ঘুমানোর সুন্নাত সমূহ

১। ইশার নামাযের পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯৬)
২। ইশার পর অপ্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৯৪)
৩। ঘুমানোর পূর্বে বাতি নিভিয়ে দেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৬৮)
৪। ঘুমানোর পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করে দেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৬২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৬৮)
৫। খাবার ও পানির পাত্র সমূহ বিসমিল্লাহ বলে ঢেকে রাখা। যদি ঢাকার জন্য কোন কিছু পাওয়া না যায় তবে অন্তত একটি লাঠি হলেও তা দ্বারা পাত্র ঢেকে রাখবে। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬২৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৫০১৫)
৬। উযূ করে শয়ন করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৫৭)
৭। শোয়ার পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১৭৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৩৩১৮)
৮। শয়রের পূর্বে বিছানা বিসমিল্লাহ বলে ভালভাবে ঝেড়ে নেওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৬৭)
৯। ঘুমানোর পূর্বে কিছু পরিমান কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম থেকে বেশ কিছু সূরা বা আয়াত তিলাওয়াতের কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেকে তার সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী নিম্নোক্ত সূরাগুলো তিলাওয়াত করবে-
(ক) সূরা কাফিরুন। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫০৫৭)
(খ) আয়াতুল কুরসী। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫০০৮)
(গ) সূরা মুলক। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৮৯২)
(ঘ) আলিফ লাম মীম তানযীল। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৮৯২)
(ঙ) آمَنَ الرَّسُولُথেকে সূরা বাক্বারার শেষ পর্যন্ত পড়া। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৫৫১)
এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সূরা ঘুমের পূর্বে তিলাওয়াতের কথা হাদীস শরীফে বনির্ত আছে। যেমন সুরা যুমার, বনী ইসরাঈল ইত্যাদি। তবে অন্তত ছোট একটি সূরা হলেও পড়ে নিবে। কেননা হাদীস শরীফে বনির্ত আছে কেউ শয়নের পূর্বে কুরআন শরীফের কোন একটি সূরা তিলাওয়াত করলে ক্ষতিকারক কোন কিছু তার নিকটবর্তী হাত পারবে না। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৪০৭; আস সুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদীস নং ১০৫৪৮)
১০। তাসবীহে ফাতেমী অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩বার আলহামদু লিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৩৬১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯০)
১১। সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে হাতে দম করে (ফুঁক দিয়ে) মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত যথাসম্ভব পূরো শরীরে হাত মুছে দেওয়া। এমন তিনবার করা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫০১৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫০৫৮)
১২। ঘুমানোর সময় ডান কাতে কিবলামুখী হয়ে শয়ন করা এবং ডান হাত ডান গালের নীচে রাখা। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ২৩৬৬; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৩৯৯)
১৩। অতঃপর এই দুআ পড়া-
اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৪২২৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫০৪৭)
১৪। ঘুমানোর পূর্বে তিনবার এই ইস্তেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১১০৭৪; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৩৩৯৭)
১৫। অতঃপর নিম্নোক্ত দুআ সমুহ পড়া-
(ক) بِاسْمِكَ رَبِّ وَضَعْتُ جَنْبِي وَبِكَ أَرْفَعُهُ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭৩৯৩)
(খ) اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৩২৪)
(গ) সর্বশেষে এই দুআটি পড়া-
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
(সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭৪৮৮)
১৬। শোয়ার পর ঘুম না এলে বা ভয় পেলে এই দুআ পড়া-
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
(সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৮৯৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২০১০)
১৭। স্বপ্নে ভয়ঙ্কর কোন কিছু দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলবে। অতঃপর এই দুআ পড়বে-
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
তারপর এই দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اِنِى أَعُوذٌ بِكَ مِن شَر ھذه الرؤیا
এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে শয়ন করবে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৩৪, ৬০৪০, ৬০৪১)
১৮। উপুড় হয়ে না শোয়া। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৭৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮০৪১)
১৯। এক পা খাড়া করে তার উপর অপর পা রেখে চিত হয়ে এমনভাবে শয়ন না করা যাতে সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সতর না খুললে এভাবে শোয়তে অসুবিধা নেই। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬২৫; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৭৬৬)
২০। পারতপক্ষে রাতে সম্পূর্ন একাকী শয়ন না করা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৫৬৫০)
২১। দুপরে খাওয়ার পর কিছু সময় কায়লূলা (শয়ন) করা যদিও বা ঘুম না আসে। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬২৭৯; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৪৩৬৮)

Loading