প্রশ্ন : আপনার একটা প্রশ্নের উওর আমার ভুল লাগলো। যে হারাম কামায় করে তার বাড়িতে নাকি রান্না করে টাকা নেওয়া হারাম। কিভাবে তাহলে তো বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ সূদী ব্যাংকে লেন দেন করে তাহলে মানুষ কোথায় টাকা কামায় করবে। তাহলে ৯৮% লোক কোথায় চাকরি করবে বা আপনাকে কেউ হাদিয়া দিলেও তো হারাম থেকে দিতে পারে। দয়া করে উওর দিবেন।
উত্তর :এক্ষেত্রে দুটি জিনিস ভালো করে বুঝুন। একটি হল কাজ অন্যটি মুজুরি। আপনি যদি কোন ইমাম সাহেবের ছেলেকে জাদুবিদ্যা শিখান তবে কি তার থেকে মুজুরি নেওয়া হালাল হবে? এক্ষেত্রে আপনার কাজই বৈধ নয় তাই আপনাকে যত হালাল কামাই থেকেই দেওয়া হোক না কেন তা কোন অবস্থাতেই বৈধ হবে না। আবার আপনি কাউকে কুরআন পড়ান কিন্তু তিনি আপনাকে মুজুরি দিবেন সূদী টাকা থেকে। এক্ষেত্রে আপনার কাজ বৈধ কিন্তু বিনিময়ে যা দিচ্ছে তা নেওয়া হারাম। অর্থাৎ শুধু কাজ বৈধ হলেই মুজুরি হালাল হয় না আবার শুধু মুজুরি হালাল হলেই তা নেওয়া বৈধ হয় না। বরং মুজুরি ও কাজ উভয়টি হালাল হতে হয়।
এক্ষেত্রে আপত্তি আসতে পারে তাহলে তো প্রায় সকল মানুষেরই কিছু অবৈধ ইনকাম থাকে। সেক্ষেত্রে কারো কাজ করেই তো পারিশ্রমিক নেওয়া যাবে না। এর জবাব হল কারো সাথে অর্থনৈতিক কোন লেনদেন করতে গেলে তার কাছ থেকে একথা শুনা জরুরী নয় যে আপনার ইনকাম বৈধ কিনা? এক তো এভাবে জিজ্ঞাসা করা লজ্জাজনক দ্বিতীয়ত এর প্রতিউত্তরে সে হয়তবা (জবাব দিলে) সত্য বলবে না। তাছাড়া এভাবে মানুষের জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। যেমন আমি গাড়িতে চলার সময় সন্দেহ হল মালিক গাড়িটিকে সূদী টাকা দিয়ে কিনেছে কিনা? চাউলের দোকানদার চাউল চুরি করে এনেছে কিনা ইত্যাদি? তাই মাসআলা হল সাধারণভাবে মানুষের সাথে লেনদেন চালিয়ে যাবে। তবে যদি কারো ক্ষেত্রে কোন ভাবে জানা যায় যে তার সমস্ত ইনকাম হারাম বা আমাকে যেটা দিচ্ছে তা হারাম তবে তা নেওয়া বৈধ নয়? কিভাবে হবে? একজন আপনার সামনেই আরেকজনের টাকা চুরি করল। এরপর আপনার পারিশ্রমিক ঐ চুরির টাকা থেকে দিল। আপনি জেনেশুনে ঐ টাকা কিভাবে নিবেন? তা আপনার জন্য বৈধই বা হয় কি করে? আপনার কাজ হালাল হলেই কি পারিশ্রমিক নেওয়া বৈধ হয়ে যাবে? চাই সে চুরি করে দিক বা ডাকাতি করে বা ছিনতাই করে বা সূদ, ঘুষের টাকা।
অনুরূপভাবে কারো যদি অধিকাংশ উপার্জন বৈধ হয় তবে তার সাথেও নির্দ্বিধায় লেনদেন করা যায়। তবে যদি জানা যায় তিনি আমাকে যেটা দিচ্ছেন সেটা হারাম সেক্ষেত্রে তা নেওয়া বৈধ নয়। আবার কারো অধিকাংশ ইনকাম হারাম হওয়ার পরেও যদি জানা যায় আমাকে যেটা দিচ্ছে তা হালাল তবে তার সাথেও লেনদেন করতে কোন অসুবিধা নেই। আর যার ব্যপারে কিছুই জানা যায় না তার সাথে লেনদেন করতে কোন অসুবিধা নেই।
এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক আমাদের সেই প্রশ্নোত্তরটি যার ব্যপারে আপত্তিটি সৃষ্টি হয়েছিল-
(প্রশ্নঃ একজনের ইনকাম সম্পূর্ণটাই হারাম তার কোনো বৈধ income নাই, তার বাসায় রান্নাবান্না করে বেতন নেয়া জায়েয হবে কি ?
উত্তরঃ না, জায়েয হবে না যদি সে তা ঐ হারাম কামাই থেকে দিয়ে থাকে।–রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮; মাজমাউল আনহুর ২/৫৪৮
লিঙ্ক -http://muftihusain.com/ask-me-details/?poId=1203)
দেখুন প্রস্নে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে তার কোন বৈধ ইনকাম নেই। আবার উত্তরেও বলা হয়েছে যদি সে তা ঐ হারাম কামাই থেকেই দিয়ে থাকে তবে তা নেওয়া বৈধ হবে না। এবার উপরের মূলনীতির আলোকে বিষয়টি পর্যালোচনা করুন সবকিছু ভালভাবেই বুঝে যাবেন ইংশাআল্লাহ।
ফিকহের সমস্ত কিতাবে মাসআলাটিকে এভাবেই ব্যক্ত করা হয়েছে। উলামায়ে কেরাম যখন পনের ষোল বসর কুরআন হাদীসের উপর লেখাপড়া করেন এর পরে আবার দিনে কমপক্ষে আট দশ ঘণ্টা কুরআন হাদীসের উপরেই থাকেন তখন তাদের কোন প্রশ্নোত্তরে প্রথম বারেই আপত্তি করতে চাইলে তা সঙ্গত উপায়েই হওয়া কাম্য। আল্লাহ তাআলাই সবকিছু ভালো জানেন এবং তার জ্ঞানই পরিপূর্ণ।
আর আল্লাহ তাআলা সাক্ষী আজ পর্যন্ত কত হাদিয়া যে ফিরিয়ে দিয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। এজন্য যে, তার ইনকাম হারাম। আমার খুব আপনজনের অনেকেই সরাসরি হারাম কারবারে জড়িত। তাদের থেকে একটি টাকাও আজ পর্যন্ত নেইনি। তাদের বাড়িতে কখনো খানাও খাইনি বুঝ আসার পর যদিও সালাম কালাম ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরন বজায় রেখেছি।