প্রশ্ন : আমরা জানি যে, পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের নিয়ম ভিন্ন কিন্তু এখন বিভিন্ন জায়গায় শুনি যে পুরুষ ও মহিলাদের নাকি একই নিয়মে নামায আদায় করতে হবে। আমার প্রশ্ন হল এখন মহিলারা কি পুরুষদের মতই নামায পড়বে? না তাদের জন্য আলাদাই পরা সঠিক?
উত্তর :পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমে এ সংক্রান্ত কিছু হাদীস উল্লেখ করে পরবর্তীতে পার্থক্যগুলো উল্লেখ করব ইংশাআল্লাহ।
১।عن يزيد بن ابي حبيب ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على امرأتين تصليان.فقال اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الارض.فان المرأة ليست في ذلك كالرجل
অর্থঃ তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব রহঃ বলেন,একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদের বললেন, যখন সিজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবেবে। কেননা মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। -কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ, হাদীস নং ৮০
২।عن عبد الله بن عمر.قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:اذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الاخرى.واذا سجدت الصقت بطنها في فخذيها كاستر ما يكون لها.وان الله تعالى ينظر اليها ويقول:يا ملائكتي اشهدكم اني قد غفرت لها
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্নিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,মহিলা যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান)উরু অপর উরুর উপর রাখে।আর যখন সিজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে;যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী।আল্লাহ তা’আলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে)বলেন,ওহে আমার ফেরেশতারা!তোমরা সাক্ষী থাক,আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।–সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং ৩৩২৪
৩। عن وائل بن حجر.قال:جئت النبي صلى الله عليه وسلم فقال:فساق الحديث.وفيه:يا وائل بن حجر!اذا صليت فاجعل يديك حذاء اذنيك.والمرأة تجعل يدها حذاء ثدييها.
অর্থঃ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলাম, তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বললেন, হে ওয়াইল ইবনে হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর।- আল মু’জামুল কাবীর,তাবারানী ২২/২৭২
মহিলাদের নামাযের পার্থক্য নিম্নরূপঃ
দাঁড়ানো অবস্থায়
১। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় হাত কাপড়ের ভিতর হতে বের না করা। (সহীহ ইবনে খুযাইমা,হাদীস নং ১৬৮৬;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৬,৫০৬৭)
২। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত বুক বরাবর এমনভাবে উঠানো যাতে হাতের আঙ্গুলগুলো কাধ বরাবর হয়ে যায়। (ত্বাবারানী কাবীর ,২২/২৭২;মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৪৭১,২৪৭৩;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৬)
৩। ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর স্বাভাবিকভাবে রাখা। ডান হাত দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি না ধরা। ( রদ্দুল মুহতার ২/২১১ যাকারিয়া;হাশিয়ায়ে ত্বাহতাবী আলা মারাকীল ফালাহ, পৃষ্ঠা ২৫৯)
৪। হাত বুকের উপর বাঁধা। ( সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ;আস-সিআয়া ২/১৫৬;ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮১)
৫। দাঁড়ানো অবস্থায় হাত যথাসম্ভব শরীরের দিকে চেপে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৫০৬৭)
রুকু অবস্থায়
১। রুকুতে পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকা (এতটুকু পরিমান ঝুঁকবে যাতে হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছে যায়)। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৫৯;সুনানে বাইহাক্বী ২/২২২, হাদীস নং ৩৩২১)
২। উভয় পায়ের গোড়ালী সম্পূর্ন মিলিয়ে রাখা। (রদ্দুল মুহতার ২/২১১)
৩। রুকুতে উভয় বাহু পাজরের সঙ্গে সম্পূর্ন মিলিয়ে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/২১১)
৪। রুকুতে উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহ পরিপূর্ন মিলিয়ে হাঁটুর উপর স্বাভাবিকভাবে রাখা। পুরুষদের ন্যায় আঙ্গুল ফাঁক করে হাটু না ধরা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/২১১)
সিজদা অবস্থায়
১। কনুইসহ উভয় হাত মাটিতে মিলিয়ে রাখা। পুরুষদের ন্যয় কনুই উঁচু করে না রাখা। (মারাসীলে আবূ দাউদ,হাদীস নং ৮৪;সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ৩৩২৫)
২। উভয় রানের সাথে পেট মিলিয়ে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৯, ৫০৭২;সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ৩৩২৪)
৩। উভয় হাতের বাহু যথাসম্ভব পাজরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৯;মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৭৮)
৪। একেবারে জড়সড় ও সংকুচিত হয়ে সিজদা করা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৮১,২৭৮২;সুনানে বাইহাক্বী ,হাদীস নং ৩৩২৪;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৭১)
৫। সিজদায় ডান দিক দিয়ে উভয় পা বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা এবং উভয় পায়ের আঙ্গুল সমূহ যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখা। (সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৩০১৬,৩৩২৪;মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৭৭,২৭৮৩ ;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৩)
৬। এক রানের সাথে আরেক রান যথাসম্ভব মিলিয়ে রাখা। (সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ৩০১৬, ৩৩২৪;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৭১)
৭। নিতম্ব যথাসম্ভব জমীনের সাথা মিলিয়ে রাখা,উঁচু না করা। (মারাসীলে আবূ দাউদ,হাদীস নং ৮৪;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৮;মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৮২)
বসা অবস্থায়
১। বাম নিতম্বের উপর বসা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২৭৮৩,২৭৯২; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৭৪)
২। ডান দিক দিয়ে উভয় পা বের করে দিয়ে কিবলামুখী করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৮৩,২৭৯২;মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৭৪, ৫০৭৭;কিতাবুল আসার,ইমাম মুহাম্মাদ,আসার নং ২১৬)
৩। উভয় রান যাথাসম্ভব মিলিয়ে রাখা। (সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৩৩২৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদীস নং ৫০৬৯,৫০৭৭)
৪। বাম পা ডান রান ও গোছার নিচের রাখা। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৮৩; আওজাযুল মাসালিক ২/১১৮)
৫। বৈঠকে উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহ মিলিয়ে হাঁটু বরাবর করে রাখা। ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং ২৭৭৮;রদ্দুল মুহতার ২/২১১ যাকারিয়া)