প্রশ্ন : প্রশ্ন ১। পেশাব করে পানি নিলেও লজ্জাস্থান এর ছিদ্রে ফোঁটা ফোঁটা পানির মত জমা হয়ে থাকে। তো আমি কি করে বুঝব যে পেশাব বন্ধ হয়ে গেছে? আর এটা পেশাব না পানির ফোঁটা? এখেত্রে আমার কি করনীয় একটু জানালে উপকৃত হব। এই সমস্যার কারনে আমি নামায নিয়েও দিধাদন্দে থাকি। লজ্জা পাই দেখে এই প্রশ্ন কাউকে সরাসরি করতে পারি না। প্রশ্ন ২। পেশাব করে পানি নিলেও কি টিস্যু ব্যবহার করতে হবে? যদি শুধু পানি ব্যবহার করি তাহলে যদি লজ্জাস্থান এর ছিদ্রে ফোঁটা ফোঁটা পানির মত জমা হওয়া দেখি তখন কি করব? প্রশ্ন ৩। গোসল এর সঠিক নিয়ম কি? আর গোসল এর সময় কি ওযুর নিয়ত করে গোসল করতে হয়?
উত্তর :১। পেশাব করার পর পেশাবের কতরা বন্ধ হওয়া নিশ্চিত করতে (পুরুষদের) ইসতেবরা করতে হয়। এটা কিছুক্ষণ হাঁটার দ্বারা হতে পারে অথবা পা উঠানামা করার দ্বারা হতে পারে অথবা উঠাবসার দ্বারা হতে পারে অথবা অন্য কোন উপায়ে। মোটকথা পেশাবের কতরা বন্ধ হওয়াই উদ্দেশ্য। চাই তা যেভাবেই হোক না কেন। আর এটা বুঝা এমন কোন কঠিন বিষয় নয়। প্রত্যেকেই নিজের অনুভুতি দ্বারা তা উপলব্ধি করতে পারে। যখনি মনে এই ইয়াকীন হাসিল হবে যে, পেশাবের কতরা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখনি ইসতেবরা বন্ধ করবে। তবে কখনো কিছু বের হওয়ার প্রবল ধারনা হলে আড়ালে হাত দিয়ে দেখে নিবেন। যদি কিছু পাওয়া যায় তবে পরবর্তীতে এর চেয়ে বেশিক্ষণ ইসতেবরা করবেন এবং নিশ্চিত হবেন। আর কোন কিছু পাওয়া না গেলে ভবিষ্যতে পূর্বোক্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে একে কোন পাত্তা দিবেন না। সেক্ষেত্রে এটা কেবল আপনার ওয়াসওয়াসা হিসেবে গণ্য হবে।
আর টিসু ব্যবহার করলে লজ্জাস্থানের ছিদ্রে কোন কিছু অবশিষ্ট না থাকার কথা। কেননা টিসু তা চুষে নেয়। আর থাকলেও পানি ব্যবহারের দ্বারা তা দূর হয়ে যায়। কাজেই পানি ব্যবহারের পর এটা নিয়ে আপনার পেরেশান হবার কোন কারন নেই।–আল বাহরুর রায়েক ১/৫৯; গুনইয়াতুল মুসতামলী, পৃষ্ঠা ১২৭
২। পেশাবের পর ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নত। টিসু ব্যবহারের দ্বারাও এ সুন্নত আদায় হয়ে যায়। তাছাড়া এগুলো ব্যবহার না করলে ইসতেবরা (অর্থাৎ পেশাবের কতরা বন্ধ করার কোন পদ্ধতি অবলম্বন) করার সময় পেশাবের ছিটা শরীর বা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকা থাকে। বরং লেগেই যায়।
৩। নিম্নে গোসলের ফরজ ও সুন্নাত দেওয়া হল-
গোসলের ফরজ তিনটি
১। উত্তমরুপে একবার কুলি করা।(সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬)
২। নাকের নরম স্থান পর্যন্ত একবার পানি পৌছান। (সূরা মায়িদাহ,আয়াত নং ৬)
৩। সমস্ত শরীরে ভালভাবে একবার পানি পৌছান। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৬; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৯,রদ্দুল মুহতার ১/৫১)
বিঃ দ্রঃ শরীরের কোথাও সামান্য পরিমান (যদিও তা এক চুল পরিমান হয়) শুকনো থাকলে গোসল সহীহ হবে না। মহিলাদের চুল খোলা থাকলে সমস্ত চুল পানি দ্বারা ভেজাতে হবে । আর যদি চুল বেনী বা খোপা আকারে বাধা থাকে তবে উপরে পানি ঢেলে দিবে এবং গোড়ায় পানি পৌছিয়ে দিবে। পূরো চুল ধৌত করা ফরজ নয়। (সুনানে তিরমিজী,হাদীস নং ১০৫)
গোসলের সুন্নাত সমূহ
১। ফরজ গোসলের পূর্বে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এটা জরুরী অন্যথায় গোসলের পর বীর্য বের হলে পূনরায়া গোসল করা ফরজ। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ১০২০)
২। গোসলখানা নোংরা বা তার মধ্যে পায়খানা থাকলে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫৪)
৩। শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া (যদি ভিতরে পায়খানা না থাকে)। (সুনানে নাসায়ী,হাদীস নং ৭৮)
৪। উভয় হাত কব্জিসহ তিনবার ধৌত করা। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং ৭৪৬)
৫। শরীরে বা কাপড়ের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে গোসলের পূর্বে তা তিনবার ধুয়ে নেওয়া। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং ২৪৯)
৬। নাপাকী না লেগে থাকলেও পেশাব পায়খানার স্থান বাম হাত দিয়ে ধৌত করে তা ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া । (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৮)
৭। নামাযের উযূর ন্যায় (পরিপূর্ন) উযূ করা। যদি গোসলের স্থানে পানি জমে থাকে তাহলে গোসল শেষে অন্যত্র সরে গিয়ে পা ধুয়ে নিবে। উযূর মাঝে ও শেষে যে দুআ গুলো পড়া সুন্নাত এখানেও সেগুলো পড়বে। তবে গোসলখানা নোংরা হলে বা সাথে টয়লেট থাকলে গোসল শেষে বাইরে বের হয়ে পড়বে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮,২৪৯)
৮। প্রথমে হাতে পানি নিয়ে মাথার চুলের গোড়ায় ডলাডলি করে পানি পৌছাবে। অতঃপর ডান কাঁধে পানি ঢালবে । (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮,২৫৬)
৯। অতপর ডান কাঁধে পানি ঢালা।(সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৬৭)
১০। এরপর বাম কাঁধে পানি ঢালা।(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৫৫৪৫)
১১। অতপর অবশিষ্ট শরীর ভিজানো। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ২৭৪)
১২। সমস্ত শরীরে উত্তমরূপে তিনবার পানি পৌছান যাতে একটি পশমের গোড়াও শুষ্ক না থাকে। (সুনানে আবূ দাউদ,হাদীস নং ২৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৫৯৯)
বিঃ দ্রঃ নদী-পুকুর,খাল-বিল ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষন ডুব দিয়ে থাকলেই পূরো শরীরে তিনবার পানি ঢালার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৪৯)
১৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে ডলে ডলে ধৌত করা। (সুনানে আবূ দাউদ,হাদীস নং ২৪৯; মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং ৭৯৪)
আর গোসলের পূর্বে উযূ করা সুন্নত। কাজেই উযূর পূর্বে উযূর নিয়ত করবে এবং গোসলের পূর্বে গোসলের নিয়ত করবে।