প্রশ্ন : ১। অনিচ্ছা বশত মাথায় কোন খারাপ চিন্তা আসলে কি গুনাহ হবে? ২। নামায এর সময় যদি অনিচ্ছা বশত খারাপ চিন্তা মাথায় চলে আসে তাহলে কি নামায হবে না? ৩। নামাযে হাত বাধা নিয়ে ইসলাম কি বলে? কোথায় হাত বাধা ভাল?
উত্তর :১। না, অনিচ্ছাকৃত আসলে কোন গুনাহ হবে না। মনের মধ্যে এ ধরনের খারাপ চিন্তা-ভাবনা আসাকে ওয়াসওয়াসা বলে। এর কারনে আপনি সামান্যও বিচলিত হবেন না। হাদীস শরীফে আছে –
إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অন্তরসমূহ যে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রনা) দেয় তা মাফ করে দিয়েছেন যতক্ষন সে তা (কুমন্ত্রনার উপর আমল) না করে অথবা (মুখে) না বলে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫২৮, সহীহ মুসলিম ,হাদীস নং ৩৪৬)
এই ওয়াসওয়াসা দ্বীনের অন্যতম ধারক বাহক সাহাবায়ে কেরামেরও আসত। আপনি প্রশ্নে যেমন উল্লেখ করেছেন “এমন হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া অধিক উত্তম” সাহাবায়ে কেরামও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন প্রশ্ন করে ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ঈমানের ক্ষতিকারক তো নয়ই বরং ঈমানের অন্যতম আলামত গণ্য করেছেন।
جَاءَهُ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ نَجِدُ فِى أَنْفُسِنَا الشَّىْءَ نُعْظِمُ أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهِ أَوِ الْكَلاَمَ بِهِ مَا نُحِبُّ أَنَّ لَنَا وَأَنَّا تَكَلَّمْنَا بِهِ. قَالَ « أَوَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ ». قَالُوا نَعَمْ. قَالَ « ذَاكَ صَرِيحُ الإِيمَانِ ».
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাদের মধ্য থেকে একদল লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন আমরা আমাদের অন্তরে এমন (কুমন্ত্রণা) অনুভব করি যা আমাদের কেউ মুখে বলতে অনেক বড় ভয় পায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তোমরা কি এমনটা অনুভব কর? তারা বললেন হাঁ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন এটাই (মনে কুমন্ত্রণা আসা) তো স্পষ্ট ঈমান (এর আলামত)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫৭; সুনানে আবূ দাউদ,হাদীস নং ৫১১৩)
তা ছাড়া যে ঘরে সম্পদ থাকে চোর তো সেখানেই চুরি করে। কাজেই ঈমান থাকলে শয়তান হামলা করবেই। তাই আপনার অন্তরে ওয়াসওয়াসা আসাটাই আপনার ঈমানের আলামত। আপনি এতে পেরেশান হবেন না।
আর আপনার অন্তরে যেন কুমন্ত্রণা না আসে আপনি এতে সক্ষম হবে না। এটা আপনার এখতিয়ারের বাইরে। তবে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) এলে আপনার করণীয় হল আপনি ওয়াসওয়াসার ঘোড়াকে সামনে চালাবেন না বরং উক্ত চিন্তাকে সেখানেই শেষ করে দিবেন এবং آمَنْتُ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أعُوذُ باللَّهِ مِنَ الشَّيْطانِ الرَّجِيمِ পড়বেন। এতে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। উক্ত কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসায় কখনও ডুব দিবেন না বা মত্ত হবেন না।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ مَنْ خَلَقَ كَذَا مَنْ خَلَقَ كَذَا حَتَّى يَقُولَ مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ
অর্থঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমাদের কারো নিকট শয়তান এসে বলে অমুক কে সৃষ্টি করেছে? অমুক কে সৃষ্টি করেছে ?এমনকি (এক পর্যায়ে) বলে তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে ? কেউ যখন এ পর্যায়ে পৌছায় তখন সে যেন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চায় এবং উক্ত চিন্তা সেখানেই শেষ করে দেয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬২)
অন্য একটি রেওয়ায়েতে রয়েছে –
فَإِذَا وَجَدَ ذَلِكَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقْرَأْ آمَنْتُ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ فَإِنَّ ذَلِكَ يُذْهِبُ عَنْهُ
অর্থঃ তোমাদের কেউ এমনটি (কুমন্ত্রণা) অনুভব করলে সে যেন آمَنْتُ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ (আমি আল্লাহ এবং তার রাসূল সমূহের উপর ঈমান আনলাম) পড়ে। এটা তার ওয়াসওয়াসা দূর করে দিবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬০; মুসনাদে আহমাদ , হাদীস নং ২৬২০৩)
২। না, অনিচ্ছাকৃত আসলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। তবে আপনি সাথে সাথে খেয়ালকে নামাযের দিকে ফিরিয়ে নিবেন। ঐ চিন্তায় মত্ত থাকলে নামায যে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
৩। নিম্নোক্ত লিঙ্কে আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন ইংশাআল্লাহ-
http://muftihusain.com/ask-me-details/?poId=2610