প্রশ্ন : ১। আকাশ কি পৃথিবীর এতো ‘কাছে’ যে,খালি চোখেই এর গায়ে ‘ফাটল’ নেই বলে নিশ্চিত হওয়া যায়? আল্লাহ বলেন: “তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই”[সূরা ক্কাফ ৬] ২। আকাশ কি গম্বুজের মত “অর্ধবৃত্তাকার”? ৩। নিচের হাদীসটি কি সহীহ? “যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন”(২:২২) “হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ও কয়েকজন সাহাবী থেকে বর্নিত আছে যে, তারা وَالسَّمَاء بِنَاء এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, যমীনের উপর আকাশের ছাদ হচ্ছে গম্বুজের আকৃতি সাদৃশ্য। আর তা হচ্ছে যমীনের ছাদ বিশেষ। কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্নিত আছে যে তিনি আল্লাহর বানী وَالسَّمَاء بِنَاء এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, অর্থাৎ আকাশকে তোমার জন্য ছাদ করেছেন।” ……………….[তাফসীর ইবনে জারীর তাবারী ২:২২ দ্রষ্টব্য] ৪। আল্লাহ বলেনঃ তারা যদি আকাশের কোন খন্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলে এটা তো পুঞ্জীভুত মেঘ।(সূরা আত ত্বূর ৪৪) পৃথিবীতে আকাশের খন্ড পৌছানোর মানে কি? এছাড়াও বলা হয়েছে, যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে (সূরা মুরসালাতঃ৯)
উত্তর :১। উক্ত আয়াতের অর্থ হচ্ছে “তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে লক্ষ্য করে না বা আকাশ নিয়ে চিন্তা করে দেখে না……..”। চাক্ষুষ দেখা উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী ৩ নং আয়াতে যখন তারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অসম্ভব মনে করল তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিষয়টির যৌক্তিকভাবে জবাব দিলেন। আর তা হল, তারা যে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে দূরবর্তী কিছু মনে করছে এবং অস্বীকার করছে অথচ তারা ঐ অস্বীকারের সময় এটা ভেবে দেখেনি যে, তাদের উপরস্থিত আকাশেকে আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই। কাজেই যিনি নিপুণভাবে কোন খুঁটি ব্যতীত এতো সুন্দর ও সুশোভিত করে আসমানকে সৃষ্টি করেছেন তিনি কি পুনরায় মানুষকে জীবিত করতে পারবেন না? তিনি কি এতে সক্ষম হবেন না? এতো বড় সৌন্দর্যময় আসমানকে নিখুঁত ও নিপুণভাবে তৈরি করা মানুষকে সৃষ্টির চেয়ে অনেক কঠিন। আর সেটাই যখন তিনি পারেন তবে মানুষকে কেন পুনরায় সৃষ্টি করতে পারবেন না?-তাফসীরে রাযী, সূরা কফ, আয়াত ৬; তাফসীরে রূহুল মাআনী, সূরা কফ, আয়াত ৬
২। তাফসীরে তাবারীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আকাশের আকৃতি বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং সেখানে এটা বুঝানো হয়েছে যে, আকাশটা আমাদের উপর তাঁবুর ন্যায় ছাদ সদৃশ। যেমনিভাবে বিল্ডিং এর উপর ছাদ থাকে তেমনিভাবে জমিনের উপর রয়েছে আকাশ। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, আকাশ হুবহু তাঁবুর ন্যায়। তাফসীরে তাবারীতে ইবনে মাসউদ ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে যে রেওয়ায়েতটি আনা হয়েছে তার আরবী পাঠ নিম্নরূপ-
فبناءُ السماء على الأرض كهيئة القبة وهي سقف على الأرض
অর্থঃ জমিনের উপর আকাশের গঠন তাঁবুর আকৃতি সদৃশ। আর তা হল জমিনের উপর ছাদ।
এরপর কাতাদা থেকে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি এনেছেন-
قال: جعل السماء سَقفًا لكَ
অর্থঃ তিনি বলেন, তোমার জন্য আকাশকে ছাদ করছেন।
৩। হ্যাঁ, বর্ণনা দুটি সহীহ। তবে অনুবাদে গম্বুজের চেয়ে তাঁবু শব্দটি বেশি মানানসই।
৪। সূরা আত-তূরের উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হল-
মক্কার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিত্য-নতুন মোজেযা দেখানোর দাবি করত। তারা বলত, আমাদেরকে আকাশের একটা খণ্ড ভেঙ্গে এনে দেখাও। আল্লাহ তাআলা বলছেন, তাদের এসব দাবি-দাওয়া সত্য সন্ধানের প্রেরণা থেকে উদ্ভূত নয়। সত্য লাভের কোন ইচ্ছাই আসলে তাদের নেই। তাদের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে এ রকম কোন মোজেযা দেখানো হলেও তারা তাতে বিশ্বাস করবে না। বরং তারা বলে দিবে, এটা আকাশের কোন খণ্ড নয়; বরং জমাট বাঁধা মেঘের খণ্ড।- তাফসীর ইবনে জারীর তাবারী ২২/৪৮৪, ৪৮৫; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১৯/৪৬৫ (শামেলা)
আর সূরা মুরসালাতে ৯ নং আয়াতে আকাশ বিদীর্ণ হওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা কিয়ামতের দিন হবে।