প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় হুজুর আমি একটি এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছি। কলেজটি ওয়াকফ সম্পত্তির উপর তৈরি। কলেজটিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ও নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো অধ্যক্ষ নাই, এক লোক কখনো অধ্যক্ষ, কখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কখনো উপাধ্যক্ষ, ধরা পড়লে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি ইত্যাদি বলে। তবে যতক্ষণ ধরা না খায় ততক্ষণ বিভিন্ন জনের কাছে নিজেকে অধ্যক্ষ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা অবৈধভাবে ভোগ করে আসছে। তার বিষয়ে ডিসি অফিসে অভিযোগ করলে তার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিয়োগ নাই প্রমানিত হয় ডিসি অফিসের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করার পর, মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও একইভাবে প্রমানিত হয়। কিন্তু যে কোনভাবে তাদের ম্যানেজ করে বিষয়টি বারবার ধামাচাপা দেয়া হয়। কলেজের শুরুতে তার ভাইকে যার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিন্তু নিয়োগ নাই, যিনি অন্য পেশায় নিয়োজিত তাকে অধ্যক্ষ দেখিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়। কলেজ পরিচালনা কমিটিতে তার মা, ফুফাতো ভাই, তার বাবার টাইপ-শর্টহ্যান্ড ছাত্র ইত্যাদি দিয়ে গঠন করে ২০১০ সাল পর্যন্ত। ৯ জন দিয়ে ১০ জনের কমিটি গঠন করে যেখানে তার ২ টা স্বাক্ষর থাকে একটা বাংলায় আরেকটা ইংরেজিতে, একটা অধ্যক্ষ পরিচয়ে, আরেকটা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য পরিচয়ে। নিজের পকেট থেকে কোনদিন একটা টাকা দিয়ে সরকারি জায়গা অবস্থিত সরকারি টাকায় নির্মিত কলেজে দীর্ঘদিন স্ব-পরিবারে বসবাস করে কলেজের আয়ের সম্পূর্ণ টাকা প্রতিবছর আত্মসাৎ করে দাতা সদস্য ও অধ্যক্ষ সাজে। অনিয়ম করার সুবিধার্থে কোনো পুরুষ শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ পাবে এই ভয়ে অধ্যক্ষ, হিসাবরক্ষকসহ ১০ টি পদ ২০০০ সাল থেকে খালি রেখে নিয়োগ দানে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। আমাদের বেতনভাতার কলেজ অংশ বাবদ পাওনা এক কানাকড়িও না দিয়ে উল্টো প্রতিমাসে এমপিও বিল পাশ করানোর নাম করে আমাদের কাছ থেকে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেয়। আমি ছাড়া বাকী চারজন মহিলা প্রভাষক ও ডিমনেস্টার বর্তমানে এমপিওভুক্ত আছে, ভুয়া অধ্যক্ষের নিয়োগ ও এমপিও নাই। ২০১০ সাল হতে শুধু এডহক কমিটি করে করে সময় পার করছে এই ভুয়া অধ্যক্ষ, আমাদের চাকুরীর বয়স ৮ বছর পুর্ণ হয়ে বর্তমানে ১৩ বছরে চলমান, আমিসহ সকলেই ন্যায্য পাওনা টাইম স্কেল হতে বঞ্চিত, কারণ ভুয়া অধ্যক্ষের মাধ্যমেই টাইম স্কেলের জন্য আবেদন করতে হবে, আর ভুয়া অধ্যক্ষ কমিটি নাই কমিটি নাই করে করে আমাদের টাইমস্কেলের আবেদন করতে দিচ্ছে না। ভুয়া অধ্যক্ষের কারণে প্রতিমাসে সরকারি খাতে প্রাপ্য প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা কম পাচ্ছি দীর্ঘ ৫ বছর যাবত। কমিটি নাই অজুহাতে জানুয়ারী ২০১৭ ইং হতে বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাচ্ছি না। কলেজ অংশতো কখনো পাই নাই। ভুয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সম্প্রতি দাড়ি রেখেছে। ভুয়া অনুষ্ঠান করে সেখানে নিজে মোনাজাত করায় তার বাবার জন্য দোয়া চায়, আমি নিরব থাকি। সে ইচ্ছা করে স্ব-জ্ঞানে ভুয়া পদ ধারণ করে অবৈধ আয় করে নিজের স্বার্থে আমাদের আর্থিক ও মানসিক ক্ষতি করতেছে। এমতাবস্থায় তার নামাজ-ধর্ম-কর্ম ইত্যাদি আমার কাছে হাস্যকর ও লোক দেখানো মনে হয়, কারণ আমি তার অন্যায়-অনিয়ম সম্পর্কে তাকে অনকেবার বলেছি, এবং আমি যে তার কারণে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি সেই বিষয়েও ধর্মের আলোকে যতটুকু বুঝি তাকে বলেছি, তাকে অনেকবার বলেছি আমার একটাকা পরিমাণ হকও যদি তার কাছে পাওনা থাকে বা তার কারণে নষ্ট হয়, আমি কেয়ামতের দিন তা মহা বিচারক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে নালিশ করবো, আমি তাকে ক্ষমা করবো না। এমতাস্থায় উক্ত ভুয়া পদবীধারী ভুয়া অধ্যক্ষের নামাজ, ধর্ম-কর্ম বিষয়ে ইসলাম ধর্ম মতে ব্যাখ্য ও আমার করণীয় বিষয়ে জানাল বাধিত হবো।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
প্রশ্নের বর্ণনা সঠিক হলে তথা উক্ত অধ্যক্ষ উক্ত পদের অনুপযুক্ত হলে এবং তার অধীনস্থদের অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হেনস্থা করলে তিনি অনেক বড় অন্যায় ও জুলুম করে চলেছেন। অযোগ্য লোক যে কোন পদে থাকা খেয়ানত। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী (অর্থাৎ তার উক্ত পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে) তার জন্য উক্ত পদে বহাল থাকা জায়েয নয়। তার জন্য জরুরী ও কর্তব্য হল, স্বেচ্ছায় দ্রুত উক্ত পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
আর তার ষড়যন্ত্র, অবহেলা, অযোগ্যতার কারনে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এবং আপনাদের হক নষ্ট হলে তাকে কিয়ামতের দিন আপনাদেরকে উক্ত হক বুঝিয়ে দিতে হবে। হাদীস শরীফে আছে-
الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ
অর্থঃ মুমিন ঐ ব্যক্তি যার জবান ও হাত থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।-সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৯
অর্থাৎ যার অনিষ্ঠ থেকে সকলে নিরাপদ থাকে।
আপনারা এক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রশাসন বা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সুব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন।