রোজা কার উপরে ফরজ ?

মাসআলাঃ প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়ষ্ক, মুকীম মুসলমান নর-নারীর উপর রমযানের রোযা রাখা ফরজ। তবে মহিলাদের জন্য শর্ত হল তাদের হায়েয –নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে। কাজেই পাগল,মুসাফির,নাবালেগ ও হায়েজ- নেফাস ওয়ালী মহিলার উপর রোজা ফরজ নয়।

চাঁদ দেখা সংক্রান্ত মাসায়েল :

মাসআলাঃ চাঁদ উদয়স্থান যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তবে এমন একজন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, বালেগ ও মুসলমান ব্যক্তির (চাই পুরুষ হোক অথবা মহিলা) চাঁদ দেখার দারাই রমযানের চাঁদ প্রমানিত হবে,যার দ্বীনদার হওয়া স্বীকৃত। কাজেই উক্ত অবস্থায় একজন পাগল, নাবালেগ,অমুসলিম অথবা প্রকাশ্য ফাসেকের চাঁদ দেখা দ্বারা রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হবে না।

মাসআলাঃ চন্দ্র উদয়স্থল পরিষ্কার হলে এমন সংখ্যক লোকের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেওয়া জরুরী যার দ্বারা চাঁদ উঠার প্রবল বিশ্বাস সৃষ্টি হয়।

মাসআলাঃ কেউ নিজে চাঁদ দেখলে যদি তার সাক্ষ্য গ্রহন না করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে তার নিজের জন্য রোযা রাখা ফরজ । তবে ঈদ সে অন্যান্য মানুষের সাথেই আদায় করবে । চাই তার রোযা ৩১ টি হোক না কেন।

মাসআলাঃ অনেকে শাবান মাসের ৩০ তারিখে এই নিয়তে রোযা রাখে যে, যদি রমযান শুরু হয়ে থাকে তবে রমযানের রোযা অন্যযায় নফল রোযা হবে। এভাবে এই দিনে রোজা রাখা মাকরূহ । তবে কেউ যদি পূর্ব থেকেই এভাবে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হন (যেমন তিনি প্রতি মাসেই শেষ তিনদিন রোযা রাখেন ) তবে তার জন্য জায়েয।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি একদেশে রোযা শুরু করল। এরপর সে অন্য একটি দেশে সফর করল । সেখানে গিয়ে দেখল ঐ দেশবাসীর রোযা তার থেকে একটি বেশি হয়েছে এবং তার ২৮ টি রোযা পূর্ণ হওয়ার পর ঈদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সৌদিআরব গেলে এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে তার করনীয় কী ?
অনুরুপভাবে কেউ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে দেখল তার থেকে বাংলাদেশবাসীদের রোযা একটি কম হচ্ছে । এক্ষেত্রে তার রোযা ৩১ টি হতে পারে । সে কী করবে ?
এমতাবস্থায় প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ যার রোযা ২৮টি হয়েছিল সে ঐ দেশবাসীর সাথেই ঈদ পালন করবে এবং পরবর্তিতে ১ টি বা ২টি রোযা রেখে ৩০টি পূর্ণ করে নিবে । তবে ওই দেশে ( যেখানে সে সফর করে গিয়েছে ) যদি ২৯টি রোযা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সে ২৯টি পুরা করতে পারবে।
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ঐ দেশবাসীর সাথে রোযা রাখতে থাকবে । যদিও তার রোযা ৩১টি হয়ে যায় । যাতে রমযানের সম্মান নষ্ট না হয় । পরে তাদের সাথেই ঈদ করবে।

মাসআলাঃযেসব স্থানে দিন-রাত সাভাবিক নয় (যেমন ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত থাকে) সেসব স্থনের লোক কিভাবে রোযা রাখবে ?
যেসব দেশে দিন-রাত ভারসাম্য পূর্ণ নয় সেখানকার লোকেরা তাদের পাশ্ববর্তি ভারসাম্যপূর্ণ দেশের সাথে তুলনা করে রোযা রাখবে । অর্থাৎ তারা যেভাবে রোযা রাখে উক্ত দেশের লোকেরাও সেভাবে রোযা রাখবে।

নিয়তের মাসআলাঃ

মাসআলাঃ রমজানের রোযার জন্য নিয়ত করা ফরজ। প্রতিটি রোযার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করা জরুরী। পুরো মাসের জন্য একবার নিয়ত করলে তা যথেষ্ট হবে না ।

মাসআলাঃ নিয়ত হল মনের ইচ্ছা । কাজেই মনে মনে এই সংকল্প করবে যে, অমি আজ রোযা রাখছি । মুখে নিয়ত করা জরুরী নয় বরং উত্তম। মুখে নিয়ত করলে এভাবে করবে আমি আজ রোযা রাখার নিয়ত করলাম।

মাসআলাঃ কেউ যদি রোযার নিয়ত ব্যতীত সারাদিন না খেয়ে থাকে তবে তা রোয হিসেবে ধর্তব্য হবে না।

মাসআলাঃ রোযার নিয়ত রাতে করা উত্তম । তবে ফরয রোযার ক্ষেত্রে সূর্য ঢলে পড়ার পূর্ব পযন্ত নিয়ত করার অবকাশ রয়েছে। নফল রোযার ক্ষেত্রেও একই হুকম। তবে কাযা রোযার ক্ষেত্রে ‍সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়ত করা জরুরী।

মাসআলাঃ নিয়ত করার ‍শুরু সীমা হল পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে । কাজেই এর পূর্বে কেউ নিয়ত করলে তা সহীহ হবে না।

মাসআলাঃ রমযান মাসে অন্য যে কোন রোযার নিয়ত করলেও এই রমজানের রোযা আদায় হবে। অন্য রোযা আদায় হবে না।

সাহরীর মাসায়েল :

মাসআলাঃ সাহরী খাওয়া সুন্নত এবং ইহা একটি বরকতপূর্ণ কাজ । তাই পেট ভরা থাকলেও ফযীলত ও বরকত হাছিলের জন্য অন্তত এক ঢোক পানি হলেও খেয়ে নিবে।

মাসআলাঃ সাহরী এমন সময় খাওয়া শেষ করা সুন্নত যার অল্প কিছু সময় পরে সুবহে সাদিক হয় । তবে এত বিলম্ব করা জায়েয নেই যে, রোযার ব্যাপারেই সন্দেহ ‍সৃষ্টি হয়।

মাসআলাঃ সুবহে সাদিকের পর খানা – পিনা জায়েয নেই। চাই আযান হোক বা না হোক । অনেকে মনে করে আযানের পূর্ব পর্যন্ত খাওয়া যায় । যা সম্পূর্ন ভুল ধারনা । কেননা আযান সুবহে সাদিকের পরে দেওয়া হয়। কাজেই কেউ যদি আযানের পূর্ব পর্যন্ত খেতে ‍থাকে তবে তার খাওয়ার শেষ অংশ সুবহে সাদিকের মধ্যে পড়াই স্বাভাবিক । এমতাবস্থায় তার ঐ দিনের রোযা পরবর্তিতে ক্বাযা করে নেওয়া জরুরী।

মাসআলাঃ কোন কারনে সাহরী খেতে না পারলেও রোযা রাখতে হবে। একারনে রোযা ছেড়ে দেওয়া মারাত্ত্বক গুনাহ।

ইফতার-এর মাসআলাঃ

মাসআলাঃ ইফতার করা সুন্নত । সুর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত। ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরূহ।

মাসআলাঃ ইফতারের পূর্বে নিম্নোক্ত দুআটি বেশী বেশী পড়বে।
يا واسع الفضل اغفرلي
(অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী!আমাকে ক্ষমা করুন)

মাসআলাঃ ইফতার খেজুর বা খুরমা দ্বারা করা ‍সুন্নত । খেজুর না পেলে পানি দ্বারা করবে।

মাসআলাঃ ইফতার সাধারন খানা খাওয়ার দুআ পড়েই শুরু করবে। এরপর নিম্নোক্ত দুআ দুটি পড়বে:
اللهم لك صمت و علي رزقك افطرت
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোযা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করলাম )
কেউ কেউ মনে করে এই দুআটি ইফতার শুরু করার পূর্বে পড়তে হয়। অথচ তা সহীহ নয়। বরং হাদীসে ইফতার এর পরেই পড়ার কথা এসেছে।
ذهب الظمأ و ابتلت العروق و ثبت الاجر ان شاء الله
(অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে এবং রোযার ছাওয়াব নিশ্চিত হয়েছে ইনশা আল্লাহ)
আর ইফতারীর দাওয়াত খেলে মেযবানকে শুনিয়ে এই দুআ পড়বে –
افطر عندكم الصائمون و اكل طعامكم الابرار و صلت عليكم الملائكة
(অর্থঃ রোযাদারগন যেন তোমাদের বাড়িতে ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় আর ফেরেশতাগন যেন তোমাদের জন্য রহমতের দুআ করে)

যে সকল কারনে রোযার ক্ষতি হয় না:

০১. ভুলে পানাহার বা স্ত্রীসম্ভোগ করা।
০২. চোখে সুরমা লাগানো বা কোন ঔষধ দেওয়া যদিও সেই ঔষধের স্বাদ গলায় অনুভূত হয় ।
০৩. যে কোন ধরনের ইনজেকশন বা স্যালাইন গ্রহন করা । তবে রোযার কষ্ট লাঘব হওয়ার উদ্দেশ্যে খাবারের কাজ দেয় এমন ইনজেকশন বা স্যালাইন গ্রহন করা মাকরূহ ।
০৪. মেসওয়াক ব্যবহার করা । চাই ইফতারের পূর্বে হোক বা অন্য সময়। চাই কাচা হোক বা শুকনা ।
০৫. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া (যদিও মুখ ভরে হয়)।
০৬. ঘুমে সপ্নদোষ হওয়া।
০৭.বাচ্চাকে দুধ পান করানো ।
০৮. যদি রোযা অবস্থায় দাত দিয়ে রক্ত বের হয়ে কন্ঠনালীতে পৌছে যায় এবং তা পরিমানে কম হয় তবে রোযা নষ্ট হবে না। আর যদি রক্ত থুথু সমপরিমান হয় বা থুথু থেকে বেশি হয় তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তার কাযা করতে হবে।
০৯. রোযা আবস্থায় কাউকে রক্তদান করা । যদি রক্তদাতার শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে।
১০. গরম বা পিপাসার কারনে গোসল ও বারবার কুলি করা।
১১. শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করা।
১২. মুখে থুথু বা কফ জমা না করে গিলে ফেলা।
১৩. আতর ব্যবহার করা ও তার ঘ্রান নেওয়া।
১৪. সাপে কামড় দিলে।
১৫. কানে পানি ঢুকলে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢুকালে কারো কারো মতে রোযা ভেঙ্গে যায় । তাই এমতাবস্থায় কাযা করে নেওয়াই সতর্কতা।
১৬. মাস্কের সাহায্যে রোগী অক্সিজেন গ্রহন করলে। তবে যদি এর সাথে কোন ঔষধ গ্রহন করে তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করে নিবে।
১৭. রোযার নিয়ত করার পর অজ্ঞান বা পাগল হয়ে গেলে।
১৮. পান খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করার পরেও যদি লালচে ভাব থেকে যায়।
১৯. কাম-উত্তেজনার সাথে যদি শুধু তাকানোর দ্বারাই বীর্যপাত হয়ে যায়। তবে এমনটি করা মারাত্ত্বক গুনাহ।
২০. মশা-মাছি, ধোয়া, ধুলাবালি,পোকা-মাকড় অনিচ্ছাকৃত পেটে ঢুকে গেলে।
২১. পাইরিয়া রোগের কারনে সর্বদা রক্ত বের হলে এবং তা গলার মধ্যে চলে গেলে।
২২. এন্ডোস্কপি করা হলে। তবে কখনো কখনো চিকিৎসকগণ নলের মধ্যে দিয়ে পানি ছিটিয়ে থাকেন । সেক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর পানি না ছিটালে ভঙ্গ হবে না।
২৩.মুখে বমি এলে যদি তা নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভেতরে চলে যায়।
২৪. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া। তবে যুবকদের এ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা তা অধিকাংশ সময় বীর্যপাত বা সহবাস পর্যন্ত গড়ায় । যা রোযা ভঙ্গের কারন।
২৫. সাধারন পদ্ধতিতে এনজিওগ্রাম করলে।
২৬. গোসল ফরজ হলে সুবহে সাদিকের পূর্বে গোসল করতে না পারলে। তবে বিশেষ প্রয়োজন ব্যাতীত দীর্ঘ সময় এমতাবস্থায় থাকা অনুচিত।
২৭. নাইটোগ্লিসারিন এরোসল ব্যবহার করলে । যা হার্টের রোগীরা জিহবার নিচে স্প্রে করে থাকে । বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে তা সাথে সাথে শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিলে যায় । তাই রোযা ভঙ্গের কারন এতে পাওয়া যায় না। তবে রোগীর উচিত হল, স্প্রে করার সাথে সাথে তা গিলে ফেলবে না।
২৮. কুলি করার পরে ভালভাবে থুথু ফেলার পরও সামান্য কিছু পানি অবশিষ্ট থাকলে।

যেসব কারনে রোযা মাকরূহ হয়:

০১. যে কোন ধরনের কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হওয়া । যেমন: মিথ্যা, ঝগড়া, গালাগালী, সিনেমা দেখা ইত্যাদি।
০২.কয়লা, টুথপেষ্ট, পাওডার, মাজন, গুল ইত্যাদি দিয়ে দাতঁ মাজা। এগুলোর কোনটি সামান্য পরিমান পেটে গেলে রাযা ভেঙ্গে যাবে।
০৩. ছোলা-দানার চেয়ে ছোট কোন বস্তু দাঁতের ফাকে লেগে থাকলে তা বাইরে বের না করে গিলে ফেলা। বাইরে বের করলে তা যত ছোটই হোক কেন রোজা ভেঙ্গে যাবে।
০৪. ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করা।
০৫. কুলি করার সময় গড়গড়া করা।
০৬. নাকের ভিতরে পানি টেনে নেওয়া।
০৭. মুখে থুথু জমা করে তা গিলে ফেলা।
০৮. দিনের বেশির ভাগ সময় অপবিত্র (গোসল ফরজ) অবস্থায় থাকা।
০৯. রোযার কারনে অস্থিরতা বা কাতরতা প্রকাশ করা।
১০. শরঈ ওযর ব্যাতীত গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন নেয়া(যা খাদ্যের কাজ দেয়)।
১১. পুরুষাঙ্গের মধ্যে কোন তরল পদার্থ প্রবেশ করানো।
১২. এস্তেঞ্জার সময় মলদ্বার এমন ভাবে ধৌত করা যে, পানি ভেতরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১৩. স্ত্রীর ঠোট চোষা বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো রোযাদারের জন্য মাকরুহ।
১৪. বিনা কারনে কোন জিনিস চিবানো বা কোন কিছু চেখে দেখার জন্য জিহ্বায় লাগানো। যদিও তার কোন অংশ পেটে না যায় । তবে স্বামী বদ মেজাযী হলে মহিলা জিহ্বার আগা দিয়ে স্বাদ গ্রহন করে ভালভাবে থুথু ফেলে নিবে।
১৫. কাম-উত্তেজনার সাথে এমনভাবে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া যে মযী ( বীর্যের পূর্বে নির্গত তরল পদার্থ ) বের হয়ে যায়।
১৬. উলঙ্গ অবস্থায় স্বামী -স্ত্রী আলিঙ্গন করা (রোযা অবস্থায়)।
১৭. এমন ভাবে লিপিষ্টিক লাগানো যে মুখের ভিতরে চলে যাওয়ার আশংকা হয়।
১৮. এমন কাজ করা যার কারনে রোযাদার একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন – অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, শিঙ্গা লাগানো বা কাউকে রক্ত দেওয়া। তবে রক্ত দেওয়ার কারনে যদি দূর্বলতা না আসে তবে রক্ত দিতে কোন সমস্যা নেই।
১৯. পানিতে থাকা অবস্থায় বায়ু ত্যাগ করা। কেননা এতে পানি মলদ্বারে প্রবেশ করার আশংকা থাকে।

রোযা ভঙ্গের কারনসমূহ(যেগুলোতে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়) :

০১. নাকে বা কানে তেল বা ঔষধ প্রবেশ করানো।
০২. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
০৩. বমি কম হোক বা বেশি তা ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলা ।
০৪. বমি হওয়ার কারনে রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে মনে করে রোযা ভেঙ্গে ফেলা।
০৫. হস্তমৈথূন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে।
০৬.মহিলাদের যোনীতে তেল বা ঔষধ প্রবেশ করানো।
০৭. কেউ জোর করে রোযাদারের মুখে কোন কিছু দিলে এবং তা ভেতরে চলে গেলে।
০৮. স্ত্রী বা অন্য কাউকে উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করা বা চুমু খাওয়ার কারনে বীর্যপাত হলে।
০৯. ভুলে পানাহার বা স্ত্রীসম্ভোগ করার পর রোযা নষ্ট হয়ে গিয়েছে মনে করে পানাহর করলে।
১০. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে যদি তা থুথুর সমপরিমান বা বেশি হয় এবং তা পেটে চেলে যায়।
১১. আগরবাতি বা অন্য কোন কিছুর ধোয়া ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ বা নাকের ভেতরে প্রবেশ করালে ।
১২. অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন খাবার বা পানীয় গলার মধ্যে চলে গেলে।
১৩. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এমতাবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে ।
১৪. সূর্য অস্ত হয়ে গিয়েছে মনে করে ইফতার করলে।
১৫. রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।
১৬. অর্ধ-দিবসের পরে রোযার নিয়ত করলে।
১৭. দাতে আটকে থাকা (ছোল-দানা সমপরিমান বা তার থেকে বড়) খাবার বাইরে বের না করে গিলে ফেলা।
১৮. খাবার নয় এমন জিনিস খাওয়া । যেমন কাগজ,মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
১৯. হাপানী রোগের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করা ।
২০. ভেজা আঙ্গুল যোনী বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালে।
২১.অন্যের হুমকির কারনে বাধ্য হয়ে রোযা ভেঙ্গে ফেললে।
২২. রোযার নিয়ত একেবারে না করলে পরবর্তিতে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়।
২৩. এস্তেঞ্জার সময় মলদ্বারে পানি ঢুকে গেলে ।
২৪. স্ত্রী বেহুশ বা প্রবল ঘুমের সময় সহবাস করা হলে স্ত্রীর উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে ।
২৫. মাথার এমন জখমে ঔষধ লাগানো যেখান থেকে ঔষধ মস্তিষ্কে চলে যায় ।
২৬. পেটের এমন ক্ষতে ঔষধ লাগানো যেখান থেকে ঔষধ পেটের ভেতরে চলে যায়।
২৭. রোযা অবস্থায় হায়েয বা নেফাসে শুরু হলে।

রোযা ভঙ্গের কারন সমূহ ( যে গুলোতে কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব ):

০১.রোযা রাখার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা স্ত্রী -সম্ভোগ (চাই পেছনের রাস্তায় হোক) করলে । এক্ষেত্রে স্ত্রী উপরেও কাযা কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে । স্ত্রীর সামনের বা পেছনের রাস্তায় পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করাই কাফফারার জন্য যথেষ্ট, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক।
০২. স্বামী- স্ত্রীর কেউ যদি অপরের সাথে বল প্রয়োগ করে সহবাস করে তবে উভয়ের উপর কাযা ওয়াজিব। তবে বল প্রয়োগকারীর উপর কাফফারাও বর্তাবে।
০৩. রোযা ভাঙ্গে না এমন কোন কাজ করার পর রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে ধারনা করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।
০৪. ধুমপান করলে।
০৫.সমকামীতা করলে।
০৬. সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছে স্পষ্টভাবে জানার পরেও পানাহার করলে অথবা সূর্যাস্ত হয়নি স্পষ্টভাবে জানার পরেও কোন বাহানায় ইফতার করলে।

কাফফারার মাসআলাসমূহ:

মাসআলাঃ রোযার কাফফারা হল, একটি রোযার জন্য (একটি কাযা রোযা ব্যতীত)টানা ২ মাস রোযা রাখতে হবে।

মাসআলাঃ কাফফারা যদি চান্দ্র মাসের পহেলা তারিখে শুরু করে তবে দুমাস রোযা রাখলেই হবে । আর যদি মাসের মাঝখান থেকে শুরু করে তবে ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পূর্ন করতে হবে ।

মাসআলাঃ এই ৬০ দিন রোযা রাখতে গিয়ে যদি কোন কারনে ধারাবাহিকতা ছুটে যায় তবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে ।

মাসআলাঃ কাফফারার রোযা আদায় করতে গিয়ে যদি মধ্যখানে দুই ঈদের কোনদিন এসে পড়ে তবে পূনরায় নতুন করে শুরু করতে হবে।

মাসআলাঃ হায়েযের কারনে মহিলাদের যে দিনগুলো বিরতী যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই । কিন্ত নেফাসের কারনে বিরতী পড়লে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।

মাসআলাঃ পুরো এক রমজানে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে,চাই যত গুলো রোযা ইচ্ছাকৃত ভাঙ্গা হোক না কেন । ভিন্ন বছরের রমজানের কারনে ভিন্ন কাফফারা ওয়াজিব হবে।

মাসআলাঃ কাফফারার রোযার নিয়ত সুবহে সাদিকের পূর্বে করা জরুরী।

মাসআলাঃ যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোযা রাখতে সমর্থ না হয় তবে সে ৬০ জন মিসকীনকে দুবেলা পেট ভরে খাওয়াবে । অথবা তাদের প্রত্যেককে একটি ফেতরা পরিমান (১৬৬২ গ্রাম) গম বা আটা কিংবা তার মুল্য দিয়ে দিবে।

মাসআলাঃ একজন মিসকীনকে ৬০দিন দুবেলা পেট ভরে খাওয়ালে অথবা ৬০ দিনের প্রতিদিন একটি করে ফেতরা আদায় করলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে । তবে একজনকে ৬০ দিনেরটা এক দিনেই দিয়ে দিলে এক দিনের কাফফারা আদায় হবে। অবশ্য খানা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে মাঝে দু-একদিন বিরতী পড়লে কোন সমস্যা নেই।

যাদের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে:

০১.মুসাফিরের জন্য শরঈ সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে । তবে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। না রাখলে পরে কাযা করে নিবে।
০২. হায়েয নেফাস অবস্থায় মাহিলারা রোযা ছেড়ে দিবে । এমতাবস্থায় রোযা রাখা জায়েয নেই। পরে কাযা করে নিবে।
০৩.যদি রোযা রাখার কারনে রোগীর রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় অথবা সুস্থতা বিলম্বিত হয় তবে দ্বীনদার বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয আছে। পরে কাযা করে নিবে।
০৪. গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারিনী মহিলা রোযা রাখলে যদি তার বা সন্তানের প্রানহানী বা সাস্থ্যহানীর প্রবল আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয।
০৫.কেউ যদি কাউকে রোযা ভাঙ্গার হুমকি দেয় যে, সে রোযা রাখলে তাকে হত্যা করবে বা মারাত্মক কোন ক্ষতি করবে তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয।পরে কাযা করে নিবে।
০৬. শারীবিক দূর্বলতার কারনে যদি রোযা রাখলে নতুনভাবে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিবে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে বাহানা তালাশ করে রোযা ছেড়ে দেওয়া অনেক বড় গুনাহের কাজ ও জঘন্যতম অপরাধ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা অন্তরের খবর সম্পর্কে সম্যক অবগত।
০৭. বার্ধক্যজনিত কারনে কেউ রোযা রাখতে সক্ষম না হলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে সে রোযার ফিদয়া আদায় করবে । অনরুপ ভাবে রোযা রাখতে অক্ষম এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির যদি ভবিষ্যতে রোগমুক্তির আশা না থাকে সেও ফিদয়া আদায় করবে।

ফিদয়া সংক্রান্ত মাসায়েল:

মাসআলাঃ ফিদয়া হল প্রতিটি রোযার পরিবর্তে ১জন মিসকীনকে দুবেল পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা ছদকায়ে ফিতর(১৬৬২ গ্রাম) পরিমান গম বা আটা কিংবা তার মুল্য ছদকা করে দেওয়া।

মাসআলাঃ রোযার ফিদয়া কেবল দুধরনের লোক দিতে পারবে। ১। অতিশয় বৃদ্ধ যার রোযা রাখার সামর্থ নেই। ২। রোযা রাখাতে অপারগ এমন রোগী যার ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার কোন আশা নেই। কাজেই এই দুধরনের লোক ব্যতীত যারা সাময়ীক কারনে আপাতত রোযা রাখতে পারছেন না তারা ফিদয়া দিতে পারবেন না বরং পরবর্তিতে কাযা করে নিবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি তার জিম্মায় থাকা কাযা রোযা আদায় করতে না পারে তবে তার জন্য মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরী। ওছিয়ত করে গেলে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা হবে।

মাসআলাঃ যদি উক্ত ব্যক্তি ওছিয়ত না করে থাকে তবে এজমালী সম্পদ থেকে ওছিয়ত আদায় করা যাবে না। তবেঁ যদি সকল ওয়ারিশগন শত:স্ফূর্ত অনুমতি দিয়ে দেয় তবে সেক্ষেত্রে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিবেন।

উল্লেখ্য যে, ওয়ারিশগনের মধ্যে কোন নাবালেগ থাকলে তার অনুমতি সাপেক্ষেও তার সম্পদ থেকে ফিদয়া আদায় করা যাবে না।
মাসআলা: ওযরের কারনে যারা রোযা রাখতে পারেনি তারা যদি উক্ত ওযর অবস্থায় মারা যায় তবে তাদের জন্য কাযা বা ফিদয়ার ওছিয়ত কোনটিই জরুরী নয়। ওযর দূরীভূত হয়ে যাওয়ার পর যদি সময় পাওয়া সত্তেও কাযা না করে তবে যে কয়দিন সে সময় পেয়েছে সেই দিনগুলোর ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরি।

মাসআলাঃ একটি রোযার পরিবর্তে একটি ফিদয়া দিতে হয়। রমযান শুরু হলে পুরো মাসের ফিদয়া একত্রে দেওয়া যায় ।

মাসআলাঃ যাদের জন্য ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা যদি ভবিষ্যতে কখনও রোযা রাখতে সমর্থ হয়ে যায় তবে তাদের ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করতে হবে। যদিও তারা ফিদয়া আদায় করে থাকে । অবশ্য সে ফিদয়ার জন্য ছদকার ছাওয়াব পাবে।

মাসআলাঃ একটি ফিদয়া একজনকে দেওয়া উওম, তবে একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া য়ায়। অনুরুপভাবে একাধিক ফিদয়াও একজনকে দেওয়া যায়।

মাসআলাঃ নাবালেগকে ফিদয়া দিলে বা খাওয়ালে তা আদায় হবে না।

রমযানে সফর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি মাসআলা:

মাসআলাঃ মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।

মাসআলাঃ মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।

বিবিধ মাসআলা:

মাসআলাঃ রমজান মাসের দিনের বেলায় যদি কোন মহিলা হায়েয বা নেফাস থেকে পাক হয় অথবা নাবালেগ বালেগ হয় অথবা মুসাফির মুকীম হয় অথবা কোন কারনে কারো রোযা ভেঙ্গে যায় তবে সকলকে রমযানের সম্মান রক্ষার জন্য দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরতি থাকতে হবে। যদিও তাদেরকে উক্ত দিনের রোযা পরবর্তিতে কাযা করে নিতে হবে।

মাসআলাঃ যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যে, প্রাণের আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয।

মাসআলাঃ কাযা রোযার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত করা জরুরী। অন্যথায় রোযা সহীহ হবে না। নফল রোযার নিয়ত সুর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত করা যায়।

মাসআলাঃ বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম। দুই ঈদের দিন এবং ক্বোরবানীর ঈদ পরবর্তি ৩ দিন।

Loading