প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমি আপনার ননদ ভাবীর দ্বন্দ প্রশ্নের উত্তরটি পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সর্বদাই আমি নিজে থেকে তাদের দুজনকে এই সংক্রান্ত অনেক হাদীস সাধ্যমত বলেছি, বুঝিয়েছি এবং ফাযায়েলে সাদাকাত এর দুনিয়া বিমুখী হাদীস গুলোও পড়ে শুনিয়েছি। কিন্তু গত কাল আমার স্ত্রী সহবাসের জরুরত হলে আমার স্ত্রীকে আমি আসতে বলি। জরুরত পূরা করার পর আমি কর্মস্থলে গেলে ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি যে, আমার স্ত্রী ও আমার বোন প্রচন্ড মারামারি ও হাতাহাতি বাজিয়ে দিয়েছে। এমনকি একজন অন্য জনের শরীর থেকে রক্ত পর্যন্ত বের করে ফেলেছে। আমার শশুর আমার বোনের নামে মামলা করতে চেয়েছিলেন। আমি পরে বুঝিয়ে তাকে ও আমার স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি না জানিয়ে আমার স্ত্রীকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলায় যেমন আমার বোন রাগ করেছে তেমন আমার মা-বাবাও এটা পছন্দ করেননি। এক্ষেত্রে আমর এখন করণীয় কি? আমি চাচ্ছি যে, বাড়ির এক পাশে আমার স্ত্রীকে দুটি রুম করে দিয়ে আলাদা করে দিতে। কিন্তু এতেও আমার মা-বাবা খুব একটা খুশি না। তাই বর্তমানে কোনটা করা বেশি উত্তম হবে?
উত্তর :
ওয়া আলাইকুমুস সালাম
উক্ত প্রশ্নটি মূলত একটি সম্পূরক প্রশ্ন। যা ভিন্ন একটি প্রশ্নোত্তর থেকে তৈরি হয়েছে। প্রথমে পাঠকদের সুবিধার্থে সেটি দেওয়া হল-
(প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমার বোন আমাদের বাড়িতে এসে এক থেকে দুই সপ্তাহ বেড়ায়। কিন্তু পূর্বে আমার বোন যতবার আমাদের বাড়িতে এসেছে ততবার-ই ঝগড়ার কারণে আমার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ আমার স্ত্রী ও আমার বোন কেউ কাউকে খুব একটা দেখতে পারে না। ঝগড়ায় কখনো আমার স্ত্রীর দোষ ছিলো আবার কখনো আমার বোনের। এ জন্য বর্তমানে নিয়ম হয়েছে যে, আমার বোন আসার কথা বললে আমার স্ত্রীকে আগেই বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। এতে আমার স্ত্রী মনক্ষুন্ন হয় এবং আমারও এতদিন স্ত্রীকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়, কখনো গুনাহ করার প্রতিও আগ্রহ জন্মে। উল্লেখ্য আমার স্ত্রী বাড়িতে অতিরিক্ত ঘর না থাকায় সেখানে গিয়ে জরুরত পূরন করা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আমার স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলে যেমন আমার বোন খুশি হয় ঠিক তেমনি ভাবে যাতে ঝগড়া না হয় এ জন্য আমার আব্বা আম্মাও খুব খুশি হন। বরং তারা আমাকে এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন। এখন আমার জন্য কি করা সঠিক এবং বেশি উত্তম হবে? অনুগ্রহ করে সঠিক পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনার খেদমকে কবুল করুন, আমীন।
উত্তর :
ওয়া আলাইকুমুস সালাম
স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া এটা তো বাস্তবে কোন সমাধান নয়। মূল গোঁড়া ঠিক হলে সবই ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে উভয়কে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা রাখতে হবে। তাদের উভয়কে আপনি পৃথকভাবে বুঝাবেন। ওপরকে কষ্ট দেওয়ার খারাবী সম্পর্কে তাদেরকে বুঝাবেন। আর বলবেন, যে আজ দুনিয়াতে (কোন অন্যায় না করা সত্ত্বেও) হারবে সে কাল কিয়ামতের দিন জিতবে ইংশাআল্লাহ। মানুষ যদি মানুষের সাথে এতটুকু না মিশতে পারে, মানুষের জন্য এতটুকু না করতে পারে, তার আখলাককে এতটুকু সংশোধন না করতে পারে তবে তো তার মধ্যে কোন মনুষ্যত্ব নেই। তাদেরকে নিম্নোক্ত হাদিসগুলো শুনাতে পারেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ
অর্থঃ আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন।–সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৫০১০
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِى رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا
অর্থঃ হযরত আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি সত্যের উপর থাকা সত্ত্বেও তর্ক করা ছেড়ে দিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের এক প্রান্তে বাড়ীর গ্যারান্টি দিচ্ছি।–সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৮০২
কাজেই এর উত্তম সমাধান হচ্ছে উভয়ের সংযত হওয়া। অন্তত একজন হলেও সমস্যা হবে না। তাই তাদেরকে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝাতে থাকুন এবং ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে বলুন।)
মূল উত্তরঃ যেহেতু আপনার বোন সপ্তাহ খানিক বেড়ায় আর এটা খুব একটা লম্বা সময়ও না তাই আপনি উক্ত সময়টা আপনার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার একটু কষ্ট হলেও সবর করবেন। এটাই বেশী উত্তম হবে। কেননা এ অবস্থায় আপনার পিতামাতা সন্তুষ্ট থাকবেন। ভবিষ্যতে তাদের অবর্তমানে আপনার উল্লেখিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। আর চাইলে এখনি আপনি উক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন। তবে প্রথমটি উত্তম।
আর যদি আপনি সবর করতে না পারেন এবং গুনাহে জড়ানোর আশংকা থাকে অথবা আপনার মাতাপিতার সাথেও আপনার স্ত্রীর দন্দ লেগে থাকে সেক্ষেত্রে তাকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করাই উত্তম হবে।