প্রশ্ন : আসলামু আলাইকুম আমার এক বন্ধু ব্যাংকার। সে হজ্জে যেতে চায়। তাঁকে কেউ বলেছে: তোমার ব্যঙ্কের বেতনের টাকা অবৈধ, কারন ব্যাংক সুদের টাকা থেকে বেতন দেয়া হয়। বন্ধু হজ্জ করতে চাচ্ছেন আগামী বছর। প্রশ্ন ১। এই ব্যাংকার বন্ধুর উপর কি হজ্জ ফরজ হয়েছে? ২। হজ্জ ফরজ হলে, সে তার বেতনের (অবৈধ?) টাকা দিয়ে হজ্জ করতে পারবে কি? ৩। যদি না পারে, তাহলে সে কিভাবে হজ্জের টাকা পরিশোধ করবে? উল্লেখ্য আমি শুনেছি, এই ব্যক্তি কোন একজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে হজ্জে যাবেন, পরে এসে ধার পরিশোধ করবেন। যদি তাই হয়, আমার প্রশ্ন: বেতনের টাকা (যা কিনা অবৈধ) দিয়ে কর্জ পরিশোধ করা যাবে কি? ৪। আমার বন্ধু তার কোন হিন্দু কলিগ বা কোন অমুসলিম থেকে টাকা ধার করে হজ্জে যেতে পারবে কি? ৫। অমুসলিম বা কোন সুদখোর বা ঘুষখোর থেকে টাকা ধার করা জায়েয আছে কিনা? এবং জায়েয থাকলে তা হজ্জের মত কোন নেক কাজে ব্যয় করা যাবে কিনা? ৬। যদি জায়েজ না থাকে এবং কোন ব্যক্তি আর কোন উপায় বা সুযোগ খুজে না পায় সেক্ষেত্রে উক্ত অমুসলিম বা অবৈধ উপার্জনকারিদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারবে কিনা? বিষয় গুলি জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। শুধু এই বেতন ব্যতীত অন্য কোন আয় বা সম্পদ না থাকলে হজ ফরজ হয়নি। কেননা প্রচলিত ব্যাংকে চাকরি করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে যুদ্ধ করার নামান্তর। এমন ব্যক্তির জন্য কর্তব্য হল হন্যে হয়ে অন্য কোন হালাল রুজির তালাশ করা। যদি তার চলার জন্য এই ব্যাংকের আয় ব্যতীত অন্য কোন হালাল আয় থেকে থাকে তবে তার এখনি চাকরি ছেড়ে দেওয়া কর্তব্য। আর এই হারাম আয় ব্যতীত অন্য কোন উপায় না থাকলে হালাল রুজি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যতটুকু না হলে নয় ততটুকু ব্যাংকের বেতন থেকে খরচ করা বৈধ। বাকিটুকু সদকাহ করা জরুরী।
আর ব্যাংকের বেতন ব্যতীত তার অন্য হালাল কোন সম্পদ থেকে থাকলে এবং তা কমপক্ষে হজের খরচের সমপরিমাণ হলে তার উপর হজ ফরজ হবে।
২। না, পারবে না।
৩। তার কর্তব্য হল, যখন কোন হালাল সম্পদের কারণে তার উপর হজ ফরজ হবে তখনি তিনি হজ করবেন। কেননা হজ ইসলামের অন্যতম একটি রোকন। আর কবূল হজের বিনিময় কেবন জান্নাত। তাই ইসলামের এত বড় একটি স্তম্ভ হারাম টাকা দ্বারা আদায় করা সমীচীন নয়। তাছাড়া এটা করেই বা লাভ কি? আল্লাহ তাআলা তো হারাম জিনিস কবূল করেন না।
আর অন্য কারো নিকট থেকে ঋণ নিলেও তা পরবর্তীতে হারাম মাল থেকে পরিশোধ করা জায়েয নয়।
৪। বেতনের হারাম মাল থেকে তা পরিশোধ করলে এমনটি করার দরকার নেই। আল্লাহ তাআলা তাকে যেদিন হালাল মালের অধিকারী বানাবেন সেদিনই যাবেন।
৫। মুসলিম হোক বা অমুসলিম কারো অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি মাল হারাম হলে তার থেকে টাকা ধার নেওয়া জায়েয নয়। তবে যদি জানা যায় যেটা দিচ্ছেন সেটা হালাল থেকে সেক্ষেত্রে জায়েয হবে।
আর নেওয়া জায়েয হলে তা হজেও ব্যয় করা যাবে।
৬। অবৈধ উপার্জনকারীর নিকট থেকে ধার নেওয়া যাবে না। মাল হালাল হলে মুসলিম হোক বা অমুসলিম উভয়ের নিকট থেকে নেওয়া যাবে।
সূত্রসমূহঃ সূরা বাকারাহ, আয়াত নং ২৭৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৬; আল বাহরুর রায়েক ৫/৩৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ১১/১৯৯ (শামেলা); ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; কাযীখান ৩/৪০০ রদ্দুল মুহতার ৫/৯৮; মাজমাউল আনহুর ২/৫৪৮