প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুহতারাম হযরত, গত দিন আমি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ফ্রিলেন্সার (অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করেন) তার মাধ্যমে ইন্টারনেটে আয় করার একটি সাইট সম্পর্কে জানতে পারলাম। সাইটটিতে রেজিষ্ট্রেশন করতে ও কাজ শিখতে প্রায় ২০০০০/- টাকা লাগবে। কাজটি তিনি আমাকে বেশ অনেক সময় দেখিয়েছেন ও বুঝিয়েছেন। তাতে মনে হয়েছে আমি পারবো। এতে করে অফিসের কাজের ফাকে, ছুটির দিনে কাজ করার মাধ্যমে মাসে মোটামুটি ৫-৭ হাজার টাকা সহজেই আয় করতে পারবো বলে আশা করি। ইংশাআল্লাহ। এখন কাজটি করা জায়েয হবে কিনা সেটা জানাই আমার প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য। কাজটি সম্পর্কে এ জন্য আপনাকে ধারণা দিতে হবে। কাজটি হচ্ছে- বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক ইত্যাদি বড় বড় প্রতিষ্ঠান যারা কোটি কোটি টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে তারা এই বিনিয়োগের আগে আমাদের কাছে পরামর্শ চায় যে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার মধ্যে শেয়ার বাজারের মূল্য কমবে নাকি বাড়বে। আমরা বাজারের অবস্থা, বিনিয়োগ শেয়ারের পরিমান, মূল্য, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির আলোকে তাদেরকে পরামর্শ দিই যে, আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা মধ্যে শেয়ার বাজার কমবে অথবা বাড়বে। এতে করে যদি কমার সম্ভবনা থাকে তবে তারা তাদের বিনিয়োগকৃত টাকা বিক্রয়ের মাধ্যমে উঠিয়ে নেয় যাতে রেট কমার দ্বারা লস না হয়। আর যদি সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে বাড়বে তবে তারা নতুন করে ১ কোটি বা তার কম বেশি টাকা বিনিয়োগ করে লাভের আশায়। সারা বিশ্ব থেকে এখানে কাজ করা লোকের সংখ্যা প্রায় 17000 (সতের হাজার)। তারা দেখে যে কতজন লোক শেয়ার বাড়ার কথা বলেছে আর কত জন লোক কমার কথা বলেছে। যখন বাড়ার দিকে ভোট বেশি পড়ে তখন তারা বিনিয়োগ করে আর যখন কমার দিকে ভোট বেশি পড়ে তখন তারা বিনিয়োগ করা শেয়ার বিক্রয় করে ফেলে। অর্থাৎ বিষয়টা অনেকটা পরামর্শ দিয়ে টাকা উপার্জনের মত। আর আমরা সিদ্ধান্ত দেয়ার সময় তাদের কে একটি রেট দেই, যেমন এক ডলার বা দুই ডলার ইত্যাদি (এছাড়া যাদের আত্মবিশ্বাস বেশি তারা 5 ডলার বা 10 ডলারও রেট দিয়ে থাকে) অর্থাৎ আমার কথা সঠিক হলে আমাকে এক ডলার বা দুই ডলার দিতে হবে। যদি আমার কথা সঠিক হয় তবে তারা আমাকে এই ডলার দিবে। আর যদি ভুল হয় তবে যেহেতু আমার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা বিনিয়োগ করে লস খেয়েছে তাই তারা আমার থেকে আমার রেট দেয়া এক বা দুই ডলার কেটে নিবে। এখানে আমাদের সিকিউরিটি হিসেবে একাউন্টে সবসময় 300 ডলার থাকতে হয়। তাদের মোট ক্লায়েন্ট বা কর্মী সংখ্যা বতমানে প্রায় 17000/- (সতের হাজার)। যাদের মধ্যে প্রতি দিন প্রায় 14-15 হাজার জন একটিভ বা কর্মরত থাকেন। যাদেরকে বেতন দিয়ে রাখলে তাদের অনেক টাকা বেতন দিতে হতো। তাই তারা সহজে অনেক লোকের সিদ্ধান্ত পাচ্ছে এবং সেই অনুপাতে যে লাভ হচ্ছে তার থেকে সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দাতাকে কিছু লাভ দিচ্ছে। আর এ সিদ্ধান্ত তারা প্রতি দশ মিনিট পর পর অথবা আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা ইত্যাদি পর পর চায়। যদি কেউ একাউন্ট খুলে সিদ্ধান্ত না দেয় তবে সে এই ব্যাপারে স্বাধীন। তাই যদি আমি অবসরে আমার একাউন্টে ঢুকলাম। তখন যদি তারা আমার কাছে সিদ্ধান্ত চায় তবে আমি তথ্য- উপাত্ত, শেয়ার বাজারের অবস্থা-পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতার উপর বিবেচনা করে যদি তাদেরকে সিদ্ধান্ত দিলাম যে হ্যাঁ আধা ঘন্টার মধ্যে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। রেট 1 ডলার। এর পর একাউন্ট অফ করে রাখি বা আর কোন কাজ না করি কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত সঠিক হয় তবে আমার একাউন্টে মূল 300 ডলারের সাথে আরো 1 ডলার এসে যোগ হয়ে থাকবে। এভাবে যদি সারাদিনে 5 টা সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে দিতে পারি তবে ১ ডলার করে হলেও দিন শেষে 5 ডলার অথাৎ 400 টাকার মত উপার্জন হলো। আর একটি সুবিধা আছে সেটা হচ্ছে যদি আমি সিদ্ধান্ত দেয়ার পর তা বাতিল করতে চাই তবে তা করারও সুযোগ আছে। অর্থাৎ যদি এমন হয় আমি সিদ্ধান্ত দিলাম যে, শেয়ারের মূল্য 10 মিনিটের মধ্যে বাড়বে কিন্তু পরে আবার হিসাব করে দেখলাম যে না বাড়বে না তখন 10 মিনিট পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি আমি আমার সিদ্ধান্ত বাতিল করার বাটনে ক্লিক করি তবে তারা আর আমার সিদ্ধান্ত ধার্য করবে না। তখন আমার পক্ষ থেকে অন্য কেউ সিদ্ধান্ত দিবে আর আমার সিদ্ধান্তটি বাতিল হবে এবং আমাকে লাভও দিবে না আর আমার থেকে কোন টাকা কেটেও নিবে না। সাপ্তাহে ৫ দিন কাজটি করা যায় আর দুইদিন সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। গতকাল যা বুঝলাম তাতে মোটামুটি বিষয়টি এরকম। তাই কাজটি কি করা যাবে? অনুগ্রহ করে জানাবেন। আর আগামী শুক্রবার আবার যাবো সারাদিনের জন্য ভালো করে কাজটি দেখার জন্য ও প্রাকটিক্যলি কিছুক্ষন করার জন্য। জাযাকাল্লাহু খাইরন ফিদ দারাইন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
কোম্পানীর প্রডাক্ট বা কারবার বৈধ হলেও বর্তমান শেয়ার বাজার শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসার বিপরীতে এর মধ্যে জুয়ার দিকটিই অগ্রগণ্য। শেয়ার বেচাকেনা মূলত ওলামায়ে কেরাম শর্তসাপেক্ষে জায়েয বলেছিলেন যেহেতু এটা আনুপাতিক হারে কোম্পানীর নির্দিষ্ট অংশের মালিকানার প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বর্তমানে এই প্রতিনিধিত্ব এতটাই ক্ষীণ যে, মূল বেচাকেনার সাথে এর সম্পর্ক অনেক অনেক দূরের। যা স্টক এক্সচেঞ্জ এ একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে এবং এদেশের মানুষ সর্বস্ব হারিয়েই চলছে। যদি সম্পর্ক দূরের না হত তবে যে কোম্পানী এখনো অস্তিত্ব লাভ করেনি বা যে কোম্পানীর হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে বা যে কোম্পানী বছরের পর বছর শেয়ার হোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দিতে পারে না শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দেয় তার শেয়ারের মূল্য হু হু করে ফেস ভেলুর বিশ/ত্রিশ গুন হতে পারতো না। আসলে বর্তমান শেয়ার বাজার মূলত কিছু সিন্ডিকেটর ও জুয়াড়ির হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাছাড়া শেয়ার ক্রয় করলে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সূদের সাথে জড়িয়ে যেতেই হয়। তাই সকল মুমিনের জন্য শেয়ার বাজারে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
আর আপনার প্রশ্নটি উক্ত শেয়ার বাজারকে নিয়েই। শেয়ার বাজার সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান প্রসঙ্গে। একতো শেয়ার বাজার পরিপূর্ণ শরীয়ত সম্মত ধরে নেওয়া হলেও প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে কারবার করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। এটা তো সম্পূর্ণ জুয়া। এছাড়াও উক্ত কারবার নাজায়েয হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি সহ একাধিক কারন বিদ্যমান। আর যখন শেয়ার বাজারই প্রশ্নবিদ্ধ তখন তা সংক্রান্ত অবৈধ কারবার আরো ভালোভাবেই নাজায়েয হবে।- সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৯০; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৯৬২; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৬৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৭৬; সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং ২০৭৩৩