রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لا ينظر الله فيها إلى مشرك و لا إلى مشاحن و لا إلى قاطع رحم و لا إلى مسبل و لا إلى عاق لوالديه و لا إلى مدمن خمر
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা এই রাতে মুশরিকের প্রতি, হিংসুকের প্রতি, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর প্রতি, টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা (পুরুষদের) প্রতি, পিতামাতার অবাধ্যের প্রতি এবং শরাব পানকারীর প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন না (অর্থাৎ এদেরকে মাফ করেন না)।–বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৭
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَطَّلِعُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ إِلَّا لِاثْنَيْنِ مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) তার সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন। অতঃপর মুশরিক এবং হত্যাকারী এই দুইজন ব্যতীত তার (সকল) বান্দাদেরকে মাফ করে দেন।–মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৬৬৪২
অন্য হাদীসে রয়েছে-
عن عثمان بن أبي العاص عن النبي صلى الله عليه و سلم قال إذا كان ليلة النصف من شعبان فإذا مناد
هل من مستغفر فاغفر له هل من سائل فأعطيه فلا يسأل أحد إلا أعطي إلا زانية بفرجها أو مشرك
অর্থঃ হযরত উসমান ইবনে আবীল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ-শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) হয় একজন আহ্বানকারী বলতে থাকে, আছে কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কোন যাচনাকারী? আমি তাকে (তার চাওয়া বস্তু) দান করব। এভাবে যে-ই কোন কিছু চায় তাকে তা দেওয়া হয় তবে লজ্জাস্থান দ্বারা যিনাকারী ও মুশরিক ব্যতীত।-বাইহাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং ৩৮৩৬
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝে আসে যে, এ রাতে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদেরকে মাফ করা হবে না-
১। যে ব্যক্তি শিরকী কর্মকান্ডে লিপ্ত।
২। যারা অন্যের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষন করে।
৩। হত্যাকারী।
৪। যে যিনা করে।
৫। যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে।
৬। যে সকল পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে।
৭। পিতা-মাতার অবাধ্যকারী।
৮। যারা শরাব পান করে ইত্যাদি।
উপরোক্ত গুনাহ সমূহে যারা অভ্যস্ত, তারা এ রাতে সাধারণ ক্ষমার আওতাভুক্ত হবে না। তাই প্রত্যেক মুনিনের উচিত বিশেষ করে উক্ত গুনাহ সমূহ থেকে বরং সমস্ত গুহান থেকে বেঁচে থাকা। কেউ এগুলোতে আক্রান্ত হলে খালেছভাবে তাওবা করে এবং এগুলো থেকে মুক্ত হয়ে এ রাতে ক্ষমার উপযুক্ত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন-
‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেছ দিলে তওবা করে যিকির, দুআ ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামায পড়বে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যানের মওসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্য দেওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে ছাওয়াব লাভের আশা নিয়ে পনের তারিখের রোযাও রাখবে। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দুআ কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যথা : শিরক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ। এগুলো সবগুলোই কবীরা গুনাহ। আর হিংসা-বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীন সম্পর্কে অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ ও গর্হিত অপরাধ। এজন্য মুসলমানদের কর্তব্য হল সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পাক-পবিত্র রাখা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরী ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফিরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’-লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬

Loading