প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, আমার একটা সমস্যা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত, উত্তর দিলে খুবই উপকৃত হব। আমি অনেকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু সবাই নিজের মন মত উত্তর দেয়। তাই আপনার কাছে সমস্যাটি বলছি। আমার ছোটবেলা থেকে আমি আর আম্মু আমার নানুবাড়ি থাকতাম। আমার আব্বু অন্য জায়গায় চাকরি করত। আমাদের ভরণপোষণ তেমন দিতেন না। আমার দাদার বাড়িতে সব টাকা দিতেন। আমার আম্মুই আমার খরচ দিতেন। আমার ৫ বছর বয়সে আমরা আলাদা বাসা নেই এবং আব্বুকে ট্রান্সফার করে আনানো হয়। তখন আমার বোনের জন্ম হয়। কিন্তু আসার পরে আমার আর আম্মুর উপর অনেক অত্যাচার করা শুরু করেন। আমাকে আব্বু একদমই সহ্য করতে পারতেন না। একপর্যায়ে আমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমার আব্বু সব টাকা আমার দাদার বাড়িতে দিয়ে দিতেন। আমরা আম্মুর টাকায় চলতাম। আর সবসময়ই আমাকে এবং আম্মুকে গালি গালাজ, মারধর করতেন। আর আল্লাহর গজব দিতেন। সবার সামনে অপমান করতেন। এইভাবে আমি ১৯ বছরে পা দেই। আমার সরকারি মেডিকেলে চান্স হয় এবং আমি হোস্টেলে আসি। ৪ মাসের মাথায় আমার আম্মু রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। আর আমার আব্বু সবসময় এই অভিশাপই দিতেন। তারপর আব্বুর ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। সবার মনে হয় তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমিও আব্বুকে আপন করে নিতে থাকি। আমার আম্মুর পেনশন এর সব টাকা আমি এবং আমার বোন আমার আব্বুর নামে দিয়ে দেই। তারপর আমার মামা খালারা জোর করে কিছু টাকা আমার নামে দেন। কিছুদিন পর আমার চাচা, ফুপু, একজন খালু আব্বুকে আমার বিরুদ্ধে বোঝান। ফলে আবার আমার উপর অত্যাচার শুরু হয়। আর আমার টাকাও আব্বুর কাছে রাখতে চায়। আম্মু মারা যাওয়ার পর আমরা এবং আব্বু আমার এক খালার সাথে থাকি এবং তাদের সাথেও আব্বু খারাপ ব্যবহার করেন। আমার আব্বু ভাবেন আমি আমার মামা খালাদের ভালোবাসি উনাকে বাসি না। ২০১৬ তে রোজার দিনে বাসায় এসে অন্যদের প্ররোচনায় আমাকে কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমার খালা এর জবাব দিলে আমার বোনকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যান। পরে আমার বোনকে নিয়ে আসি আমি আমার কাছে। এতে আমার বাবা এলাকার গুণ্ডা দিয়ে ধমকান। আমার খালাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তখন আব্বুর বিরুদ্ধে আমরা মামলা করি। আমার আব্বু আমাদের কোন ভরণপোষণ দেন না, তিনি আলাদা হয়ে যান। কয়েকমাস পর আমার বোনকে তার কাছে নিয়ে যান এবং আমার বোনের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আমি আমার আব্বুর সাথে মিলার চেষ্টা করি কিন্তু তিনি শর্ত দেন আমার মামা খালার সাথে কোন যোগাযোগ রাখা যাবে না। উল্লেখ্য ছোটবেলা থেকে আমি আমার খালা আর মামার আদরেই বড় হয়েছি। আমাদের ভরণপোষণ এবং বিপদ আপদে উনারাই আসতেন। বাবার আদর কি কখনো বুঝিই নাই। আর আমার বাবা আমার চাচা ফুফু যা বলে তা ই বিশ্বাস করেন আমাকে বিশ্বাস করেন না। এমনকি আমার একজন কুচক্রী খালুর কথা আমার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। তাই আমি এই শর্তে রাজি হই না। গতবছর আব্বু অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আমি দেখতে বাড়িতে যাই। তিনি আমার সাথে কোন কথা বলেন না। আমার চাচাকে ডাকেন আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। পরে আমি চলে আসি। আর আমার ভরণপোষণ আম্মুর পেনশনের টাকা থেকে চালাই। আমার আব্বুর কথা এলাকার সবাই জানে। তাই আমার কোন ভালো বিয়ে আসে না। আর আসলেও আমার অবস্থা দেখে চলে যায়। পিতামাতার অবাধ্য সন্তানের কোনো ইবাদত নাকি কবুল হয় না। আমি কি অবাধ্য সন্তান? আমার খুবই খারাপ লাগে আমার আব্বু আর বোনের জন্য আমার করনীয় কি?
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
প্রিয় দ্বীনী বোন, ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আসলেই মর্মান্তিক। এক্ষেত্রে আপনার করনীয় হল, যে কোন ভাবে আপনার আব্বাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা। হাদীস শরীফে আছে পিতামাতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি। হাদীস শরীফে আছে পিতা মাতা মুশরিক হলেও তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। আপনার পিতা আপনাদের জন্য কতটুকু করেছেন বা কতটুকু হক নষ্ট করেছেন তার জবাবদিহি তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট করবেন। আর আপনি আপনার পিতার কোন হক নষ্ট করেছেন কিনা সে ব্যাপারে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। তাই তার হকের ব্যাপারে যত্নবান হোন। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আপনার জন্য একটি পরীক্ষা।
আর আপনার পিতার বিরুদ্ধে আপনার মামলা করা সঠিক হয়নি। আপনার বোন যেহেতু আপনার পিতার নিকট থাকছেন আপনিও থাকার চেষ্টা করুন। এটা হয়তোবা আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও ভালো হবে। তিনি মামা খালাদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে বললে আপাতত মেনে নিন। সবর ও হেকমত অবলম্বন করলে ইংশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। সর্বশেষে আপনার জন্য রইল অশেষ দুআ যাতে আল্লাহ তাআলা সব সহজ করে দেন।