প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম সালাফিরা বলেন: সালাতুল হাজত নামায বলে কিছুই নাই, এগুলো ফালতু কথা। কোন সহীহ হাদীস নেই! আসলেই কি নেই? আমরা সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। বিষয়টি একটু পরিস্কার করবেন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। عن عثمان بن حنيف أن رجلا ضرير البصر أتى النبي صلى الله عليه و سلم فقال ادع الله أن يعافيني فقال إن شئت أخرت لك وهو خير وإن شئت دعوت فقال ادعه فأمره أن يتوضأ فيحسن وضوءه ويصلي ركعتين ويدعو بهذا الدعاء اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بمحمد نبي الرحمة يا محمد إني قد توجهت بك إلى ربي في حاجتي هذه لتقضى اللهم فشفعه في
অর্থঃ হযরত উসমান ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দুআ করুন, যাতে তিনি আমাকে রোগমুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি চাইলে আমি দুআ করতে বিলম্ব করব, যা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আর যদি তুমি চাও, তাহলে আমি এখনই তোমার জন্য দুআ করব। তখন সে বলল, দুআ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে উযূ করে দুই রাকাআত নামায পড়তে বললেন। এবং এই দুআ করতে বললেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ يَا مُحَمَّدُ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ فَتَقْضِي لِي اللَّهُمَّ شَفِّعْهُ فِيَّ
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩৮৫; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৫৭৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১২১৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ১৯০৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৭২৪০
হাদীসটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ।
২। عن أنس رضي الله عنه قال أن النبي صلى الله عليه و سلم قال يا علي ألا أعلمك دعاء إذا أصابك غم أو هم تدعو به ربك فيستجاب لك بإذن الله ويفرج عنك توضأ وصل ركعتين واحمد الله وأثن عليه وصل على نبيك واستغفر لنفسك وللمؤمنين والمؤمنات ثم قل اللهم أنت تحكم بين عبادك فيما كانوا فيه يختلفون لا إله إلا الله العلي العظيم لا إله إلا الله الحليم الكريم سبحان الله رب السموات السبع ورب العرش العظيم الحمد لله رب العالمين اللهم كاشف الغم مفرج الهم مجيب دعوة المضطرين إذا دعوك رحمن الدنيا والآخرة ورحيمهما فارحمني في حاجتي هذه بقضائها ونجاحها رحمة تغنيني بها عن رحمة من سواك
অর্থঃ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আলী, আমি কি তোমাকে এমন দুআ শিখাবো না, যখন তোমাকে কোন চিন্তা বা পেরেশানি স্পর্শ করবে তা দ্বারা দুআ করলে আল্লাহর হুকুমে তোমার দুআ কবূল করা হবে এবং তোমার পেরেশানি দূর হয়ে যাবে। তুমি উযূ করবে এবং দুই রাকাআত নামায পড়বে। অতঃপর আল্লাহ তাআলার হামদ ও ছানা পাঠ করবে। এরপর তোমার নবীর উপর দুরূদ পাঠ করবে এবং তোমার জন্য ও সকল মুমিন মুমিনাতের জন্য ইস্তেগফার করবে। তারপর (এই দুআ) বলবে-
اللهم أنت تحكم بين عبادك فيما كانوا فيه يختلفون لا إله إلا الله العلي العظيم لا إله إلا الله الحليم الكريم سبحان الله رب السموات السبع ورب العرش العظيم الحمد لله رب العالمين اللهم كاشف الغم مفرج الهم مجيب دعوة المضطرين إذا دعوك رحمن الدنيا والآخرة ورحيمهما فارحمني في حاجتي هذه بقضائها ونجاحها رحمة تغنيني بها عن رحمة من سواك
-আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ১০২০
আল্লামা মুনযীরী (রহঃ) মূলনীতি অনুযায়ী এই হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য। (ইলাউস সুনান ৭/৪১)
উপরোক্ত দুটি হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, কেউ কোন বিপদ বা পেরেশানিতে পড়লে অথবা কারো কোন প্রয়োজন দেখা দিলে উযূ করে দুই রাকাআত নামায পরে হাদীসে উল্লেখিত বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করবে। এতে তার পেরেশানি দূর হয়ে যাবে ইংশাআল্লাহ। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও দুই রাকাআত নামায পড়ার আদেশ করেছেন। আর এটাই সালাতুল হাজাত। ইমাম তিরমিজী (রহঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) তাদের সুনানে অনুরূপভাবে আল্লামা নূরুদ্দীন হাইছামী (রহঃ) মাজমাউয যাওয়ায়েদে “সালাতুল হাজাত” নামক অধ্যায় কায়েম করেছেন।(সুনানে তিরমিজী, আবওয়াবুল বিতরি, অধ্যায় নং ৩৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবু ইকামাতুস সালাত, অধ্যায় ১৮৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদে, কিতাবুস সালাত, অধ্যায় ৩০৬ দ্রষ্টব্য) কাজেই যেখানে এতবড় পাহাড়তুল্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম “সালাতুল হাজাত” নামক অধ্যায় কায়েম করেছেন এবং একাধিক হাদীস সেখানে এনেছেন সেক্ষেত্রে “সালাতুল হাজাত বলে কিছুই নেই বা কোন সহীহ হাদীস নেই” এগুলো বলা কি বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন নয়? বাস্তবতার বিপরীত বা মিথ্যা নয়?
আসলে এদের উদ্দেশ্যই মনে হয় উম্মতকে আমল থেকে বঞ্চিত করা এবং তাদের মাঝে ফেতনা সৃষ্টি করা। তাই এদের বক্তব্য শোনাই উচিত নয়। আর অসংখ্য হক্কানী উলামায়ে কেরাম থাকতে এদের কথা শুনে বিভ্রান্ত হওয়ারও বা কি দরকার?