প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, ক) নামাযে ২য় বৈঠক ও শেষ বেঠকের সময় অনেককে দেখি যে- (১) হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে বার বার ইশারা করতেই থাকে (২) অনেকে একবার ৫ সেকেন্ডের মতো ইশারা করে সব গুলো আঙুল মুট করে রাখে (৩) অনেকে একবার ৫ সেকেন্ডের মতো ইশারা করে শাহাদাত আঙুল বাদে বাকী ৪ আঙুল মুট করে রাখে (৪) অনেকে একবার ৫ সেকেন্ডের মতো ইশারা করে সব আঙুল স্বাভাবিক (সোজা করে) রাখে (৫) আবার অনেকে ইশারা না করে সবগুলো আঙুল মুট করে রাখে। উপরের ৫টির মধ্যে কোনটি সহীহ হাদীস দ্বারা সঠিক জানালো উপকৃত হবো। (খ) আপনি কোরবানীর পশুর বয়সে জায়গায় লিখেছেন যে- “মাসআলাঃ গরু,মহিষ,এর বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী সহীহ হবে না।- বাদায়েউস সানায়ে। ৪/২০৫” কিন্তু একজন মুফতী সাহেবের কাছ থেকে জানলাম যে- গরু, মহিষ কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি ? কোনটা সঠিক, যদি হাদীস দ্বারা বলতেন তাহলে হয়তো আমি আশংকা মুক্ত হতে পারতাম। (গ) একজনের কাছে শুনেছিলাম নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো পায়ের উপর পা দিয়ে বসেন নাই। এটা কি সত্য ?
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
সহীহ ও উত্তম পদ্ধতি হল বৈঠকে আশহাদু বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথা এক সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানাবে এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলদ্বয় তালুর দিকে মুড়িয়ে রাখবে। আর যখন লা-ইলাহা বলবে তখন শাহাদাত আঙ্গুল উঁচু করে ইশারা করবে। অতঃপর ইল্লাল্লাহ বলার সময় আঙ্গুলের মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখবে। এভাবে বৈঠকের শেষ পর্যন্ত রাখবে।
عن وائل بن حجر قال قلت لأنظرن إلى صلاة رسول الله -صلى الله عليه وسلم ثم جلس فافترش رجله اليسرى ووضع يده اليسرى على فخذه اليسرى وحد مرفقه الأيمن على فخذه اليمنى وقبض ثنتين وحلق حلقة ورأيته يقول هكذا. وحلق بشر الإبهام والوسطى وأشار بالسبابة.
অর্থঃ হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করলাম যে, আমি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায দেখব (তিনি পূর্ণ নামাযের বর্ণনা দিয়ে তাঁর বসা সম্পর্কে বললেন) এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসলেন আর বাম হাত বাম রানের উপর রাখলেন। আর ডান হাতের কনুইকে ডান রানের উপর উঁচু করে রাখলেন এবং (কনিষ্ঠ ও অনামিকা) এই দুই আঙ্গুলকে মুড়িয়ে রাখলেন। আর (মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে) গোলাকার বৃত্ত বানালেন। (এ পর্যন্ত এসে বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন) আমি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখলাম যে তিনি এরূপ করেছেন। (কিরূপ করেছেন সেটা সাহাবী (রাযিঃ) কাজের মাধ্যমে তাঁর ছাত্রদেরকে দেখিয়েছেন। আর সেই আকৃতিটাকে ইমাম আবূ দাউদের উস্তাদ মুসাদ্দাদ তাঁর উস্তাদ বিশির থেকে এভাবে ব্যক্ত করেন যে) তিনি তাঁর মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানান এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেন।– সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭২৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৯১২।
হাদীসটির সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। সতুরাং এর সনদ সহীহ।
عن مَالِكُ بْنُ نُمَيْرٍ الْخُزَاعِيُّ أَنَّ أَبَاهُ حَدَّثَهُ أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدًا فِي الصَّلَاةِ وَاضِعًا ذِرَاعَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى رَافِعًا أُصْبُعَهُ السَّبَّابَةَ قَدْ أَحْنَاهَا شَيْئًا وَهُوَ يَدْعُو
অর্থঃ হযরত মালেক ইবনে নুমাইর আলখুযায়ী থেকে বর্ণিত, তার পিতা তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযে বসা অবস্থায় দেখেছেন। তিনি ডান হাতকে ডান রানের উপর রেখেছিলেন। (ইশারা করার সময়) শাহাদাত আঙ্গুল উঁচু করে রাখলেন, আর(ইল্লাল্লাহ) বলার সময় সামান্য নীচে ঝুঁকিয়ে দিলেন।–সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ৭১৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ১২৭৩; সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং ২৮৯৬।
(খ) উক্ত মুফতী সাহেবের কথা সঠিক। এটা টাইপজনিত ভুল ছিল যা টাইপম্যান টাইপের সময় করেছিলেন। আর আমারও সেভাবে নজর পড়েনি। আপনার প্রশ্ন পাওয়ার পরেই ওয়েবসাইটে সংশোধন করে দিয়েছি। আল্লাহ্ তাআলা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لاَ تَذْبَحُوا إِلاَّ مُسِنَّةً إِلاَّ أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ ».
অর্থঃ হযরত জাবের(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা(কুরবানীতে) মুসিন্নাহ ছাড়া জবাই করো না তবে…………….।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১৯৪।
আর গরুর ক্ষেত্রে মুসিন্নাহ বলা হয় এমন গরুকে যার বয়স দুই বছর হয়েছে।– মিরকাতুল মাফাতীহ ৫/১৬৩(শামেলা); ইমাম নববী, শরহে মুসলিম ৫/১২০।
(গ) পায়ের উপর পা দিয়ে বসা দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয় পা ঝুলিয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা দিয়ে বসা তবে হাদীসে এমনটি খুঁজে পাইনি। অন্যথায় শয়নরত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিত হয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে আরাম করতেন।–শামায়েলে তিরমিজী, হাদীস নং ১২৯।