প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমি কুরবানীর মৌলিক কিছু বিষয়বস্তু জানতে ইচ্ছুক। ১) কুরবানী কেন দিব? আসল উদ্দেশ্যটি কি শুধুই পশু কুরবানী করা? যদি তাই হয় তাহলে আমরা কুরবানী উপযুক্ত পশু কিনার সময় পশুর গোশত কতখানি হবে, বিক্রেতার বলা দাম অনুযায়ী পশুর সাইজ ঠিক আছে কিনা এগুলা যাচাই বাছাই করে পশু কিনি এগুলা কি ঠিক? ৫০০০০ / ১ লাখ টাকা দিয়ে তো আমরা ছোট পশু(গরু) কিনি না। কারন ঐ পরিমান গোশত পশুর নেই। তাহলে তো আমার আসল নিয়ত হচ্ছে গোশত খাওয়া, কুরবানীটা ওসীলা। ছাগল কুরবানী না দিয়ে গরু ভাগায় কুরবানী দেই কারন ছাগল/খাসীর গোশত বেশী খেতে পারিনা/ভালো লাগেনা। কিন্তু ১ ভাগের টাকা দিয়ে একটা খাসী কিনা যায়। আমার প্রশ্ন এভাবে কি কুরবানী সহীহ হবে? আমার জানামতে এটা ৯০%+ কুরবানীদাতার অবস্থা। এ ব্যাপারে একটু বিশদ আলোচনা করবেন প্লিজ। ২) আল্লাহ তা’আলা কি আমাদের নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সুন্নাত পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন? ৩) গরু/ছাগল ইত্যাদি হালাল পশু দিয়ে কুরবানী করা যায়। তাহলে কুরবানী করে গোশত ওজন করি কেন? বর্তমান বাজার অনুযায়ী ঠকেছি না জিতেছি সেটা দেখার জন্য নাকি এটার পাশাপাশি বন্টনটা যেন সঠিক হয় এটাও একটা কারন? বন্টন পদ্ধতি কিরূপ সবচেয়ে উত্তম? মুস্তাহাব পদ্ধতি কি কি আছে? ৪) কুরবানী ওয়াজিব হবার জন্য কিছু শর্ত আছে। কেউ যদি শর্ত জেনে বা না জেনে প্রত্যেক বছরে ভাগায় কুরবানী দেয় যেহেতু ১ ভাগায় খুব বেশি টাকা আসেনা, ৬-৮ হাজার টাকাতেই ১ ভাগা পাওয়া যায়। তার কি কুরবানীর ওয়াজিব আদায় হবে? হতে পারে সে ঋণগ্রস্ত কিন্তু হাতে টাকা আছে। ঋণ পরে শোধ করতে পারবে বা করলেও চলবে (ব্যাক্তির কাছে/ ব্যাঙ্কে লোন আছে, অল্প বা বেশী)। ৫) স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বিদেশে কাজ করে। স্ত্রী যেখানে কাজ করে তার ভাষ্যমতে সিগারেট ছাড়া অন্য কোনো হারাম প্রোডাক্ট বিক্রয় করা হয় না, আমার মনে নাই বিয়ার বিক্রি করে কিনা, ভুলে গেছি। তার দেয়া টাকা দিয়ে কি দেশে ভাগায় কুরবানী দেয়া যাবে? যদি না যায় আর তারপরেও যদি তারটা সহ ভাগায় কুরবানী দেয়া হয় তাহলে কি সকলের কুরবানী বাতিল হবে? তার নিজের নামে বা অন্য কারো নামে কুরবানী দিলে কি তা আদায় হবে? ব্যাঙ্কার যদি শামিল থাকে ভাগায় তবে কি সকলের কুরবানী বাতিল হবে? ৬) ৭ ভাগের কুরবানীতে যদি একজন মৃত ব্যক্তির নামে একাধিক ভাগ রাখা হয় যেমন- ৩ ভাই আর মা মিলে ৪ ভাগ আর মৃত বাবার নামে ৩ ভাগ। এভাবে কুরবানী করা যাবে কিনা? গোশত বন্টন করবে কিভাবে? মৃত বাবার ভাগের গোশত খাওয়া যাবে কিনা? ৭) অন্য প্রসঙ্গ, কোনো নবী কি চিরহায়াত পেয়েছেন? হযরত ইদ্রীস আলাইহিস সালাম কি জান্নাতে জীবিত আছেন, উনি কি মৃত্যুবরণ করেন নাই? হযরত খিজির কি নবী ছিলেন? জিন জাতির কাছে প্রেরিত কোনো নবী কি গোমরাহ হয়ে গিয়েছিলেন? জিন জাতির কাছে আদৌ কোনো নবী কি প্রেরণ করা হয়েছিলো? কোনো নবী কি গোমরাহ হতে পারেন? নবীগণ কি নিষ্পাপ নন? নবীগণ গুনাহ করেছেন আর আল্লাহ তা’আলা উনাদের তাওবার কারনে কৃত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন -এমন কথা বলা কি ঠিক হবে? নবীগণ স্ব-স্ব কবরে কি জীবিত আছেন? ৮) জিলকদ মাসের ফযীলাত কি? এ মাসে বিশেষ কি কি আমল আছে? বিশেষ কোনো নফল নামায বা রোযা আছে নাকি? বারো চান্দের ফযীলাত নামক কিতাবের ফযীলাতগুলির গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু? অনেক প্রশ্ন একবারে করলাম, মাফ করবেন। আপনি চাইলে আলাদা আলাদা উত্তর দিতে পারেন। জাযাকাল্লাহু খাইরন।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
মাশাআল্লাহ, বেশ অনেকগুলো প্রশ্ন করেছেন।যার কোনটির (যেমন সাত নং প্রশ্ন) মধ্যে দশটি প্রশ্ন রয়েছে। এগুলোর উত্তর যথার্থভাবে দিলে হয়তবা রীতিমত একটি কিতাব হয়ে যাবে। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারনে সবগুলোর উত্তর একসাথে না দিতে পারার জন্য দুঃখিত। এর মধ্য থেকে কুরবানী সংক্রান্ত জরুরী তিন/চারটি প্রশ্নের উত্তর দিলাম। অন্যগুলো অল্প অল্প করে পুনরায় প্রশ্ন করলে উত্তর পেয়ে যাবেন ইংশাআল্লাহ।তবে সকলকেই একটি অনুরোধ একসাথে তিনটির বেশী প্রশ্ন না করার জন্য।

(১) কুরবানী আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য দিতে হবে। কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। এখন কেউ যদি অল্প টাকায় অধিক হৃষ্টপুষ্ট পশু ক্রয় করার জন্য বিভন্ন কেলকুলেশন করে তবে তা ইখলাছের পরিপন্থী নয় বরং ইখলাছের সহায়ক। কারন প্রত্যেকেই চাইবে তার সাধ্যের পুঁজিতে তুলনামূলক উত্তম পশু আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য উৎসর্গ করতে। আবার কেউ প্রশ্নে বর্ণিত কোন কেলকুলেশন না করেও কিন্তু গোস্ত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী দিতে পারে। সারকথা, এটা অন্তরের অবস্থা বা নিয়তের উপর নির্ভর করে। শুধু টাকা ও গোস্তের কেলকুলেশন করাতেই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয় না।
কুরবানীর পশু আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য উৎসর্গ (জবাই) করার পর তা কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য মেহমানদারী ও হাদিয়া হয়। এবং মালিকানাও কিন্তু বান্দার হয়। এখন কারো যদি আর ছাগলের গোস্ত পছন্দ না হওয়ার কারনে গরুতে ভাগ দিতে চায় এজন্য যে, সে আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য পছন্দনীয় (গোস্তের) পশু উৎসর্গ করতে চায় তবে কি সমস্যা? অথবা কুরবানীর পরে আল্লাহ্‌ তাআলার পক্ষ থেকে উত্তম মেহমানদারী পেতে চায় তবেই বা কি সমস্যা?

অর্থাৎ আমি এতক্ষণ পর্যন্ত এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, বাহ্যিক কোন অবস্থা অবলোকন করেই কোন সিদ্ধান্তে আসা সমীচীন নয়। এক্ষেত্রে মূল বিষয় হল অন্তরের অবস্থা। আল্লাহ্‌ তাআলা প্রত্যেকের অন্তর সম্পর্কে ভাল করে জানেন। কারো অন্তরে যদি গোস্ত খাওয়াই উদ্দেশ্য হয় তবে তার কুরবানী হবে না। আর অন্যের অবস্থা যাচাই-বাছাই করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং নিজের নিয়ত পরখ করার মধ্যেই সফলতা ও কামিয়াবী রয়েছে।

(৩) কুরবানী শরীকের সাথে দিলে তো গোস্ত ওজন করে বণ্টন করা জরুরী। আন্দাজে নেওয়া জায়েয নেই। অনুরূপভাবে শরীকের সাথে না হলেও কুরবানীর গোস্ত তিন ভাগ করা মুস্তাহাব। তাই ওজন করে তিন ভাগ করলে তো ভালই হবে। কেননা তা মুস্তাহাব আমলের সহায়ক হবে। আর কারো নিয়ত যদি ভিন্ন কিছু হয় তবে আল্লাহ্‌ তাআলা তো তার অন্তরের অবস্থা জানেন।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭; ফাতাওয়া হিন্দীয়া -৫/৩০০।

(৪) হ্যাঁ, আদায় হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২।

(৬) হ্যাঁ, এভাবে কুরবানী করলে সহীহ হবে। গোস্ত বণ্টনের ক্ষেত্রে ভাইয়েরা যদি একান্নভুক্ত পরিবারের হয় তবে পূরো গোস্ত যথানিয়মে তিন ভাগে ভাগ করবে। আর প্রত্যেকের সংসার আলাদা হলে যার যার ভাগের গোস্ত সে সে নিয়ে যাবে। কোন ছেলে যদি পিতার একভাগের কুরবানীর টাকা দেয় তবে সে একভাগের গোস্ত নিয়ে যাবে। দুই ভাগের টাকা দিলে দুই ভাগ নিয়ে যাবে। আর মৃত পিতার নামে কুরবানীকৃত পশুর বা ভাগের আলাদা কোন বিধান নেই। এর গোস্তের হুকুম নিজের কুরবানীর গোস্তের ন্যয়। অর্থাৎ সবাই খেতে পারবে।–রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬।

Loading