প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম, ভাই আমার স্ত্রীকে ছয়মাস আগে একটা তালাক দিয়েছিলাম, তালাকটা ছিলো অজানার মত, যেমন আমি জানতাম না যে ওভাবে বললে তালাক হয়ে যাবে, কিছু দিন পরে আমার স্ত্রী আমাকে বলছে তুমি তো দুই তালাক দিয়েছো, কিন্তু আমার মনে আছে একবারের কথা, পরে ও বলছে মনে হয় আগে একবারই দেয়া ছিলো এবং আমি তাকে ছেড়ে দিচ্ছি এ নিয়ত করে বলি নাই। তার পরেও তখন পিরিওড অবস্থায় ছিলো কি না তাও খেয়াল নেই। আমি গতকাল রাতেও একটু রেগে গিয়ে একবার তালাকের কথা বলে ফেলেছি এবং পরে আমরা তওবা করে একে অপরকে বিবাহের মতই গ্রহন করেছি ও সহবাস করেছি। তবে আমার জানা ছিল না যে, ওভাবে বললে তালাক হয়ে যায়। এখন মূল বিষয় হচ্ছে আমাদের কারো মনে নাই যে আমি তিন তালাক দিয়েছি নাকি দুই তালাক, আমাদের মনে হচ্ছে দুই তালাক, আবার ছয়মাস আগে যখন হেয়ালি করেই বলেছিলাম তালাক, তখন ও পবিত্র ছিলো কি না তাও আমাদের মনে নাই। এখন সমাধান কি দয়া করে দ্রুত জানাবেন।
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুসসালাম
প্রিয় দ্বীনী ভাই, সঙ্গত কারণে আপনার উত্তর দিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আসলে এধরনের প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিতে হয়।
প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন দুই তালাকের ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিত। তিন তালাকের ব্যাপারে আপনার স্ত্রীর সন্দেহ। বিষয়টি যদি সন্দেহ আকারেই থাকে এবং এমন কোন সাক্ষীও না থাকে যার সামনে তালাক দেওয়া হয়েছিল তবে আপনারা ঘর-সংসার করতে পারেন। আর আপনার স্ত্রীর যদি প্রবল ধারণা হয় বা তিনি নিশ্চিত হন তিন তালাকের ব্যাপারে তবে তার জন্য শরয়ী হালালাহ ব্যতীত আপনার সাথে ঘর সংসার করা অথবা আপনাকে সুযোগ দেওয়া জায়েয হবে না। সেক্ষেত্রে তার জন্য আপনার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া জরুরী। শরয়ী হালালার সূরত হল, আপনার স্ত্রীর ইদ্দত পার হবার পর অন্য কোন পুরুষ তাকে বিবাহ করবে। এরপর তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক (মেলামেশা) হওয়ার পর সে স্বেচ্ছায় আপনার স্ত্রীকে তালাক দিবে। অতঃপর তার ইদ্দত পার হবার পর আপনি চাইলে তার সাথে নতুনভাবে মোহর ধার্য করত দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, মহিলাদের পিরিয়ডের সময় তালাক দেওয়া নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। কিন্তু দিলে তা পতিত হয়ে যায়। অনুরূপভাবে না জেনে তালাক দিলেও তালাক পতিত হয়। বিবাহিত হয়েও তালাক সংক্রান্ত মাসআলার ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা, এটাও একধরণের মারাত্তত অন্যায় ও ভুল। প্রত্যেক বিবাহিত ও বিবাহিচ্ছুক নর-নারীর জন্য বিবাহ তালাক সংক্রান্ত জরুরী মাসআলা মাসায়েল জানা অত্যন্ত জরুরী। এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে অনেকক্ষেত্রে যেমনিভাবে দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে তেমনিভাবে আখেরাতের কঠিন আযাবেরও কারণ হয়। নিম্নোক্ত লিঙ্কে আপনি এ সংক্রান্ত জরুরী মাসআলাসমূহ জানতে পারবেন-
http://muftihusain.com/article/আমাদের-প্রিয়তমা-স্ত্রীগন/
সূত্রসমূহঃ সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩০; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫৭৯২; রদ্দুল মুহতার ৩/২৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬৯