মুহাররম ও আশুরার করনীয় ও বর্জনীয়

আরবী চান্দ্রবছরের প্রথম মাস হল “মুহাররমুল হারাম”। অর্থাৎ সন্মানিত মুহাররম মাস। আল্লাহ তাআলা যে চারটি মাসকে সন্মানিত করেছেন তার মধ্যে মুহাররম অন্যতম এবং তৃতীয়। হাদীস শরীফে এ মাসকে “শাহরুল্লাহ” তথা “আল্লাহর মাস” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হাদীস শরীফে আছে-
عن أبي هريرة قال جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه و سلم فقال أي الصيام أفضل بعد شهر رمضان ؟ قال شهر الله الذي تدعونه المحرم
অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযান মাসের রোযার পর কোন (দিনের) রোযা উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর মাসের রোযা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম বলে ডেকে থাক।–সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৭৪২
সকল মাস আল্লাহ তাআলার মাস হওয়া সত্ত্বেও উক্ত হাদীসে মুহাররম মাসকে বিশেষ করে “আল্লাহর মাস” বলা হয়েছে। এর দ্বারাই উক্ত মাসের বিশেষ তাৎপর্য ও ফযীলাত বুঝে আসে। যেমনিভাবে পৃথিবীর সব ঘরই আল্লাহ তাআলার ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না। আসলে সকল মাসের প্রতিটি দিন এবং বছরের প্রতিটি মাসই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার দয়া ও করুনায় বছরের বিশেষ কিছু দিন ও মাসকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং তাতে বিশেষ কিছু আহকাম জারি করেছেন। তার মধ্য থেকে মুহাররম মাস অন্যতম। এ মাসে বেশ কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। অনুরূপভাবে বর্জনীয় কিছু বিষয় রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

করনীয় বিষয় সমূহঃ

 

১। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখাঃ
হাদীস শরীফে এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل
অর্থঃ রমযানের পর সবচেয়ে উত্তম রোযা হল আল্লাহর মাসের রোযা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম নামায হল রাতের নামায।-সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮১২
অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
إن كنت صائما بعد شهر رمضان فصم المحرم فإنه شهر الله
অর্থঃ তুমি যদি রমযানের পর আরও কোনো মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোযা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস।–জামে তিরমিজী, হাদীস নং ৭৪১

২। বিশেষভাবে আশুরার রোযা রাখাঃ
মুহাররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব। রমযানের রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে এ রোযা ফরজ ছিল। এই দিনে রোযা রাখলে আল্লাহ তাআলা পিছনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
عن أبي قتادة أن النبي صلى الله عليه و سلم قال صيام يوم عاشوراء إني
أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله

অর্থঃ হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিনের রোযা আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশা রাখি আল্লাহ তাআলা (এর দ্বারা) পূর্বের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৩; জামে তিরমিজী, হাদীস নং ৭৫২
অন্য হাদীসে রয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ما هذا اليوم الذى تصومونه فقالوا هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا فنحن نصومه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فنحن أحق وأولى بموسى منكم فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় এসে ইয়াহূদীদের আশুরার দিন রোযা রাখতে দেখলেন। তখন তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা যে রোযা রাখ এটা কোন দিন? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালাম এবং তার জাতীকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেছিলেন। ফলে এই দিনে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এই দিনে রোযা রাখি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মূসা আলাইহিস সালাম এর অনুসরণের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে বেশী হক্বদার এবং উত্তম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন (আশুরার দিন) রোযা রাখেন এবং সাহাবাদেরকেও রোযা রাখতে আদেশ করেন।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭১৪; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৯৪৩

তবে এই দিনে রোযা রাখতে হলে এর সাথে ৯ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে মোট ২টি রোযা রাখবে। শুধু ১০ তারিখে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ বা অনুত্তম। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখ তবে ইয়াহূদীদের বিরোধিতা কর। হয় তার পূর্বের দিন রোযা রাখ অথবা তার পরের দিন।–মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৫৪
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, উক্ত হাদীসে অমুসলিমদের বিরোধিতা করতে বলা হয়েছে। অথচ আজ আমরা অমুসলিমদের রীতিনীতি ও কালচার কদমে কদমে অনুসরণ করে যাচ্ছি। ইয়াহূদীদের সাথে উক্ত সাদৃশ্যতা বড় কোন বিষয়ে বা নাজায়েয কোন কাজে ছিল না। বরং একটি ইবাদাতে ছিল। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতটুকুও বরদাশত করেননি। আজ আমরা অমুসলিমদের পদাঙ্ক অনুসরণে গর্ব বোধ করি। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন জাতীর সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪০৩৩

৩। এ মাসে বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা বিশেষ করে আশুরার দিনঃ
হাদীস শরীফে আছে এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল-
يا رسول الله أي شهر تأمرني أن أصوم بعد شهر رمضان ؟ قال إن كنت صائما بعد شهر رمضان فصم المحرم فإنه شهر الله فيه يوم تاب فيه على قوم ويتوب فيه على قوم آخرين
অর্থঃ হে আল্লাহর রাসূল! রমযানের পর আপনি আমাকে কোন মাসে রোযা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তুমি যদি রমযানের পর আরও কোনো মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোযা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন।-জামে তিরমিজী, হাদীস ৭৪১ ; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৩৩৫

উক্ত হাদীসে যে দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে উলামায়ে কেরাম সেটি আশুরার দিন বলে চিহ্নিত করেছেন। আসলে বান্দা তো সারা বছরই তাওবা ইস্তেগফারের প্রতি যত্নবান হবে। বিশেষ করে এ মাসে আরো বেশি যত্নবান হবে। আর আশুরার দিনে খুব বেশি পরিমাণে তাওবা ইস্তেগফার করবে যাতে সেও অগণিত ক্ষমাকৃত বান্দার কাতারে শামিল হয়ে যায়।
সারকথা, এ মাসে আল্লাহ তাআলার সকল নাফরমানী ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু করবে। খালেছভাবে তাওবা ও ইস্তেগফার করবে। পিছনের অন্যায়গুলোর কাফফারা আদায় করবে। বিশেষ করে মানুষের কোনো হক নষ্ট করে থাকলে সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে।

৪। পরিবার পরিজনের জন্য সাধ্যমত উত্তম খানার ব্যবস্থা করাঃ
হাদীস শরীফে আছে এই দিনে নিজ পরিবার-পরিজনকে উত্তম খানা-পিনার ব্যবস্থা করলে আল্লাহ তাআলা সারা বছর উত্তম খানা-পিনার ব্যবস্থা করে দিবেন।
عن عبد الله قال قال النبي صلى الله عليه و سلم : من وسع على عياله يوم عاشوراء وسع الله عليه في سائر سنته
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবার-পরিজনের উপর প্রশস্ততা (ভাল খারারের ব্যবস্থা) করবে আল্লাহ তাআলা তাকে সারা বছর প্রশস্ততা (ভাল খাবার) দান করবেন।-বাইহাক্বী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৭২৯)
হাদীসটির একাধিক সনদ রয়েছে। যার সবকটি দূর্বল। তবে সমষ্টিগত বিচারে হাদীসটি আমলযোগ্য।-হাফেয সাখাবী, আল মাকাছিদুল হাসানাহ, পৃষ্ঠা ৬৭৪; আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, আল মানারুল মুনীফ পৃ: ১১২/১১৩

মাসআলাঃ নিজ পরিবারের জন্য সার্থ্যরে মধ্যে থেকে ভাল খাবারের আয়োজন করবে। এতে বাড়াবাড়ি করবে না। এবং এটাকে কোন খাছ রসমে পরিনত করবে না।

বর্জনীয় কাজ সমূহঃ

 

এই মুহাররমের দিনে আওলাদে রাসূল হযরত হুসাইন (রাঃ) অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে কারবালায় শাহাদত বরন করেছিলেন। এজন্য অনেকে এই দিনে শোক সভা, স্মরণসভা ইত্যাদি করে থাকে। আবার অনেকে শরবত পান করায়, হায় হোসেন হায় হোসেন বলে মাতম করে, তাযিয়া বের করে, শিন্নি বিতরন করে ও বুক চাপড়ায়। এগুলো সব বিদআত ও নাজায়েয। কোন মুসিবত বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন দিন বা কোন মাসের নতুন কোন ফযীলাত ও বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। করা হলে তা হবে স্পষ্ট বিদআত ও গোমরাহী, যার ঠিকানা জাহান্নাম। আসলে এমন কোন দিন হয়তোবা পাওয়া যাবে না যেদিন বিশেষ কোন ব্যক্তি বা বুজুর্গ ইন্তেকাল বা শাহাদত বরন করেননি। এখন এসব দিনের জন্য যদি বিশেষ কোন হুকুম আবিষ্কার করা হয় তবে মানুষ দিবস পালন করতে করতে অস্থির হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে তো আছে সাদ বিন মুআজের মৃত্যুতে আল্লাহ তাআলার আরশ কেপে উঠেছিল। অনুরূপভাবে হযরত হামযা (রাঃ) মৃত্যুতে আল্লাহর রাসূল কতটা শোকাহত হয়েছিলেন তা কারো অজানা নেই। কই সেসব দিন তো কেউ শোক পালন করে না। এমনকি জানেও না এগুলো কোন তারিখে ঘটেছিল।
আনন্দ ও মুসিবতে কি করণীয় শরীয়াত তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। আনন্দের সময়ও সবর করতে হবে। অতি আনন্দের কারণে আল্লাহ তাআলার কোন হুকুমের লঙ্ঘন করা যাবে না। অনুরূপভাবে বিপদ বা মুসিবতেও সবর করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন এক কন্যা তার পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট পৌঁছালে তিনি তাকে সান্তনা স্বরূপ বলেন-
إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ وَمَا أَعْطَى وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ مُسَمًّى فَلْتَحْتَسِبْ وَلْتَصْبِرْ
অর্থঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ যাকে উঠিয়ে নিয়েছেন সে তাঁরই। যাকে রেখে দিয়েছেন সেও তাঁর। তাঁর কাছে প্রত্যেক জিনিসেরই নির্ধারিত মেয়াদ রয়েছে। কাজেই সে যেন আল্লাহ তাআলার কাছে ছাওয়াবের আশা রাখে এবং সবর করে।-সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১২৮৪
উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝে আসে, আপনজন কারো মৃত্যু বা শাহাদাতের মতো বিরাট মুসিবতেও শরীয়তের হুকুম হল, মুসিবতগ্রস্ত লোকেরা সবর করবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ছাওয়াবের আশা করবে। আর উক্ত বিপদের কথা মনে পড়লে ‘ইন্না লিল্লাহ..’ পড়বে।
এক্ষেত্রে শরীয়াতের মূলনীতি স্বরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَهْمَا كَانَ مِنْ الْعَيْنِ وَالْقَلْبِ فَمِنْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَمِنْ الرَّحْمَةِ وَمَا كَانَ مِنْ الْيَدِ وَاللِّسَانِ فَمِنْ الشَّيْطَانِ
অর্থঃ চোখ আর দিল থেকে যা কিছু আসে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তা রহমতের অংশ। কিন্তু যা কিছু হাত ও জিহ্বা থেকে আসে তা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৭
অর্থাৎ কেবল চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরলে কিংবা পেরেশান হলে কোনো সমস্যা নেই। এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এটা ঐ রহমতের প্রকাশ, যা আল্লাহ বান্দার হৃদয়ে দান করেছেন। কিন্তু পেরেশানীর কারণে যদি মানুষ তার হাত কিংবা মুখ ব্যবহার শুরু করে তাহলে এটা হয় শয়তানের আনুগত্য থেকে। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা নারায হন।
অনুরূপভাবে শোক পালনের ক্ষেত্রেও শরীয়াতের মূলনীতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ مُسْلِمَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُحِدَّ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ إِلَّا عَلَى زَوْجِهَا أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে এমন কোন মুসলিম নারীর (কারো মৃত্যুতে) ৩ দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল নয়। তবে তার স্বামীর জন্য ৪মাস ১০দিন শোক পালন করতে পারবে। (বুখারী শরীফ হাদীস নং-৫৩৩৮)
অর্থাৎ স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য ৩ দিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নেই। অথচ হুসাইন (রা) শাহাদাত বরন করেছেন প্রায় ১৪০০ বছর আগে। তাহলে এতদিন পর তার জন্য শোক পালন কিভাবে জায়েয হতে পারে? বেশি থেকে বেশি এতটুকু করা যায় যে, ঐ মর্মান্তিক ঘটনা মনে পড়ে গেলে তারজী তথা ইন্না লিল্লাহ পড়া যায়।

অথচ অত্যন্ত আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হল, শিআরা শরীয়াতের হুকুমের কোন তোয়াক্কা না করে হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে এই দিনে হাজারো নাজায়েয ও বিদআতের সন্নিবেশ ঘটিয়েছে। যেমন তা’যিয়া বানানো অর্থাৎ হযরত হুসাইন (রাঃ) এর নকল কবর বানানো, মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা, হায় হুসেন হায় আলী ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা, ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা, কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো, তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো, শোক পালন করা, শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। এগুলো সবই শরীয়াত গর্হিত ও বিদআত কর্মকাণ্ড। যা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য।

শিআরা মনে করে আশুরার ফযীলাত হযরত হুসাইন (রা) এর সময় থেকে। যা শতভাগ ভুল ধারনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা মুকাররমায় ছিলেন তখনও আশুরার দিন রোযা রাখতেন। এরপর যখন মদীনা মুনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোযা রাখতেন অন্যদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে এই রোযা ফরয ছিল।
এছাড়াও এই দিন সংক্রান্ত অনেক কিছু মানুষের মুখে শুনা যায় যেমন এই দিনে এমন এমন হয়েছিল বা আল্লাহ তাআলা অমুক অমুক সৃষ্টি করেছেন, এগুলোর প্রায় সবই ভিত্তিহীন। (আলমানারুল মুনীফ পৃ:১১১)

Loading