প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হযরত আশা করি ভালো আছে। হযরত আমি আমার মামার সাথে (যিনি অস্ট্রিয়াতে থাকেন এবং আমাকে নিতে চেয়ে ছিলেন) ডি.ও এর ব্যবসা করতে চাই। সম্পূর্ণ পুঁজি তিনি দিবেন। আমি তার হয়ে সব করে দিবো বিনিময়ে ব্যবসায় যা লাভ হবে তার একটি অংশ আমাকে দিবেন। ডি.ও এর ব্যবসাটি হচ্ছে : যেমন ফ্রেশ কোম্পানি থেকে চিনি অথবা তেলের দাম যখন কম থাকে তখন তার ডি.ও কিনে রাখা । যেমন ২৫০০০০/- টাকা দিয়ে এক গাড়ী চিনি কিনে রাখলাম। যখন আমি চাইবো তাদের কাছ থেকে চিনি নিয়ে আসতে পারবো। যখন দাম বাড়বে তখন ডি.ও এর কাগজটি তাদের কাছে অথবা যে কোন বড় দোকানেও বিক্রয় করা যায়। দাম সব সময় বাড়ে এমন নয় অনেক সময় লসও হয়। প্রশ্ন ১। এভাবে তার সাথে ব্যবসা জায়েয হবে কি? প্রশ্ন ২। ডি.ও এর ব্যবসা কি জায়েয হবে? প্রশ্ন ৩। যদি নগদে ডাল বা অন্য কোন পণ্য ক্রয় করে গুদাম জাত করে রেখে দিয়ে দুই এক মাস পর দাম বাড়লে তা বিক্রি করি তবে এভাবে ব্যবসা করা জায়েয হবে কি? উল্লেখ্য : সকল খরচ মামা দিবে। আমি শুধু শ্রম দিবো।

উত্তর :

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
১। হ্যাঁ, আপনি শ্রম দিবেন আর আপনার মামা পুঁজি দিবেন এবং লভ্যাংশ চুক্তি অনুযায়ী বণ্টন করে নিবেন, এভাবে ব্যবসার চুক্তি করা বৈধ হবে। এ ধরনের চুক্তিকে মুযারাবা বলে। তবে কোন লোকসান হলে তা পুজিদাতার উপর বর্তাবে আর আপনার শুধু শ্রম পণ্ড হবে।–আল বাহরুর রায়েক ৭/২২৯; বাদায়েউস সানায়ে ৬/২৩০-২৩২

২। হ্যাঁ, নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে উক্ত ব্যবসা জায়েয হবে-
(ক) ক্রয়কৃত পণ্য বিক্রেতার নিকট বিক্রির শর্তে ক্রয় করা যাবে না। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছাধীন থাকবেন। চাইলে তাদের নিকট বিক্রি করতে পারেন আবার অন্য কারো নিকটও বিক্রি করতে পারেন।

(খ) তাদের নিকট থেকে পণ্য নিজের কবজায় বুঝে নিতে হবে। যদি পণ্য নগদ হস্তান্তরের শর্তে ক্রয় করা হয় তবে নগদে পণ্য কবজা করে বুঝে নিতে হবে। আর নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তরের শর্তে ক্রয় করা হলে পণ্যের ধরন, গুণগত মান, পরিমাণ, মূল্য ইত্যাদি নির্ধারিত করে নিতে হবে। মেয়াদ পার হবার পর তা বুঝে নিবে। মোটকথা এমন যেন না হয় যে, তাদের নিকট টাকা দিয়ে পরবর্তীতে বেশী টাকা বুঝে নিয়ে আসা। তবে তা সূদী কারবার হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পণ্য তাদের নিকট থেকে বুঝে নেওয়ার পর তাদের অনুমতিসাপেক্ষে তাদের নিকটেই তা থাকতে পারে।-সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ২১৩৫;মুসনাদে আবী হানীফাহ, হাদীস নং ২২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৫০৮

৩। স্টক ব্যবসার (যাকে ইহতিকার বা গুদামজাত বা রাখি মালের ব্যবসা বলা হয়) জায়েয নাজায়েয উভয় সূরতই রয়েছে। যদি মানুষ বা প্রাণীদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ক্রয় করে এমনভাবে স্টক করে রাখা হয় যে যার দ্বারা মানুষ বা প্রাণীর ক্ষতি হয় তবে এই স্টক মাকরূহে তাহরীমী। যেমন কেউ মানুষ বা প্রাণীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে ক্রয় করে এমনভাবে স্টক করে রাখল যে, বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তেও (অর্থাৎ যখন উক্ত মালের অভাবে মানুষ ও অন্য প্রাণীদের কষ্ট হয় বা দুর্ভিক্ষের সময়) আরো বেশি মুনাফার আশায় বিক্রি করল না।এটাই নিষিদ্ধ গুদামজাত।এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল মাল আটকিয়ে রেখে জিনিসপত্রের মূল্য প্রচুর বৃদ্ধি পেলে বা দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেলে মানুষ ও প্রাণীদের দুঃখ, কষ্ট ও অসহায়ত্বকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজে লাভবান হওয়া। এটা শরীআতে নাজায়েয।
তবে কেউ যদি-
১। নিজের উৎপাদিত প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র জমা করে রাখে বা
২। দূরবর্তী এমন এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র ক্রয় করে এনে জমা করে রাখে যেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় তা সাধারণত আমদানি করা হয় না বা
৩। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও জিনিসপত্র ছাড়া অন্য কিছু জমা করে রাখে
তবে তা নাজেয়েয গুদামজাত বা ইহতিকার এর মধ্যে পড়বে না।কিন্তু এমতাবস্থায়ও যদি মানুষ বা প্রাণীদের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় তবে সম্পদ আটকিয়ে না রেখে ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করাই ইসলাম ও মনুষ্যত্বের দাবী।–সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২০৭; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং ১২৬৭; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬০৬-৬০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২১৩; আল বাহরুর রায়েক ৮/২০১-২০২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/১৯।

সম্পূরক প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম
হযরত ডিও এর ব্যবসায় তো মাল না আনলেও চলে। কারণ মাল বুঝে নিলে বা আনলে তার রাখা ও সংরক্ষণের অনেক ঝামেলা। তাই সাধারণত কেউ মাল আনে না বরং ফ্রেশ থেকে এক গাড়ী সোয়াবিন তেল কিনে। ফ্রেশ কম্পানী এর পরিমান, দাম ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেয়। এর পর যখন খুশি দাম বাড়লে তখন আনা যায় অথবা অন্য কোথাও ডিও এর কাগজটি বিক্রি করা যায়। যদি কেউ দুই এক বছর পরে আনতে চায় তাতেও সমস্যা নেই। এর জন্য কোন গোডাউন ভাড়া দিতে হয় না। আর তেল যখন চাইবেন তখনি দিয়ে দিবে অথবা যদি আমার মতো আরো অনেকের সিরিয়াল থাকে তবে সিরিয়াল অনুযায়ী একদিন বা দুদিন পরে দিবে। আমার প্রশ্ন এখন কি করণীয়। এভাবে করা যাবে কি?

উত্তরঃ

ওয়া আলাইকুমুস সালাম
তাদের নিকট থেকে আনা জরুরী নয়। বরং পণ্য অন্য কারো নিকট বিক্রির পূর্বে অবশ্যই আপনার তা বুঝে নিতে হবে। আর এ বুঝে নেওয়াটা পণ্য তাদের নিকট থেকেই হতে পারে। পণ্য বুঝে না নিয়ে পরবর্তীতে শুধুমাত্র ডিও এর কাগজ বিক্রি করলে তা বৈধ হবে না। মোটকথা এমন যেন না হয় যে, আপনি কোন কোম্পানীকে নির্দিষ্ট কিছু টাকা দিয়ে পরবর্তীতে তার চেয়ে বেশী কিছু টাকা নিয়ে এলেন। যা স্পষ্ট সূদী কারবার হিসেবে গণ্য হবে। তাই, অন্য কারো নিকট বিক্রি করতে চাইলে অবশ্যই বিক্রির পূর্বে আপনাকে আগে বুঝে নিতে হবে। অতঃপর তা আপনি অন্যকে বুঝিয়ে দিবেন।

উল্লেখ্য যে, আমাদের জানামতে ডিও ব্যবসায় যেভাবে লেনদেন করা হয় তাতে তা বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা এখানে কবজার বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত। সাধারণত পণ্য হস্তান্তর বা কবজা ব্যতীত ডিও লেটারটি একের পর এক বেচা-কেনা হতে থাকে। অর্থাৎ পণ্য হস্তগত হওয়ার পূর্বে শুধুমাত্র কাগজ বিক্রি হতে থাকে। যা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাছাড়া এ ব্যবসার আরেকটি সমস্যা হল মুল কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয় করার সময় কখন তা হস্তগত করা হবে তা নির্ধারিত করা হয় না। বরং বলা হয় যখন দাম বাড়বে তখন তা নেওয়া হবে। এটাও নাজায়েয। কেননা উক্ত চুক্তিটি মূলত বাইয়ে সলম। আর বাইয়ে সলমে পণ্য হস্তান্তরের মেয়াদ নির্দিষ্ট করতে হয়।

Loading