প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হযরত আমার ভাইরা ভাই কানাডা থেকে একটি প্রশ্ন করছেন: কুরআনে নাকি ৩ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলা আছে? ৫ ওয়াক্ত নামায সুন্নিরা বানাইছে। দিনের দুই শেষ (ফজর+ইশা) এবং উস্তা-মধ্যম (যোহর) এই তিন নামাযের কথায় নাকি বলা আছে! রেফারেন্স: 2:234, 11:114, 17:78, 24:58
উত্তর :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
এটাতো কেবল ঐ ব্যক্তি বলতে পারে, যে চরম পর্যায়ের জাহেল, বদদ্বীন অথবা হাদীস অস্বীকারকারী। যদি কুরআনে তিন ওয়াক্ত নামাযের কথা থেকেই থাকে তবে নামায পড়ার পদ্ধতি কি কুরআনে আছে? রুকূ, সিজদাহ, জলসাহ, বৈঠক ইত্যাদি কিভাবে করতে হবে তা কি কুরআনে আছে? নামাযের ওয়াক্তের ব্যাপারে কি বিস্তারিত কুরআনে বলা আছে? কখন ওয়াক্ত শুরু কখন শেষ? এগুলো সব হাদীসে পাওয়া যায়। কাজেই হাদীস বাতলানো পদ্ধতিতে যদি নামায পড়া যায় তবে কত ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে সেটা হাদীসে বলা থাকলে সমস্যা কোথায়? বিশেষ করে যখন আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে এই ঘোষণা দেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
অর্থঃ রাসূল তোমাদেরকে যে আদেশ দেয় তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক।–সূরা হাশর, আয়াত ৭
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ
অর্থঃ হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।
এই কথাটি কুরআনের অসংখ্য জায়গায় রয়েছে দেখুন সূরা আলইমরান, আয়াত ৩২; সূরা নিসা আয়াত ৫৯; সূরা আনফাল, আয়াত ২০; সূরা নূর, আয়াত ৫৪; সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ৩৩
হাদীস শরীফে রয়েছে-
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَائِرَ الرَّأْسِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي مَاذَا فَرَضَ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فَقَالَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ إِلَّا أَنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا
অর্থঃ হযরত তলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলেন যার চুলগুলো এলোমেলো ছিল। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে বলুন আল্লাহ তাআলা কোন কোন নামায আমার উপর ফরজ করেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে যদি তুমি কোন নফল নামায আদায় কর।–সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১৮৯১
এভাবে অসংখ্য হাদীসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথা বলা হয়েছে। আসলে এ ধরণের লোক হাদীস অস্বীকার করার দ্বারা কুরআনকে অস্বীকার করে।
এরপরেও পবিত্র কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কথাই পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ
অর্থঃ আর নামায কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশে।–সূরা হূদ, আয়াত ১১৪
উলামায়ে কেরাম বলেন এখানে দিনের দু প্রান্ত মানে ফজর ও মাগরিব। রাতের কিছু অংশে বলতে ইশাকে বুঝানো হয়েছে।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ
অর্থঃ নামায কায়েম কর যখন সূর্য ঢলে পড়ে।–সূরা ইসরা, আয়াত ৭৮
এখানে যোহরের নামায উদ্দেশ্য।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى
অর্থঃ তোমরা নামাযসমূহের ব্যাপারে যত্নবান হও এবং (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে।–সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৩৮
এখানে সালাতে উসতা বলতে আসরের নামায উদ্দেশ্য।