কুরবানী কার উপরে ওয়াজিব?

১০ যিলহজ ফজর থেকে ১২ যিলহজ সুর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কোন সুস্থমস্তিষ্ক,প্রাপ্তবয়স্ক,মুসলিম নর-নারী ঋনমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় তবে তার কুরবানী করা ওয়াজিব। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
মাসআলাঃ নাবালেগ,পাগল নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে থেকে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬
মাসআলাঃ মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। মুসাফির দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
মাসআলাঃ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য কুরবানীর তিন দিনই মুকীম থাকা জরুরী নয়।বরং কেউ যদি এই ৩দিনরে শুরুতে মুসাফির থাকে এবং শেষের দিকে মুকীম হয়ে যায় তবে নেসাবের মালিক হলে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে।তবে কেউ যদি এই ৩দিনরে শুরুতে মুকীম থাকে এবং শেষের দিকে মুসাফির হয়ে যায় তাহলে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে না। বাদায়েউস সানায়ে -৪/১৯৫
মাসআলাঃ কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। মাতা পিতা সন্তানাদি ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে করলে তা নফল হবে । রদ্দুল মুহতার -৬/৩১৬
মাসআলাঃ গরীব ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে সে কুরবানীর নিয়তে কোন পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
মাসআলাঃ যে সকল হাজী মক্কা,মিনা ও মুযদালেফা মিলে কুরবানীর সময় ১৫ দিন থাকবে তারা মুকীম। নেসাবের মালিক হলে হজ্বের কুরবানী ব্যতীত তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানীও ওয়াজিব। আর যারা মুসাফির থাকবেন তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৫/২৯৩)

কুরবানীর নেসাবঃ

যদি কারো নিকট (১)সাড়ে সাত তোলা(ভরি) পরিমান সোনা থাকে অথবা (২)সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা থাকে অথবা (৩)সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান টাকা-পয়সা বা ব্যবসার মাল অথবা প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকে অথবা (৪)উল্লেখিত পাঁচটি (সোনা, রুপা, টাকা-পয়সা, ব্যবসার মাল ও প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ ) সম্পদই থাকে যার সমষ্টিগত মূল্য উপরোক্ত পরিমান সোনা( সাড়ে সাত তোলা) বা রুপার(সাড়ে বায়ান্ন তোলা) যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান হয় অথবা (৫) উল্লেখিত পাঁচটি সম্পদের যে কোন চারটি বা তিনটি বা দুটি সম্পদ থাকে যার সমষ্টিগত মূল্য উপরোক্ত পরিমান সোনা বা রুপার (সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা) যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান হয়, তবে সে নেসাবের মালিক হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে।

মাসআলাঃ শুধু সোনা থাকলে কুরবানীর নেসাব হল সাড়ে সাত তোলা (ভরি) স্বর্ণ।

মাসআলাঃ শুধু রুপা থাকলে কুরবানীর নেসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা।

মাসআলাঃ বাকি সকল সূরতে কুরবানীর নেসাব হল (শুধু টাকা-পয়সা থাকলে অথবা শুধু ব্যবসার মাল থাকলে অথবা শুধু প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটি সম্পদের প্রত্যেকটি থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন চারটি সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন তিনটি দুটি সম্পদ থাকলে অথবা পাঁচটির যে কোন দুটি সম্পদ থাকলে) সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ থাকা।

মাসআলাঃ ধরা যাক,বর্তমান বাজারে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য ৬৫,০০০ টাকা। এখন কারো নিকট ২ তোলা/ভরি সোনা রয়েছে যার বিক্রয়মূল্য ৮০,০০০ টাকা। আর উক্ত সোনার সাথে তার নিকট ১ টাকা রয়েছে। উক্ত ১ টাকা থাকার কারনে তার নেসাব সোনা থেকে রুপার দিকে পরিবর্তন হবে। কেননা তার মালিকানায় দুই প্রকার সম্পদ জমা হয়েছে । আর এই দুই প্রকার সম্পদের মুল্যমান যেহেতু সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য তথা ৬৫,০০০ টাকা থেকে বেশি তাই সে নেসাবের মালিক হবে। অর্থাৎ যখন উপরে উল্লেখিত পাঁচটি সম্পদের কোন একটির সাথে আরেকটি সম্পদ মিলানো হবে তখন ঐ মিলানো সম্পদটি পরিমানে যত কমই হোক না কেন (এক আনা সোনা বা রুপা অথবা ১ টাকা বা তার সমপরিমান ব্যবসার মাল) তা ধর্তব্য হবে। এবং তার নেসাব রুপা দ্বারা গণ্য করা হবে। অর্থাৎ যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ মিলে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য পরিমান হয় তবে সে নেসাবে মালিক গন্য হবে।

মাসআলাঃ যেহেতু রুপার নেসাবের মুল্যমান সোনার নেসাবের মূল্যমান থেকে কম তাই শুধুমাত্র সোনা থাকার সুরত ব্যতীত বাকি সকল সুরতে রুপা দ্বারা নেসাব নির্ধারণ হবে। অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমান সম্পদ থাকলে সে নেসাবের মালিক হবে।

মাসআলাঃ কুরবানীর নেসাব কুরবানীর তিন দিনের কোন একদিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে । কুরবানীর তিন দিন বা সারা বছর নেসাব থাকা জরুরী নয় ।- রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২, বাদাউস সানায়ে ৪/১৯৬

Loading