প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। ১। আমি পেশায় একজন চিকিৎসক। প্রতিদিন আমার কাছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগন স্যাম্পল এবং বিভিন্ন গিফট আইটেম নিয়ে আসে এবং তাদের কোম্পানির ঔষধের গুনাগুন বর্ননা করেন। এমতাবস্থায় তাদের গিফটগুলো নেয়া জায়েয হবে কিনা? ২। কিছু ঔষধ কোম্পানি এ রকম অফার দেয়, যদি তাদের যেকোন ঔষধ আমার প্রেসক্রিপশনে লিখে দেই তাহলে তারা অনারিয়াম দিবে, এটা নেয়া জায়েজ হবে কিনা? ৩। রোগীদের চিকিৎসার সার্থে আমরা বিভিন্ন রকম টেস্ট দিয়ে থাকি। আমি নির্দিষ্ট কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ না করলেও, রোগীরা যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেই পরীক্ষা করে আসুক না কেন, সেই ডায়াগনিস্টিক সেন্টার গুলো মাস শেষে হিসেব করে টাকা পাঠিয়ে দেয়। আমি কোন ডায়াগোনিস্টিক সেন্টারকে রোগী দিতে বাধ্যও নই। এভাবে দেইও না। এমতাবস্থায় আমার তাদের টাকা নেয়াটা কি জায়েয হবে?
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১+২। ঔষধ কোম্পানি কর্তৃক ডাক্তারদেরকে প্রদেয় গিফট সমূহ কয়েক প্রকার-
এক. ফিজিশিয়ান স্যাম্পল। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি ডাক্তারদেরকে তাদের ঔষধদের স্যাম্পল প্রদান করে থাকে। এগুলোর গায়েও “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল” সিল দেওয়া থাকে। পাশাপাশি অনেকক্ষেত্রে এটাও লিখা থাকে বিক্রয়ের জন্য নয়। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে এসকল স্যাম্পল প্রদানের উদ্দেশ্য হল, এগুলোর পরিচিতি এবং রোগীর উপর প্রয়োগ করে এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর লেনদেনে শরয়ী কোন সমস্যা নেই। চিকিৎসকগণ এগুলো গ্রহন করবেন এবং রোগীদেরকে বিনামূল্যে এগুলো দিয়ে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। বিশেষ করে এক্ষেত্রে গরীবদেরকে প্রাধান্য দিলে তা যে একটি মহৎ কাজ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ চিকিৎসক এগুলো বিক্রি করে উপার্জন করেন। তাইতো অনেকক্ষেত্রে ফার্মেসিতে ঔষধ কিনতে গেলে তার গায়ে “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল” সিল দেখা যায়। এর দ্বারা যেমনিভাবে কোম্পানির উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনিভাবে তা নিজের দায়িত্ব পালনে অন্যের থেকে উৎকোচ গ্রহন করারও শামিল। আসলে রোগীর শারীরিক অবস্থা সঠিকভাবে বিবেচনা করে কোন কোম্পানির কি ঔষধ রোগীর জন্য উপযুক্ত এবং উপকারি তা নির্ণয় করা এবং পেস্ক্রিপশনে লিখা ডাক্তারদের নিজস্ব পেশাগত দায়িত্বের অংশ বিশেষ। এর জন্য অন্যের থেকে বিনিময় বা উৎকোচ গ্রহন করা জায়েয নয়।
বর্তমানে দেখা যায় বেশ কিছু আনাড়ি কোম্পানি একশ্রেণীর চিকিৎসককে মোটা অংকের কমিশন দিয়ে তাদের অনুপযুক্ত এবং নিম্নমানের ঔষধ লিখিয়ে নিচ্ছে। যার কারনে রোগীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সারকথা, এসকল স্যাম্পল চিকিৎসকগন গ্রহন করলে তা বিনামূল্যে রোগীদের উপর প্রয়োগ করবেন। তা বিক্রি করে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না।
দুই. বিভিন্ন ষ্টেশনারী সামগ্রী। যেমন কলম, খাতা, প্যাড, পেন স্ট্যান্ড, স্লিপবক্স ইত্যাদি। এসব সামগ্রীর মধ্যে ঔষধ কোম্পানির বা তাদের উৎপাদিত ঔষধের ট্রেডমার্ক বা ট্রেডনেম ছাপানো থাকে। এগুলো প্রদানের উদ্দেশ্যই থাকে তাদের কোম্পানি বা কোম্পানির ঔষধসমূহের প্রচার প্রসার। আর ডাক্তারদের টেবিলে এগুলো থাকা বা তাদের কর্তৃক এগুলো ব্যবহার করার দ্বারা কোম্পানির উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যায়। তাছাড়া এগুলো এমন কোন জিনিসও না যা বিক্রি করে অনেক টাকা অর্জন করা যায়। সে হিসেবে এগুলো নেওয়া ডাক্তারদের জন্য জায়েয।
তিন. নগদ অর্থ, দামি দামি গিফট, খাবারের বস্তু, মোবাইল রিচার্জ কার্ড ইত্যাদি। অনেক কোম্পানি তো তাদের ঔষধ লেখার জন্য রীতিমত ডাক্তারদের সাথে চুক্তি করে মাসিক অনারিয়াম দেয়। আবার অনেকের সাথে চুক্তিতে না গেলেও দামি দামি গিফট দেয়। এগুলোও গ্রহন করা জায়েয হবে না। কেননা এগুলোও বিনিময়হীন উৎকোচ।
৩। না, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে (চাই নির্দিষ্ট হোক বা অনির্দিষ্ট) রোগী প্রেরণের কারনে তাদের কর্তৃক প্রদেয় কমিশন ডাক্তারদের জন্য নেওয়া জায়েয হবে না। এটা এক প্রকার ঘুষ। আসলে রোগীদের মেডিক্যাল টেস্ট ডাক্তারদের করানোর প্রয়োজন হয় তার উপর অর্পিত দায়িত্ব
(সঠিকভাবে রোগ নিরূপণ করে তার যথাযথ ঔষধ প্রয়োগ করা) দক্ষতার সাথে নিপুণভাবে আদায় করার জন্য। কাজেই কোথায় গেলে তার পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো হবে এটা বাতলে দেওয়া ডাক্তার সাহেবগনেরই দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কমিশন নেওয়ার অর্থ হল, তিনি নিজ দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অন্যের থেকে অর্থ গ্রহন করছেন। যা কোন সুযোগ ইসলামে নেই। আর এর জন্য যে অসহায় গরীবদের দিগুন টাকা গুনতে হচ্ছে তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যার কপালে এক মুঠো ভাতও জুটে না তাকেও যে বিনা প্রয়োজনে টেস্টের নামে হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হয় সেটাও অজানা নয়। এই মোটা অংকের কমিশনের আশায় অনেক ডাক্তার সাহেব টেস্টের একটি লম্বা ফর্দ রোগীর হাতে ধরিয়ে দেন। যার ধকল অসংখ্য অসহায় নিঃস্ব লোকের বয়ে বেড়াতে হয়। অযথা বিনা প্রয়োজনে কোন রোগীকে টেস্ট দেওয়া জায়েয হবে না।
আমাদের একজন পারিবারিক ডাক্তার রয়েছেন। আমরা পরিবারের সকলের চিকিৎসা তার নিকট থেকেই নিয়ে থাকি। যিনি পিজি হাসপাতালের একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট। দ্বীনদার মানুষ। আমার যদ্দুর মনে পড়ে গত দশ বছরে পুরো পরিবারের জন্য মাত্র সম্ভবত একবারই টেস্টের প্রয়োজন হয়েছিল।
এক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হল, টেস্টের কাগজে লিখে দিবেন ডাক্তারের জন্য নির্ধারিত কমিশন বাদ দিয়ে রোগীর নিকট থেকে বিল নেওয়ার জন্য।