কোন যঈফ হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান লি-গাইরিহী এর পর্যায়ে পৌছে যায়।

আল্লামা যফর আহমাদ ওসমানী (রহঃ) বলেন কোন যঈফ হাদীস যখন একাধিক সনদে বর্ণিত হয় যদিও তার ভিন্ন একটি মাত্র সনদ থাকে তবে সমষ্টিগত বিচারে হাদীসটি হাসানের মর্যাদায় পৌছে যায় এবং তা দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য হয়। – যফর আহমাদ ওসমানী, কাওয়ায়িদ ফি উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৭৮

আল্লামা সূয়ূতী (রহঃ) বলেন-
ولا بدع في الاحتجاج بحديث له طريقان لو أنفرد كل منهما لم يكن حجة كما في المرسل إذا ورد من وجه آخر مسند

অর্থঃ যে হাদীসের দুটি সনদ রয়েছে তা দ্বারা দলীল পেশ করতে দোষণীয় কিছু নেই যদিও পৃথকভাবে প্রত্যেকটি সনদ দলীল হিসেবে পেশের যোগ্য না হয়। যেমন মুরসালের ক্ষেত্রে যখন তা ভিন্ন একটি সংযুক্ত সনদে বর্ণিত হয় (তখন তা গ্রহণযোগ্য)। – তাদবীবুর রাবী, সুয়ূতী, পৃষ্ঠা ৯১

তিনি অন্যত্র বলেন-
وكذا إذا كان ضعفها لإِرسال أو تدليس أو جهالة رجال زال بمجيئه من وجه آخر وكان دون الحسن لذاته
অর্থঃ যদি কোন হাদীসের দূর্বলতা এরসালের কারণে বা তাদলীসের কারণে বা রাবীর অবস্থা অজ্ঞতার কারণে হয় তবে ভিন্ন সনদে আসার দ্বারা উক্ত দূর্বলতা দূর হয়ে যাবে। তখন হাদীসটি (হাসান লি গাইরিহী হবে) হাসান লি জাতিহী হবে না। – তাদবীবুর রাবী, সুয়ূতী পৃষ্ঠা ১০৪

হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন-

متى توبع السيّئُ الحفظ بمعتبر كان يكون فوقَه أو مثله لا دونه وكذا المختلط الذي لم يتميز و المستور و الاسناد المرسل و كذا المدلس إذا لم يعرف المحذوف من إسناده صار حديثهم حسناً لا لذاته

অর্থঃ যার স্মরণশক্তিতে দূর্বলতা রয়েছে এমন কোন রাবীর সমর্থনে যখন উল্লেখযোগ্য কোন হাদীস পাওয়া যায় আর তা তার সমকক্ষ বা উপরে হয় তার নিচে না হয় অথবা উক্ত সমর্থন এমন রাবীর পাওয়া যায় যে গোলতাল পাকিয়ে ফেলে, একটি থেকে অন্যটি আলাদা করতে পারে না অথবা উক্ত সমর্থন কোন অজানা রাবীর বা মুরসাল সনদের বা কোন মুদাল্লাস সনদের পাওয়া যায় তখন তাদের হাদীস (যঈফের সীমা অতিক্রম করে) হাসান হয়ে যাবে। তবে হাসান লিযাতিহী নয় বরং হাসান লি-গাইরিহী। – ইবনে হাজার, শরহে নুখবাহ, পৃষ্ঠা ৭৪,৭৫।

আল্লামা শারানী (রহঃ) বলেন, প্রায় সকল মুহাদ্দিসীন যঈফ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন যখন তার একাধিক সনদ পাওয়া যায়। তারা কখনও উক্ত হাদীসকে সহীহের সাথে সম্পৃক্ত করেন কখনও হাসানের সাথে। – আল্লামা শারানী, আল-মীযান ১/৬৮

আল্লামা তাক্বী উদ্দীন সুবকী (রহঃ) ইবনুস সালাহ এর উদ্ধুতি দিয়ে বলেন, এক প্রকার যঈফ হাদীস যার দূর্বলতা বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তির দুর্বলতার কারণে হয়। অথচ বর্ণনাকারী সত্যবাদি এবং আমানতদার। আমরা যখন দেখব উল্লেখিত রাবী যা বর্ণনা করেছে তা ভিন্ন সনদে বর্ণিত রয়েছে তখন আমরা বুঝব তিনি সঠিক বর্ণনা করেছেন এবং উক্ত হাদীস আয়ত্ত করতে তার কোন ত্রুটি হয়নি। এরপর সুবকী (রহঃ) বলেন, কাজেই এই ধরণের কয়েকটি যঈফ হাদীস একত্রিত হয়ে যাওয়া শক্তিতে বৃদ্ধি করে। আর এর দ্বারা হাদীসটি হাসান বা সহীহ এর পর্যায়ে উন্নিত হয়। – শিফাউস সাকাম, পৃষ্ঠা ১১

হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) ইখতিসারু উলূমিল হাদীস নামক কিতাবের হাসান হাদীসের আলোচনায় বলেন-

قَالَ اَلشَّيْخُ أَبُو عَمْرٍو لَا يَلْزَمُ مِنْ وُرُودِ اَلْحَدِيثِ مِنْ طُرُقِ مُتَعَدِّدَةٍ أَنْ يَكُونَ حَسَنًا لِأَنَّ اَلضَّعْفَ يَتَفَاوَتُ فَمِنْهُ مَا لَا يَزُولُ وَمِنْهُ ضَعْفٌ يَزُولُ بِالْمُتَابَعَةِ كَمَا إِذَا كَانَ رَاوِيهِ سَيِّئَ اَلْحِفْظِ أَوْ رَوَى اَلْحَدِيثَ مُرْسَلًا فَإِنَّ اَلْمُتَابَعَةَ تَنْفَعُ حِينَئِذٍ وَيُرْفَعُ اَلْحَدِيثُ عَنْ حَضِيضِ اَلضَّعْفِ إِلَى أَوْجِ اَلْحُسْنِ أَوْ اَلصِّحَّةِ

অর্থঃ শায়েখ আবূ আমর উবনুস সলাহ বলেছেন কোন হাদীস একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তা হাসান হওয়া জরূরী নয়। কেননা দূর্বলতার একাধিক স্তর রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয় না। আর কতক দূর্বলতা একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। যেমন কোন দূর্বল হাদীসের বর্ণনাকারী যদি দূর্বল স্মৃতিশক্তির হয় অথবা হাদীসটি মুরসাল সনদে বর্ণিত হয় তখন ভিন্ন সনদে উক্ত হাদীসটিকে পাওয়া উল্লেখিত দূর্বল হাদীসকে উপকৃত করবে এবং হাদীসটি দূর্বলতার তলদেশ থেকে হাসান অথবা সহীহের শিখরে উঠে আসবে। – ইখতিসারু উলূমিল হাদীস, পৃষ্ঠা ৪৩

সারকথা কোন হাদীসকে কোন একটি দূর্বল সনদে দেখেই তার বিষয় বস্তুকে দূবল বলে দেওয়া যাবে না। বরং উক্ত হাদীসটি একাধিক সনদে পাওয়া গেলে তা দূর্বলতা থেকে কেটে উঠে হাসান অথবা সহীহের পর্যায়ে পৌছে যায়। কেননা সেক্ষেত্রে একটি সনদ অপরটিকে মজবূত করে। যেমন হাফেয ইবনে হাজার (রহঃ) সিজদায়ে সাহূতে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে কি না এ সংক্রান্ত আলোচনার শেষে বলেন-

لكن قد ورد في التشهد في سجود السهو عن بن مسعود عند أبي داود والنسائي وعن المغيرة عند البيهقي وفي اسنادهما ضعف فقد يقال أن الأحاديث الثلاثة في التشهد باجتماعها ترتقي إلى درجة الحسن

অর্থঃ তবে সিজদায়ে সাহূতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া প্রসঙ্গে সুনানে নাসাঈ ও আবূ দাউদে ইবনে মাসউদ থেকে এবং সুনানে বাইহাক্বীতে মুগীরাহ থেকে রেওয়ায়েত রয়েছে। আর উভয় সনদে দুর্বলতা রয়েছে। তবে বলা হবে হাদীস তিনটি তাশাহহুদে সমষ্টিগতভাবে হাসানের স্তরে উন্নিত হয়। – ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসক্বালানী ৩/৯৯

তবে একথাও স্বতসিদ্ধ যে সর্ব প্রকার দূর্বলতা একাধিক সনদ প্রাপ্তির দ্বারা দূর হয় না। বরং যে যঈফ হাদীসের দুর্বলতা কোন বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তি জনিত ত্রুটি বা এ ধরণের অন্য কোন ত্রুটির কারণে হয় তা একাধিক সনদে পাওয়া যাওয়ার দ্বারা দূর হয়ে যায়। এবং হাদীসটি হাসানের স্তরে উন্নিত হয়। আর যদি দূর্বলতা কোন বর্ণনাকারীর মিথ্যার অপবাদ আরোপকৃত হওয়া বা এ ধরণের অন্য কোন সমস্যার কারণে হয় তবে সেই দুর্বলতা একাধিক সনদ দ্বারা দূর হবে না যেমনটি উলাময়ে কেরাম স্পষ্ট করে বলেছেন। – উলূমিল হাদীস, হাফেয ইবনুস সলাহ পৃষ্ঠা ৩৭

Loading