প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, ১) কুরআন ও হাদীসে দুনিয়ার লোভ, ধন-সম্পদ, মহিলা ও সন্তান-সন্ততিকে ফিতনা বলা হয়েছে। আমি জানি যে- এগুলোর কারনে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তাআলার ইবাদত (নামাযের মধ্যে শুধু দুনিয়ার চিন্তা আসে) করতে পারবো না। এবং অহংকার, রিয়া ও অন্তরের রোগ থেকে বাচতে পারবো না, তাই আমি চাচ্ছি নির্জনে একাকী থাকতে। যদিও বা ইসলামে বৈরাগ্য নেই, কিন্তু অনেকের থেকে শুনেছি যে, বড় সমস্যা থেকে বাচতে ছোট সমস্যা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু মা-বাবার কারণে পারছি না, যেহেতু মা-বাবার খেদমত করাও ফরজ তাই আমি চাচ্ছিলাম তাদের দুনীয়ার সমস্ত প্রয়োজনাদী দিয়ে যেতে। এভাবে যাওয়া কি আমার জন্য হারাম হবে ? ২) নাকি তাদের বর্তমান থাকা পর্যন্ত তাদের সাথেই থাকতে হবে ? ৩) আল্লাহ যদি চান তাহলে তাদের মৃত্যুর পর যাওয়া যাবে ? ৪) আর আমি বিয়েও করবো না যাতে নির্জনে যেতে কোন বাধা না থাকে। অনেক আল্লাহর ওলীরাও একাকী নির্জনে থেকেছেন। তাই আমি নিয়ত করেছি আল্লাহ তাআলা আমাকে যদি তৌফীক দেন তাহলে জনবসতী ছেড়ে নির্জনে চলে যাবো। তাই হযরতের কাছে জানার বিষয় এই যে, আমি যাতে কোন দুনীয়াবী কাজে জড়িয়ে আল্লাহ তাআলা কে ভুলে না যাই। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন- “আমি জীন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য”। আল্লাহ তাআলার যে উদ্দেশ্য তা যাতে পুরা করতে পারি। আমার উত্তরটা কোরআনের মাধ্যমে দিতেন তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারতম। জাযাকাল্লাহ খায়রন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
কেন হাদীস থেকে উত্তর দিলে আপনি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না? হাদীস কি শরীআতের দলীল নয়? আপনি কি হাদীসের ফয়সালা অস্বীকার করবেন? এটা কেমন কথা? এক শ্রেণীর মানুষের বর্তমানে এই রোগ সৃষ্টি হয়েছে সবকিছু তাদেরকে কুরআন থেকে বলতে হবে। আবার আরেক শ্রেণীর মানুষের এই রোগ সৃষ্টি হয়েছে সবকিছু তাদেরকে সহীহ হাদীস বা বুখারী শরীফ থেকে বলতে হবে। কুরআন থেকে আপনি কয়টি সমাধান পাবেন? কোন নামায কত রাকাআত তা কি কুরআনে পেয়েছেন? যাকাত কার উপর ফরজ, কখন ফরজ এবং কোন কোন মালের উপর ফরজ তা কি কুরআনে পেয়েছেন? হজের ফরজ কি কি তা কি কুরআনে পেয়েছেন? রোযা কাকে বলে তা কি কুরআনে পেয়েছেন? তাহলে আপনার এই প্রশ্নের উত্তর কেন কুরআন থেকে পেতে চাইছেন?
(১+২+৩+৪) আল্লাহ্ তাআলা চান বান্দা দুনিয়াবী ঝামেলায় জড়িয়ে তার ইবাদাত বন্দেগী করবে। আল্লাহ্ তাআলা দেখতে চান কে কতটুকু ঝামেলায় পড়ে কতটুকু আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ করে। মনে রাখবেন যে বিড়াল বাঁধা থাকে সে কিন্তু এ প্রশংসার যোগ্য না যে, সে মনিবের কোন ক্ষতি করে না বা সে মনিবের অনুগত। বরং যে বিড়াল ছাড়া থাকে এর পরেও সে মনিবের কোন ক্ষতি করে না সেই কিন্তু প্রশংসার যোগ্য।
ইসলাম বৈরাগ্যতাকে সমর্থন করে না। তাছাড়া বিবাহ করা একটি তাকীদপূর্ণ সুন্নাত এবং অন্যতম ইবাদাতও বটে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু বিবাহের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাআলাকে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর তার অনুসরনেই এই উম্মতের সফলতা বিদ্যমান। তাই আপনি বৈরাগ্যতা অবলম্বন না করে বান্দার হক আদায় করে এবং সংসার করেই আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে থাকুন। এটাই পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রাসূল ও নেক লোকদের তরীকাহ। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু হাদীস দেওয়া হল যা থেকে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
(ক) হযরত সাদ বিন আবী ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিখ্যাত সাহাবী) উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ) এর বিবাহ না করার সংকল্প প্রত্যাখ্যান করে দেন। যদি তিনি তাকে এরূপ অনুমতি পেদান করতেন তবে আমরা সকলে খোঁজা হয়ে যেতাম।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫০৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৭০।
(খ) একদা তিনজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণের নিকট এলো আল্লাহর রাসূলের ইবাদতের অবস্থা জানার জন্য।যখন তাদেরকে আল্লাহর রাসূলের ইবাদতের অবস্থা জানানো হল তারা তা কম মনে করল। এবং বলল কোথায় আল্লাহ্র রাসূল আর কোথায় আমরা? অতঃপর তাদের একজন বলল আমি সারা রাত নামায পড়ব। আরেকজন বলল আমি সারা বছর রোযা রাখব। কখনও রোযা ছাড়ব না। অন্যজন বলল আমি মহিলাদের থেকে দূরে থাকব কখনও বিবাহ করব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দিকে বেরিয়ে এসে বলল তোমরা এমন এমন বলছো? শুনে রাখ আল্লাহর কসম আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ্কে ভয় করি এবং আমি সবচেয়ে মুত্তাকী। তবে আমি রোযা রাখি এবং ছেড়ে দেই। (রাতে) নামায পড়ি এবং ঘুমাই। আর আমি মহিলাদেরকে বিবাহ করি। কাজেই যে আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হল সে আমার দলভুক্ত নয়।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৩।
(গ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট প্রবেশ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার স্ত্রী আছে কি? সে বলল না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার (শরীআত সম্মত) কোন বাদি আছে কি? সে বলল না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি আর্থিকভাবে বিত্তবান কি? সে বলল আমি আর্থিকভাবে বিত্তবান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন তাহলে তো তুমি শয়তানের ভাই।……নিশ্চয় আমাদের সুন্নাত হল বিবাহ করা……।–মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১৪৫০।