প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভাল আছেন। আমি উচ্চশিক্ষার (পি এইচ ডি) জন্য বর্তমানে তুরস্কে আছি। আমার এখানকার নামাজের ব্যাপারে সম্ভবত কিছু জানা প্রয়োজন। ১। এদেশের মসজিদের ইমামরা দাড়ি বিহীন (অথবা শিবির স্টাইলের ছোট দাড়ি), অনেকেই গোফ যুক্ত, এবং সুন্নাতি লেবাস বিহীন। নামাজের সময়ও টাখনুর নিচে প্যান্ট থাকে আর শার্টের উপরে একটা আলখাল্লা পড়ে নেয়। কেরাত সহি এবং হানাফি। এদের পিছনে নামাজ আদায় করতে পারব কিনা। উল্লেখ্য, উপরে বর্নিত খেলাফে সুন্নাতের আমি অনুসারী নই। ২। জুমার মুল খোতবায় আরবীর সাথে তুর্কী ভাষাতেও বেশ অনেক কথা বলে। এক্ষেত্রে আমার নামাজে কোন অসুবিধা হবে কি না? ৩। হোস্টেলের প্রেয়ার রুমে কিছু তার্কিশ ছেলে মাঝে মাঝে ইমামতি করে যাদের অবস্থা উপরে বর্নিত ইমামদের মতই। তবে আলখাল্লা পড়ে না। জিন্স আর টি শার্ট পড়ে নামাজ পড়ায়। এদের কারো কারো কেরাত কিছুটা তুর্কী ভাষা’র ঢং এ। যেমন আরবি ‘তা’ কে বাংলায় ‘থ’ এর মত বলা, ‘কাফ’ কে ‘খ’ এর মত এবং ‘আল্লহু আকবার’ কে ‘আল্লহু একবার’ বলা ইত্যাদি ( আপনার বুঝার সুবিধার্থে উদাহরণ হিসেবে মেসেঞ্জারে করা আমার সাথে এক তার্কিশ বন্ধুর কিছু এসএমএস আলাপনঃ আমি=Assalamu Alaykum! How are my dear friend? How was your day? জবাব=Vealeykumselam my dear friend. I met my friends today. It was good day for me elhamdülillah. How was your day?)। এদের কেউ কেউ আবার জামাতের ইকামত ইমাম নিজেই দেয়! এই অবস্থায় আমি তাদের পেছনে এক্তেদা করতে পারব কিনা। উল্যেখ্য, আমি কখনো কখনো স্বপ্রোনদিত হয়ে ইমামতি করি। কিন্তু সবসময় সেটা সম্ভব হয় না, আবার আমার ভালোও লাগেনা সেটা। ৪। আমি দেখেছি, অজু’র সময় এখানে কেউ কেউ কাপড়ের মোজা’র উপর শুধু মাসেহ করে নেয়, পা ধোয় না। এমন কেউ ইমামতি করলে, এবং তার এরকম অজু করা আমার জানা থাকলে তার পিছনে আমি এক্তেদা করতে পারব কিনা? ৫। এরা নামাজ হানাফি তরীকায় পড়লেও, আছরের আজান ও নামাজ শাফেয়ী (রঃ) এর নিয়মে হিসাব করে। (যদি উপরোক্ত ইমামদের পেছনে আমার নামাজ আদায়ের অনুমতি থাকে) এমতবস্থায় তাদের আছরের জামাতে আমি হানাফি হয়ে শরীক হতে পারব কিনা। উল্যেখ্য হানাফি নিয়মে তখনও আছরের ওয়াক্ত হয় না। ৬। যদি সফরের কারনে নামাজ কাযা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে হানাফি হয়েও আছরের নামাজ আমি শাফেয়ী মাযহাবের সময় অনুযায়ী আগে ভাগেই আদায় করতে পারব কি না? ৭। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, আমি ওয়াক্তের শেষের দিকে যোহরের নামাজ আদায় করতে জামে মসজিদে গিয়েছি। কিন্তু ততক্ষনে শাফেয়ী নিয়মে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আছরের জামাতও দাঁড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় আমি হানাফি ওয়াক্ত অনুযায়ী আগে যোহর পড়ে নিয়েছি এরপর হানাফি নিয়মে যখন আছরের ওয়াক্ত হয়েছে তখন আছর পড়েছি। আমি ঠিক করেছি কিনা? উত্তরগুলো পেলে অশেষ উপকৃত হব। আল্লহ আপনার দুই জাহানেই সমৃদ্ধি দান করুন। (ইমেইলে নোটিফিকেশন দিলে ভাল হয়। আপনার কি ইমো বা মেসেঞ্জার একাউন্ট আছে? থাকলে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী)।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। ফাসেক ইমামের পিছনে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। মসজিদ কমিটির দায়িত্ব হল পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারী এবং মুত্তাকী ইমাম নিয়োগের ব্যবস্থা করা। না করলে তাদের গোনাহ হবে। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যদি আশপাশের কোন মসজিদে পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারী ইমাম পান তবে সেখানেই নামায পড়বেন। আর এটা সম্ভব না হলে তাদের পিছনেই নামায আদায় করবেন। জামাআত তরক করবেন না। আপনি জামাআতে নামায আদায়ের ছাওয়াবও পেয়ে যাবেন।–রদ্দুল মুহতার ১/৫৬২; ফাতাওয়া কাযীখান ১/৯২
২। না, আপনার নামাযে কোন অসুবিধা হবে না।
৩। প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে যারা হরফ বিকৃত করে তিলাওয়াত করে তাদের পিছনে নামায আদায় করবেন না। আর একই ব্যক্তির ইকামত বলে ইমামতি করতে কোন অসুবিধা নেই।–রদ্দুল মুহতার ১/৪০১; ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৪/৭৫
৪। না, এদের পিছনে এক্তেদা সহীহ হবে না। কেননা প্রচলিত কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয নয়।–ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৬৩; শরহে মুনইয়া, পৃষ্ঠা ১২৩
৫। হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী কোন বস্তুর ছায়া তার মূল ছায়া ব্যতীত দিগুন হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত বাকি থাকে। যদিও এক মত অনুযায়ী একগুন হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে। তাই যদি সেখানকার সকল মসজিদগুলোতে ছায়া একগুণ হওয়ার পর আছরের নামায আদায় করে থাকে তবে আপনি তাদের সাথেই জামাআতে নামায আদায় করবেন। আর যদি দু একটি মসজিদে এমনটি হয়ে থাকে এবং অধিকাংশ মসজিদে আমাদের মতই ছায়া দিগুন হওয়ার পরে আছরের নামায আদায় করে তবে আপনি উক্ত মসজিদগুলোতে আছরের নামায আদায় করবেন না।–হাশিয়ায়ে তাহতাবী, পৃষ্ঠা ১৭৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬১
৬। অভ্যাস না বানিয়ে একান্ত প্রয়োজনে কখনো কখনো এমনটি করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে যোহরের নামায অবশ্যই ছায়া একগুণ হবার পূর্বে আদায় করতে হবে।- আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৫৯
৭। হ্যাঁ, ঠিকই করেছেন। তবে এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, একেকদিন একেক সময় যেন নামায না পড়া হয়। অর্থাৎ তাদের সময়ে যদি আছরের নামায আদায় করেন তবে সর্বদা ঐ সময়েই আছর পড়বেন। তাদের আছরের সময় যেন যোহর না পড়া হয়।
আর আমি স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করায় আমার ইমো বা মেসেঞ্জার একাউন্ট নেই।