প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমার খুবই আকাঙ্খা যে, আমি কুরআন শরীফ হিফ্জ করবো। কিন্তু পরিবারের ভার নেওয়ার পরে স্মৃতিশক্তি খুবই বাজে হয়ে গেছে। যেমন: সুরা ফজর মুখস্ত করতে প্রায় এক মাসের মত সময় লেগেছে তাও আবার চিল্লায় থাকায় অবস্থায়। আমি পুরোই আক্ষেপবোধ করছি ছোট ছোট ছেলেরা যে সূরা একদিনেই মুখস্ত করে! আর আমি তা করি ১ মাসে। হুজুরের কাছে আমার নিবেদন যে, হুজুর যদি মেহেরবানী করে কিছু আমল/নসীহত বলে দিতেন, যাতে করে আমি আমার রবের কালাম মুখস্ত করতে পারি। সবশেষে হুজুরের দোয়া কামনা করছি। (আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক)
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য একটি আমল বাতলে দিয়েছেন। আপনি সে অনুযায়ী আমল করতে পারেন। নিম্নে হাদীসটি দেওয়া হল-
“হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হযরত আলী (রাযিঃ) আসলেন এবং আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার প্রতি আমার পিতামাতা কুরবান হোক, কুরআন পাক আমার সিনা হতে বের হয়ে যায়, যা মুখস্থ করি তা-ই ভুলে যাই। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাকে এমন নিয়ম বাতাইয়া দিব যা দ্বারা তুমি নিজেও উপকৃত হবে আর যাকে শিখাবে সেও উপকৃত হবে। আর যা কিছু তুমি শিখবে তা ভুলবে না। হযরত আলী (রাযিঃ) জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন জুমুআর রাত্র (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্র) আসবে তখন সম্ভব হলে রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে উঠবে এবং এটা খুবই উত্তম। এই সময় ফেরেশতারা নাযিল হয়। এই সময়ে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়, এই সময়ের অপেক্ষায়ই হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আপন ছেলেদিগকে বলেছিলেন, “অচিরেই আমি তোমাদের জন্য আপন রবের নিকট এস্তেগফার করব”। অর্থাৎ জুমআর রাত্রে। যদি ঐ সময় জাগ্রত হওয়া সম্ভব না হয় তবে অর্ধ রাত্রে আর যদি এটাও সম্ভব না হয়, তবে শুরু রাত্রেই দাঁড়িয়ে চার রাকাআত নফল নামায এই নিয়মে পড়বে-
প্রথম রাকাআতে সূরায়ে ফাতেহা পাঠ করার পর সূরায়ে ইয়াসীন পড়বে, দ্বিতীয় রাকাআতে সূরায়ে ফাতেহার পর সূরায়ে দুখান পড়বে, তৃতীয় রাকাআতে সূরায়ে ফাতেহার পর সূরায়ে আলিফ লাম মীম সিজদাহ পড়বে এবং চতুর্থ রাকাআতে সূরায়ে ফাতেহার পর সূরায়ে মূলক পড়বে। আত্তাহিয়্যাতু শেষ করার পর (নামায শেষ করে) আল্লাহ তাআলার খুব প্রশংসা করবে, তারপর আমার প্রতি উত্তমরূপে দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর সমস্ত নবীর প্রতি দুরূদ পাঠ করবে। এবং সমস্ত মুমিন মুমিনাত ও তোমার ঐ সকল ভাইদের জন্য দুআ করবে যারা পূর্বে ঈমানের সাথে চলে গিয়েছে। অতঃপর পরিশেষে এই দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ ارْحَمْنِى بِتَرْكِ الْمَعَاصِى أَبَداً مَا أَبْقَيْتَنِى وَارْحَمْنِى أَنْ أَتَكَلَّفَ مَا لاَ يَعْنِينِى وَارْزُقْنِى حُسْنَ النَّظَرِ فِيمَا يُرْضِيكَ عَنِّى اللَّهُمَّ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ وَالْعِزَّةِ الَّتِى لاَ تُرَامُ أَسْأَلُكَ يَا اللَّهُ يَا رَحْمَنُ بِجَلاَلِكَ وَنُورِ وَجْهِكَ أَنْ تُلْزِمَ قَلْبِى حِفْظَ كِتَابِكَ كَمَا عَلَّمْتَنِى وَارْزُقْنِى أَنْ أَتْلُوَهُ عَلَى النَّحْوِ الَّذِى يُرْضِيكَ عَنِّى اللَّهُمَّ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ وَالْعِزَّةِ الَّتِى لاَ تُرَامُ أَسْأَلُكَ يَا اللَّهُ يَا رَحْمَنُ بِجَلاَلِكَ وَنُورِ وَجْهِكَ أَنْ تُنَوِّرَ بِكِتَابِكَ بَصَرِى وَأَنْ تُطْلِقَ بِهِ لِسَانِى وَأَنْ تُفَرِّجَ بِهِ عَنْ قَلْبِى وَأَنْ تَشْرَحَ بِهِ صَدْرِى وَأَنْ تَغْسِلَ بِهِ بَدَنِى لأَنَّهُ لاَ يُعِينُنِى عَلَى الْحَقِّ غَيْرُكَ وَلاَ يُؤْتِيهِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلِى الْعَظِيمِ
অর্থঃ হে সমগ্র জগতের মাবুদ! আপনি আমার প্রতি রহম করুন যেন যতদিন জীবিত থাকি আমি গোনাহ হতে বেঁচে থাকতে পারি। আমার প্রতি আরও রহম করুন যেন আমি অনর্থক বিষয়ে কষ্ট না করি। আর আপনার সন্তুষ্টিজনক বিষয়ে সুদৃষ্টি নসীব করুন। হে আল্লাহ! নমুনাবিহীন আসমান-যমীনের সৃষ্টিকর্তা! মহত্বের এবং আপনর সত্তার নূরের ওসীলায় আপনার কাছে দরখাস্ত করছি যে, যেভাবে আপনি আপনার কালামে পাক আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন সেইভাবে তার স্মরণও আমার অন্তরে গেথে দিন। আর আপনি আমাকে তা এমনিভাবে পড়ার তৌফিক দান করুন যেমনিভাবে পড়লে আপনি খুশী হবেন। হে আল্লাহ! নমুনাবিহীন আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা, মহত্ত্ব ও মহিমার মালিক, এমন ইজ্জত বা প্রতাপের মালিক যা হাসিল করার ইচ্ছা করাও অসম্ভব। হে আল্লাহ! হে রাহমান! আপনার মহত্তের এবং আপনার সত্তার নূরের ওসীলায় আপনার নিকট চাচ্ছি যে, আপন কিতাবের নূরের দ্বারা আমার দৃষ্টিকে আলোকিত করে দিন এবং আমার যবানকে তার উপর চলমান করে দিন এবং তার বরকতে আমার অন্তরের সঙ্কীর্ণতাকে দূর করে দিন। আমার বক্ষকে খুলে দিন, আমার শরীর হতে গোহাহের ময়লা ধৌত করে দিন। হক বিষয়ে আপনি ব্যতীত আর কেউই সাহায্যকারী নাই, আর আপনি ছাড়া আমার এই আশা অন্য কেউ পূর্ণ করতে পারিবে না। মহান আল্লাহ তাআলার মমদ ও সাহায্য ব্যতীত গোনাহ হইতে বাঁচার এবং এবাদত করার শক্তি লাভ হতে পারে না।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আলী, তুমি তিন জুমুআ অথবা পাঁচ জুমুআ অথবা সাত জুমুআ পর্যন্ত এই আমল করবে। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই তোমার দুআ কবূল হবে। ঐ সত্তার কসম যিনি আমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন কোন মুমিনের দুআই বৃথা যাবে না।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, পাঁচ জুমআ বা সাত জুমআ অতিবাহিত হওয়ার পরই হযরত আলী (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইতিপূর্বে আমি প্রায় চার আয়াত করে পড়তাম তাও মুখস্থ থাকত না। এখন আমি প্রায় চল্লিশ আয়াত করে পড়ি আর তা এমনভাবে মুখস্থ হয়ে যায় যেন কুরআন শরীফ আমার সম্মুখে খুলে রাখা হয়েছে। পূর্বে আমি হাদীস শুনতাম, আবার যখন তা পুনরায় বলতাম ভুলে যেতাম। কিন্তু এখন বহু হাদীস শোনার পরও যখন অন্যের কাছে বর্ণনা করি তখন একটি অক্ষরও ছুটে না”।–সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৫৭০