লেনদেন ও ব্যবসা বনিজ্যের সুন্নাত সমূহ
১। নিয়তকে সহীহ করা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যবসা বানিজ্য করা। শুধুমাত্র মাল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ব্যবসা না করা। (সূরা জুমুআ, আয়াত নং ১০; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১২০৩০)
২। হালাল মাল অন্বেষণ করা। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত নং ১৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৯৩)
৩। হারাম ও সন্দেহজনক কারবার থেকে বেঁচে থাকা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫২; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৫১৮)
৪। যে ব্যবসার মধ্যে আল্লাহ তাআলা কাউকে রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন, উক্ত ব্যবসায় কোন লোকসান বা সমস্যা না হলে তা পরিবর্তন না করা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৬০৯২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৪৮)
৫। বেচা-কেনা এবং ঋনের তাগাদায় অপরকে সময়, সুযোগ ও ছাড়া দেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২০৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৮)
৬। ক্রয়-বিক্রয়ে অযথা ও মিথ্যা কসম থেকে বিরত থাকা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২০৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২১০)
৭। আমানতদ্বারী ও সততার সাথে ব্যবসা করা। মিথ্যা কথা না বলা। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১২০৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২১৪৩)
৮। ওজন দ্বারা পরিমাপিত পন্য যখন সমজাতীয় পন্যের বিনিময়ে লেনদেন করা হয় তখন বরাবর করে বেচা-কেনা করা। অনুরূপভাবে সোনা-রূপা ও যে কোন দেশের মুদ্রা যখন তার সমজাতীয় জিনিসের বিনিময়ে লেনদেন করা হয় তখন বরাবর করে লেনদেন করা এবং উভয় পক্ষে নগদ হওয়া জরুরী। অন্যথায় এগুলো সব সূদী কারবার গন্য হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৪৭; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৫৮৩)
৯। ক্রয় বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের অপরের উপর সন্তুষ্টি ব্যতীত পৃথক না হওয়া। (সূরা নিসা, আয়াত নং ২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৪৬০)
১০। কাউকে টাকা ঋন দিয়ে তার কাছ থেকে জমি বন্ধক নিয়ে উক্ত জমির ফসল না খাওয়া অথবা অন্য কোনভাবে উপকৃত না হওয়া। কেননা এগুলো সবই সূদের অন্তর্ভক্ত। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৮১৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৪৩২)
১১। যাবতীয় সূদী কারবার থেকে বিরত থাকা। এটা ফরজ। (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ২৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৭)
১২। কোন পন্য ক্রয়ের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও তার মুল্য বৃদ্ধির জন্য দামাদামী না করা। এটা হারাম। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৭২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৫২৫)
১৩। ক্রেতা-বিক্রেতার কোন পন্যের ব্যপারে কথাবার্তা ও দর কষাকষি চলতে থাকলে সেখানে কথাবার্তা না বলা, যতক্ষন না কোন একজনের অনীহা প্রকাশ পায়। এটা মাকরূহ। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২১৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭০৬)
১৪। কারো কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে কম মুল্যে মাল ক্রয় না করা। যেমন শহরের ব্যবসায়ীরা গ্রামের লোকদেরকে ঠকিয়ে কম মুল্যে মাল ক্রয় করে থাকে। এটা মাকরূহ। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৮৯৭; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৫১১)
১৫। জুমুআর প্রথম আযান হয়ে গেলে ক্রয়-বিক্রয় না করা। এটা মাকরূহ। (সূরা জুমুআহ, আয়াত নং ৯)
১৬। বিক্রিত পন্যে কোন দোষ ক্রটি দেখা না দিলে তা ফেরত নেওয়া সুন্নাত। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৪৬২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২১৯৯)
১৭। কোন পন্য নিজের আয়ত্তে (কবজায়) না এনে তা বিক্রি না করা। বরং নিজের কবজায় আসার পরে বিক্রি করা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৫০৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৬২৭)
১৮। বেচা-কেনার মধ্যে ধোঁকা না দেওয়া। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৫; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৪৫৪)
১৯। বেচা-কেনার মধ্যে এমন কোন শর্ত না করা যাতে ক্রেতা-বিক্রেতার কোন এক জনের বা উভয়ের কোন ফায়েদাহ আছে। অনুরূপভাবে একটি চুক্তির জন্য আরেকটি চুক্তিকে শর্ত হিসেবে জুড়ে না দেওয়া। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১২৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৩৭৮৩)
২০। পন্যে কোন দোষ ক্রটি থাকলে ক্রেতাকে তা অবহিত করে দেওয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২২৪৭)
২১। কোন পন্য বা খাদ্যশস্য এমন সময় মজুদ না করা যখন এই মজুদের কারনে বাজারে প্রভাব পড়ে বা তার দাম বেড়ে যায় অথবা জনসাধারণের কষ্ট হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২০৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৪৮৮০)
২২। ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বা ঋন পরিশোধের সময় প্রতিপক্ষকে পাওনা উত্তমভাবে (কিছুটা বেশি দিয়ে) বুঝিয়ে দেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৩৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৯২)
২৩। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পাওনা পরিশোধে টাল-মাটাল বা বিলম্ব না করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২২৮৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৮৫)
২৪। কাউকে কোন কিছু হাদিয়া দিলে তা ফেরত না নেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৫৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৫৯)
২৫। ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট ও ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখা হারাম। একান্ত প্রয়োজন হলে কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখবে। অনুরূপভাবে বীমা বা ইন্সুরেন্স করাও হারাম। কেননা তা সূদ ও জুয়ার সমন্বয়। (সূরা বাক্বারা, আয়াত নং ২৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৭)