প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম হযরত, আপনার সমীপে এই অধমের দুটো অবস্থার জন্য পরামর্শ কামনা করছি। আল্লাহ আপনাকে নেক হায়াত এবং উত্তম বিনিময় দান করুক। ১. আমি উচ্চশিক্ষিত যুবক। সরকারী চাকুরী করছি। আল্লাহর শোকর যে, ২০০৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর থেকে তাবলীগের মেহনত এবং মুফতি মানসূরুল হক হুজুরের কাছে আসা-যাওয়া শুরু হয়। যার দরুণ আমার অধিকাংশ বন্ধুই ছিলো মাদ্রাসা ছাত্র কিংবা উস্তাদ। ২০১৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন হওয়ার পর চাকুরি এবং পরিবার সামলাতে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। হুজুরের সোহবত থেকে মাহরুম হলাম। তবে উক্ত সময়ের মধ্যে (প্রায় ৮ বছর) হুজুরের সোহবতে ইলমী অনেক ফায়দা হয়েছে। এবং একটি কওমী মাদ্রাসায় বছর দুয়েক ইংরেজী ক্লাস নিতাম। ওই সময় সহকর্মী উলামায়ে কেরাম থেকে শুরু দিকের কিতাবাদীর দরস নিয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস, শত আফসোস! বিভিন্ন জটিলতার কারণে আর এগুতে পারিনি। অন্যদিকে ক্বারী আনিস সাহেবের কাছে হুফফাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। কুরআনের মোট ১ হাজারের অধিক আয়াত মুখস্থ করেছি। কিন্তু আফসোস! শত আফসোস! আলেম হওয়ার যেই স্বপ্ন দেখেছিলাম তা নিজের অযোগ্যতা, কমজোরি, আর্থিক অনটনের কারণে হলো না। ছাত্রজীবনে অভিভাবকদের রাজি করাতে পারিনি। আর্থিক অবস্থা এই ছিলো যে, নিজের কামাই করে নিজের পড়াশোনা সম্পন্ন করেছি। নিজের চরিত্র হেফাজতের জন্য পড়াশোনার শেষদিকে বিয়ে-শাদী করে সংসারের বেড়াজালে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। এদিকে সন্তানের বয়স প্রায় ৩ বছর। এখন বুকটা শুধুই হাহাকার করে উঠে। মনে হলেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। নিজেকে কোনভাবেই মানাতে পারি না। জীবনের মূল্যবান সময়টা চলেই যাচ্ছে। প্রায়ই এই প্রশ্ন আমাকে তাড়া করে, আল্লাহ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, আমি তো তোকে সমঝ দিয়েছিলাম, ইলমের জন্য কি কোরবানী পেশ করেছিস? আমার কোন উত্তর নাই। আপনার কাছে একান্ত পরামর্শ কাম্য। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুক। [উল্লেখ্য, একটু দূরে হলেও এলাকায় নাহুমীর পযন্ত একটি মাদরাসা আছে। মাদ্রাসার সাথে সুসম্পর্ক আছে।] . ২. ওই সময়টাতে ইলম শেখার নিয়তে হুজুরের কাছ থেকে যতগুলো মাসআলা শুনেছি, সবগুলো ঠোটস্থ হয়ে আছে। এখনও দারসে মানসূর থেকে শোনা হয়। তাছাড়া প্রায় লক্ষাধিক টাকার কিতাবাদী সংগ্রহ করেছি। নিরন্তন পড়াশোনা করে যাচ্ছি। অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমার মসজিদের ইমাম সাহেব কোন মাসআলায় সন্দেহ তৈরি হলে আমাকে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু মুফতী সাহেব থেকে শোনা মাসআলা ব্যাতীত কিতাবাদি থেকে শেখা মাসআলা আমি স্বভাবতই বলি না। তাবলীগের খাতিরে বিভিন্ন মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। প্রায়ই ইমাম সাহেবগণ নামায পড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করেন। আমি বড় বিব্রত হই। বিনয়ের সাথে উনাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। পরিচিত অনেকেই ছোট-ছোট, আবার অনেকে জটিল মাসআলা জিজ্ঞেস করে। জটিলগুলো জানা সত্ত্বেও উত্তর দিই না। উলামায়ে কেরামের কাছে যেতে বলি। কিন্তু জানি এই দ্বীনের বুঝহীন লোকগুলো ওলামায়ে কেরামের কাছে যাবে না। বড় পেরেশানী চলে আসে; ওই মূহূর্তে। তাই বন্ধুদের মাঝে যারা মুফতী তাদের ফোন করে, জায়গায় বসেই বিষয়টা সমাধান করে দিই। কিন্তু সবসময় তা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। আপনি আপনার এলাকার মাদ্রাসার উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে চাকরির পাশাপাশি দ্বীনী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। অথবা অন্য কোন আলেমের সাথে মুনাসাবাত থাকলে তার সাথে পরামর্শ করেও এগিয়ে যেতে পারেন। অফিস টাইমের বাইরে রাত, সকাল বা বিভিন্ন বন্ধের দিন কাজে লাগাতে পারেন। আসলে এক্ষেত্রে আপনার হিম্মত, উৎসাহ ও উদ্দীপনাই মূল। এর পাশাপাশি আল্লাহ পাকের তাওফীক ও মাকবূলিয়াত তো রয়েছেই। কাজেই আপনি হিম্মতের সাথে এগোতে থাকুন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে সাহায্য করবেন।
এই যে আমি, আল্লাহ পাক তাওফীক দেওয়ায় (আমার কোনই কৃতিত্ব ছিল না, সম্পূর্ণটাই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা) প্রথম বছরেই চার বছরের কিতাবাদি পড়ে ফেলেছিলাম। হেদায়া প্রথম খণ্ড (যে কিতাবটি আপনি মাদ্রাসায় দেখতে পাবেন, যার পরিসর বেশ বড়, মাদ্রাসায় পূরো এক বছরে পড়ানো হয়) মাত্র ১৮ দিনে পড়েছিলাম। তাই আপনিও হিম্মত করলে এবং চোখের পানি দ্বারা মঞ্জুর করাতে পারলে আপনিও যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম হতে পারেন। আপনি আল্লাহ তাআলার দিকে হাঁটা শুরু করলেই আল্লাহ তাআলার রহমত দেখবেন আপনার দিকে দৌড়িয়ে আসতে থাকবে। নিরাশ হওয়ার কোনই কারন নেই।
২। একান্তই প্রয়োজনীয় ও সাধারন মাসআলাগুলো (যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি সংক্রান্ত) নিশ্চিতভাবে জানা থাকলে বলতে পারেন। কারন অনেক মাসআলায় দেখা যায় প্রশ্নের সামান্য তারতম্যের কারনে উত্তর ভিন্ন হয়। আপনি অনেকক্ষেত্রে হয়তোবা তা বুঝে উঠবেন না। তাই মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের নিকট হাওলা করাই নিরাপদ।