নামাযের সুন্নাত ৫১টি

দাঁড়ানোর সুন্নাত ১১টি
১। পায়ের আঙ্গুলগুলো পরিপূর্ণ কিবলামুখী করে রাখা। (এটা তখনই সম্ভব যখন উভয় পা সমান্তরাল তথা সমনে -পিছনে সমান ফাঁক থাকবে)। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৬৬৭; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৫২)
এক্ষেত্রে আদব হল উভয় পায়ের মাঝে হাতের চার আঙ্গুল বা সর্বোচ্চ এক বিঘত পরিমান ফাঁক রাখা। {রদ্দুল মুহতার ১/১৩১ (যাকারিয়া)}
২। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মাথা না ঝুঁকানো। বরং কিবলামুখী হয়ে সিজদার স্থানে নযর রেখে দাঁড়ান। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস ৩০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ৩০১২; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৩৬৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭১(যাকারিয়া)}
৩। উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো যাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের লতি বরাবর পৌঁছে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৮৮১)
৪। হাত উঠানোর সময় হাতের তালু ও আঙ্গুল সমূহের পেট কিবলামুখী করে রাখা। (সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ২৪১৩;তাবারানী, আল মু’জামুল আউসাত, হাদীস নং ৭৮০১)
৫। হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে রাখা। একেবারে মিলিয়ে না রাখা বা একেবারে ফাঁক করে না রাখা। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ৪৫৯; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ১৪১০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৮৫৬)
৬। ইমামের তাকবীরে তহরীমা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা বলা। মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের পূর্বে শেষ হয়ে গেলে মুক্তাদীর নামায সহীহ হবে না। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৭৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৬২)
৭। ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রেখে হাত বাঁধা। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১২৬৪; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৫২)
৮। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭২৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২৭২; আল-বাহরুর রায়েক ১/৫৩৮)
৯। অবশিষ্ট তিন আঙ্গুল বাম হাতের বাহুর উপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৮১১; ফাতহুল ক্বদীর ১/২৫০)
১০। নাভীর নীচে হাত বাঁধা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৭৫)
১১। ছানা পড়া। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৮৯৮; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৪৩)

ক্বিরাআতের সুন্নাত ৭টি
১। প্রথম রাকাআতে ছানার পর পূর্ন আউযুবিল্লাহ পড়া। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৬৪; সুনানে দারাক্বুতনী, হাদীস নং ১১৫৯)
২। পূর্ন বিসমিল্লাহ পড়া। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৯০৪; সুনানে দ্বারাক্বুতনী, হাদীস নং ১১৮৫)
৩। ফজর ও যোহরের নামাযে তিওয়ালে মুফাসসাল (সূরা হুজুরাত থেকে বুরূজ পর্যন্ত), আসর ও ইশার নামাযে আউসাতে মুফাসসাল (সূরা ত্বারিক থেকে বায়্যিনাহ পর্যন্ত) এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল (সূরা যিলযাল থেকে নাস পর্যন্ত) এর মধ্য থেকে প্রতি রাকাআতে যে কোন একটি সূরা অথবা কোন কোন সময় বড় কোন সূরা থেকে এ পরিমান ক্বিরাআত পড়া। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৩৬৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৯৮২; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৪১৭৬)
৩। সূরা ফাতেহার শেষে সকলের জন্য আস্তে আমীন বলা। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৪৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৮৮৪৩)
৫। ফজরের প্রথম রাকাআতে দ্বিতীয় রাকাআত অপেক্ষা কিরাআত লম্বা করা। অন্যান্য ওয়াক্তে উভয় রাকাআতে ক্বিরাআতের পরিমান সমান রাখা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৪০, ১০৪৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৮১৯)
৬। মধ্যম গতিতে ক্বিরাআত পড়া। খুব দ্রুত বা একেবারে ধীরে না পড়া। (মুসনাদে আহমাদ , হাদীস নং ২৩৪১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২৫৮০; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৫০৪৬)
৭। ফরজ নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে শুধু সূরা ফাতিহা পড়া। (সহীহুল বূখারী, হাদীস নং ৭৭৬; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ২৫৮৬)
রুকূর সুন্নাত ৮টি
১। তাকবীর বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৪)
২। উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭৯০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৩১, ৮৬৭; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৬০)
৩। হাঁটু ধরার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৮৮৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৮১৪)
৪। কনূইসহ উভয় হাত সম্পূর্ন সোজা রাখা। (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৬০; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৩৪; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ২৬১৯)
৫। পায়ের গোছা, হাটু ও উরু সম্পূর্ন সোজা রাখা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৬৩; মুসনাদে আহামাদ, হাদীস নং ১৭০৭৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৩৬)
৬। মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা, উঁচু-নিচু না করা এবং দৃষ্টি পায়ের দিকে রাখা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৮; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ৩৬৮২)
৭। কমপক্ষে তিনবার এই তাসবীহ পড়া-
سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيمِ
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১১৩২; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৬১)
৮। রুকু থেকে উঠার সময় ইমামের سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ) এবং মুক্তাদীর رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (রব্বানা লাকাল হামদ) বলা। আর একাকী নামায আদায়কারীর উভয়টি বলা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৬৮৯,৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪৮)

সিজদার সুন্নাত ১২টি
১। তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯৪)
২। প্রথমে উভয় হাঁটু মাটিতে রাখা। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ১৯১২; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৩৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৮৮)
৩। অতঃপর কান বরাবর উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ একেবারে মিলিয়ে পরিপূর্ন কিবলামুখী করে রাখা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৮৮৫৮; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ২৯৪৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৮২৬; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৩২)
৪। তারপর নাক রাখা। {সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮১২; রদ্দুল মুহতার ২/২০২ (যাকারিয়া)}
৫। তারপর কপাল রাখা। {সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮০৯; রদ্দুল মুহতার ২/২০২ (যাকারিয়া)}
৬। অতঃপর দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৮৮৬৬; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ৩০১২)
৭। পেট উরু থেকে পৃথক রাখা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৩৫; সুনানে বাইহাক্বী, হাদীস নং ২৮১৯)
৮। উভয় পাঁজড় থেকে বাহুদ্বয়কে পৃথক রাখা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৩)
৯। কনূই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৩৯০, ৮২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩০, ১১৩২)
১০। কমপক্ষে তিন বার এই তাসবীহ পড়া-
سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلَى
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৫০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১১৩২)
১১। তাকবীর বলা অবস্থায় সিজদা থেকে উঠা। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮০৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৮১)
১২। প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর উভয় হাত, তারপর উভয় হাঁটু উঠানো। {সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৮৩৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১০৮৮; রদ্দুল মুহতার ২/২০৩ (যাকারিয়া)}

বসার সুন্নাত ১৩টি
১। বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। ডান পা সোজা খাড়া করে রাখা। উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো যথাসম্ভব কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩৮; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৭৮৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১১৫৭)
২। রানের উপর হাঁটু বরাবর করে রাখা এবং দৃষ্টি উভয় হাঁটুর মাঝে রাখা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৫৪২; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১২৭৪)
৩। তাশাহ্হুদের মধ্যে আশহাদু বলার সময় ডান হাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি তালুর দিকে মুড়িয়ে রাখা। লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুল সামান্য উচুঁ করে ইশারা করা। অতঃপর “ইল্লাল্লাহু” বলার সময় আঙ্গুলের মাথা কিছুটা ঝুকানো এবং বৈঠকের শেষে পর্যন্ত এ অবস্থায় রেখে দেওয়া। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯৫৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১২৭৩)
৪। শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর দুরূদ শরীফ পড়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১২৮৭; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১২৮৭)
৫। অতঃপর দুআয়ে মাছূরা পড়া। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৭০৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৪৪)
৬। উভয় দিকে সালাম ফিরানো। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৩; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৯৫)
৭। প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরানো অতঃপর বামদিকে। উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে আরম্ভ করা এবং সালামের সময় নজর কাঁধের দিকে রাখা। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩২৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৫ (যাকারিয়া)}
৮। ইমামের উভয় সালামে মুক্তাদী, ফেরেশতা ও নামাযী জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৩১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪১-২৪২, যাকারিয়া)
৯। মুক্তাদীর জন্য উভয় সালামে ইমাম (যদি মুক্তাদী মাঝে থাকে, অন্যথায় ইমাম যে দিকে থাকবে সেদিকে সালাম ফিরানোর সময় ইমামের নিয়ত করা), অন্যান্য মুসল্লী, ফেরেশতা ও নামাযী জিনদের প্রতি সালাম প্রদানের নিয়ত করা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৯৮; সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১২০২; সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৯২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪১-২৪৬)
১০। একাকী নামায আদায়কারীর শুধু ফেরেশতাগনের সালাম প্রদানের নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৩১৪০)
১১। ইমামের সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই মুক্তাদীর সালাম ফিরানো। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ৮৪০; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১২০৯)
১২। সালাম দীর্ঘ না করা এবং দ্বিতীয় সালাম প্রথম সালাম অপেক্ষা নিম্ন আওয়াজে বলা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং ১০০৬; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ২৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৩০৫৭)
১৩। ইমামের দ্বিতীয় সালাম শেষ হলে মাসবূকের ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের জন্য দাঁড়ানো। এক পাশে সালাম ফিরানোর পর দাঁড়াবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৪৫৬৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৩১৫৬, ৩১৫৯)

Loading