প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হযরত আমার প্রশ্ন গুলো হলো, ক। তায়াম্মুম এর সহীহ পদ্ধতি কেমন? কোন বিধান আদায় না করলে তাওয়াম্মুমের হক আদায় হবে? পানি ছাড়া এটা করলে পবিত্রতা অর্জন হবে? খ। জামাআতে ইমামকে রুকূতে বা সিজদায় পেলে তাকবীরে তাহরীমা বলার পর হাত বেঁধে অতঃপর ছেড়ে রুকু সিজদায় শরীক হবে নাকি হাত না বেঁধে রুকু সিজদায় চলে যাবো? গ। সফরে বা অফিস যাওয়ার পথে তাসবীহের আমল নিজে করছি, প্রায় মানুষ করছে না গাফেল আছে। নিজের জন্য যদি খুশি হয় যে আল্লাহ শুকুর সবাই চলার পথে গাফেল থাকলে আমি আল্লাহ স্মরণে চলতে পারছি এটা কি গুনাহ হবে? এই যে অন্য কেউ করছে না নিজে করছি নিজে ভালো ভাবা কিছু সময় জন্য। আসলে এটা ভালো লাগা থেকে শুকুর আদায় হিসেবে মনে আসে? এটা কি বেঠিক কিছু? অন্তরে ওয়াসওয়াসা আছে তাই বললাম! হযরত!
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ক। তায়াম্মুম যখন জায়েয (অর্থাৎ যখন তায়াম্মুম বৈধ হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া যায়) তখন তা করলে পানি ছাড়াই পবিত্রতা অর্জন হবে। তায়াম্মুমের কোন ফরজ ছেড়ে দিলে তা সহীহ হবে না। নিম্নে তায়াম্মুমের ফরজ ও সুন্নাতগুলো দিলাম-
তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি
১। নিয়ত করা। অর্থাৎ নামায সহীহ হওয়ার জন্য অথবা পবিত্রতা অর্জনের জন্য অথবা এমন মৌলিক ইবাদতের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করা যা পবিত্রতা ব্যতীত সহীহ হয় না। (সূরা নিসা,আয়াত নং ৮৩; সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ৯৭২)
২। মাটি বা মাটি জাতীয় কোন পবিত্র বস্তুতে হাত মেরে একবার সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করা। (সূরা নিসা,আয়াত নং ৪৩; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৮)
৩। আরেকবার মাটিতে হাত মেরে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩২৮; সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ৯৩৭)
বিঃ দ্রঃ পূরো মুখমন্ডল এবং উভয় হাত কনূইসহ এমন ভাবে মাসেহ করতে হবে যেন এক চুল পরিমান জায়গা বাদ না পড়ে। অন্যথায় তায়াম্মুম সহীহ হবে না। উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো খুব ভালভাবে খিলাল করতে হবে। আংটি থাকলে তা নাড়াচাড়া করে তার নিচে মাসেহ করতে হবে।
(সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ১০৩২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২)
তায়াম্মুমের সুন্নাত সমূহ
১। بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ পড়ে তায়াম্মুম শুরু করা। (সুনানে নাসায়ী,হাদীস নং ৭৮; সুনানে বাইহাক্বী,হাদীস নং ১৯৪)
২। হাতের আঙ্গুল সমূহ ফাঁক করে উভয় হাতের তালু মাটিতে রাখা । (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩১৮; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৩,আল-বাহরুর রায়েক ১/৪০৮)
৩।এরপর উভয় হাত মাটিতে সামনে-পেছনে ঘর্ষন করা। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৩২০; সুনানে দারাকুতনী,হাদীস নং ১৪)
৪। অতঃপর উভয় হাত ঝেড়ে নেওয়া যাতে আলগা ধুলাবালি ঝরে যায়। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৩৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৫)
৫। তারতীব বা ধারাবাহিকতা বক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে সমস্ত মুখ মাসেহ করা অতঃপর হাত মাসেহ করা। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং ৩৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৪৬)
৬। হাত মাসেহ করার সময় আগে ডান হাত মাসেহ করা। অতঃপর বাম হাত । (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৫৫৪৫)
৭। মুখ মাসেহ করার পরেই বিলম্ব না করে হাত মাসেহ করা । (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৭; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং ১৪)
৮। দাড়ি খিলাল করা। (সুনানে দারাকুতনী,হাদীস নং ১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯৫)
খ। এমতাবস্থায় হাত না বেঁধে রুকু সিজদায় চলে যাবেন।–রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪, ১৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯
গ। বাহ্যিকভাবে তাসবীহ না পড়াটা গাফলতির আলামত নয়। হতে পারে সে মনে মনে আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত বা দ্বীনী কোন ফিকির করছে। তাই আপনি অপরের চিন্তা না করে নিজে যিকিরে মাশগুল থাকুন এবং আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করুন। অন্যদের গাফেল থাকার ধারনা ত্যাগ করুন।