নিজের অজান্তে ঈমানহারা হয়ে যাচ্ছি না তো!

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান স্তম্ভ হল ঈমান। ঈমান ব্যতীত অন্য কোন আমলের সামান্যতম মূল্যও আল্লাহ তাআলার নিকট নেই। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, কিয়ামত দ্বিবসে তিনটি আদালত বসবে। এর প্রথমটি হল, ঈমান-কুফরের আদালত। এই আদালতে কোন সুপারিশ চলবে না। এই আদালতে যারা নাজাত পাবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে মুক্তি পবে। আর যারা এই আদালতে মু্ক্তি পাবে না তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে জলতে থাকবে।

এজন্য শরীআতে ঈমান শিক্ষা করা ও তা অন্তরে দৃঢ় করার প্রতি জোর তাকীদ এসেছে। সর্বপ্রথম ঈমান ও কুফর কি তা জানতে হবে। অতঃপর কোন কোন কথা ও কাজের দ্বারা মানুষের ঈমান চলে যায় তা জানতে হবে। এগুলো প্রত্যেকটি মানুষের জানা ফরজে আইন। অথচ অধিকাংশ মানুষ এ সম্পর্কে উদাসীন। এমনকি ঈমান ও কুফরের মোটা মোটা মাসআলা সম্পর্কেও অধিকাংশ মানুষ বেখবর।

কুফর এত মারাত্তক যে তা পিছনের সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়। কেউ ষাট বছরের মাথায় এমন একটি কুফরী কথা বলল বা কুফরী কাজ করল যার দ্বারা তার ঈমান চলে গেল,তবে তার ষাট বাছরের সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এজন্য কিছু কালেমায়ে কুফর (কুফরী বাক্য) উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তবে আমি নিজের থেকে কোন কিছু লিখব না। বরং ওয়ালীউল্লাহী উদ্যানের সুশোভিত একটি ফুল ভারতীয় উপমহাদেশের সুপ্রসিদ্ধ বুযর্গ, আলিম, মুফাসসির ও ফকীহ আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহঃ) (যিনি দশ খন্ডে আরবী ভাষায় “তাফসীরে মাযহারী” নামক অনবদ্য তাফসীর রচনা করেছেন) এর প্রসিদ্ধ কিতার মালাবুদ্দা মিনহু থেকে কিছু কুফরী কথা বা কাজ উল্লেখ করব। যা তিনি ফাতাওয়া বুরহানী থেকে নকল করেছেন।

এখানে একটি বিষয় খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্যই এই প্রয়াস। ফাতওয়া দেওয়ার জন্য নয়। এমনকি কেউ নিম্নোক্ত কাজ করলে বা কথা বললেও তাকে কাফের বলা যাবে না। বরং নির্ভরযোগ্য কোন দারুল ইফতার বিজ্ঞ মুফতীয়ানে কেরামের সরনাপন্ন হতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!

মাসআলাঃ হযরত আবু বকর, ওমর (রাঃ) কে গালি দেয়া কুফরী। তবে হযরত আলী (রাঃ) কে তাদের উপর প্রাধান্য দেয়ার ফলে কাফের হবে না। এটা বিদআত।

মাসআলাঃ আল্লাহ তাআলার দীদার (দর্শন ) কে অসম্ভব মনে করলে কাফির হয়ে যাবে। কারণ,এটা একটা দলীল দ্বারা প্রমানিত। তবে তার ধরন সম্পর্কে তিনিই জ্ঞাত।

মাসআলাঃ আল্লাহকে কায় (সৃষ্টির ন্যয়) ও হাত পা বিশিষ্ট মনে করা কুফরী। কেউ যদি সেচ্ছায় কুফরী শব্দ মুখে আনে কিন্তু তা কুফরী শব্দ কি না তা জানে না। এক্ষেত্রে অধিকাংশ আলেমের মতে সে কাফির হয়ে যাবে। না জানার কারনে সে মাযূর গন্য হবে না। তবে যদি অনিচ্ছাসত্তেও মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ যদি কেউ অনেক বিলম্বে হলেও কুফরীর ইচ্ছা করে তবে তৎক্ষণাৎ সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ অকাট্য হারামকে হালাল জানলে বা অকাট্য হালালকে হারাম জ্ঞান করলে অথবা কোন ফরযকে ফরয মনে না করলে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি মৃত প্রাণীর গোস্ত বিক্রি কালে বলে যে এ মৃত প্রাণীর গোশত নয় হালাল প্রাণীর তাহলে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে আল্লাহকে ভয় কর না? সে উত্তরে বলল না, তাহলে কাফির হয়ে যাবে। হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ফুযাইলের (রহঃ) মতে সে যদি গুনাহে লিপ্ত থাকা কালে এরূপ বলে তাহলে কাফির হবে। নতুবা নয়।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে সে আমার খোদা হলেও আমি তার থেকে আমার হক আদায় করে ছাড়বো। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ এরূপ উক্তি করল যে,আল্লাহই তোমার সাথে পারে না আর আমি কিরূপে পারব? সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কেউ বলে আমার উপরে আছেন আল্লাহ নিচে আপনি তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কারো সন্তান মরে গেলে যদি বলে “আল্লাহর বুঝি এর দরকার ছিল তাই নিয়ে গেছে” তবে সে কাফির হয়ে যাবে। অন্য কেউ যদি বলে আল্লাহ তোমার উপর জুলুম করেছে সেও কাফির হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ যদি কেউ কারো উপর জুলুম করে আর মজলূম বলে হে খোদা! তুমি তার তাওবা কবুল করো না। আর তুমি কবূল করলেও আমি কবুল করব না। তাহলেও সে কাফের হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কেউ বলে আমি আযাব ও ছাওয়াবে সন্তুষ্ট নই” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ যদি কেউ সাক্ষী ছাড়া বিবাহ করে আর বলে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশতাদের কে সাক্ষী রেখেছি তাহলে কাফির হবে না। তবে এর দ্বারা বিবাহ শুদ্ধ হবে না।

মাসআলাঃ যদি কোন প্রাণী আওয়াজ করে আর তা শ্রবন করে কেউ বলে “রোগী মারা যাবে বা পন্যদ্রব্যের দাম বাড়বে” অথবা কেউ যাত্রা করার পর কোন প্রাণীর আওয়াজ শুনে ফিরে আসে, এ ক্ষেত্রে কুফরীর ব্যপারে মতভেদ আছে।

মাসআলাঃ কেউ এরূপ উক্তি করল যে, আল্লাহ তাআলা জানেন,আমি তোমাকে সর্বদা সরন করি। কারো কারো মতে সে কাফের হয়ে যাবে। যদি বলে “আল্লাহ তাআলা জানেন আমি আমার সুখে দুঃখে যেরুপ তোমার সুখে দুঃখে তদ্রুপ ”এ ক্ষেত্রেও কারো কারো মতে কাফির হয়ে যাবে। কোন কোন আলেম বলেন -সে যদি এমন উদ্দেশ্য নেয় যে, আমি আমার সুখে দুঃখে জানমাল নিয়ে যেরূপ তৈরী থাকি তার সুখে দুঃখেও জানমাল নিয়ে তৈরী থাকি তাহলে সে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ যদি কেউ বলে “আল্লাহর এবং তোমার পায়ের কসম ” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে রিযিক তো আল্লাহর নিকট কিন্তু বান্দার নিকট হতে তা তালাশ করে নিতে হবে। তাহলে সে কাফির (কারন,আল্লাহ রিযিকদাতা হওয়ার ব্যপারে বান্দার কোন ভুমিকা জরুরী নয়)।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে “অমুকে যদি নবীও হয় তাহলে তার উপর ঈমান আনব না” অথবা বলে “আল্লাহ যদি আমাকে নামাযের আদেশ করেন তবুও নামায পড়ব না” অথবা বলে “এদিকে যদি কেবলা হয় তাহলে নামায আদায় করবো না” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ কোন পয়গম্বরকে নিয়ে লাঞ্ছনামূলক কিছু বললে সে কাফির হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি এরূপ উক্তি করে যে আদম আলাইহিস সালাম কাপড় বুনতেন আর অন্য একজন বলল,“তাহলে আমরা তো সবাই জোলা”(তাঁতি)। এর দ্বারা দ্বিতীয় ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। কারন সে নবীকে ব্যাঙ্গ করল।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি বলল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপ করতেন অপর কেউ উত্তরে বলল “এটা বেয়াদবী” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে যে আদম আলাইহিস সালাম যদি গন্দম না খেতেন তাহলে আমরা বদবখত হিসাবে পরিনত হতাম না। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি বলল নখ কাটা সুন্নাত। অন্য কেউ বলল যদিও তা সুন্নাত তথাপি আমি তা করব না। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি বলে সুন্নাত কি কাজে আসবে? তাহলেও সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি সৎ কাজের আদেশ করতে থাকে আর অন্য কেউ বলে কি হৈ চৈ করছো। এ যদি সে প্রত্যাখ্যানের সুরে বলে তাহলে কাফের হয়ে যাবে। ফাতওয়া সিরাজীতে উল্লেখ আছে যে কোন ঋনদাতা যদি বলে ঋন গ্রহীতা যদি আল্লাহ হয় তথাপি আমার পাওনা আদায় করে ছাড়বো। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি বলে নবী হলেও উসূল করে নিব তাহলে সে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ বলল এরূপই আল্লাহর বিধান উত্তরে যদি কেউ বলে “আল্লাহর বিধান কে আমি কি জানবো? তাহলে সে কাফির।

মাসআলাঃ কেউ যদি ফাতওয়ার প্রতি দৃষ্টি করে বলে তুমি আবার ফাতওয়ার কি হুকুম নামা এনেছ ? এ যদি সে শরিআতকে ব্যাঙ্গ করার নিয়তে বলে তাহলে কাফির হয়ে যাবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি বলে এরূপই শরিয়তের হুকুম অন্য কেউ উচ্চুসরে ঢেকুর নিয়ে বলল শরীয়তের জন্য এই। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ কোন মানুষকে বলল অমুকের সাথে সন্ধি কর। উত্তরে সে বলল মূর্তিকে সিজদাহ করবো তবুও তার সাথে সন্ধি করবো না। এর ফলে সে কাফির হবে না। কারন এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হল তার সাথে সন্ধিকে অসম্ভব জানা। কোন ফাসিক ব্যক্তি কিছু সংখ্যক নেককারকে লক্ষ্য করে বলল আসুন মুসলমানী (কীর্তি) দেখুন। এই বলে সে নামাযের মজলিসের প্রতি ইশারা করল তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন মদ্যপায়ী যদি বলে “সুখে থাক তারা যারা আমার খুশির উপর সন্তুষ্ট” আবু বকর তরখান (রহঃ) এর মতে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন নারী যদি বলে “জ্ঞানি স্বামীর উপর লা’নত বর্ষিত হোক” তাহলে কাফের গন্য হবে।

মাসআলাঃ রোগাক্রান্ত অবস্থায় যদি কেউ বলে “যদি চাও আমাকে মুসলমান রূপে মৃত্যু দাও বা চাইলে কাফির অবস্থায় মৃত্যু দাও” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ ফাতওয়ায়ে সিরাজীয়ায়ে আছে যে, কেউ যদি বলে হে খোদা আমার রুজী বাড়িয়ে দাও বা বলে আমার উপর জুলুম করো না। তার ব্যপারে হযরত আবু নসর (রহঃ) কোন রায় দেননি। তবে কাফির হয়ে যাওয়াই স্পষ্ট।কারন আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে জুলুমের আকীদা রাখা কুফরী।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি আযান দিচ্ছে এমতাবস্থায় অন্য কেউ বলল তুমি মিথ্যা বলছো। এর ফলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন নবী রাসূলের দোষ বর্ননা করলে বা তার চুল মোবারককে তুচ্ছ করে লোম বললে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন জালিম শাসককে কেউ আদিল (ন্যয়পরায়ন) বললে আকায়েদ ও দর্শন শাস্ত্রের বিশিষ্ট ইমাম আবু মানসূর মা’তুরীদী (রহঃ) এর মতে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে আবুল কাসেমের মতে সে কাফের হবে না। কারন জালিম কোন সময় ইনসাফও করতে পারে।

মাসআলাঃ ফাতওয়া হাম্মাদিয়া ও সিরাজীয়াতে আছে ট্যাক্স ইত্যাদি রাজস্ব আদায় সমুহকে কেউ রাষ্টপতির সম্পদ ধারনা করলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ ফাতওয়া সিরাজীয়াতে আছে কেউ যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করে যে, আপনি কি ইলমে গায়েব জানেন? তদুত্তরে সে বলল জানি। তবে সে কাফির হয়ে যাবে। (কারন আলিমুল গায়েব একমাত্র আল্লাহ তাআলার বিশেষ গুন। এটা আর কারো জন্য হতে পারে না)।

মাসআলাঃ কোন লোক যদি এরূপ উক্তি করে যে তোমাকে ছাড়া যদি আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করেন তাহলে আমি জান্নাতে যাব না। তবে বিশুদ্ধ মতে সে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ বলল আমি মুসলমান অন্য একজন বলল লা’নত তোমার উপর ও তোমার মুসলমানিত্বের উপর। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে জামিউল ফাতওয়ার বর্ননা মতে সে কাফির হবে না। ফাতওয়া সিরাজীয়াতে বলা হয়েছে কেউ যদি বলে ফেরেশতা ও নবীগণও যদি সাক্ষ্য দেন যে তোমার নিকট রৌপ্য নেই তবুও আমি বিশ্বাস করব না তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি একে অন্যকে বলে “হে কাফির ” সে বলল এমনটি না হলে আমি তোমার সাথে সংশ্রব রাখতাম না তাহালে কারো মতে সে কাফির হবে। কারো মতে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে তোমার সাথে থাকার চাইতে কাফির হওয়াই ভালো। তাহলে সে কাফির হবে না। কারন তার উদ্দেশ্য তার থেকে দুরে থাকা মাত্র।

মাসআলাঃ একজন অন্য জনকে নামায পড়ার জন্য বলল। উত্তরে সে বলল তুমি তো কত নামাযই পড়লে কিন্তু পেয়েছ কী ? বা বলে কত নামাযই তো পড়লাম কিন্তু কিছুই তো পেলাম না তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কেউ কাউকে বলে তুমি কাফির হয়ে গেছো সে বলল এটাই ধরে নাও তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কেউ এরূপ উক্তি করে যে, আল্লাহর চেয়ে আমার স্ত্রী আমার নিকট প্রিয় তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। তার জন্য তাওবা করা জরুরী। তাওবার পর বিয়ে দোহরানো আবশ্যক।

মাসআলাঃ কোন কাফির যদি মুসলমানকে বলে আমাকে মুসলমানী শিক্ষা দিন। যাতে আমি আপনার নিকট মুসলমান হতে পারি। সে বলল এখন ক্ষ্যান্ত কর অমুক আলিম বা বিচারকের নিকট যাও। তিনি তোমাকে শিক্ষা দিবেন।অমুক সময় তার নিকট মুসলমান হয়ে যাও।বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সে কাফির হবে না। যদি কোন ওয়ায়েজ বলে একটু বিলম্ব কর অমুক মাহফিলে তুমি ইসলাম গ্রহন করবে। ফাতওয়া মতে উক্ত ওয়ায়েজ কাফির গন্য হবে। কারন এতে প্রমানিত হয় যে সে মধ্যকার এ সময়টাতে তার কুফরী কর্মের উপর রাজী।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে “খেলা আমাকে রোযা নামায থেকে আবদ্ধ করে রেখেছে” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি বলে “তুমি কয়েক ওয়াক্ত নামায ত্যাগ কর তাহলে তুমি কুফরীর সাদ গ্রহন করবে” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি বলে “এটা আলেমদের কাজ, (অবশ্য) কাফিরদের কাজও তাই” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে যদি নির্দিষ্ট আলিমকে লক্ষ্য করে বলে তাহলে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ যদি দু’আর মধ্যে বলে “হে খোদা তুমি আমার প্রতি তোমার করুনা কুন্ঠিত হয়ো না। এটা কুফরী উক্তির অন্তর্ভুক্ত। (কারন এর দ্বারা প্রমানিত হয় যে বর্তমানে তার উপর কোন প্রকার করুনা নেই)।

মাসআলাঃ কেউ কোন স্ত্রীকে বলে তুমি কাফির হয়ে যাও তাহলে এর দ্বারা তুমি স্বীয় স্বামী হতে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে। তবে এর ফলে লোকটি কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কুফরীর প্রতি সন্তোষও কুফরী। চাই তা নিজের ব্যাপারে হোক বা অন্য কারো ব্যাপারে হোক। বিশুদ্ধ মত হল যদি কুফরীকে মন্দ যেনে শত্রুর কুফরী কামনা করে তাহলে সে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ যদি শরাবের আড্ডায় ওয়ায়েজগনের ন্যায় উচু স্থানে বসে হাসি মজাকের কথা বলে আর অন্যরা হাসতে থাকে তাহলে সবাই কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি আকাংখা করে বলে “যদি যিনা বা নাহক ভাবে হত্যা জায়েয হতো” তাহলে লোকটি কাফির হয়ে যাবে। আর যদি আফসোস করে বলে হায়! যদি মদ হালাল হত বা রমযানের রোযা ফরজ না হত তাহলে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ যদি বলে আল্লাহ জানেন আমি এ কাজ করিনি অথচ সে তা করেছে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। ইমাম সারাখসী (রহঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, এরূপ শপথকারীর যদি বিশ্বাস থাকে যে,এরূপ মিথ্যা বলা কুফরী তবে কাফির হবে অন্যথায় নয়। হযরত হুসামুদ্দীন (রহঃ) এর ফাতওয়াও অনুরূপ।

মাসআলাঃ ইমাম তহাবী (রহঃ) বলেন, যে সব বিষয়ে ঈমান আনা ওয়াজিব সেগুলো অসীকার করা ছাড়া অন্য কোন কারনে মুমিন ঈমান হতে বের হয় না।

মাসআলাঃ ইমাম নাসিরুদ্দীন (রহঃ) বালেন যা গ্রহন করলে নিশ্চিতরূপে মুরতাদ হওয়া বুঝায় তা পাওয়া গেলে তার উপর মুরতাদ হওয়ার হুকুম আরোপিত হবে।আর যার দ্বারা ধর্মচ্যুতির ব্যপারে সংশয় থেকে যায় সেক্ষেত্রে মুরতাদ হওয়ার ফাতওয়া দেওয়া যাবে না। কারন মূলনীতি হল সন্দেহের দ্বারা ইয়াকীন দূরীভূত হয় না। এবং ইসলাম সদা বিজয়ী থাকে পরাভূত হয় না। কোন মুসলমান সম্পর্কে তড়িৎ কুফরীর ফাতওয়া দেওয়া অনুচিত। আলিমগন যাকে কুফরী কালাম উচ্চারন করতে বাধ্য করা হয়েছে তার সম্পর্কেও মুসলমান থাকার ফাতওয়া দিয়েছেন।

মাসআলাঃ ফাতাওয়া তাতারখানিয়াতে “ইয়ানবী ”গ্রন্থের সূত্রে বালা হয়েছে যে,ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেছেন কুফরী কালামের দ্বারা ততক্ষন পর্যন্ত কুফর সাব্যস্ত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত সে কুফরী আকীদা পোষন না করে।

মাসআলাঃ মুহীত ও যখীরাহ নামক গ্রন্থদ্বয়ে আছে যে,কোন মুসলমান যতক্ষন পর্যন্ত সেচ্ছায় কুফরী না করে ততক্ষন পর্যন্ত সে কাফির হয় না।

মাসআলাঃ নিসাব ও জামি’ আছগার এর বরাত দিয়ে “মুজমারাত” গ্রন্থে বলা হয়েছে যে,কেউ যদি সেচ্ছায় কুফরী কথা বলে কিন্তু কুফরী আকীদা না রাখে,তবে কোন কোন আলিমের মতে সে কাফির হবে না। আর কারো কারো মতে কাফির হবে। কারন এর দ্বারা কুফরীর প্রতি সম্মতি প্রকাশ পায় ।এটা কুফরী।

মাসআলাঃ কোন বেইলম ব্যক্তি যদি কুফরী কথা বলে অথচ সে জানেনা যে এটা কুফরী তাহলে কোন কোন আলিমের বর্ননা মতে কাফির হবে না। তারা তার অজ্ঞতাকে ওযর মনে করেন। আবার কারো কারো মতে কাফির হয়ে যাবে। তাদের নিকট অজ্ঞতা কোন ওযর নয়।

মাসআলাঃ মুনতাকা’র বর্ননা মতে স্বামী- স্ত্রীর কোন একজনের মুরতাদ হওয়ার দ্বারায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিচারকের ঘোষনার উপর মওকূফ থাকে না।

মাসআলাঃ কেউ যদি অগ্নিপূজকদের টুপি পরে বা হিন্দুদের ন্যয় জামা পরে তবে কোন কোন আলিমের মতে সে কাফির হয়ে যাবে। আবার কারো কারো মতে কাফির হবে না। পরবর্তি আলিমগনের কেউ কেউ বলেন যদি প্রয়োজনবশত পরে তাহলে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কোন মুসলমান যদি গলায় ব্রাহ্মণদের পৈতা পরে,আবু হাফস (রহঃ) এর মতে যদি সে কাফিরদের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরে তাহলে সে কাফির হবে না। আর যদি বানিজ্যিক সার্থে পরে তাহলে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ অগ্নিপূজকরা যখন নওরোজ অনুষ্ঠানে সমবেত হয় বা হিন্দুরা যখন হোলী , দেওয়ালী বা অন্য কোন পূজা পাঠ করে তা দেখে কোন মুসলমান যদি বলে বাহ (এদের ধর্মে) এরা কত চমৎকার আদর্শ ব্যবস্থা রেখেছে। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ মাজমাউন নাওয়াযিল হতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,কোন ব্যক্তি যদি সগীরা গোনাহে লিপ্ত হয় আর তা দেখে কেউ তাকে তাওবা করতে বললে উত্তরে সে বলে আমি এমন কি অন্যায় করেছি যে আমাকে তাওবা করতে হবে। তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কেউ হারাম মাল সদকা করে সাওয়াবের আশা করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন ফকীর যদি জানতে পারে যে,তাকে হারাম মাল দান করা হয়েছে এতদসত্বেও সে যদি তার জন্য দুআ করে আর লোকটি আমিন বলে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।
বিঃ দ্রঃ কোন ফাসেক ব্যক্তি মদ পান করছিল এমতাবস্থায় তার নিকট আত্বীয়রা এসে তার উপর টাকা অর্পন করে সম্মান প্রদর্শন করল অথবা সবাই মিলে তাকে ধন্যবাদ দিল উপরে উল্লেখিত দু সূরতেই তারা কাফির হয়ে যাব। কেননা এতে হারাম ও নাজায়েয কাজে সমর্থন করা হল।

মাসআলাঃ নিজ স্ত্রীর সাথে পায়ু পথে সঙ্গম কে বৈধ জানলে কাফির হবে না। যদিও তা হারাম। নিজ স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে এরূপ করলে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ ঋতুকালে সহবাস জায়েয মনে করা কুফরী। ইস্তিবরায়ে রেহেমকালে জায়েয জানা বিদআত। কুফরী নয় (বাদী ক্রয় করার পর হায়েয আসা পর্যন্ত সহবাস না করে পূর্বের মনিব কর্তৃক অন্তসত্বা কি না তা পরীক্ষা করার কাজকে ইস্তিবরায়ে রেহেম বলে) ।

মাসআলাঃ খুসরুয়ানী গ্রন্থে উল্লেখ আছে কোন ব্যক্তি যদি উচু জায়গায় বসে থাকে আর নিচু হতে কেউ ব্যঙ্গ করে তার নিকট মাসআলা জিজ্ঞাস করে এবং সেও উপর হতে তাচ্ছিল্যের সাথে জবাব দেয় তাহলে কাফির হয়ে যাবে। আসলে উপরে বসা শর্ত নয়। বরং দ্বীনি ইলেমকে তাচ্ছিল্য করাই কুফরী।
মাসআলাঃ কেউ যদি বলে ইলমের মজলিস দ্বারা আমার কি কাজ? বা বলল আলিমরা যা বলেন তার উপর কে আমল করতে পারে? তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি বলে দরকার হল টাকার ইলম কি কাজে লাগবে? তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি বলে এরা যা শিখেছে এগুলো উপাখ্যান বা মিথ্যা অথবা বলে আলিম বা জ্ঞানীদের হিলা -বাহানাকে আমি অসীকার করি তাহলে সে কাফির হয়ে যবে।

মাসআলাঃ একজন কাউকে বলল আমার সাথে শরীআতের দিকে চল। লোকটি বলল সিপাই নিয়ে আসো তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। আর যদি বলে বিচারকের নিকট চল সে বলল সিপাই আনো তাহলে সে কাফির হবে না।

মাসআলাঃ কেউ বলল জামআতের সাথে নামায আদায় কর। উত্তরে লোকটি বলল ان الصلوة تنهي (নিশ্চই নামায বিরত রাখে) আয়াতের এটুকু বলল তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেউ যদি কোন পেয়ালায় কুরআনের আয়াত রেখে তাতে পানি পূর্ন করে বলে كاسا دهاقا (সুসাদু পানীয় ভর্তি পেয়ালা) তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে (এতে আয়াতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে)।

মাসআলাঃ কেউ যদি হাড়ির অবশিষ্ট খাদ্য সম্পর্কে বলে والباقيات الصالحات (পরকালের জন্য অবশিষ্ট নেকআমল সমুহ) তাহলে তাচ্ছিল্যের কারনে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন লোক যদি বিসমিল্লাহ বলে মদ পান করে অথবা যিনা করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যদি বিসমিল্লাহ বলে হারাম বস্তু ভক্ষন করে। কেউ যদি রমযান আসার পরে বলে “মাথার উপর বিপদের বোঝা এসেছে” তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ যদি কাউকে বলা হয় আসো অমুককে সৎকাজের আদেশ কর।সে বলল সে আমার কি করেছে যে তাকে ভাল কাজের আদেশ করব? তবে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কেউ যদি বলে দুনিয়াতে আমার টাকা পরিশোধ করে দাও কারন আখেরাতে তো টাকা থাকবে না। সে উত্তরে বলল আরো ১০ টি টাকা দাও সেখানে আমার কাছ থেকে নিও, আমি দিয়ে দিব তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ কোন সম্রাটকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলে সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফির হয়ে যাবে। তবে যদি সালামের ন্যয় সম্মানার্থে সিজদা করে তাহলে উলামায়ে কিরামের মতভেদ আছে। ফাতওয়া জাহীরিয়ার বর্ননা মতে কাফির হরে না। হিদায়ার শরা মু’আয়্যিদুদ দিরায়া নামক কিতাবে আছে যে,ইমামগনের ঐক্যমতে (গাইরুল্লাহকে ) সিজদা কারা জায়েয না। তবে অন্য কোন উপায়ে তাযীম করা তথা সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়া, হাত চুম্বন করা বা পিঠ বাঁকা করা জায়েয।

মাসআলাঃ কেউ যদি প্রতিমা,কুপ,সাগর,নদী,ঝর্না,ঘর বা এ জাতীয় কোন কিছুর নামে জবাই করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। তার স্ত্রী বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। এবং জবাইকৃত জানোয়ার হারাম ও মৃত ধর্তব্য হবে।

মাসআলাঃ ইমাম জাহিদ আবু বকর (রহঃ) হতে দস্তুরুল কুযাত গ্রন্থে বলা হয়েছে কাফির,বিধর্মীদের কোন আনন্দ উৎসবে যেমন অগ্নি পূজারীদের নওরোজ,হিন্দুদের হোলী,দেওয়ালী বা দূর্গাপূজা অথবা অন্য কোন উৎসবে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে কেউ অংশ গ্রহন করলে সে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ শরহে মাকাসিদ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,যে ব্যক্তি বিশ্ব জগতের নশ্বরতা , মৃতদের পূনরুত্থান,শাখা-প্রশাখাগত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে আল্লাহ তা’আলার ইলম প্রভৃতি যা দ্বীনের বিশেষ আকীদাগত বিষয় এগুলোকে অসীকার করবে,সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে।

মাসআলাঃ আল্লামা আলামুল হুদা (রাহঃ) বাহরুল মুহীত নামক কিতাবে লিখেছেন, যে সব অভিশপ্ত সৃষ্টির সেরা মহামানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালী দেয় বা তাচ্ছিল্য করে, দ্বীনি কোন বিষয় অথবা তার গঠন প্রকৃতি বা সম্মানিত গুনাবলী সম্পর্কে দোষ বর্ননা করে তবে সে মুসলমান হোক চাই যিম্মি বা হরবী যদি ঠাট্টা করে তবুও সে কাফির। তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। তার তাওবা গৃহীত হবে না। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠি হয়েছে যে,যে কোন নবীর সাথে বেআদবী করা বা কাউকে তুচ্ছ ভাবা কুফরী। চাই সে হালাল জেনে করুক বা হারাম জেনে।

মাসআলাঃ রাফেজীরা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কটুক্তি করে থাকে যে, শত্রুদের ভয়ে আল্লাহর নবী কিছু কিছু আয়াত প্রচার করেননি ইহা কুফরী।

Loading