প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম,জনাবের নিকট জানতে চাই, তাফহীমুল কুরআন কিতাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) সম্পর্কে যা বলা হয়েছে যে উনি সূরা ফালাক ও সূরা নাস কুরআনের অংশ বলে মানতেন না, উনার পাণ্ডুলিপিতে উক্ত সূরাদ্বয় সংযোজন করতেন না, এমনকি উক্ত সূরাদ্বয় উনি নামাযেও পড়তেননা। এ ধরনের বক্তব্য সঠিক কিনা। যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে উনি কিভাবে রা: হন? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হই।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) এর প্রতি যে কথাটি সম্পৃক্ত করা হয় যে, তিনি সূরা নাস ও ফালাক্বকে কুরআনের অংশ মনে করতেন না, তা সঠিক নয়। বরং বাস্তবতা হল তিনিও সকলের ন্যায় উক্ত দুই সূরাকেও কুরআনের অংশ মনে করতেন। আর যে সকল রেওয়ায়েতে রয়েছে যে তিনি উক্ত দুই সূরাকে কুরআনের অংশ মনে করতেন না তা সঠিক নয়। এর দলীল হল হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে মুতাওয়াতিরভাবে যে কুরআন বর্ণিত রয়েছে তাতে উক্ত দুই সূরা রয়েছে।

পুরো উম্মাতের এজমা হল কিরাআতে আশারার (দশ কিরাআত) সমস্ত সনদ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালি ও সহীহ সনদ। যা যুগ যুগ ধরে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়ে আসছে। তার মধ্য হতে হযরত আছেম (রহঃ) এর কিরাআত যা আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী, হযরত যার বিন হুবাইস এবং হযরত আমর আশ শাইবাণী থেকে বর্ণিত। উক্ত তিনজনই ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে উক্ত সূরাদ্বয় রেওয়ায়েত করেন। অনুরূপভাবে হযরত হামযা (রহঃ) এর কিরাআত আলকমাহ, আসওয়াদ, ইবনে ওহাব, মাসরূক, আছেম এবং হারেছ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তারা সকলেই উক্ত সূরাদ্বয় ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও কিরাআতে আশারার মধ্য হতে কিসাঈ ও খলফ এর রেওয়ায়েতও সর্বশেষ গিয়ে ইবনে মাসউদ (রাঃ) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে।কেননা কিসাঈ হামযা এর শাগরেদ। আর খলফ তার শাগরেদের শাগরেদ।

 

এ জন্যই অধিকাংশ মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম উক্ত রেওয়ায়েতগুলোকে (যে গুলোতে রয়েছে তিনি উক্ত সূরাদ্বয়কে কুরআনের অংশ মনে করতেন না) দুর্বল, জাল কিংবা কমপক্ষে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। যাদের মধ্যে শাইখুল ইসলাম আল্লামা নববী, আল্লামা ইবনে হাযম, ইমাম রাযী, কাজী আবু বকর ইবনুল আরবী, আল্লামা যাহেদ কাওছারী অন্যতম। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে যে কুরআন বর্ণিত হয়েছে তাতে উক্ত সূরাদ্বয় শামিল। কাজেই খবরে ওয়াহেদের ভিত্তিতে বর্ণিত হাদীসসমূহে যা উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি উক্ত সূরাদ্বয়কে কুরআনের অংশ মনে করতেন না তা ধর্তব্য হবে না। কেননা মুতাওয়াতিরের বিপরীতে খবরে ওয়াহেদ কখনো ধর্তব্য হয় না। যা মুহাদ্দিসিনদের নিকট সতসিদ্ধ।

 

আর উক্ত সূরাদ্বয় তিনি নামাযেও পড়তেন না এটা ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য যে, মওদুদীর কিতাবাদি উলামাদের পরামর্শ ব্যতীত না পড়ার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত।

 

বি: দ্র: এখানে মুতাওয়াতির, খবরে ওয়াহেদ ইত্যাদি ইলমী পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যা উলামাদের নিকট থেকে বুঝে নেওয়া যেতে পারে।

 

সূত্র সমূহ

(১) ইবনুল জাযরী, আন-নাশরু ফিল কিরাআতিল আশার, খন্ড ১, পৃ: ১৫৬,১৬৬ (২) ফায়জুল বারী, খন্ড ১, পৃ: ২৬২ (৩) ফাতহুল বারী, খন্ড ৮, পৃ: ৩,৬ (৪) আল-মুহাল্লা, খন্ড ১, পৃ: ১৩ (৫) মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খন্ড ৭, পৃ: ১৪৯ (৬) মাকালাতে কাওছারী, পৃ: ১৬ (৭) তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড ১, পৃ: ১১৪-১১৫ (৮) আল-ইতক্বান, খন্ড ২, পৃ: ১৮ (৯) উলূমুল কুরআন, আল্লামা তাক্বী উসমানী, পৃ: ২২৩-২২৭।

Loading