প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমি সফর নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাচ্ছি। আমার জন্ম বরিশাল। দাদা-নানা বাড়ি সেইখানে। জন্মের একটু পর থেকেই আমি ঢাকা ছিলাম। স্কুল-কলেজ সেখানেই ছিল। বাড়িও ঢাকায়। আমার শ্বশুর থাকেন চিটাগাং। আমার ওয়াইফ ছোট বেলা থেকেই চিটাগাং যদিও তার বাবা-মার বাড়ি বাগেরহাট এবং পিরোজপুর। ১. আমার ওয়াইফ বগুড়া পড়াশুনা করে। মাঝে মাঝে ঢাকায় আমাদের বাড়ি যায়। মাঝে মাঝে চিটাগাং আসে। ও ঢাকাতে ফুল নামাযই পরে। ওর কি কসর করা লাগবে? উল্লেখ্য এখন পর্যন্ত কখনোই ও টানা ঢাকা বেশীদিন থাকে নি কারন আমি জব করি চিটাগাং। ২.আমি ২০১৫ সাল থেকে চিটাগাং আছি। এখন আমি যদি বগুড়া ট্রান্সফার হয়ে যাই জবের জন্য এবং পরবর্তীতে চিটাগাং ২/৩ দিনের জন্য বেড়াতে আসি তাহলে কি কসর করা লাগবে ? যেহেতু আমি চিটাগাং অনেকদিন ছিলাম তাই কনফিউজ লাগছে। উল্লেখ্য আমি বরিশাল-ঢাকা-চিটাগাং সব জায়গাতেই ফুল নামায পরি। ৩. সফরে থাকাকালীন মাগরিব-এশা অথবা যোহর-আসর একসাথে জমা করা যায় বলে জানি। যদি এমন হয় যে আমি চাদপুর-চিটাগাং সফর করছি ট্রেনে আর মাঝখানে মাগরিবের টাইম হলো কিন্তু চিটাগাং আসতে আসতে মাগরিব এর ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে তাহলে আমি কিভাবে জমা করবো ? কারন চিটাগাং এ চলে আসলে আমি তো মুকীম হয়ে যাবো। এশা এশার ওয়াক্তেই ফুল পরা লাগবে। মাগরিব কি ট্রেনেই পরে নিতে হবে ! উল্লেখ্য ট্রেন মোটামুটি খুব বিজি থাকে যেইখানে অনেক মানুষই দাঁড়িয়ে থাকে। বসে কিবলামুখী হয়ে নামায পরার পরিবেশ তেমন থাকেন না। ধন্যবাদ।
উত্তর :তানকীহ (প্রশ্ন স্পষ্টকরন)-
ওয়া আলাইকুমুস সালাম
আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন।
১।আপনার স্ত্রীকে তার পিতার বাড়ি থেকে আপনাদের বাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে কিনা? অর্থাৎ তিনি কি মূলত বাপের বাড়িতেই থাকেন এবং আপনাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসেন নাকি এর উল্টো?
২।বরিশালে আপনাদের জায়গা এবং থাকার স্থান আছে কিনা? আপনাদের সেখানে ফিরে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিয়ত আছে কিনা?
তানকীহ এর উত্তরঃ
১। স্ত্রী মূলত বাপের বাড়ি থাকেন না। বিয়ের পর পরই আমি জবের জন্য চিটাগাং চলে না আসলে ঢাকাতেই থাকা হতো ওর কিন্তু জবের কারনে আমার সাথেই থেকেছে টিটাগাং এ কিছু মাস। এখন আবার পড়াশোনার জন্য বগুড়া থাকে। মেইনলি আমার ঢাকায় শিফট না হওয়া পর্যন্ত ঢাকায় ওর বেশীদিন থাকা পড়বে না। শুধু বন্ধের দিনগুলোতে যাওয়া হয় যেটা নরমালি ১৫ দিন লম্বা হয় না।
২। দাদা-নানা বাড়ি আছে। মামা-চাচা আছে। বেড়াতে যাওয়া হয়। স্থায়ী বসবাসের জন্য যাবার কোন প্লান নেই। তবে অনেক রিলেটিভ মারা গেলে দেখা যায় ওইখানে দাফন করা হয়।
মূল উত্তরঃ (১) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার স্ত্রী ঢাকাতে পূরো নামাযই পড়বেন।
(২) চিটাগাং আপনি যেখানে থাকতেন সেখান থেকে যদি সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে বগুড়া শিফট হয়ে যান তবে ভবিষ্যতে আপনি চিটাগাং গেলে কসর করবেন।আর সামানপত্র সেখানে থেকে থাকলে পূরা নামায পড়বেন।-বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪,আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৮-১১২।
উল্লেখ্য যে, বরিশাল গেলে আপনি কসর করবেন।
(৩) সফরে বা বিশেষ কোন প্রয়োজনে দুই ওয়াক্তের নামাযকে পর্যায়ক্রমে তাদের নিজস্ব ওয়াক্তে একত্রে পড়ার অনুমতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটি করেছেন। অর্থাৎ যোহরকে তার শেষ ওয়াক্তে এবং আছরকে শুরু ওয়াক্তে পড়বে। অনুরূপভাবে মাগরিবকে শেষ ওয়াক্তে এবং ইশাকে শুরু ওয়াক্তে পড়বে।
عن عائشة رضي الله عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه و سلم في السفر يؤخر الظهر ويقدم العصر ويؤخر المغرب ويقدم العشاء
আয়েশা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে যোহরকে বিলম্ব করে (তার শেষ ওয়াক্তে) এবং আছরকে শুরু ওয়াক্তে পড়তেন। আর মাগরিবকে বিলম্ব করে (তার শেষ ওয়াক্তে) এবং ইশাকে শুরু ওয়াক্তে পড়তেন।–মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৫০৩০; শরহু মাআনিল আছার, হাদীস নং ৯০০।
এভাবে যদিও বাহ্যিকভাবে মনে হয় দুই ওয়াক্তের নামাযকে একত্রে এক ওয়াক্তে পড়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে প্রত্যেক নামাযকে তার নিজস্ব ওয়াক্তে পড়া হয়েছে। তবে এক ওয়াক্তের মধ্যে দুই ওয়াক্তের নামাযকে একত্রে পড়লে তা সহীহ হবে না।– সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৭৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ৩০৩৮;বাজলুল মাজহুদ ৬/২৮২-২৯১।
কাজেই প্রশ্নে উল্লেখিত অবস্থায় আপনি ট্রেনেই মাগরিবের নামায আদায় করবেন। ট্রেনে নামাযের জন্য আলাদা কামরা থাকে। আর যদি নাও থাকে তবে করিডোরে দাড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে রুকু সিজদাহ করে যথানিয়মে নামায আদায় করা যায়। আমি নিজেই ঈদের ভিড়ে ট্রেনের করিডোরে দাড়িয়ে নামায আদায় করেছি। মানুষকে একটু নামাযের জন্য সরে দাড়াতে বললে তারা যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখায়। শুধু সৎসাহসের অভাব।