যাকাতের হিসাব থেকে মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে বা হাজাতে আছলিয়ার জন্য যে ঋন নিয়ে থাকে তা বিয়োগ করতে হয়।কিন্তু র্বতমানে ঋনের ধরনই বদলে গেছে। বড় বড় শিল্পপতিরাই এখন বেশী ঋনী। বাহ্যিকভাবে দেখে মনে হয় তারাই যাকাতের অধিক উপযুক্ত। একদিক থেকে যেমন তাদের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়া উদ্ধেশ্য হয় অন্যদিক থেকে সরকারের পক্ষ থেকে আরোপিত মোটা অংকের ট্যাক্স ফাকি দেওয়াও তাদের উদ্দেশ্য থাকে।এগুলোকে উন্নয়নমুলক ঋন(Development loan)বা শিল্প ঋন (Industrial loan) বলে।

এখন প্রশ্ন হল এই ঋন এর যাকাত দিতে হবে কিনা ? অথবা এই ঋন যাকাতের হিসাবের সময় বিয়োগ হবে কিনা ?

এর জবাব হল মানুষ উন্নয়নমুলক যে ঋন নিয়ে থাকে তা সে কোন খাতে ব্যয়(Invest) করেছে তা দেখতে হবে। সে উক্ত টাকার মধ্যে যে টাকা অযাকাতযোগ্য সম্পদে (যেমন-কোম্পানীর বিল্ডিং,মেশিনারি,গাড়ি,জমি ইত্যাদি স্থায়ী সম্পদে[Fixed assets])ব্যয় করেছে তা যাকাতের হিসাবে কোন প্রভাব ফেলবে না। র্অথাৎ উক্ত টাকা যাকাতের হিসাবের সময় যোগ বা বিয়োগ কোনটিই করবে না। আর উক্ত শিল্প ঋন থেকে সে যে পরিমান টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদে (যেমন ব্যবসার কাঁচামাল ইত্যাদি) ব্যয় করেছে সেই সম্পদের বাজারদরের উপর যাকাত আসবে। র্অথাৎ যে দিন সে যাকাত এর হিসাব করবে সে দিন তার যাকাতযোগ্য সমস্ত সম্পদের হিসাব করবে যদিও উক্ত যাকাতযোগ্য সম্পদ ঋন হয়ে থাকে বা ঋন এর বিনিময়ে এসে থাকে। তবে সে তার সমস্ত যাকাতযোগ্য সম্পদের বাজারদর থেকে ঋনের যে টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করেছে তা বিয়োগ করবে।

উদাহরনসরূপ কোন ব্যক্তির এক কোটি টাকার ব্যবসায়ীক সম্পদ রয়েছে। এর মধ্য থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বিল্ডিং,মেশিনারি ইত্যাদি রয়েছে। বাকি পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ব্যবসার কাচামাল রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে তার পঞ্চাশ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদ রয়েছে। এখন সে এক কোটি টাকা ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারের উদ্দেশ্যে লোন নিল।এই এক কোটি টাকা থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সে জমি ,বিল্ডিং ইত্যাদি স্থায়ী সম্পদে ব্যয় করল। বাকি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে সে ব্যবসার কাচামাল ক্রয় করল। ফলে তার বর্তমানে মোট যাকাতযোগ্য সম্পদ এক কোটিতে দাড়াল। এখন ধরা যাক, উক্ত ব্যক্তির যাকাতের অর্থ-বছর রজবের ৫ তারীখে সম্পূর্ণ হয়। কাজেই সে রজবের ৫ তারিখে যাকাত হিসাব করবে। রজবের ৫ তারিখে দেখা গেল তার পূর্বের ঐ এক কোটি টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদের বর্তমান বাজারদর দেড় কোটি টাকা।এখন এই দেড় কোটি টাকা থেকে ঋনের যে অংশ সে যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করেছে তা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে । অর্থৎ দেড় কোটি টাকা থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বাদ যাবে। কেননা সে ঋনের এক কোটি টাকা থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করেছিল। এখন অবশিষ্ট এক কোটি টাকার যাকাত আদায় করবে । আর যদি রজবের ৫ তারিখে তার র্পুবের এক কোটি টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদের বাজারদর কমে গিয়ে আশি লক্ষে দাড়ায় তবে তার উপর ত্রিশ লক্ষ টাকার যাকাত ফরজ হবে । কেননা সে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করেছে। কাজেই তা বাদ যাবে।

মোটকথা উন্নয়নমূলক ঋনের যে অংশ যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করা হয় তা পূরো যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বিয়োগ হবে। আর যে অংশ স্থায়ী সম্পদে ব্যয় করা হয় তা যাকাত হিসাবে কোন প্রভাব ফেলবেনা। র্অথাৎ কেমন যেন সে উক্ত ঋন গ্রহনই করেনি।

এখন প্রশ্ন হল এধরনের শিল্প ঋন (Industrial loan) বা উন্নয়নমূলক ঋন(Development loan) সাধারনত র্দীঘমেয়াদী হয়ে থাকে। যা প্রতিবছর কিস্তিতে সহনীয় পরিমানে আদায় করা হয়। এখন এ ঋনের যে অংশ যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয় করা হয় তার পুরোটাই যাকাত এর হিসাব থেকে বাদ যাবে নাকি প্রতিবছর যতটুকু ঋন পরিশোধ করবে ততটুকু বাদ যাবে?

এর জবাব হল, প্রতিবছর কিস্তিতে যতটুকু ঋন সে পরিশোধ করবে কেবল ততটুকু ঋন পুরো যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বিয়োগ করবে । উদাহরনসরূপ আমাদের উল্লেখিত উদাহরনে যদি উক্ত ব্যক্তির প্রতিবছরে এক কোটি টাকার জন্য দশ লক্ষ টাকা ঋন পরিশোধ করতে হয় তবে যাকাতযোগ্য সম্পদে ব্যয়কৃত পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বিপরীতে প্রতিবছর ঋন পরিশোধ করতে হবে পাঁচ লক্ষ টাকা। কেমন যেন সে এবছর পাঁচ লক্ষ টাকা ঋনী।পঞ্চাশ লক্ষ নয়। কেননা যাকাতের হিসাব থেকে ঐ ঋন বিয়োগ করতে হয় যা সে এবছর আদায় করবে। কাজেই উক্ত ব্যক্তি প্রথম ছুরতে (যখন এক কোটি টাকার পন্যের বাজার দর বেড়ে গিয়ে দেড় কোটি টাকা হয়ে ছিলে )পাঁচ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে এক কোটি পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করবে।আর দ্বিতীয় ছুরতে (যখন এক কোটি টাকার পন্যের বাজার দর কমে গিয়ে আশি লক্ষ টাকা হয়ে গিয়েছিল) পাঁচ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে পঁচাত্তর লক্ষ টাকার যাকাত আদায় করবে। ফিক্হী দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে মাসআলাটিকে এভাবেই বুঝে আসে। আর এর মধ্যেই অধিক সতর্কতা রয়েছে।

Loading