে তাদের করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
ইহরামের বাঁধার সময় হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় থাকলে
ইহরাম বাঁধার সময় মহিলাদের উযর থাকলে (সম্ভব হলে) ভালোভাবে গোসল করে হজের নিয়তের সাথে তালবিয়া পড়ে ইহরাম বাঁধবে। এক্ষেত্রে ইহরামের দুই রাকাআত নামায পড়বে না।
উল্লেখ্য যে, ইহরাম বাঁধার সময় মহিলাদের পবিত্র থাকা জরুরী নয়। আর অপবিত্র অবস্থায় তালবিয়া বা অন্যান্য দুআসমূহ পড়তে কোন অসুবিধা নেই।
তামাত্তু বা কিরান আদায়কারী উযরের কারণে ওমরাহ্ আদায় করতে না পারলে
কোন মহিলা তামাত্তু বা কিরান করার নিয়তে দেশ হতে গমন করল। মক্কায় পৌঁছানোর পূর্বে বা সাথে সাথে তার উযর শুরু হয়ে গেল। যার কারণে সে এখনো ওমরাহ্ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় হজের দিন তথা মিনায় গমনের দিন (অর্থাৎ জিলহজের ৮ তারিখ) চলে আসল। এক্ষেত্রে সে কি করবে?
এক্ষেত্রে তার করনীয় হল, যদি সে তামাত্তু আদায়কারী হয় তবে ওমরাহ্ এর নিয়ত ভেঙ্গে ফেলবে। অতঃপর হজের নিয়তের সাথে তালবিয়া পড়ে হজের ইহরাম বেঁধে মিনায় চলে যাবে। আর মহিলা কিরান আদায়কারী হলে কেবল ওমরাহ্ এর নিয়ত ছেড়ে দিবে। এক্ষেত্রে নতুন করে হজের ইহরাম বাঁধতে হবে না। কেননা সে তো পূর্বেই ওমরাহ্ এর ইহরামের সাথে হজের ইহরাম বেঁধেছে। অতঃপর মিনায় চলে যাবে। এক্ষেত্রে সে (চাই তামাত্তু আদায়কারী হোক বা কিরান আদায়কারী উভয় অবস্থায়) ওমরাহ্টি (১৩ই জিলহজের পরে) ক্বাযা করে নিবে এবং ওমরাহ্ ভঙ্গ করার কারণে একটি ছাগল বা দুম্বা দম হিসেবে জবাই করে দিবে। আর তামাত্তু বা কিরান এর কারণে যে দমে শুকর তার জিম্মায় ছিল তা রহিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ তা আর দিতে হবে না।–কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ, পৃষ্ঠা ২/১৩৭; রদ্দুল মুহতার ৮/৩৮৯ (শামেলা)
ইফরাদ বা কিরান আদায়কারী উযরের দরুন তাওয়াফে কুদূম আদায় না করতে পারলে
কোন মহিলা কিরান বা ইফরাদের নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় গেল। মক্কায় পৌঁছার সাথে সাথে বা তাওয়াফে কুদূম (যা কিরান বা ইফরাদ আদায়কারীর জন্য সুন্নাত) করার পূর্বে তার হায়েয বা নেফাস শুরু হয়ে গেল। এমতাবস্থায় হজের দিন তথা মিনায় গমনের দিন চলে এল। এক্ষেত্রে তার জন্য তাওয়াফে কুদূম মাফ হয়ে যাবে। এর জন্য অন্য কোন কাফফারা দিতে হবে না।
হজের দিনগুলোতে উযর অবস্থায় থাকলে
হজের দিনগুলোতে কোন মহিলা অপিবত্র হলে সে তাওয়াফে যিয়ারত ও সায়ী ব্যতীত অন্যান্য সকল আমল চালিয়ে যাবে। অর্থাৎ উকূফে মিনা, আরাফা ও মুযদালিফা সবই করবে। অতঃপর যখনি পবিত্র হবে তখনি তাওয়াফ ও সায়ী করে নিবে। উক্ত উযরের কারণে তাওয়াফ ১২ ই জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে করতে না পারলেও দম দিতে হবে না। আর যদি ১২ ই জিলহজে এ পরিমান সময় পায় যে, পবিত্র হওয়ার পর গোসল সেরে হারাম শরীফে গিয়ে সূর্যাস্তের পূর্বে কমপক্ষে চার চক্কর দিতে পারে তবে দেরি করার কারণে দম ওয়াজিব হবে।–রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯; মাজমাউল আনহুর ১/৫৩
তাওয়াফে যিয়ারতের সময় হায়েয বা নেফাসের অবস্থায় থাকলে
কোন মহিলা যদি হায়েয বা নেফাসের কারণে ফরজ তাওয়াফ করতে না পারে, আর অন্যদিকে তার হজের ফিরতি ফ্লাইটের দিন চলে আসে বা কাফেলা রওনা হয়ে যাওয়ার দিন চলে আসে এবং তার জন্য দেরি করা সম্ভব না হয় অথবা ফ্লাইট ক্যান্সেল করে ডিলে করার সুযোগ না থাকে, তবে সে উক্ত অবস্থাতেই তাওয়াফ ও সায়ী করে নিবে এবং তাওবা করে নিবে। আর একটা গরু বা উট দম হিসেবে জবাই করে দিবে। এক্ষেত্রে ছাগল বা দুম্বা দিলে হবে না।
উল্লেখ্য যে, এই তাওয়াফে যিয়ারত না করে দেশে চলে গেলে স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক বৈধ হবে না। যতদিন তাওয়াফ না করবে ততদিন স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক বৈধ হবে না। এই তাওয়াফের জন্য তাওয়াফ ব্যতীত অন্য কোন ক্বাযা কাফফারা নেই। পুনরায় মক্কায় এসে তাওয়াফ করার দ্বারাই কেবল স্বামীর সাথে মিলন হালাল হবে।–রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯; হাশিয়ায়ে তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃষ্ঠা ৭৪১
মাসআলাঃ যদি উক্ত অবস্থায় তাওয়াফ করার পরে কোন মহিলা ফিরার পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায় এবং পুনরায় উক্ত তাওয়াফ করে নেয় তবে আর দম দিতে হবে না। এই দম তাৎক্ষণিক দেওয়া জরুরী নয়। কাজেই কেউ দম দেওয়ার পূর্বে পরবর্তীতে যদি কোনদিন হজ বা ওমরাহ্ করতে আসে এবং পবিত্র অবস্থায় উক্ত তাওয়াফ করে নেয় তবে আর দম দিতে হবে না।–রদ্দুল মুহতার ২/৫১৮
উল্লেখ্য যে, উক্ত দম হারামের সীমানার মধ্যে দেওয়া জরুরী। অন্যথায় তা আদায় হবে না।
মাসাআলাঃ অনেকেই এই বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য ওষুধ সেবন করে হায়েয বন্ধ করে থাকে। এক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের দরুন হায়েয বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারত করলে কোন দম দিতে হবে না। তবে ওষুধ সেবনের দরুন বা এমনিতেই তার রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি সে তাওয়াফে যিয়ারত করে, আর তার নির্ধারিত অভ্যাসের মেয়াদের পূর্বেই পুনরায় রক্ত চলে আসে সেক্ষেত্রে তার তাওয়াফ হয়ে গেলেও একটি গরু বা উট দম হিসেবে জবাই করতে হবে। পাশাপাশি তাওবা করে নিবে। তাই ওষুধ সেবন করলে এমনভাবে করা উচিত যাতে তার অভ্যাসের ভিতর রক্ত আর না আসে।
উযরের কারণে তাওয়াফে বিদা’ আদায় করতে না পারলে
যদি মহিলার হায়েয বা নেফাস চলে আসার দরুন বিদায়ী তাওয়াফ করার সুযোগ না পায় অন্যদিকে তার ফিরার সময় এসে পড়ে, তবে তার জন্য তাওয়াফে বিদা’ বা বিদায়ী তাওয়াফ মাফ হয়ে যাবে। এজন্য তার উপর কোন দম বা কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
উল্লেখ্য যে, তাওয়াফে যিয়ারত করার পরেই একটি নফল তাওয়াফ করে নেওয়া উচিত। যাতে পরবর্তীতে কোন সমস্যার দরুন বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে উক্ত নফল তাওয়াফ বিদায়ী তাওয়াফের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়।–রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩