প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, ১) কুরআন অনুযায়ী যেহেতু সাদিকীন (পীর) দের সাথে থাকতে হবে তো সেরকম পীর তো দেখছি না। থাকলে দয়া করে একজনের নাম বলবেন (যেহেতু আমি আলেম না যে খাটি পীর কে চিনতে পারবো)? ২) চরমোনাই পীরকে হক বলেন কিন্তু আমার একটু সন্দেহ আছে- যেমন পীররা যেহেতু মানুষকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথে চালায় সেহেতু দুনিয়ার মহব্বত তাদের থাকতে পারে না। (এক সাহাবীর দুই তলা বাড়ী দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা মোবারক রাগে লাল হয়েছিল এবং উক্ত সাহাবী যখন দোতলা ভেঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে কথা বললেন তার আগে কথা বলেননি) চরমোনাই বর্তমান পীর সাহেব অত্যাধুনিক ২টি টাইলসকৃত ৫ম তলা ভবন বানিয়েছেন তাতে তারা থাকেন? ৩) পীর সাহেবরা মুলত মুরীদের টাকার উপর নির্ভর করে চলেন তাদের কোন নিজস্ব ব্যবসা বা চাকুরী করেন বলে মনে হয় না?
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। আপনার সম্ভবত তাকওয়ার রোগ হয়েছে। অর্থাৎ তাকওয়া বেশী বেড়ে গিয়েছে। যার জন্য দুনিয়াতে কোন আল্লাহ ওয়ালা পাচ্ছেন না। একটু এভাবে ভাবুন, আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের সাথে থাকতে বলেছেন। এখন যদি কোন সৎকর্মশীল না থাকে তবে তিনি বান্দাদের কিভাবে আদেশ করলেন? তাহলে আল্লাহ তাআলার এই আদেশটি কি অযৌক্তিক হবে না? নাউযুবিল্লাহ। অর্থাৎ এমন বিষয়ের আদেশ করা জরুরী হবে যা বান্দার পক্ষে আদায় করা সম্ভব নয়। নিম্নের লিঙ্কের ৪,৫,৮,১২ নং উলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন।
http://muftihusain.com/%E0%A6%B9%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%93%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4/
এছাড়াও মাওলানা আব্দুল মতীন সাহেব (ঢালকানগর), মুফতী জাফর সাহেব (ঢালকানগর), মুফতী আবূ সাঈদ সাহেব (ফরীদাবাদ মাদরাসা) প্রমুখগণের সাথেও সম্পর্ক রাখতে পারেন।
২। দালান দেওয়া অথবা তাতে থাকা কি হারাম? এই দালানই যদি আপনার হকের মাপকাঠি হয় তবে তো আপনি হকপন্থি কোন লোক খুঁজে পাবেন না। পেলেও দু-একজন পেতে পারেন। উলামায়ে কেরাম কি কবীরাহ বা সগীরাহ গোনাহের লিস্টে কোথাও দালান করার কথা লিখেছেন? আপনি সম্ভবত এমন কোন আল্লাহওয়ালা খুঁজছেন জিনি জঙ্গলে কোন গর্তে বা গাছের কুঠরিতে থাকবেন। খুব ভালো করে বুঝুন এটা নিশ্চিত যে, যিনি আখেরাতমুখী হবেন তার থেকে দুনিয়ার মহব্বত উঠে যাবে। কিন্তু তাই বলে কেউ দালান দিলেই যে তিনি আখেরাত বিমুখ হয়ে যান এটা ঠিক নয়। এগুলো আল্লাহওয়ালা বা বুজুর্গ হওয়ার মূল মাপকাঠি নয়। বরং যিনি সকল প্রকার গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন এবং সুন্নাতের পরিপূর্ণ অনুসারী তিনিই প্রকৃত বুজুর্গ বা আল্লাহওয়ালা।
আপনার প্রশ্ন থেকে মনে হয় আমি চরমোনাই পীরকে হক বলে বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমি তো তাকে প্রকাশ্যে কোন গুনাহ করতে দেখিনি বা শুনিনি। যেমন তিনি মিথ্যা বলেন বা মদ পান করেন বা নামায পড়েন না ইত্যাদি। আপনি দেখে থাকলে দলীলের ভিত্তিতে আমাদেরকে বলুন। তাদেরকে উলামায়ে দেওবন্দের সকলেই হকপন্থি বলে। তবে বর্তমান চরমোনাই পীরের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক করতে বা তার মুরীদ হতে আমি ব্যক্তিগত স্বভাবজাত কোন কারনে কাউকে পরামর্শ দিইনি। এটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত মত। তবে তারা যে হকপন্থি এতে কোন সন্দেহ নেই।
৩। আচ্ছা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবুয়্যত প্রাপ্তির পর কি কোন চাকরি বা ব্যবসা করেছিলেন? অনুরূপভাবে খিলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর আবূ বকর (রাঃ) কি কোন চাকরি বা ব্যবসা করেছিলেন? একজন বিজ্ঞ আলেমের যদি হাল চাষ করতে হয় বা ভ্যান চালাতে হয় বা বাজারে আলু বিক্রি করতে হয় বা পুলিশে চাকরি করতে হয় তাহলে তিনি একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের খেদমত কিভাবে করবেন? আর উলামায়ে কেরাম যে মানুষের হেদায়েতের জন্য আমৃত্যু মেহনত করে যান সেটা কি কোন কাজ নয়? দ্বীনী খেদমতের পাশাপাশি চাকরি বা ব্যবসা করতেই হবে? তাহলে ডাক্তারদের থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং খেদমত নিন। দেখুন তাদের ডাক্তারি সেবা কেমন চলে? আচ্ছা ডাক্তারদের মানুষের দুনিয়াবী কল্যাণের বিষয়টি ফিকির করা যদি চাকরি হিসেবে গণ্য হয় তবে উলামায়ে কেরাম যে মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য ফিকির করেন সেটা চাকরি হিসেবে গণ্য হতে বাধা কোথায়। আসলে দ্বীনী খেদমত আমাদের নিকট কোন কাজই নয়। যার কারনে আমাদের মুসলমান নামধারী কিছু হতভাগা রয়েছে যারা উলামায়ে কেরামকে বেকার মনে করে। উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হল তারা জনসাধারণের দ্বীনী চাহিদা পূরণ করে যাবে। আর জনসাধারান তাদের দুনিয়াবি চাহিদা পূরণ করে যাবে। দেখুন আল্লাহ তাআলা বলেন-
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
অর্থঃ আর্থিক সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত ঐ সকল গরীব, যারা নিজেদেরকে আল্লাহর পথে এভাবে আবদ্ধ করে রেখেছে যে, (অর্থের সন্ধানে) তারা ভুমিতে চলাফেরা করতে পারে না। তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারনে কারও কাছে সওয়াল করে না তাই অনবগত লোকে তাদেরকে বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে। কিন্তু তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে সওয়াল করে না। তোমরা যা সম্পদ ব্যয় কর আল্লাহ তা ভালো করেই জানেন।–সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৭৩
উক্ত আয়াত সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াত আসহাবে সুফফা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আসহাবে সুফফা বলা হয় সেই সকল সাহাবীকে, যারা দ্বীনী ইলম শিক্ষার জন্য নিজেদের জীবন ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মসজিদে নববী সংলগ্ন চত্বরে পড়ে থাকতেন। দ্বীনী ইলম শেখায় নিয়োজিত থাকার কারনে জীবিকা সংগ্রহের সুযোগ পেতেন না। তাই বলে যে তারা মানুষের কাছে হাত পাততেন তাও নয়। এ আয়াত জানাচ্ছে, আর্থিক সাহায্য লাভের বেশি উপযুক্ত তারাই, যারা সমগ্র উম্মতের কল্যাণ সাধনের মহতি উদ্দেশ্যে কোথাও আবদ্ধ হয়ে থাকে এবং নিদারুণ কষ্ট ক্লেশ সত্ত্বেও কারও সামনে নিজ প্রয়োজনের কথা প্রকাশ করে না।–মুফতী তাকী উসমানী, তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ১/১৬১
এজন্যই খেলাফতের যামানায় কারী, কাজী এবং মুফতীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাতা প্রদান করা হত। আর উক্ত আয়াতের কারনেই যুগ যুগ ধরে জনসাধারণের মধ্যে যাদের দ্বীনী বুঝ রয়েছে তারা এ খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। আল্লাহ তাআলা যদি তার কোন বান্দাকে ব্যবসা বা চাকরি ছাড়াই সন্মানের সাথে রিযিক দেন তবে সমস্যা কোথায়? তাই আপনি উলামায়ে কেরামের পিছনে না পড়ে নিজেকে সংশোধনের ফিকির করুন।
যাই হোক, এখানে আপনার ধারনাটি পরিবর্তনের জন্য কিছু কথা লিখলাম। আর আমার জানা মতে আমাদের সহীহ হকপন্থি আল্লাহ ওয়ালাদের প্রত্যেকেরই হালাল উপার্জনের কোন না কোন মাধ্যম রয়েছে। তাই আপনার পেরেশান হওয়ার কোন কারন নেই।