ইকামতের সময় ইমাম এবং মুক্তাদী কখন দাড়াবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামাযের সময় আম্মাজানদের হুজরা থেকে বের হয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতেন। তবে কোন কোন সময় মসজিদের মধ্যে পূর্ব থেকেই উপবিষ্ট থাকতেন। এই দুই অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের নামাযের জন্য দন্ডায়মানের প্রকৃতি ও সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন ছিল। প্রথমে আমরা উভয় অবস্থার হাদীস গুলো উল্লেখ করবো এরপর তা পর্যালোচনা করব ইংশাআল্লাহ।
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা থেকে মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন আমলের পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপ-
كَانَ بِلاَلٌ يُؤَذِّنُ إِذَا دَحَضَتْ فَلاَ يُقِيمُ حَتَّى يَخْرُجَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فَإِذَا خَرَجَ أَقَامَ الصَّلاَةَ حِينَ يَرَاهُ
১। হযরত বেলাল (রাঃ) সূর্য ঢলে পড়লে (যোহরের) আযান দিতেন। আর ইকামত বলতেন না যতক্ষণ না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হুজরা থেকে) বের হতেন। যখন তিনি বের হতেন তাকে দেখে নামাযের ইকামত বলতেন।- সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০০
এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় হযরত বেলাল (রাঃ) যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না দেখতেন ততক্ষণ ইকামত বলতেন না। তাকে দেখার পরই ইকামত বলা শুরু করতেন।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ تَقُومُوا حَتَّى تَرَوْنِى قَدْ خَرَجْتُ
২। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন নামাযের ইকামাত বলা হবে, তোমরা দাড়াবে না যতক্ষণ আমাকে বের হতে না দেখ।- সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৬; সহীহুল বুখারী হাদীস নং ৯০৯
এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের জন্য বের না হওয়া পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) দাড়াতেন না। বরং বের হলেই পরে দাড়াতেন।
উপরোক্ত দুটি হাদীস থেকে সমষ্টিগতভাবে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে হযরত বেলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রথমে দেখে ইকামত বলতেন এবং এর পরপরই অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম তাকে দেখে দাড়িয়ে যেতেন। হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন-
أن بلالا كان يراقب خروج النبي صلى الله عليه و سلم فأول مايراه يشرع في الإقامة قبل أن يراه غالب الناس ثم إذا رأوه قاموا فلا يقوم في مقامه حتى تعتدل صفوفهم
অর্থঃ হযরত বেলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বের হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাকে প্রথম দেখার সাথে সাথেই অন্যান্য মানুষ দেখার পূর্বে ইকামত বলা শুরু করতেন। এরপর সবাই তাকে দেখলে দাড়িয়ে যেতেন। আর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (ইমামতির) স্থানে দাড়িয়ে যেতেন সমস্ত কাতার সোজা হয়ে যেত।- ফাতহুল বারী ২/১২০
সারকথা হযরত বেলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম মসজিদে আসার অপেক্ষা করতেন এবং উকি দিতেন। যখনই দেখতেন ইকামত বলা শুরু করতেন। এর পরপরই অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম তাকে দেখে দাড়িয়ে যেতেন।
উপরোক্ত হাদীস দুটি থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাইরে থেকে মসজিদে আসতেন তখন সাহাবায়ে কেরাম ইকামতের শুরুতেই দাড়িয়ে যেতেন। তবে এতটুকু যে, বেলাল (রাঃ) প্রথমে দাড়াতেন এবং ইকামাত শুরু করতেন আর অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এর পর পরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে দাড়িয়ে যেতেন। যা নিচের হাদীসগুলো থেকে আরো স্পষ্ট হবে।
أَنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ تُقَامُ لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَيَأْخُذُ النَّاسُ مَصَافَّهُمْ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- مَقَامَهُ
৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য নামাযকে প্রস্তুত করা হত। মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজ স্থানে দাড়ানোর পূর্বেই তাদের কাতারে স্থান নিয়ে নিত।- সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৯
عن ابي هريرة قال أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَقُمْنَا فَعَدَّلْنَا الصُّفُوفَ قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم
৪। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা নামায প্রস্তুত করা হলে আমরা দাড়িয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট বের হয়ে আসার পূর্বেই আমরা কাতারকে সোজা করে নিলাম। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭
উপরোক্ত হাদীস দুটি দ্বারা একথা বুঝে আসে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ স্থানে পৌছার পূর্বেই সাহাবায়ে কেরাম দাড়িয়ে কাতার সোজা করে ফেলতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখার পর কেউ বসে থাকতেন না। আর কোন কাতারের সাহাবায়ে কেরামের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না দেখার সর্বোচ্চ সীমা হল তার কাতার অতিক্রম করা। কেননা সাধারণত কেউ কোন কাতার অতিক্রম করলে তখন সেই কাতারের মুসল্লীরা তাকে দেখে থাকে। এ জন্যই ফুকাহায়ে কেরাম উক্ত হাদীসগুলো থেকে মাসআলা বের করেছেন ইমাম নামাযের সময় বাইরে থেকে এলে যখন যে কাতার অতিক্রম করবে তখন সে কাতারের মুসল্লীগণ দাড়িয়ে যাবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কোন কাতারের মুসল্লীদের না দাড়ানোর সর্বশেষ মুস্তাহাব সময় হল ইমাম তার কাতারকে অতিক্রম করা।
إذَا كَانَ الْإِمَامُ خَارِجَ الْمَسْجِدِ فَإِنْ دَخَلَ الْمَسْجِدَ مِنْ قِبَلِ الصُّفُوفِ فَكُلَّمَا جَاوَزَ صَفًّا قَامَ ذَلِكَ الصَّفُّ
অর্থঃ আর যখন ইমাম মসজিদের বাইরে থাকে, যদি সে কাতারের (পেছন) দিক দিয়ে প্রবেশ করে তবে যখনই কোন কাতার অতিক্রম করবে ঐ কাতারের মানুষ তখন দাড়িয়ে যাবে।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫
আর যদি ইমাম মসজিদের সামনে দিয়ে প্রবেশ করে তবে ইমামকে দেখা মাত্র সমস্ত কাতারের মুসল্লীগণ দাড়িয়ে যাবে।
إن دخل الإمام من قدام الصفوف فكما رأوه قاموا ؛ لأنه كلما دخل المسجد قام مقام الإمامة
অর্থঃ ইমাম যদি কাতারের সামনের দিক দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে তবে তাকে দেখা মাত্রই সমস্ত মুসল্লী দাড়িয়ে যাবে। কেননা সে মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথেই ইমামতির স্থানে দাড়িয়ে গিয়েছে।- বাদায়েউস সানারে ১/২০০
عن بن شهاب أن الناس كانوا ساعة يقول المؤذن الله أكبر الله أكبر يقيم الصلاة يقوم الناس إلى الصلاة فلا يأتي النبي صلى الله عليه و سلم مقامه حتى يعدل الصفوف
৫। ইবনে শিহাব যুহরী থেকে বর্নিত তিনি বলেন, মুআজ্জিন যখন নামায কায়েম করতে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলত মানুষ নামাযের জন্য দাড়িয়ে যেত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্থানে আসার পূর্বেই কাতার সমূহ সোজা হয়ে যেত।–মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, বর্ণনা নং ১৯২৪
এই হাদীস থেকে এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সাহাবায়ে কেরাম ইকামতের শুরুতেই দাড়িয়ে যেতেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হুজরা থেকে মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন মুআজ্জিন ইকামত শুরু করা মাত্রই (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলা মাত্রই) সাহাবায়ে কেরাম দাড়িয়ে যেতেন এবং কাতার দুরস্ত করার প্রতি খুব যত্নবান হতেন। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্থানে পৌছার পূর্বেই সমস্ত কাতার সোজা হয়ে যেত।
উপরোক্ত সহীহ হাদীস গুলো থেকে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানতে পারলাম-
ক) হযরত বেলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মসজিদে আগমনের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন এবং উকি মারতেন।
খ) তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রথম দেখার সাথে সাথেই ইকামত শুরু করতেন।
গ) এর পর পরই অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম তাকে দেখে দাড়িয়ে যেতেন।
সারকথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বাইরে থেকে মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন সাহাবায়ে কেরাম ইকামতের শুরুর দিকেই দাড়িয়ে যেতেন। সমস্ত মুহাদ্দিসীনগণ এবং হাদীসের ব্যাখ্যাকারগণ এমনটিই বলেছেন। দেখুন ফাতহুল বারী, হাফেয ইবনে হাজার ২/১২০; আল্লামা নববী, শরহে মুসলিম ৫/১০৩; উমদাতুল বারী শরহুল বুখারী, আল্লামা আইনী ৮/২১২ (শামেলা); শারহুয যারক্বানী আলা মুআত্তা মালেক ১/৩১৭; ফায়জুল বারী শরহুল বুখারী, আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী ১/১৯৭; আউনুল মাবূদ শরহে আবূ দাউদ ২/১৭২
ফিকহে হানাফীর সকল কিতাবেও মাসআলাটিকে এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাদায়েউস সানায়েতে রয়েছে-
وإن دخل من وراء الصفوف فالصحيح أنه كلما جاوز صفا قام ذلك الصف ؛ لأنه صار بحال لو اقتدوا به جاز فصار في حقهم كأنه أخذه مكانه
অর্থঃ আর যদি ইমাম কাতারের পেছন দিক দিয়ে মসাজিদে প্রবেশ করে তবে সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী যখনই ইমাম কোন কাতার অতিক্রম করবে সেই কাতার তখন দাড়িয়ে যাবে। কেননা ইমাম তখন এমন অবস্থায় রয়েছে যদি ঐ কাতারের মুসল্লীগণ তাকে ইক্তেদা কওে তবে তা জায়েয হবে। তাই ধরে নেওয়া হবে তাদেড় ক্ষেত্রে ইমাম কেমন যেন তার স্থন নিয়ে নিয়েছে। – বাদায়েউস সানায়ে ১/২০১
দেখুন আল মুহীতুল বুরহানী ১/৪০৩; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫; হাশিয়ায়ে ত্বাহতাবী পৃষ্ঠা ১৮৬, আল বাহরুর বায়েক ১/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার মাবসূতে সারাখসী ১/৭৬; মাজমাউল অনহুর ১/২৬৯ (শামেলা); মারাক্বীল ফালাহ, পৃষ্ঠা ১৩৫; আন নাহরুল ফায়েক ১/২০৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১০৮
প্রবন্ধ লম্বা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে সবগুলো হাওয়ালা বাংলায় তরজমা কওে দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। এখানে শুধুমাত্র ওলামায়ে কেরামের জন্য মূল কিতাবের আরবী অংশগুলো তুলে ধরলাম।
وفي عبارة بعضهم فكلما جاوز صفا قام ذلك الصف اه وإن دخل من قدامهم قاموا حين رأوه وإذا أخذ المؤذن في الإقامة-حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح 186
فَإِذَا اخْتَلَطَ بِالصُّفُوفِ قَامَ كُلُّ صَفٍّ جَاوَزَهُمْ حَتَّى يَنْتَهِيَ إلَى الْمِحْرَابِ وَكَذَلِكَ إذَا لَمْ يَكُنْ الْإِمَامُ مَعَهُمْ فِي الْمَسْجِدِ يُكْرَهُ لَهُمْ أَنْ يَقُومُوا فِي الصَّفِّ حَتَّى يَدْخُلَ الْإِمَامُ لِقَوْلِهِ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ «لَا تَقُومُوا فِي الصَّفِّ حَتَّى تَرَوْنِي خَرَجْتُ»-مبسوط السرخسي 1/76
قوله والقيام حين قيل حي على الفلاح لأنه أمر به فيستحب المسارعة إليه ، أطلقه ، فشمل الإمام والمأموم إن كان الإمام بقرب المحراب وإلا فيقوم كل صف ينتهي إليه الإمام ، وهو الأظهر ، وإن دخل من قدام وقفوا حين يقع بصرهم عليه ، وهذا كله إذا كان المؤذن غير الإمام-البحر الرائق1/327
(والقيام) لامام ومؤتم (حين قيل حي على الفلاح) خلافا لزفر، فعنده عند حي على الصلاة. ابن كمال (إن كان الامام بقرب المحراب وإلا فيقوم كل صنف ينتهي إليه الامام على الاظهر) وإن دخل من قدام قاموا حين يقع بصرهم عليه – الدر المختار1/516
( وَالْقِيَامُ حِينَ قِيلَ حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ ) ؛ لِأَنَّهُ أَمَرَ بِهِ فَيُسْتَحَبُّ الْمُسَارَعَةُ إلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ الْإِمَامُ حَاضِرًا لَا يَقُومُونَ حَتَّى يَصِلَ إلَيْهِمْ وَيَقِفَ مَكَانَهُ فِي رِوَايَةٍ وَفِي أُخْرَى يَقُومُونَ إذَا اخْتَلَطَ بِهِمْ وَقِيلَ يَقُومُ كُلُّ صَفٍّ يَنْتَهِي إلَيْهِ الْإِمَامُ وَهُوَ الْأَظْهَرُ وَإِنْ دَخَلَ مِنْ قُدَّامَ وَقَفُوا حِينَ يَقَعُ بَصَرُهُمْ عَلَيْهِ-تبيين الحقائق1/108
(حين قيل: حي على الفلاح) مسارعة لامتثال الأمر هذا إذا كان الإمام بقرب المحراب فإن لم يكن وقف كل صف انتهى إليه الإمام على الأصح كذا في (الخلاصة)-النهر الفائق 1/203
তবে কিছু মসজিদে দেখা যায় যে, ইমাম সাহেব ইকামাতের সময় বাইরে থেকে এসে বা মসজিদের কোন স্থান থেকে উঠে এসে তার মুসাল্লায় বসে পড়েন এবং বসাটিকে এতটা জরুরী মনে করেন যে যারা বসেননি তাদেরকে বসার তাকীদ দেন. আর না বসলে তাদেরকে ভৎসনা দিয়ে থানেক এটা না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম থেকে প্রমানিত, না কোন সাহাবায়ে কেরাম থেকে না তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ থেকে, আর না এটা কোন ইমাম বা ফকীহ এর মাযহাব। তাহলে এটাকে মনগড়া ও খালেছ বিদআত ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ব থেকেই মসজিদে উপবিষ্ট থাকতেন সেক্ষেত্রে আমলের পদ্ধতি ছিল নিম্নরূপঃ-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِى أَوْفَى رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ إِذَا قَالَ بِلاَلٌ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ نَهَضَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَكَبَّرَ
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন বেলাল (রাঃ) যখন ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ বলতেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে তাকবীর বলতেন। – বাইহাক্বী, সুনানে কুবরা, হাদীস নং ২৩৯০; মুসনাদে বাযযার, হাদীস নং ৩৩৭১ ।
এক্ষেত্রে এই একটি মাত্র মারফূ রেওয়ায়েত রয়েছে। উক্ত হাদীসের একজন রাবী হল হাজ্জাজ বিন ফাররুখ। তিনি সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ। আল্লামা বাইহাক্বী (রহঃ) হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন-
وَهَذَا لاَ يَرْوِيهِ إِلاَّ الْحَجَّاجُ بْنُ فَرُّوخٍ وَكَانَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ يُضَعِّفُهُ.
অর্থঃ এই হাদীসটি হাজ্জাজ বিন ফাররুখ ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেনি। ইযাহইয়া ইবনে মাঈন তাকে যঈফ বলতেন।
আল্লামা সুয়ুতী (রহঃ) উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন-
وفيه الحجاج بن فروة الواسيطى ، قال النسائى ضعيف وتركه غيره
অর্থঃ উক্ত হাদীস হাজ্জাজ বিন ফাররুখ রয়েছে। ইমাম নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন এবং অন্যান্যরা তাকে তরক করেছেন।– জামেউল আহাদীস ৩৫/৩৩৭(শামেলা)
আল্লামা হাইছামী (রহঃ) বলেন-
رواه البزار وفيه : الحجاج بن فروخ وهو ضعيف
অর্থঃ হাদীসটি বাযযার রেওয়ায়েত করেছেন। তাতে হাজ্জাজ বিন ফাররুখ রয়েছে। আর তিনি দূর্বল রাবী।–মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/২৭২
ইমাম বাযযার তার মুসনাদে হাদীসটি রেওয়ায়েত করে বলেন-
وَهَذَا الْحَدِيثُ لاَ نَعْلَمُ رَوَاهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلاَّ عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي أَوْفَى بِهَذَا الإِسْنَادِ
অর্থঃ এই হাদীসটি উক্ত সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা ছাড়া অন্য কেউ বর্ণনা করেছেন এমনটি আমাদের জানা নেই।–মুসনাদে বাযযার ১/৪৯৯
ইবনে হাযম (রহঃ) আল মুহাল্লা বিল আসারে বলেন-
أَمَّا حَدِيثُ ابْنِ أَبِي أَوْفَى فَمِنْ طَرِيقِ الْحَجَّاجِ بْنِ فَرُّوخَ، وَهُوَ مُتَّفِقٌ عَلَى ضَعْفِهِ وَتَرْكِ الاحْتِجَاجِ بِهِ
অর্থঃ হাজ্জাজ বিন ফাররুখের সনদে বর্ণিত ইবনে আবী আওফার রেওয়ায়েত সর্বসম্মতিক্রমে দূর্বল এবং তা দলীল হিসেবে পেশ করার অনুপযুক্ত এ ব্যপারে সবাই একমত।- আল মুহাল্লা বিল আছার ২/৬৩০
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে হাদীসটি হাজ্জাজ বিন ফাররুখের কারণে সর্বসম্মতিক্রমে যঈফ এবং গরীব। এই সূত্র ছাড়া হাদীসটি অন্য কোনভাবে বর্ণিত হয়নি। আর উক্ত হাদীস দ্বারা এটা বুঝে আসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ব থেকেই মসজিদে অবস্থান করলে মুআযযিন ক্বদক্বমাতিস সালাহ বললে দাড়িয়ে যেতেন।
এখন লক্ষণীয় বিষয় হল সমস্ত ইমামগণ দুটি বিষয়ে একমত। একটি হল ইমাম যখন পূর্ব থেকেই মসজিদে উপবিষ্ট থাকবে তখন ইমাম এবং মুক্তাদীগণ ইকামাতের সময় কখন দাড়াবে এ সংক্রান্ত ইখতেলাফটি কিন্তু উত্তম অনুত্তম হওয়ার ব্যপারে। অর্থাৎ কোন মতকে কেউ নাজায়েয বা মাকরূহ বলেন না। এ জন্য মাযহাবের পরবর্তি অনুসারিগণ এ বিষয়ে কখনো ঝগড়া করেননি আর এটা শোনাও যায়নি। আর এ জন্যই ফুকাহায়ে কেরাম মাসআলাটিকে নামাযের আদাবের অধ্যায়ে এনেছেন। যা ছেড়ে দেওয়ার কারণে কোন গোনাহ হয় না এবং কাউকে এ ব্যপারে ভৎসনা ও করা যায় না।
আর আরেকটি বিষয় হল সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং ইমামগণের নিকট কাতার দুরস্ত ও সোজা করা ওয়াজিব। কাতার সোজা করা নামাজেরই অংশ। এটা ছেড়ে দেওয়ার ব্যপারে হাদীস শরীফে ধমকি এসেছে।
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللَّهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন তোমরা অবশ্যই কাতারকে সোজা করবে নতুবা আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন।- সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭১৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৬৬২।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈন সকলে কাতার সোজা করার ব্যপারে খুব গুরুত্ব দিতেন।
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يُسَوِّى صُفُوفَنَا حَتَّى كَأَنَّمَا يُسَوِّى بِهَا الْقِدَاحَ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাতারকে এমনভাবে সোজা করতেন কেমন যেন তিনি কাতার দ্বারা তীর সোজা করছেন।- সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৭।
وروى عن عمر أنه كان يوكل رجالا بإقامة الصفوف فلا يكبر حتى يخبر أن الصفوف قد استوت وروى عن علي و عثمان أنهما كانا يتعاهدان ذلك ويقولان استووا وكان علي يقول تقدم يا فلان تأخر يا فلان
অর্থ: হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) (কিছু লোককে) কাতার সোজা করার আদেশ দিতেন। যখন তারা এসে সংবাদ দিত কাতার সোজ হয়ে গিয়েছে তিনি তাকবীর দিতেন। – বাইহাক্বী, সুনানে কুবরা, হাদীস নং ২৩৮৫; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২২৭
অনুরূপভাবে তিরমিজী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন হযরত উসমান এবং আলী (রাঃ) কাতার দুরস্ত করার প্রতি খুব গুরুত্ব দিতেন এবং তারা বলতেন হে অমুক সামনে আস অমুক পিছনে যাও।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের কাতার সোজা না হওয়া পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না।
كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يسوى صفوفنا إذا قمنا للصلاة فإذا استوينا كبر
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাতারকে সোজা করতেন। আমরা নামাযে দাড়ালে যখন আমাদের কাতার সোজা হয়ে যেত তিনি তাকবীর বলতেন। – সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৬৬৫
উপরের হাদীস গুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম কাতার সোজা করার ব্যপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। তারা কাতার সোজা হওয়ার পরেই তাকবীর বলতেন।
আর এটা তখনই সম্ভব যখন মুসল্লীগণ ইক্বামাতের শুরুতেই দাড়িয়ে যাবে। যেমনটি শুরুর দিকে সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ অভ্যাস জানা গিয়েছে। কেননা যদি হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর সময় মুসল্লী দাড়ায় এবং এরপরে কাতার সোজা করা হয় তবে ইকামতের বেশ কিছু সময় পরে গিয়ে নামায শুরু করতে হবে। যা সমস্ত উলামায়ে কেরামের নিকট অপছন্দনীয়। বরং মুস্তাহাব হল ইকামতের পরপরই তাকবীর বলে নামায শুরু করা। হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ইকামতের বেশ কিছু সময় পরে বিশেষ প্রয়োজনে তাকবীরে তাহরীমা বলেছেন। যেমনটি বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে রয়েছে। তবে তা দু একবারের ঘটনা।
আমাদের ফুকাহায়ে কেরাম এক্ষেত্রে অন্যান্য আছরের আলোকে বলেছেন মুআযযিন যখন হাইয়া আলাল ফালাহ বলবে তখন দাড়িয়ে যাবে।
إنْ كَانَ الْمُؤَذِّنُ غَيْرَ الْإِمَامِ وَكَانَ الْقَوْمُ مَعَ الْإِمَامِ فِي الْمَسْجِدِ فَإِنَّهُ يَقُومُ الْإِمَامُ وَالْقَوْمُ إذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ : حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ عِنْدَ عُلَمَائِنَا الثَّلَاثَةِ
অর্থ: মুআযযিন যদি ইমাম না হয় এবং ইমাম মুসল্লীদের সাথে মসজিদে উপস্থিত থাকে তবে যখন হাইয়া আলাল বলবে তখন (ইমাম ও মুসল্লী) দাড়িয়ে যাবে আমাদের তিনো ইমামের নিকট।- ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫
এর দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে এর পূর্বে দাড়ানো নিষেধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর পূর্বে দাড়াতে নিষেধ করেননি। হ্যাঁ, তিনি আসার পূর্বে কাউকে দাড়াতে নিষেধ করেছেন। তিনি আসার পর বা তাকে দেখার পর দাড়াতে কখনো কাউকে নিষেধ করেননি। বরং ফুকাহায়ে কেরামের উক্ত বক্তব্যের দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, মুক্তাদীগণ হাইয়া আলাল ফালাহ বললে দাড়াবে এর কারণ হল-
لأنه أمر به فيستحب المسارعة إليه
অর্থ: কেননা তাকে এ কাজের আদেশ করা হয়েছে। কাজেই তার জন্য সেদিকে ধাবিত হওয়া মুস্তাহাব।- আল বাহরুর রায়েক ১/৩২৭; মাজমাউল আনহুর ১/২৬৯; তারয়ীনুল হাকায়েক ১/১০৮
অর্থাৎ যখন মুআযযিন তাকে বলল নামাযের দিকে বা কল্যানের দিকে আস তখন মুআযযিনের ডাকে সাড়া না দিয়ে তার পরেও বসে থাকা খেলাফে আদব।
এটা উদ্দেশ্য নয় যে এর পূর্বে দাড়ানো খেলাফে আদব। কেননা পূর্বে দাড়ালে কল্যাণের দিকে আরো উত্তম ভাবে ধাবিত হওয়া পাওয়া যায়। মোট কথা ফুকাহায়ে কেরামের উক্ত ইবারত দ্বারা উদ্দেশ্য হল মুক্তাদীর বসে থাকার শেষ সীমা হল হাইয়া আলাল ফালাহ। এর পরেও বসে থাকা আদবের খেলাফ।
এখন কথা হল ইবনে আবী আওফার রেওয়ায়েত যার সনদে দূর্বলতা রয়েছে যেমনটি পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং মতনেও ইল্লাত রয়েছে। হাদীসটি একাধিক সহীহ মারফূ রেওয়ায়েতের বিপরীত। কেননা উক্ত হাদীসে রয়েছে ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ বলার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবীর বলে দাড়িয়ে গিয়েছে। অথচ আবূ দাউদ সুনানে বাইহাক্বী সহ অন্যান্য কিতাবে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো ইকামাতের জবাব দিতেন। আবার বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন ইমাম তাকবীর বলে তোমরা সাথে সাথে তাকবীর বলবে। কিন্তু উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করলে মুআযিযন ইমামের সাথে সাথে তাকবীর বলতে পারবে না। মোট কথা হাদীসটির মতনও একাধিক সহীহ মারফূ রেওয়ায়েতের খেলাফ। তো এমন একটি সর্বসম্মত যঈফ রেওয়ায়েতকে সর্বাবস্থায় আমলের জন্য গ্রহণ করা বিশেষ ভাবে ইমাম যখন বাইরে থেকে মসজিদে প্রবেশ করে তখনও উক্ত হাদীসের উপর আমল করা এবং বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য কিতাবের একাধিক সহীহ মারফূ রেওয়ায়েতকে তরক করা কোন ভারসাম্যপূর্ণ বিবেকবানের কাজ কি? বরং এর সম্পর্ক সুন্নাত থেকে অনেক দুরের এবং এটা উল্টা একটি বিষয়কে গ্রহণ করার নামান্তর। কেননা এক্ষেত্রে সহীহ হাদীসকে উভয় অবস্থার ফয়সালাকারী বিবেচনা করে যঈফ হাদীসকে তরক করলে ততটা আপত্তিকর হত না যতটা যঈফ হাদীসকে উভয় অবস্থার ফয়সালাকারী বিবেচনা করার কারণে হয়েছে।
এর পরেও আমরা উক্ত যঈফ হাদীসটিকে তার প্রেক্ষাপটে (অর্থাৎ যখন ইমাম মসজিদে উপস্থিত থাকে) আমলযোগ্য বলে থাকি। অর্থাৎ ইমাম মসজিদে উপস্থিত থাকলে হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বামাতিস সালাহ এর সময় ইমাম ও মুক্তাদীগণ দাড়াতে পারে। ইমাম মসজিদে থাকা অবস্থায় কেউ এমটি করলে তার সাথে বাদানুবাদ করা যাবে না। যদিও এর পূর্বে দাড়ানো উত্তম। কেননা মসজিদ একটু বড় হলে মুক্তাদীগণ যদি হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর সময় দাড়ায় তবে নিশ্চিতভাবে দুটো জিনিসের একটি ঘটবে। এক. হয়তবা ইকামতের শেষে কাতার দুরস্ত করতে একটু সময় লেগে যাওয়ার কারণে তাকবীর বলতে কিছুটা দেরী হবে। কেননা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর পরে ইকামাত শেষ হতে মাত্র ৫/৬ সেকেন্ড সময় লাগবে। আর এর মধ্যে কাতার সোজা করা অসম্ভব। বিশেষভাবে মসজিদ বড় হওয়ার কারণে যখন কাতারের সংখ্যা বেশি হয়। এক্ষেত্রে যে যাই বলুক না কেন বাস্তবতা কিন্তু এটাই। দুই. অথবা কাতার দুরস্ত করা ছাড়াই ইমাম তাকবীর বলবে। যার ফলে পেছনের কাতারের বেশ কিছু মুসল্লীল তাকবীরে উলা ফউত হয়ে যাবে। উপরোক্ত দুটি জিনিসই শরয়ী দুষ্টিকোন থেকে অপছন্দনীয়।
পূর্বে মুসলিম শরীফের বর্ণনায় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইকামাত শেষ হবার পূর্বেই তার স্থানে পৌছে যেতেন এবং কাতারসমূহ সোজা হয়ে যেত। কেননা তিনি হুজরা থেকে কদম বের করলেই তা মাসজিদে পড়ত। আর যারা মাসজিদে নববীতে গিয়েছেন তারা জানেন আয়েশা (রাঃ) হুজরা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামতির স্থানে ইকামত শেষ হবার পূর্বেই চলে যাওয়া যায়। কেননা মসজিদ তখন বেশ ছোট ছিল।
তাছাড়া এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হল ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর সময় দাড়ানোর ব্যাপারে একটি মাত্র আমলী যঈফ রেওয়ায়েত রয়েছে। এ সময়ে দাড়ানোর কিন্তু আলাদা কোন ফযীলত নেই। অথচ তাক্ববীরে উলার ফযীলত একাধিক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে কাতার দুরস্ত না করার ব্যপারেও একাধিক সহীহ হাদীসে ধমকী এসেছে। তাই একটি ফযীলত বিহীন বিষয়ের উপর আমল করতে গিয়ে দুটি ফযীলতপূর্ণ বিষয়ের আমল তরক করা কেমন হবে? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর পূর্বে দাড়াতে কখনো নিষেধ করেননি। হ্যাঁ,তিনি তাকে দেখার পূর্বে দাড়াতে নিষেধ করেছেন। এজন্য উমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) সর্বদা ইকামতের শুরুতেই দাড়িয়ে যেতেন।
عن الأوزاعي قال: كان عمر بن عبد العزيز يقوم إلى الصلاة إذا افتتح المؤذن الإقامة
অর্থ: ইমাম আওযায়ী (রহঃ) বলেন ইমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) মুআযযিন ইকামাত শুরু করলেই দাড়িয়ে যেতেন। -মাসায়েলে কিরমানী, বর্ণনা নং ৪৭৫
عن ابن مهاجر قال: رأيت سالم بن عبد الله، وأبا قلابة، وعراك بن مالك، ومحمد بن كعب، والزهري يقومون في أول الإقامة
অর্থ: ইবনে মুহাজির বলেন আমি সালিম বিন আব্দুল্লাহ আবূ কিলাবা, মুহাম্মাদ বিন কাব ও যুওরীকে দেখেছি তারা ইকামাতের শুরুতেই দাড়িয়ে যেতেন। -মাসায়েলে কিরমানী, পৃষ্ঠা ৪৭৫
অনুরূপভাবে সাঈদ বিন মুসাইয়াবের মাযহাব হল ইকামতের শুরুতেই দাড়ানো ওয়াজিব।
সারকথা উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইমাম যখন বাইরে থেকে মসজিদে প্রবেশ করবেন যদি পেছন থেকে প্রবেশ করেন তবে যখন যে কাতার অতিক্তম করবেন তখন সে কাতারের মুসল্লীগন দাড়িয়ে যাবে। আর সামনে দিয়ে প্রবেশ করলে সকলে তাকে দেখা মাত্রই দাড়িয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ইমামের মসজিদে গিয়ে বসা এবং হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ এর সময় দাড়ানো এবং তা জরুরী মনে করা সুন্নাতের খেলাফ। খায়রুল কুরূনে এর কোন নযীর নেই। আর ইমাম যদি পূর্বে থেকে মসজিদে উপবিষ্ট থাকেন তবে উত্তম ইকামাতের শুরুতেই দাড়ানো। তবে এক্ষেত্রে হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদ ক্বমাতিস সালাহ পর্যন্ত বসে থাকার সুযোগ রয়েছে। এর পরেও বসে থাকা খেলাফে আদব।
একটি জরুরী সতর্কতাঃ মুফতীয়ে আযম মুফতী শফী (রহঃ) উক্ত মাসআলাটি আলোচনা করে একটি সতর্কবানী লিখেছেন। তা হল উক্ত মাসআলাটি বাস্তবতা প্রকাশ করার জন্য লিখা হয়েছে। আর যে সূরতটিকে খেলাফে সুন্নাত বলা হয়েছে তা যদিও অপছন্দনীয় তবে মুসলমানদের পরস্পরিক ঝগড়া, কলহ, বিবাদ, যুদ্ধ আরো অনেক অনেক বেশি অপছন্দনীয়। তাই উক্ত বিষয়ে ঝগড়া করা কাম্য নয়। কল্যঅন কামীতা ও বিনয়ের সাথে তাদেরকে মাসআলাটি বলা যায় যারা তা মেনে নেয় অন্যথায় চুপ থাকা উত্তম। নিজে সুন্নাতের উপর আমল করবে অন্যেরা পিছে পড়বে না। – জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৩৩