প্রশ্ন : অামরা গতকাল রাত ৯.০০ টায় ইশার নামাজ পড়ে ঢাকার গাড়িতে উঠলাম সকাল ৮.০০ টায় গাড়ি ঢাকা পৌছে। জ্যাম এভয়েট করার জন্য টাংগাইল হয়ে ভিতরের নির্জন রাস্তা দিয়ে মানিকগঞ্জ দিয়ে গাড়ি ঢাকা অাসছিল। পথে ফজরের নামাজের জন্য গাড়ি দাড় করানোর কথা বললে ড্রাইভার নিরাপত্তার কথা বলে দাড়ায়নি। এনিয়ে একজনের সাথে ড্রাইভারের অনেক বাগিবতন্ডা হয় । অামি প্রায় ১২ বছর থেকে তায়াম্মুম করে গাড়িতে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত। কিন্তু ঐ ব্যাক্তি রাজি হননি। বাগিবতন্ডায় সমস্ত যাত্রির ঘুম ভেংগে যায় এবং তাকে গাড়িতে নামাজ পড়তে বাধ্য করে। তবে সে তায়াম্মুম নাকরে ড্রাইভার খাবার পানি দিয়ে গাড়িতেই অযু করে গাড়ির ইঞ্জিন কভারে বসে নামায অাদায় করে। এটা কি সঠিক? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর :

রমযানে দ্বীনী সফরে বাইরে থাকা, নিজের অসুস্থতা, বাচ্চাদের অসুস্থতা এবং মাদ্রাসার ব্যস্ততা সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন আমার ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারিনি। তাই প্রচুর পরিমানে প্রশ্ন জমা হয়ে গিয়েছে। আর আমিও টাইপে খুব একটা পারদর্শী না। তাই আপনার প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমার “সফর ও কসর সংক্রান্ত জরুরী মাসায়েল” নামক একটি প্রবন্ধের কিছু অংশ তুলে  দিলাম। আশা করি এর মধ্যেই আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। এর পরেও কোন প্রশ্ন থাকলে পুনরায় প্রশ্ন করার অনুরোধ রইল।

বাসে নামাযঃ

মাসআলাঃবাস ও ট্রেনে নামাযের হুকুম একই অর্থাৎ বাসে যদি উপরে উল্লেখিত নিয়মে (কিবলামূখী হয়ে কিয়াম ও রুকু সিজদা করে) নামায পড়তে না পারে এবং বাস থামানো সম্ভব না হয় অথবা গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌছাতে নামাযের ওয়াক্ত চলে যায় তবে ইশারায় যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে। আর যথানিয়মে নামায পড়তে পারলে উক্ত নামাযই যথেষ্ট হবে। – রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।

বিঃদ্রঃ দুর-দুরান্তে সফর করতে হলে সকাল সকাল বের হওয়া উচিত। যাতে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যস্থানে পৌছা যায়। এতে নামায আদায় সহজ হয়ে যায়। আর বিকালে সফর শুরু করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসর ও মাগরিবের নামায আদায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়।
তবে একান্ত যদি দুপুরের পরে সফরে বের হতে হয় তবে বাসের সফর হলে নামাযের সময় গুলোতে বাসা থামিয়ে নিচে কোন স্থানে কিয়াম ও রুকু-সিজদার দ্বারা নামায আদায় করবে। যে দেশে অন্তত ৯২শতাংশ মানুষ মুসলমান সে দেশে বাস থামিয়েই নামায পড়া উচিত। আসলে আমাদের জযবার অভাব। আমরাই মনে করি বাস থামিয়ে নামায পড়লে অন্যান্য ভাইদের সময় অপচয় হবে। অথচ এর দ্বারা যেমনিভাবে নিজের ফরজ আদায় হয় তেমনিভাবে অন্যান্য ভাইদের জন্য দাওয়াতও হয়। আর বাস্তবতা ও অধমের অভিজ্ঞতা এটাই যে, নিজের সদ্বিচ্ছা থাকলে বাস থামিয়ে নামায পড়া যায়।
তাছাড়া বাসে নামায পড়লে সাধারনত তা সহীহ হয় না। কেননা কিয়াম, কিবলামুখী হওয়া এবং সিজদা এগুলো ঠিকভাবে আদায় করা যায় না। তাই যদি নিচে নেমে নামায আদায করা না যায় অথবা নেমে গেলে নিজের জান,মালের ক্ষতি হওয়া আশংকা থাকে তবে বাসে যে কোন ভাবে নামায পড়ে নিবে এবং পরে দোহরিয়ে নিবে।
এক্ষেত্রে আরেকটি সংশোধনযোগ্য বিষয় হল অনেক সময় পুরুষেরা বাস থামিয়ে নামায পড়লেও মহিলারা পর্দার দোহাই দিয়ে অথবা লজ্জার কারনে নামায পড়ে না। অথচ এটা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। বরং তারা যথা নিয়মে ওযু করে মসজিদের এক কিনারায় বা অন্য কোন স্থানে বোরকা পরিহীত অবস্থায় নামায আদায় করবে।

ট্রেনে নামাযঃ

মাসআলাঃট্রেনে নামায পড়া জায়েয আছে চাই ট্রেন স্টেশনে দাড়িয়ে থাকুক অথবা চলমান। এক্ষেত্রে শর্ত হল কিবলামুখী হয়ে এবং দাড়িয়ে যথা নিয়মে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। তবে যদি দাড়ানোর কারনে মাথায় চক্কর দেয় অথবা পড়ে যাওয়ার আশংকা হয় তবে বসে রুকু সিজদার মাধ্যমে নামায আদায় করবে। নামায রত অবস্থায় ট্রেন ঘুরে গেলে নামাযীও সাথে সাথে ঘুরে যাবে।

আর যদি ভিড় বা অন্য কোন করনে কিবলমুখী হয়ে নামাজ পড়া না যায় অথবা কিয়াম সম্ভব না হয় অথবা যথানিয়মে সিজদা না করা যায় এবং ওয়াক্তের মধ্যে সামনে কোন স্টেশনে নেমে নামায আদায় সম্ভব না হয় তবে যে কোনভাবে নামায পড়ে নিবে। এবং পরবর্তিতে উক্ত নামায দোহরিয়ে নিবে।- রদ্দুল মুহতার ২/৪১, ১/২৩৫, আদ্দুরুল মুখতার ১/৪২৭,৪৪৫,আল-বাহরউর রায়েক ১/৪৯৩,২৪৮।

Loading