প্রশ্ন : হযরতের কাছে নিচের বিষয় গুলো তাৎপর্য পূর্ণ আলোচনা আশা করছি। ১। আলেম কাকে বলা হয়? কি কি গুন থাকলে তাকে হাক্কানি আলেম বলা হয়? ২। মাদ্রাসায় পড়লে সে হাক্কানি আলেম, আর মাদ্রাসায় না পড়লে তাকে হাক্কানি আলেম বলা হয় না কেন? ৩। কোরাআন ও হাদিসের কোথায় হাক্কানি আলেমের কথা মানতে বলা হয়ছে? ৪। দ্বীন সম্পর্কে কেঊ অনেক জ্ঞান রাখে কিন্তু মাদ্রাসায় পড়েনি বলে তার নসিয়ত কেন শুনা যাবে না? ৫। মিডিয়া থেকে কেন দ্বীন শিক্ষা করা যাবে না।
উত্তর :১। শাব্দিক অর্থে আলেম হল যার নিকট (আসমানী) ইলম রয়েছে। চাই তা কম হোক বা বেশি। আর শরীয়তের পরিভাষায় আলেম হলেন এমন ব্যক্তি-
ক) যার নিকট কুরআন হাদীসের পর্যাপ্ত ইলম রয়েছে।
খ) যিনি তার ইলম অনুযায়ী আমল করেন (আল্লাহ তাআলাকে রাজী খুশি করার জন্য)।
গ) যার ভিতর পরিপূর্ণ মাত্রায় আল্লাহ তাআলার ভয় রয়েছে।
ঘ) যিনি আল্লাহ তাআলার যাবতীয় গুণাবলীসহ আল্লাহ তাআলাকে চিনেন।
উপরোক্ত গুণাবলী যার মধ্যে রয়েছে তিনিই হক্কানী আলেম। কাজেই কোন অমুসলিম কুরআন হাদীসের উপর যতই পাণ্ডিত্য রাখুক না কেন সে আলেম নয়। কেননা সে তার ইলম অনুযায়ী আমল করে না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলাকে রাজী খুশি করার জন্য ইলম শিক্ষা করে না। তেমনিভাবে কোন বেআমলী লোকও আলেম হতে পারে না। যিনি কয়েকটি বাংলা কিতাব থেকে কিছু মাসআলা শিখেছেন তিনিও আলেম নন। কেননা তার নিকট পর্যাপ্ত ইলম নেই।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন আলেম হলেন ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করে না, হালাল হারাম জেনে তদানুযায়ী আমল করেন, আল্লাহ তাআলার হুকুম আহকাম (অর্থাৎ আদেশ নিষেধ) সম্পর্কে জানেন। আর এই বিশ্বাস রাখেন তিনি আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাত করবেন এবং তার ইলম অনুযায়ী তার হিসাব নেওয়া হবে।–তাফসীরে ইবনী কাসীর, সূরা ফাতির, আয়াত নং ২৮
২+৪। না, বিষয়টি এমন নয়। বরং যিনি হক্কানী উলামায়ে কেরাম থেকে ইলম শিক্ষা করবেন চাই তা মাদ্রাসায় থেকে হোক বা অন্য কোন ভাবে তিনিই আলেম গণ্য হবেন। এই ইলম শিক্ষা নিজের বাসায় হতে পারে অথবা উস্তাদের বাসায় অথবা অন্য কোন স্থানে। আর এমন ব্যক্তির নসীহাত শুনতেও কোন অসুবিধা নেই। কারো নসীহাত শুনতে হলে তিনি মাদ্রাসা পড়ুয়া আলেম হতে হবে এমন নয়। বরং কেউ হক্কানী উলামায়ে কেরাম থেকে যে কোন ভাবে সহীহ ইলম শিক্ষা করলেই তার নসীহাত শোনা যাবে। তবে যিনি কোন হক্কানী উলামায়ে কেরাম থেকে দ্বীন শিখেননি বরং একাকী গবেষণার মাধ্যমে শিখেছেন তার ওয়াজ নসীহাত শোনা যাবে না। এমন ব্যক্তির গোমরাহ হওয়ার আশংকা প্রবল।
যেমন আমাদের (বুয়েটের) প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব। তিনি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কোন মাদ্রাসায় আবাসিকভাবে থেকে ইলম শিক্ষা করেননি। বরং তিনি বিচ্ছিন্নভাবে উলামায়ে কেরাম থেকে ইলম শিক্ষা করেছেন। এরপরেও তিনি উলামায়ে কেরামের নিকট আলেম হিসেবে সমাদৃত।
৩। অসংখ্য জায়গায়। যেমন সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াত।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য কর, রাসূল এবং তোমাদের উলূল আমরদেরকে আনুগত্য কর।
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সহ অধিকাংশ মুফাসসিরীন এখানে উলুল আমর দ্বারা হক্কানী বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম উদ্দেশ্য নিয়েছেন।
আরো দেখুন সূরা নিসা, আয়াত ৮৩, সূরা নাহল, আয়াত ৪৩।
অনুরূপভাবে উলামায়ে কেরামের অনুসরণের ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إني لا أدري ما بقائي فيكم فاقتدوا باللذين من بعدي وأشار إلى أبي بكر و عمر
অর্থঃ আমি জানি না তোমাদের মাঝে আমি কতদিন থাকব। কাজেই তোমরা আমার পরে যে দুজন আছে তাদের অনুসরণ কর। একথা বলে তিনি হযরত আবূ বকর ও উমর (রাঃ) এর দিকে ইশারা করলেন।–জামে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৬৬৩
একথা বলাবাহুল্য যে তারা আলেম ছিলেন বলেই তাদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এধরনের আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে।
৫। মিডিয়া থেকে দ্বীন শিক্ষা করা যাবে না এমন নয়। মিডিয়ার মাধ্যমে হক্কানী উলামায়ে কেরাম থেকে শর্তসাপেক্ষে দ্বীন শিখতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন আপনারা আমাদের এই সাইটের মাধ্যমেও দ্বীন শিখছেন। কিন্তু সমস্যা হল যার তার ওয়াজ নসীহাত শোনা। এর দ্বারা গোমরাহ হওয়ার আশংকা প্রবল। ওয়াজ নসীহাত শোনা এটাও হক্কানী উলামায়ে কেরামের পরামর্শে হতে হবে। তবে এটা সঠিক যে মিডিয়ার মাধ্যমে দ্বীন শিক্ষা করা খুব কার্যকারী কোন পদ্ধতি নয়। এর মধ্যে পরিপূর্ণ মাত্রায় কল্যাণ ও বরকত নেই। উত্তম, কার্যকারী ও সুন্নাত পদ্ধতি হল সশরীরে উলামায়ে কেরামের নিকট হাজির হয়ে দ্বীন শিক্ষা করা।